Search

Tuesday, April 9, 2013

নাস্তিক এবং...


সকাল-সকাল ঘুম ভাঙল, মাইকিং হচ্ছে, 'নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি চেয়ে আজকের হরতাল সফল করুন'।
১৩ দফা-টফার কথা এখন আর নাই। নাস্তিক ব্লগারই মূখ্য। আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না, আলেম সমাজের কী নাস্তিক ব্লগার নিয়ে সমস্যা, নাকি কটূক্তিকারী ব্লগার নিয়ে? আমার তো মনে হয়, তাঁরা কটূক্তিকারী ব্লগার বললেই যথার্থ, মানানসই হত।
আমি পূর্বেও লিখেছিলাম, একজন নাস্তিক হলেই তিনি নবীজীকে নিয়ে কটূক্তি করবেন, করবেনই এমনটা কেমন করে বলা যেতে পারে!

আর কেউ নিজেকে নাস্তিক বলে ঘোষণা না-দেয়া পর্যন্ত একজনকে কেমন করে নাস্তিক বলা যায়? নাস্তিক শব্দটা এখন মনে হয় বাদামের খোসার মত হয়ে গেছে! আমরা এও দেখেছি, অতি কুৎসিত জীবনযাপন করেন এমন মানুষও অবলীলায় যাকে খুশি তাকে নাস্তিক বলে দিচ্ছেন!
কে নাস্তিক হবেন, কে হবেন না এটা তো তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত- যার দায় তিনিই বহন করবেন। নাস্তিকতা নিয়ে আমার বাড়তি আবেগ, বিরাগ নাই কিন্তু আমার যেটা মনে হচ্ছে, নাস্তিক শব্দটা অহেতুক অন্যায় ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কেবল বিপুল ক্ষমতার অপচয়ই না, এক ধরনের ধৃষ্টতাও।

কেউ এটা বলতেই পারেন, ধর্মঅবমাননাকারী, কটূক্তিকারী ইত্যাদি। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ...। 

বাংলা একাডেমীর অভিধান মতে, নাস্তিক শব্দের অর্থ হচ্ছে, 'অবিশ্বাসী, স্রস্টা ও পরকালে বিশ্বাস নেই এমন'। কেউ নিজেকে নাস্তিক-অবিশ্বাসী বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না-দেয়া পর্যন্ত অন্য কোনো মানুষ এটা বলেন কেমন করে, কী উপায়ে?

হেফাজতে ইসলামের ঢাকা সভায় মাওলানা সুলতান যউক নদভী বলেন, "ইসলাম ছাড়া আর কোনো ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানরা নিজ নিজ ধর্ম নিয়ে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু নাস্তিকদের জায়গা নেই।" (প্রথম আলো, ০৭.০৪.১৩)

এটা তিনি কোন আলোকে বললেন কে জানে, তিনি যদি বলতেন, কটূক্তিকারীদের জায়গা নেই তাহলেও নাহয় ধরে নিতাম তিনি তাঁর যুক্তি মতে দাবী জানিয়েছেন।
যাই হোক, কোরান শরীফে আমরা যেটা পাই,
"তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বিশ্বাস করত। তাহলে কি তুমি বিশ্বাসী হওয়ার জন্য মানুষের ওপর জবরদস্তি করবে?
(-১০ সুরা ইউনুস: ৯৯)

"তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা (প্রতিনিধি) করেছেন। তাই কেউ অবিশ্বাস করলে তার অবিশ্বাসের জন্য সে নিজেই দায়ী হবে।..."
(-৩৫ সুরা ফাতির: ৩৯)

যে অবিশ্বাস করে অবিশ্বাসের জন্য সেই দায়ী।
(-কোরান শরিফ, ৩০ সুরা রুম: ৪৪)

এখন 'হেফাজতে ইসলাম' কী জোর করে অবিশ্বাসীকে বিশ্বাসী করাতে চাচ্ছেন? এবং যারা বিশ্বাসী না তাঁদেরকে নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত করবেন? আমাদের নবীজী কী করেছিলেন?

নবীজীর সময় তিনি নাস্তিক-অবিশ্বাসীদের প্রতি কেমন আচরণ করেছিলেন বা নাস্তিক বলা নিয়ে তাঁর কিছু নমুনা আমরা দেখি:
(মুসলমান হয়েও সে মন্দ কাজ করতে পারে, কাফের (অবিশ্বাসী) হয়েও সে ভাল কাজ করতে পারে এবং প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজের ফল ভোগ করবে। এটাই ইসলামের বিধান।)
১. আবদুল্লাহ-বিন-উবাই হযরতের সঙ্গে অনেক মুনাফিকি করেছিলেন। কিন্তু হযরত কোনও দিন তাঁকে কাফের বলেননি বা ঘোষণা দেননি। তিনি মারা গেলে হযরত তাঁর কাফনের জন্য নিজের গায়ের চাদর পাঠিয়ে দেন। হযরত তাঁর জানাজা পড়েন। কেবল তাই নয়, তিনি তাঁর আত্মার কল্যাণে আল্লাহর কাছে প্রার্থনাও করেছিলেন।
(বিশ্বনবী, ২য় খন্ড, পৃ: ১৪৩/ ১৬৫)

২. হযরতের পিতৃব্য আবু তালিব মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনো দিন ইসলাম গ্রহন করেননি। কিন্তু হযরত এই কারণে কখনই তাঁকে অশ্রদ্ধা করেননি। মৃত্যুর সময় তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়াও চেয়েছিলেন।
(বিশ্বনবী, ২য় খন্ড, পৃ: ১৪৩)



৩. এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে নাস্তিক (কাফের) বলবে না। বললে, যাকে বলা হলো সে নাস্তিক না-হয়ে থাকলে, যে বলেছে তার দিকে ফিরে আসবে।
-বোখারী শরীফ, কিতাবুল আদাব, ৩৫১২
 

৪. এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে  নাস্তিক (কাফের) বললে তাদের যে-কোনো একজন কাফের হয়ে গেল।
-বোখারী শরীফ, কিতাবুল আদাব, ৩৫৪৭


কে নাস্তিক এই ঘোষণায় না-গিয়ে, আমাদের ধর্মীয় শিক্ষকগণ এই দাবী জানালে খুবই যুক্তিসঙ্গত হতো, যে আমরা চাই, কেউই যেন কোনো ধর্ম নিয়েই কটূক্তি না করে...।

No comments: