Search

Friday, August 29, 2014

‘আমাগো ল্যাকক-গবেষক’!

কর্নেল তাহেরকে নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদের একটি লেখার (৭ নভেম্বরের সাত-সতেরো, প্রথম আলো, ঈদসংখ্যা ২০১৪) প্রেক্ষিতে, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের প্রতিক্রিয়ার (তাহেরকে নিয়ে কেন এই মিথ্যাচার? , প্রথম আলো ২১ আগস্ট ২০১৪) জবাবে মহিউদ্দিন আহমেদ আরেকটি লেখা লিখেন, প্রতিক্রিয়ার জবাব, (সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় কেন? প্রথম আলো ২৫ আগস্ট ২০১৪)।

‘সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় কেন?’
তাই তো-তাই তো, ‘ভয় নাই উরে ভয় নাই’! ওহো, ‘একালের যুধিষ্ঠির’ (তিনপান্ডবের জ্যেষ্ঠ পান্ডব) চলে এসেছেন যে! এখন আমাদের উপায় কী গো- গোবর খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হপে?। মহিউদ্দিন আহমদ এই লেখায় লিখেছেন: “...আমার পান্ডুলিপির অল্প কিছু অংশ প্রথম আলো ছেপেছে এবং এটা আরও কিছু পত্রিকায় উদ্ধৃত হয়েছে। কেউ কেউ আমাকে জানিয়েছেন তথ্যগত কিছু ত্রুটি আছে। আমি এতে উপকৃত হয়েছি এবং আমার পান্ডুলিপি পরিমার্জন করেছি কিছু কিছু জায়গায়।...

ইতিপূর্বে ‘থ্রি-মরদুদ’[১] লেখাটায় আমি লিখেছিলাম, প্রথম আলো কেবল অল্প কিছু অংশই ছাপেনি অতি অসভ্য একটা কান্ডও করেছে। অসম্ভব বিতর্কিত এই লেখাটায় তথ্যসূত্র না-দিয়ে লিখেছে,‘স্থানাভাবে তথ্যসূত্র দেওয়া হলো না’। অথচ ‘ঈদসংখ্যা’ নামের ৫১২ পৃষ্ঠার এই জিনিসে আবর্জনার কিন্তু অভাব নেই। এখানে ‘কেতুপাত সাদে পাদাং’ নামের খাবারের রেসিপিও আছে। এদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে এই ‘...পাদাং’খাবারটা না-খেলে পাঠক কোলা-ব্যাঙের ন্যায় পশ্চাদদেশ দেখিয়ে প্রথম আলো আপিসে বেদম লাফাবে!

মহিউদ্দিন আহমদ জাঁক করে এটাও লিখেছেন,“...অধ্যাপক হোসেন (আনোয়ার হোসেন) অনেকগুলো বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। আমি দেখলাম, তথ্যসূত্র অনুযায়ী আমার উল্লেখ করা সব কথাই মোটামুটি অভ্রান্ত।...
মহিউদ্দিন আহমদ ইনিয়েবিনিয়ে অনেক বিষয় টেনে নিয়ে এসেছেন অথচ আনোয়ার হোসেনের প্রশ্নগুলো একেক করে যুক্তি খন্ডন করার ধারেকাছে দিয়েও যাননি! যে নঈমের মুখ দিয়ে ভয়ংকর কথাটা বলিয়ে নিয়েছেন সেই নঈমকে নিয়ে একটি শব্দও নেই! আর মহিউদ্দিন স্যার যে বলছেন, “...তথ্যগত কিছু ত্রুটি আছে। আমি এতে উপকৃত হয়েছি এবং আমার পান্ডুলিপি পরিমার্জন করেছি কিছু কিছু জায়গায়।...” উপকৃত হয়েছেন?

