Search

Friday, April 29, 2011

লেজার গান হাতে দুর্বল একজন মানুষ

­প্রফেসর ইউনূসকে নিয়ে এখন যা হচ্ছে তা স্রেফ ছোটলোকগিরি! এখানে যুক্তির ধার কেউ ধারছেন না। কিছু পত্রিকার নমুনা দেখে মনে হচ্ছে এরা এখনই আবিষ্কার করলেন ইউনূস একজন বিরাট চোর। অথচ নিজেদের মালিক যে দস্যু, খুনি এর খবর রাখার সময় কোথায় তাদের। আহা, মাস শেষে যে একগাদা কড়কড়ে নোট পাওয়া যাচ্ছে- এই দেশে ভাল টাকা পেলে আমরা করতে পারি না এহেন কোন কাজ নেই। পারলে মার কিডনি-লিভার-ফুসফুসও বিক্রি করে ফেলি।

ইউনূস সাহেব ধোয়া তুলসি পাতা এটা এই লেখার মূল সুর না। তাঁর ভুল থাকলে ভুল নিয়ে আলোচনা হবে, শাস্তি হবে সমস্যার তো কিছু নাই। যেমন আমার স্পষ্ট বক্তব্য, "...দারিদ্রবিমোচনের কথা বললে দরিদ্রকে ঋণ দিতে হবে সুদবিহীন..." । অবশ্য তারা ব্যবসার কথা বললে আমার কোন বক্তব্য নেই।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মানুষ এখন বাংলাদেশকে চেনে ইউনূসের সাহেবের কল্যাণে। ইউনূস সাহেব যে অভাবনীয় কান্ডটা করে ফেলেছেন সেটা আমরা সবাই জানি। তাঁর আইডিয়া এবং নোবেল প্রাপ্তি। তাঁর নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে আলোচেনা-সমালোচনা সে অন্য বিষয়। বিতর্কিত গোল নিয়ে মারাদোনাকে নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে কিন্তু আর্জেন্টিনার বিজয় আটকানো যায়নি। সবাই উদিয়মান সূর্যকে নমস্কার করে, অস্তমান সূর্যকে না।

এখন যেটা করা হচ্ছে ইউনূস সাহেবকে অপদস্ত করতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনকেও নগ্ন করা হচ্ছে। বাংলা ব্লগের পাইওনিয়ার, রাত খানিকটা গভীর হলেই একটা নামকরা কম্যুনিটি ব্লগে তাঁর মেয়ের আপত্তিকর ছবি ঘন্টার-পর-ঘন্টা ঝুলে থাকে। কেন, ওই ব্লগসাইটের চুতিয়া মডারেটররা তখন কি করে? গাঁজার কলকি ফাটায়! কেন এমনটা আমরা করছি? ইউনূস সাহেব অপরাধ করে থাকলে এই দেশের প্রচলতি আইনে এর বিচার হবে কিন্তু তাঁর পরিবারের লোকজনরা কী দোষ করেছেন!
একজন পাঠক আমার কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, শেয়ার ব্যবসার ধসের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কি ইউনূস সাহেবের চেয়ে বড়ো চোর? তাঁর এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা আমার জন্য সহজ ছিল না।
গ্রামীন ব্যাংক ওরফে ইউনূস সাহেবকে সরকার প্রতিপক্ষ করে [১] এটা শুনে হাসব না কাঁদব এটা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। কোন সরকার? প্রবাসী একজন পাঠক ক্ষোভে জানতে চেয়েছেন, যে সরকারের প্রেসিডেন্ট ৮২ বছরের, অর্থমন্ত্রীর বয়স ৭৭; সে সরকার হইচই করছে ইউনূস সাহেবের বয়স নিয়ে!

আমি গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছিলাম, সরকারের গ্রামীন ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে যেমন তোলপাড় হওয়ার কথা ছিল তেমনটি দেখা যায়নি। না-হলে কী আর করা! এই সব ক্ষেত্রে আমি মার্টিন সাহেবের কথা বিড়বিড় করি:
"...First they came for the jews. I was silent. I was not a jew. Then they came for the communists. I was silent. I was not a communist. Then they came for the trade unionists. I was silent. I was not a trade unionist. then they came for me. There was no one left to speak for me". (Martin Niemoller)
আমিও সবার মতই এটা ভেবে আরাম বোধ করব, যাক, ইউনূস সাহেব তো আমার কেউ না এবং তিনি ব্লগিও করেন না। আমার সমস্যা কোথায়!

