এই দেশে যখন যারা ক্ষমতায় আসেন তাঁরা একটা খেলা নিয়ম করে খেলেন সেটা হচ্ছে, স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তনের খেলা।
রাস্তা-ঘাট-ব্রিজ-কালভার্ট থেকে শুরু করে কোন কিছুই বাদ থাকে না এবং এটা এঁরা করেন জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করেই। এঁরা ভাবেন, এতে জনগণ খুবই উল্লসিত হয়। আল্লা মালুম, কারা এঁদের এই সব পরামর্শ দেন, কোত্থেকে মাথায় এই পোকাটা প্রবেশ করে!
কখনও নামের কাঙ্গালপনা এমন পর্যায়ে যায়, কেবল নামের জন্য অহেতুক একটা স্থাপনা স্থাপন করা হয়। ট্যাক্স দেয় জনগণ নাম হয় রাজনীতিবিদদের। এই রাস্তা অমুক স্যার করেছেন, ওই এয়ারপোর্ট তমুক মহোদয় করেছেন। ভাব দেখে মনে হয়, এই টাকাগুলো স্যাররা তাঁদের পকেট থেকে দিচ্ছেন নতুবা নিজস্ব তালুক বিক্রি করে!
'নামের কাঙ্গালপনা অথবা ভিক্ষুকদের অমর হওয়ার বাসনা' শিরোনামে জাহেদ সরওয়ার একটা লেখা লিখেছেন, "...দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিমান বন্দরের নাম (জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) আর কোনো দেশে একজন সামরিক শাসকের নামে নেই। কিন্তু এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তখন, যখন এই নামটা পরিবর্তন করে 'শাহজালাল' নামের এক বিদেশি ফকিরের নামে রাখা হয়। কেন এই হতভাগ্য দেশটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরটার নাম 'জিয়া' রাখা হয়েছিল, আর তা পরিবর্তন করে 'শাহজালাল' রাখা হলো। এর মনস্তত্ত্ব কী...?" (মিডিয়াওয়াচ, ৫ জুলাই ২০১০/ পৃ: ৩৭)
এই বিমানবন্দরটার নাম পরিবর্তন করার আদৌ প্রয়োজন কি ছিল এটা আমাদের বোধগম্য হয় না। তারচেয়ে আরও অবোধ্য প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি, প্রতিপক্ষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এটা করা হয়েছে।
আমি অবাক হই, একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ এমনটা বলতে পারেন এটা আমার বিশ্বাস হয় না। কসম, পত্রিকায় না-পড়লে এটা আমি বিশ্বাসই করতাম না! পত্র-পত্রিকায় এসেছিল, এই নাম বদল করতে নাকি ১২০০ কোটি টাকা খরচ হবে। আসলে কতো খরচ হয়েছে আমরা জানি না, এও জানি না বিদেশের লোকজনরা এটা নিয়ে কি বেদম হাসাহাসি করেছে। ঝানু যারা এরা হয়তো চার বছরের পরের ক্যালেন্ডারে নোটও লিখে রেখেছে, এই সালে আবারও বাংলাদেশে নামের হতদরিদ্র দেশটার বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করার জরুরি চিঠি আসবে।
প্রধানমন্ত্রী কেবল একটা দলকে শিক্ষা দেয়ার জন্য যে খেলাটা খেললেন, যে বিপুল টাকার অপচয় হলো এটা কার পকেট থেকে যাবে? জনগণের। তিনি কি একবারও জানতে চেয়েছেন জনগণ এটা চাচ্ছে কি না? তিনি যদি জনগণ বলতে তাঁর লোকদেরই কেবল গোণায় ধরেন তাহলে ভিন্ন কথা। টাকা জনগণের, শিক্ষা দেবেন তিনি, বাহ বেশ তো! আফসোস, তিনি এই খেলাটার নিয়ম ভুলে গেছেন- সোজা তীরের বদলে বুমেরাং বেছে নিলেন। এই বুমেরাং, শিক্ষাটা ঠিক ফিরে আসবে তাঁর কাছে। না-চাইতেই জলের মত নিরস্ত্র একজন মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন।
'পদ্মা সেতু' ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামে করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা জানি সুপারিশ হচ্ছে তবলার ঠুকঠাক। বাদ্যের সঙ্গে গানও হবে- সুপারিশের পর এটা বাস্তবায়িতও হবে।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হল বঙ্গবন্ধু পরিবারের তিন সদস্যের নামে রাখা হয়েছে। ভাসানী নভোথিয়েটার, এমন কতশত উদাহরণ! লিখে শেষ করা যাবে না!
এমন না এটা কেবল এরাই করছেন, যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন তাঁরাই করেন। আগের সরকারও করেছেন বলেই এই সরকারও করার অর্থ হলো আগের সরকারের পর্যায়ে নেমে আসা- এতে আগের সরকারের জয়, এই সরকারের পরাজয়। মোটা দাগে বললে, একজন আমাকে গালি দিল, আমিও দিলাম মানেই আমাকে মানুষটা তার মত করতে সফল হলো। আর এই সব করে করে দরিদ্র দেশের দরিদ্র জনগণের কষ্টার্জিত টাকা বানের জলে ভেসে যায়।
আমি বলি কি, এই স্থাপনার নাম বদলের ছোট খেলাটা দোহাই আর খেলবেন না। খেলতে চাইলে বড়ো খেলা খেলুন, গোটা দেশটার নামই ক্ষমতাকাল অনুযায়ী খানিকটা পাল্টে দিন। তাহলে আর ছোটখাটো স্থাপনা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় না। যেমন ধরুন, পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের নাম পাল্টে 'আওয়ামি বাংলাদেশ' রাখা হলো অথবা 'জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশ'।
অন্য দলগুলোকে আমি গোণায় ধরছি না কারণ ঘুরেফিরে এই দুই দলই এই দেশ শাসন করবেন কেয়ামতের আগ পর্যন্ত। এই-ই আমাদের নিয়তি। আমরা আমাদের নিয়তি মেনে নিয়ে এই আবেদনই জানাই, দোহাই আপনাদের খেলা আপনারা খেলুন কিন্তু আমাদের কষ্টার্জিত টাকা নর্দমায় ফেলবেন না। 'রামের সুমতির' মতো দেরিতে হলেও আপনাদের সুমতি হোক। আমীন।
ছবি সূত্র: গুগল
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Wednesday, August 11, 2010
স্থাপনার নাম পরিবর্তন না করে গোটা দেশটার নামই পাল্টে দিন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
4 comments:
নসিম হিজাজীর একটা উপন্যাস এ একটা কথা পরসিলাম ......কথা টা হচ্ছে ... "কোনো জাতির বেক্তি বিশেষের দ্বারা কৃত কোনো ভুল তকদির ক্ষমা করে...কিন্তু কোনো জাতির সামগ্রিক ভাবে করা ভুল তকদির কখনই ক্ষমা করে না...."
আমার সবসময় মনে হয় যে..আমরা দ্বিতীয় ভুল টাই বার বার করে চলছি .....কারণ বি.এন.পি.- আওয়ামী লিগ কে তো আমরাই ভোট দিয়ে ক্ষমতাই অনি.....
"ঘুরেফিরে এই দুই দলই এই দেশ শাসন করবেন কেয়ামতের আগ পর্যন্ত। এই-ই আমাদের নিয়তি।"
আমার মনে হয় ৫০-৬০ বছর পর আমাদের এরকম অবস্তা থাকবে না.....তখন অন্তত মানুষ এতটুকু বুঝবে....কোনটায় নিজের ভালো....আর কোনটায় নিজের মন্দ.......
"আমার মনে হয় ৫০-৬০ বছর পর আমাদের এরকম অবস্তা থাকবে না.....তখন অন্তত মানুষ এতটুকু বুঝবে....কোনটায় নিজের ভালো....আর কোনটায় নিজের মন্দ....... "
কি জানি, জানি না...।
এরশাদের মতো একজন মানুষ তিন তিনটা আসন থেকে দাঁড়ান, আবার তিনটা থেকেই বিজয়ী হন; তাও একটা মূল ঢাকার আসন থেকে, যেখানে গিজগিজ করছে শিক্ষিত মানুষ।
বিচিত্র একটা দেশ। @mutasim
ভাবছি, একটা আকিকারও তো দাওয়াত পেলাম না! :)
দাওয়াত পাননি কারণ হচ্ছে, এটা করতে গেলে দেশের সমস্ত ছাগল শেষ হয়ে যাবে। আবার ছাগলেরও আমাদের বড়ো প্রয়োজন...@সুব্রত
Post a Comment