বাহ, বেশ তো! গবেষক সাহেব ইচ্ছা হলো ব্যস, বলা নেই কওয়া নেই ‘লিকে’ দিলেন, ওমুক বলেছে তাহের ওয়েবের তার ধরে ঝুলাঝুলি করতেন। ‘ঝুল-ঝুল ঝুলুনি...’ আর যায় কোথায় আমরাও স্বীকার গেলুম তাহের কেবল তার ধরে ঝুলাঝুলিই করতেন না কঠিন ‘তারবাজিও’ করতেন। ফাঁকতালে কেউ যদি বলে বসে ওসময় তো ওয়েবের তারের খুটিই পোঁতা হয়নি তখন আমাদের গবেষক সাহেব সেই অংশটুকুর পরিমার্জনা করে আমাদেরকে মার্জনা করবেন।
স্যারের ভাষায় বলতে হয়, ‘...লেখক-গবেষককে এ ক্ষেত্রে একটা ঝুঁকি নিতে হয়...’। সেই ঝুঁকিটাই নিয়েছেন আমাদের ‘কাবিল ল্যাকক-গবেষক’ মহোদয়। এই লেখার অন্যত্র মহিউদ্দিন আহমদ লিখছেন: “...শুধু একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত হতে পারিনি। আমি লিখেছিলাম, শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে তাহের উপস্থিত ছিলেন।...

যাক, একালের যুধিষ্ঠির মহাশয়ের মনে তাহলে খানিকটা ধন্ধও কাজ করছে! ভাল-ভাল! তিনি আরও লিখেছেন, “...আমার লেখার ভগ্নাংশ ছাপা হয়েছে। ...পাঠক আরও অনেক কিছুই জানতে পারবেন, ভাবনাচিন্তার খোরাক পাবেন, যখন বইটি আলোর মুখ দেখবে।...” বাপু রে, তা আর বলতে! শেষ পর্যন্ত লেজটা আর লুকিয়ে রাখা গেল না, না?

পাঠকের ভাবনাচিন্তার জন্য দেখছি আপনি বড়ো কাতর হয়ে আছেন, হে। বাপু, ‘টেনশন লেনেকা নেহি’, প্রথম আলোর মত উঁচুমার্গের বেনিয়া থাকতে আপনাকে মার্কেটিং নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। আহা, নির্লজ্জের মত মুখিয়ে থাকার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। রাম-রাম, এতো চিন্তা করলে আপনার ‘গভেষণা’ ব্যহ্ত হবে না বুঝি! আপনি বরং এই সব ছাইপাশ ইয়ে খুলে লিখতে থাকুন,“...তাহের আক্ষেপ করে নঈমকে বললেন, ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া।..."
আপনার বইয়ের ছাপা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিঃশেষিত হবে এবং প্রথম আলোর বর্ষসেরা বইয়ের সিড়িগুলো বেয়ে তরতর করে আপনাআপনি এই বইটা যে বছরের সেরা বইয়ের মুকুট ছিনিয়ে নেবে এতে অন্তত আমার কোনও সন্দেহ নেই।

আমার সাফ কথা। অনেকে যেমন কাউকে কাউকে দেবতার পর্যায়ে নিয়ে যান। আমি কোনও প্রকারেই এদেরকে দেবতা বলে স্বীকার করি না। যেমনটাএটাও মনে করি না তাহেরের বেলায়ও। তাঁর কোনও মতাদর্শ, ভাবনা ভুল প্রমাণিত হতেই পারে। তাহরের করা কোনও অন্যায় নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হবে। তাহের কাউকে অপছন্দ করতেই পারেন কারও প্রতি তাঁর বিস্তর ক্ষোভ থাকতেই পারে কিন্তু ...উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া..., এমন হিংস্র, নৃশংস কথা তাহেরের মত মানুষ বলবেন এটা অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়।
তাহেরের প্রতি করা অভূতপূর্ব অন্যায়, তাঁর মত কল্পনার অতীত সাহস, মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান- এমন মানুষ এদেশে খুঁজে পাওয়া বিরল। এই মানুষটাকে নিয়ে মহিউদ্দিন গং এখন যেটা করছেন সেটা অন্যায়, স্রেফ একটা অন্যায়। কুৎসিত অন্ধকার ভুবনের অমানুষের কাজ।