হুমায়ূন আহমেদ গতকালের প্রথম আলোয় ইউনূস সাহেবকে নিয়ে লিখেছেন। সত্যি বলতে কি আমি অপেক্ষায় ছিলাম। হূমায়ূন আহমেদের লেখালেখির গভীরতা একদল মাপামাপি করতে থাকুক কিন্তু আমার এতে কোন সন্দেহ নাই এই মানুষটার যে কী বিপুল ক্ষমতা। মিডিয়ার ক্ষমতাও এর সঙ্গে যোগ হয়ে অটল এক অস্ত্রে পরিণত হয়।
সম্প্রতি তিনি লেখা শুরু করছেন প্রথম আলোয় 'আমরা কেউ বাসায় নেই' নামে একটি ধারাবাহিক উপন্যাস। আমি নিশ্চিত, তিনি ধারাবাহিক উপন্যাস 'আমরা কেউ বাসায় নেই' না- লিখে "টয়লেটে ফেলে আসা কিছু হলুদ ফুল" নামে ধারাবাহিক উপন্যাস চালু করলেও এই দেশের প্রথম শ্রেণীর দৈনিকগুলো লুফে নেবে। না-না, টয়লেটের হলুদ ফুল নামের জিনিসগুলো না, লেখাটা।
হুমায়ূন আহমেদ নাকি 'না' বলতে পারেন না। কথাটা মিথ্যা না। তবে কিন্তু আছে। ভাল দাম দিতে হয়। টাকা পেলে তিনি যে-কোথাও তার লেখা ঢেলে দিতে পারেন, সেটা পূর্ণিমা নাকি ইনকিলাব এটা তার কাছে বিবেচ্য-আলোচ্য বিষয় না। এখন পত্রিকাওয়ালা যদি তাকে বলেন আমাদেরকে একটা ধারাবাহিক লিখে দেন, "টয়লেটে ফেলে আসা কয়েক খাবলা হলুদ ফুল"। হুমায়ূন আহমেদ সানন্দে রাজি হবেন। আই বেট।

লেখার শক্তি ব্যতীত হুমায়ূন আহমেদ মানুষটা আমার বড়ো অপছন্দের। ভানবাজ এই মানুষটার লাজ-লজ্জা বলতে কিছু নেই- লেখায় হরহামেশা বউ, বাচ্চাকাচ্চার কথা চলে আসে। সাবেক স্ত্রী যখন সাবেক ছিলেন না তখন তাঁকে নিয়ে লিখতেন, আমার বউ পরীর মত সুন্দর- আমার বউ পরীর মত সুন্দর। এখন লেখায় চলে আসে, শাওন আমার সুটকেস গুছিয়ে দেয় তো কখনও শাওনের উপর কোন অশরীরী লোকজন (!) হুমড়ি খেয়ে থাকে ইত্যাদি।
গতকাল 'অধ্যাপক ইউনূস' নামের যে লেখাটা লিখেছেন ওখানেও আছে, ওনার সুপুত্র 'শেষ কাডাইল্যা' নিষাদ সাহেবের কথা। চ্যাংড়া নিষাদ সাহেব সাহসকে বলেন, 'সাগস'।
আমাদের দেশের আইনে এমন কোন কথা বলা নাই যে কোন লেখক তার বউ-বাচ্চার কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতে পারবেন না। কিন্তু একজন লেখকের ঔচিত্য বোধ, মর্যাদা তখন পশুর কানের মত ঝুলে পড়ে। আমার ভাষায় বলি, 'লেজার গান হাতে দুর্বল একজন মানুষ'। ক্ষমতার অপচয়!

তারপরও হাঁই তুলে হুমায়ূন আহমেদের এই সব 'পাগসগিরি-ছাগসগিরি' বিস্মৃত হওয়ার চেষ্টা করি। ইউনূস সাহেব প্রসঙ্গে এই দেশের অধিকাংশ বুদ্ধির ঢেঁকিরা যখন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে হাত গুটিয়ে তামাশা দেখছেন তখন হুমায়ূন আহমেদই সত্যের চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট উচ্চারণ করেছেন, রাজা তুই ল্যাংটা...।

সহায়ক সূত্র:
১. গ্রামীন ব্যাংকই কেন...: http://www.ali-mahmed.com/2011/04/blog-post_26.html
২. প্রফেসর ইউনূস, হুমায়ূন আহমেদ: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2011-04-28  

4 comments:

Anonymous said...

ভাইডি,
ইউনূস সাহেবরে নিয়া আপনারা যহন এত ব্যস্ত, তহন হেনায় মনের সুহে প্যারিসের রাস্তায় মোটর সাইকেলে ঘুইরা বেড়াইতেছেন৷ গতকাইলক্যা হ্যাঁর মিটিং আছিল হইদেশের অর্থমন্ত্রীর লগে৷ হেই মিটিংয়ে যেইতে গিয়া রাস্তায় বাঁধলো জ্যাম৷ উপায়ান্তর না দেইখ্যা মোটর সাইকেলে কইরাই ছুডলেন ইউনূস স্যার৷
এইবার কন ভাইডি, আমগো "হরকার" হ্যার কি ছিঁড়বার পারছে? হ্যায় কিন্তু আল্লাহ’র রহমতে ভালোই আছেন৷ আনন্দে আছেন৷
আরো হোনা যাইতাছে, আমগো মাননীয় "পেধানমনতী" বলে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ওবামা সাহেব এবং হিলারি আফার সাক্ষাৎপ্রার্থী হইবার চাইয়াও অনুমতি পায় নাই৷ ওদিকে, আমগো বিরোধী নেত্রী বলে হিলারি আফার লগে সাক্ষাতের অনুমতি পাইছে৷ ভাইডি কি ট্যার পাইতাছেন, পরিস্থিতি কোনদিকে যাইবার লাগছে?
ইউনূস স্যারের মোটর সাইকেল ভ্রমণের ছবি পাইবেন এই লিংকে: http://www.facebook.com/media/set/fbx/?set=a.211257005565418.61549.113029875388132

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

ইউনূস সাহেব ধোয়া তুলসি পাতা এটা নিয়ে কিন্তু আমার লেখা ছিল ন। যেটা আমি আমার লেখায় বলেছি।

যেমন ধরুন, ব্যরিস্টার মওদুদ সাহেব। এই মানুষটাকে পছন্দ করার কোন কারণ নাই কারণ ইনাকে আমরা 'ডিগবাজী মওদুদ' হিসাবেই ভাল চিনি। কিন্তু তাকে যখন কয়েকটা বিয়ার রাখার দায়ে আটকানো হয়েছিল তৎকালীন সরকারে নির্বুদ্ধিতা নিয়ে কারও কোন সন্দেহ ছিল না।

ঠিক তেমনি ইউনূস সাহেবকে নিয়ে সরকারের ভঙ্গিটেও আমার পছন্দ হচ্ছে না।
তাছাড়া এই দেশে ২০ হাজার কোটি টাকা যারা রাতারাতি হাপিস করে দিল তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করারও মুরোদ সরকারের নাই। তারচেয়ে জরুরি যেটা সরকারের জন্য এই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ কেন নিরন্তর সমস্যায় পড়বে!

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যে জন্য @Anonymous

mutasim said...

ডক্টর ইউনুস যখন প্রথম নোবেল পুরস্কারের জন্য মননিত হন (মানে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগের বছর), তখন আমার এক বর ভাই বলসিল......

"দেইখো... ডক্টর ইউনুস ঠিক আগামি বছর নোবেল পুরস্কার পাবে......"

পরের বছর যখন তিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন......তখন আমার সরব প্রথম ওই বড় ভাইর কথা মনে পরসিল......

ডক্টর ইউনুস্ কে তার গ্রামিন বেঙ্ক এর কর্মকান্ডের জন্য এম্নিতেই ভালো ছখে দেখতাম না......... তার উপর যখন বুঝতে পারলাম যে... তাকে সান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিরপেক্ষ ভাবে দেওয়া হয়নি...... তখন তার সাথে "ভালো" কিছু মিলাতে পারতাম না............

কিন্তু সরকার যখন তার সাথে নোংরা খেলা সুরু করল...... তখন আমার নিজের কাসেও খারাপ লাগসিল.........

হয়ত নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগে সরকার তার সাথে এরকম করলে...... এরকম খারাপ লাগত না......

এখন আমার কাসে মনে হইতাসে যে...... সারা বিসশ বাংলাদেশ কে ডক্টর ইউনুস কে নোবেল পুরস্কার দেওার কারনে না জততা চিনসে...... তার চে বেসি করে চিন্তাসে একজন নোবেল লরিয়েট কে হেনস্তা করার কারনে.........

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"সারা বিসশ বাংলাদেশকে ডক্টর ইউনুস কে নোবেল পুরস্কার দেওার কারনে না জততা চিনসে... তার চে বেসি করে চিন্তাসে একজন নোবেল লরিয়েট কে হেনস্তা করার কারনে..."
অনেকাংশে একমত। @mutasim