Search

Monday, October 4, 2010

নিধন: অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী।

১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১।

আল বদর এবং রাজাকাররা বিশ্ববিদ্যালয় ফ্ল্যাটে তাঁর খোঁজ করে পেল না। পরে তাঁর তবললীগপন্থী চাকরের কাছ থেকে আল বদররা তাঁর মালীবাগের ঠিকানা যোগাড় করে, সেখানে হাজির হলো।
দরোজায় দমাদম শব্দ। মোফাজ্জল হায়দারের ছোট ভাই লুৎফুল হায়দার দরোজা খুলে দিলে আল বদররা বলল, 'মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী কোথায়'?
লুৎফুল হায়দার বললেন, 'এখানেই আছেন'।
আল বদররা বলল, 'আমাদের অফিসার তার সঙ্গে কথা বলবেন, তাকে একটু ডেকে দিন'।

মোফাজ্জল হায়দার এবং তাঁর স্ত্রী বেরিয়ে এলেন।
মোফাজ্জল হায়দারের স্ত্রী বললেন, 'আপনাদের অফিসার কোথায়'?
আল বদররা বলল, 'গাড়ীতে আছেন'।
মোফাজ্জল হায়দারের স্ত্রী বললেন, 'আপনারা যে তাঁকে নিতে এসেছেন, ওয়ারেন্ট আছে আপনাদের সাথে'?
আল বদররা বলল, 'আছে'।
আবার মোফাজ্জল হায়দারের স্ত্রী বললেন, 'আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওকে'?
আল বদররা বলল, 'জানি না'।
মোফাজ্জল হায়দারের স্ত্রী অবাক হয়ে, ভয়ে বললেন, 'বাঃ, এটা কেমন কথা'!
মোফাজ্জল হায়দার বললেন, 'ঠিক আছে, আমি কাপড় পরে নেই'।
তাঁর স্ত্রী বললেন, 'আমিও ওর সঙ্গে যাবো'।
একজন আল বদর বলল, 'আপনি আমাদের মায়ের মতো। আপনি আর কই যাবেন। আর উনি তো আমাদের স্যার। আমরা এখনই তাকে ফেরত দিয়ে যাবো'।

মোফাজ্জল হায়দার বললেন, 'আমি ক্ষুধার্ত, আমি চাট্টিখানি খেয়ে নিতে পারি'?
আল বদররা বলল, 'আমাদের ওখানে সব ব্যবস্থা আছে। আপনি চলুন'।
মোফাজ্জল হায়দার বললেন, 'ঘড়িটা পরে নেই'।
আল বদররা বলল, 'না না, তার দরকার নেই। আপনি তো এখনই আবার চলে আসবেন'।
মোফাজ্জল হোসেন যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন। যাওয়ার আগে স্ত্রীকে বললেন, '...আমি এখনই চলে আসব'।

(মানুষটা ভুলেও অনুমান করতে পারেননি, তাঁর আর খাওয়া হবে না। এটা তাঁর শেষ যাত্রা- ওয়ান ওয়ে জার্নি, যেখান থেকে মানুষ আর ফিরে আসে না! থেকে যায় কেবল কিছু স্মৃতি!

আর এঁরা দুর্দান্ত অভিমানে রেখে যান পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে একরাশ লজ্জা!)

*১৪ ডিসেম্বর '৭১-এ আল-বদরদের হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্ত্রীদের সাক্ষাত্কারের ভিক্তিতে রচিত। (বিচিত্রা/ ১৯৭৩)
**মুক্তিযুদ্ধের কিছু ছবি: http://71photogun.blogspot.com/

2 comments:

Swakkhar Shatabda said...

thank you for the series

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আপনাকেও ধন্যবাদ, পড়ার জন্যে @Swakkhar Shatabda