সহায়ক সূত্র:
১. থ্রি মরদুদ: http://www.ali-mahmed.com/2014/08/blog-post_21.html

* এই লেখাটাই ফেসবুকে দেওয়ার পর Md Mustafizur Rahman মন্তব্য করেন: “আমি , কমুনিস্ট দেখতে পারি না , তাই প্রথম আলো সত্য হলে আমি খুশি হবো ।
আপনার ধারণা প্রথম আলো মিথ্যা, আর যুক্তি হচ্ছে, 'সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা' এই গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়: ...২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে তাহের পাকিস্তানের কোয়েটার স্কুল অব ইনফ্রেন্ট্রি এন্ড টেকটিক্স-এ সিনিয়র টেকনিকেল কোরে অংশ নিচ্ছিলেন। ২৬ মার্চ সামরিক অফিসার ক্লাবে একজন পাঞ্জাবি অফিসার শেখ মুজিব সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় তাহের এর তীব্র প্রতিবাদ করলে তাকে বন্দি করা হয়।...’ সুন্দর যুক্তি । একবার যখন তাহের বংগবন্ধুর উপর খুশি তার মানে সারা জীবন খুশি।

আমার উত্তর: “আপনার ধারণা প্রথম আলো মিথ্যা , আর যুক্তি হচ্ছে...।“ না, দুইটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছিল তাহেরের চারিত্রিক দৃঢ়তা বোঝাবার জন্য যে তাহের চতুর তেলতেলে রাজনীতিবিদ ছিলেন না যে রয়েসয়ে বলবেন। এটাও লেখার সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল প্রথম আলো উল্লেখ করেছে ‘স্থানাভাবে তথ্যসূত্র দেওয়া হলো না’। অথচ এমন একটা ভয়াবহ অভিযোগ তাঁর প্রতি উত্থাপন করা হয়েছে,“...উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া।..."- এই জায়গাটাই ছিল আমার লেখার মূল বিষয়। পরের লেখায় যেটা আমি বলেছি: তাহের কাউকে অপছন্দ করতেই পারেন কারও প্রতি তাঁর বিস্তর ক্ষোভ থাকতেই পারে কিন্তু ...উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া..., এমন হিংস্র, নৃশংস কথা তাহেরের মত মানুষ বলবেন এটা অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়। তহেরের মত অসমসাহসী, প্রথম সারির যোদ্ধার পক্ষে এমন একটা বক্তব্য দেওয়াটা কতটুকু বাস্তবসম্মত? তাও কোথাকার এক নঈমের বরাত দিয়ে। গোটা বিষয়টাই যথেষ্ঠ সন্দেহের উদ্রেক করে। আমি আশা করেছিলাম, মহিউদ্দিন আহমদ যথার্থ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করবেন। কিন্তু তিনি সেপথ মাড়াননি!
আনোয়ার হোসেন যখন মহিউদ্দিনের এই লেখাটি নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সেই প্রতিক্রিয়ার পর মহিউদ্দিন আহমদ আরেকটি প্রতিক্রিয়া লেখেন যেখানে তিনি এই প্রসঙ্গটি সুকৌশলে এড়িয়ে যান। যেটা আমাগো ল্যাকক, গবেষক লেখাটায় আমি উল্লেখ করেছি। মহিউদ্দিন আহমদ ইনিয়েবিনিয়ে অনেক বিষয় টেনে নিয়ে এসেছেন অথচ আনোয়ার হোসেনের প্রশ্নগুলো একেক করে যুক্তি খন্ডন করার ধারেকাছে দিয়েও যাননি! যে নঈমের মুখ দিয়ে ভয়ংকর কথাটা বলিয়ে নিয়েছেন সেই নঈমকে নিয়ে একটি শব্দও নেই"!

No comments: