Search

Monday, April 15, 2013

লুঙ্গি-ছাগল-হাসনাত আবদুল হাই-প্রথম আলো গং

বারিধারায় এক বিষম কান্ড ঘটে গেছে। ওখানকার দায়িত্বশীল (!) লোকজনেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনো রিকশাচালক লুঙ্গি পরে রিকশা চালাতে পারবেন না!
কেন তারা এহেন সিদ্ধান্ত নিলেন তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। সমস্যা কোথায়! রিকশাচালকেরা কী লুঙ্গি মাথায় বেঁধে রিকশা চালাতেন?

বেশ কিছু তরুণ সিদ্ধান্ত নিলেন এর প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। তারা লুঙ্গি পরে সাইকেল চালিয়ে বারিধারায় যাবেন। গেলেনও কিন্তু তাঁদের পুলিশ আটকে দিল। কেবল তাই না, কয়েকজনকে থানাতেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে মুচলেকা দিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়। আমি হাসব, না কাঁদব বুঝে উঠতে পারছি না। আহাম্মকগিরির একটা সীমা থাকাটাই সমীচীন। গ্রে মেটার এবং ইয়েলো মেটার কী জড়াজড়ি হয়ে গেছে?
বাংলাদেশের কোন আইনে এদের বাঁধা দেয়া হলো? বাংলাদেশে কী সাইকেল চালানো নিষেধ, লুঙ্গি পরা নিষেধ? নাকি এঁরা কোনো প্রকারে ন্যুইসেন্স ভঙ্গ করার অপরাধে অপরাধি?

জাতিসংঘে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর লুঙ্গি ও পাঞ্জাবি পরে জাতিসংঘের মহাসচিব পেরেজ দ্য ক্যুয়েলারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর পরিচয়পত্র পেশ করেন। (দৈনিক বাংলা, ০১.০৮.১৯৯১)
কাজটা কতটা সমীচীন সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। যাই হোক, এই ভদ্রলোক বেঁচে আছেন কিনা জানি না। বেঁচে থাকলে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে আসুক। খোদা-না-খাস্তা বেঁচে না-থাকলে অন্য ব্যবস্থাটাও বাতলে দেব।

বারিধারার যারা এই নিয়মটা করেছেন তাদেরকে কী বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। চুতিয়া বলতে পারছি না কারণ চুতিয়া না-বলার জন্য আমার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আছে। ছাগল বলতে মন সায় দিচ্ছে না কারণ ছাগল খুবই নিরীহ প্রাণী। বেচারা ছাগলকে অহেতুক টানাটানি-অপমানিত করার অর্থ হয় না! কিন্তু কিছু বলতে না-পারলে রাগ যে প্রশমিত হয় না। কীসের সঙ্গে এদের তুলনা করা যায়?
কী কাকতালীয়, পেয়েছি! বারিধারার ওই লোকজনের তুলনা চলে কেবল এদের সঙ্গে...।

হাসনাত আবদুল হাই আজকে প্রথম আলোয় 'টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি' [১] নামে একটি গল্প লিখেছেন। আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, হাসনাত আবদুল হাইয়ের লেখা এটা? আমি খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে লেখাটা পড়েছি।
একজন লেখকের হাতে কেবল ছ-টা আঙুলই থাকে না, হাতে লুকানো থাকে অজস্র তাস। তিনি কোন তাসটা কেমন করে ফেলে কাকে শুইয়ে দেবেন এটা আগাম বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। তিনি তত বড় মাপের লেখক যিনি যত সূক্ষ ভাবে তার তাসের প্রয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু এই গল্পটা এতোটাই ভুল তাসে খেলা যে এই গল্পের মেয়েটিকে খুঁজে বের করার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করার প্রয়োজন পড়ে না। অতি সহজেই কুৎসিকতা প্রকট হয়ে পড়ে।

আমি হতভম্ব হয়ে ভাবছি, কেমন করে পারলেন হাসনাত আবদুল হাই এই ক্ষমাহীন অন্যায়টা করার জন্য? কেবল মাথায় ঘুরপাক খায়, লাশ পচে যায়, পোকায় ধরে- কেবল সময়ের ব্যবধান! আবদুল হাইয়ের মত মানুষেরাও নষ্ট হয়ে যান, সময়ের ব্যাপার মাত্র।


কিন্তু তারচেয়েও অবাক হচ্ছি, এই পত্রিকাটি কেমন করে পারল এই লেখাটা ছাপাতে? অনেকে বলবেন, গাফিলতি। উঁহু, আমি বলব, ইচ্ছাকৃত। এটা গাফিলতি হতেই পারে না! আমরা যারা ব্লগিং-এর নামে লেখালেখি করি, পাঠক ব্যতীত আমাদের ভুল ধরিয়ে দেয়ার কেউ থাকে না। কিন্তু পত্রিকায় অসংখ্য হাত ঘুরে একটা লেখা ছাপা হয়। জেনেশুনে এরা এই লেখাটা ছাপিয়েছে।

লেখাটা শুরু করেছিলাম যে বারিধারার ওই লোকগুলোর সঙ্গে ছাগলের তুলনা করা সমীচীন হবে না কেবল তুলনা চলতে পারে আবদুল হাই-প্রথম আলো গং-দের সঙ্গে। কিন্তু লেখাটার শেষে গিয়ে আমার কেবল মনে হচ্ছে এই তুলনাটা ঠিক হবে না। কারণ হাই-প্রথম আলো গং যেটা করেছে সেটা নির্বুদ্ধিতা না, সিরিয়াল কিলারের মত ঠান্ডা মাথায় শব্দের ছুঁরি দিয়ে আমাদের পরিচিত সেই মেয়েটিকে কুপিয়ে কুপিয়ে, রসিয়ে রসিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা।

ওহে, প্রথম আলো, একটি মেয়েকে এমন করে নির্যাতন করে খুন করলে কেমন লাগে আমি এর যুৎসই একটা উদাহরণ এখানে দিতে পারতাম কিন্তু আফসোস, তোমাদের পর্যায়ে নামার মত নষ্ট সম্ভবত এখনও হইনি...।


সহায়ক সূত্র:
১. সেই দিন আর নাই রে, প্রথম আলো-হাসনাত আবদুল হাই: http://www.ali-mahmed.com/2013/04/blog-post_2517.html

No comments: