আমার ইচ্ছা ছিল বৈদেশ পর্বটা একটানে লিখে যাব কিন্তু দুবাই এয়ারপোর্টে স্টপওভারের মত এই পর্বের লেখারও একটা স্টপওভার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বৈদেশ পর্ব: সাত [১] নিয়ে তীব্র জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল একজন কঠিন একটা মেইল করেছেন। এটাকে মেইল না বলে বলা যেতে পারে খড়গ দিয়ে ধড় আলাদা করে ফেলা। না, ভুল বললাম, তাহলে যন্ত্রণাটা টের পাওয়া যেত না। বলা যেতে পারে চাপাতি দিয়ে কোপানো। তিনি আমার এই পর্বের লেখা নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এটা পড়ে আমি স্তম্ভিত, ক্রুদ্ধ!
ইতিপূর্বে আমাকে নিয়ে বা আমার লেখা নিয়ে কেউ কেউ অতি উৎকট ভঙ্গি প্রকাশ করেছেন- কেউ কুৎসিত ছবি দিয়েছেন, তো কেউ ততোধিক কুৎসিত কথা লিখেছেন। যেসব সহযোদ্ধাদের সঙ্গে লেখালেখি করেছি তারা সকালে ফোনে চমৎকার কথা বলে অন্য নামে বিকালে ঈর্ষায় কঠিন লেখা লিখেছেন। এই সব আমার গা সওয়া। এদের ভঙ্গি চেনা, এদের দৌড় জানা। এদের প্রতি আলাদা কোনো টানও নেই আমার।
কিন্তু এখনকার বিষয়টা খানিকটা অন্য রকম। এখন যে মানুষটা আমার প্রতি যে ধারণা পোষণ করেছেন, তিনি আমার অসম্ভব পছন্দের একজন মানুষ ছিলেন বলেই আমার অনুভূতিটা অনেকটা খুব কাছ থেকে ছুঁরি খাওয়ার অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা আমার নতুন!
প্রশ্ন আসতে পারে মেইলে এই সব না লিখে এখানে কেন? তাঁর অন্য একটা মেইল "...রাতে আমার খিদে পায় বেশি, মা সবসময় আমার বিছানার পাশে বিস্কুটের টিন রাখতেন, এদেশ আসার আগ পর্যন্ত..."। এটা পড়ে আমার বুক ভেঙে কান্না আসছিল। আমার নয় ইঞ্চি মনিটর তখন ঝাপসা। এই মানুষটাই যখন এমন ভাষায় আমাকে আক্রমণ করেন তখন দরদর করে আমার শরীর থেকে রক্ত পড়ে। আমি ভেজা চোখে সেই রক্ত পড়া দেখি, আমার মোটেও ইচ্ছা করে না রক্তপাত থামাতে। আমার ইচ্ছা করে না তাঁকে বলি, তুমি আমাকে এভাবে ছুঁরি মারলে কেন? কার জন্যে?
ভাল হতো মেইলটার আদ্যেপান্ত এখানে তুলে দিতে পারলে। নীতিগত কারণে এটা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আর মেইলে উত্তর দিতে আমার আগ্রহ বোধ হয়নি কারণ এই মানুষটা নিজেও জানেন না তিনি মেইলে কী লিখেছেন! কী তীব্র ভঙ্গিতেই না আমাকে আক্রমণ করেছেন! দিনের-পর-দিন, মাসের-পর-মাস, বছরের-পর-বছর ধরে আমার লেখার মাধ্যমে আমাকে জানার পরও আমার সম্বন্ধে কী নীচু ধারণা! হা ঈশ্বর! আমার ধারণা, তিনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন, প্রার্থনা করি, ঠান্ডা মাথায় নিজের মেইলটা আবারও পড়লে খানিকটা আমাকে বুঝতে পারবেন।
তিনি আরবের কোনো এক দেশে থাকেন। সেই দেশ তাঁকে অনেক কটা বছর থাকতে দিয়েছে, লালন করেছে। সেই দেশের প্রতি তাঁর আছে সুগভীর মায়া। থাকুক, এতে আমার কোন বক্তব্য নাই কিন্তু তাঁর এই আবেগ আমাকেও স্পর্শ করবে এটা ভাবাটা বোকামী!
আমার লেখার যে অংশ নিয়ে তাঁর তীব্র আপত্তি তা হচ্ছে:
তো, দুবাই এয়ারপোর্ট দেখে আমি বিরক্ত। সুবিশাল অথর্ব এক জিনিস বানিয়েছে! ওই অনুযায়ী যথেষ্ঠ লোকবল চোখে পড়েনি। অসংখ্য পুরুষ নামের মহিলা চোখে পড়েছে। পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পিচ্ছিল সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে হিজড়াদের মত হাঁটাহাঁটি করতে থাকা লোকজন বাসাবাড়ির মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাত্রির লম্বা লাইন অথচ ডেস্কে দায়িত্বে থাকা লোকগুলো নিজেদের মধ্যে ফালতু আলাপ করছে। এটা বোঝাই যাচ্ছে কারণ একজন অন্যজনের গায়ে হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
যাত্রির লাইন লম্বা হয়, এতে এদের কিছুই যায় আসে না। স্রেফ দম্ভ, বেশুমার টাকার অহংকার! এই অসভ্যদের বোঝার এই বুদ্ধিটুকু কখনই হবে না যে যাত্রিরা দাঁড়িয়ে আছে এঁরা এই মুহূর্তে এদের অতিথি। আমি অন্য সময়ে প্রয়োজনে কঙ্গো এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করব কিন্তু এই সব অসভ্যদের দেশে ব্লাডার হালকা করতেও আগ্রহী হবো না। শপথ আমার লেখালেখির।
তিনি আমাকে মেইলে জানাচ্ছেন, "এই এয়ারপোর্ট দিয়ে প্রতিদিন দেড়লাখ যাত্রী যাতায়ত করেন"।
তো? তাতে আমার কী! দেড়লাখ যাত্রী যাতায়ত করলেই এই এয়ারপোর্টটা দেখে আমাকে বিগলিত হতেই হবে কেন? কারও শতকোটি টাকা থাকলেই মানুষটা একজন ভালমানুষ হবেন এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে? তার সব কিছুতেই লাফাতে হবে কেন?
জার্মানির 'ডুজলডর্ফ' এয়ারপোর্টের তেমন জৌলুশ নেই কিন্তু কোথাও কোনো অসঙ্গতি আমার চোখে পড়েনি। সম্ভবত ২ মিনিট লেগেছে আমার ইমিগ্রেশন পার হতে। আমার লাগেজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। জানাবার সঙ্গে সঙ্গে অন্তত চার-পাঁচজন মানুষ ছুটে এসেছিলেন। একজন অন্যজনকে একেকটা বিষয় চেক করার জন্য বলছিলেন। এঁরা বারবার আমাকে বলছিলেন, তোমার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নাই, আমরা দেখছি। এরা কিন্তু এমিরাটসের লোক ছিলেন না, ছিলেন বিমান বন্দরের।
কেউ যদি বলে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বানিয়েছে 'বুর্জ খলিফা'।
তো? এটা দেখে আমাকে কাত হয়ে যেতে হবে কেন? আমার কাছে এটা স্রেফ একটা জঞ্জাল! আমার কোনই আগ্রহ জাগে না যে এই জঞ্জালটা দেখে আসি। এই সব আবর্জনা দেখার জন্য অনেক বড়ো মাপের মানুষ রয়ে গেছেন, তাঁদের জন্য না-হয় থাকুক।
আমি এমিরাটসে দুবাই হয়ে যাচ্ছি এটা শুনে মাহাবুব ভাই নামের এক সিনিয়র বলেছিলেন, পারলে টিকেটটা বদলে ফেলেন কারণ দুবাই এয়ারপোর্ট একটা কুখ্যাত এয়ারপোর্ট। তিনি কর্পোরেট ভুবনের একজন মানুষ, তাঁকে হরদম এদিক-ওদিক যেতেই হয়। কিন্তু তখন তাঁর কথাটা তেমন গা করিনি।
আমার সঙ্গে ইউএন এর যে মুকিত বিল্লাহ ছিলেন তিনিও বলছিলেন পারলে তিনিও টিকেটটা বদলে ফেলতেন। কিন্তু আমাদের কারও এই উপায় ছিল না কারণ টিকেটগুলো কাটা হয়েছিল আমন্ত্রণকারীদের ইচ্ছায়, সুবিধায়।
মূল যে অংশটা নিয়ে ওনার ক্ষোভ, আমি কেন এটা লিখেছি, "অসংখ্য পুরুষ নামের মহিলা চোখে পড়েছে, পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পিচ্ছিল সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে হিজড়াদের মত হাঁটাহাঁটি করতে থাকা লোকজন যেন বাসাবাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে"।
আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছিল, এখন আমি কি এটা বানিয়ে বানিয়ে লিখব, ওহ, কী একেকটা পুরুষ দেখলুম- সিংহাবলোকনন্যায়! এই পোশাকে একেকজনকে কী চমৎকারই না লাগছিল গো। আমি 'মুগধ'!
আচ্ছা, আমাদের এয়ারপোর্টে সব লোকজন লুঙি পরে থাকলে অন্যরা এই নিয়ে মন্তব্য করলে কি তার মুখ চেপে ধরা হবে, নাকি শূলে চড়ানো হবে?
তিনি আমাকে মেইলে জানিয়েছেন, এরা কেনো লম্বা কাপড় পরে থাকে। এটা এই প্রথম তাঁর কাছ থেকে জানলাম এমন না। চামড়াপোড়া গরম লু-বাতাস যখন বয়, বাতাসের সঙ্গে উড়তে থাকে গরম বালি; এ থেকে বাঁচার জন্য গোল চাকতিতে আটকে থাকা মাথার বড়ো কাপড়টা দিয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে উবু হয়ে থাকতে হয়।
সে তো মরুভূমির কাহিনি! দুবাই এয়ারপোর্টে, এখানে মরুভূমি এলো কোত্থেকে? তারপরও কারও ইচ্ছা হলে একটা না দুইটা পরুক, ইচ্ছা হলে আরও গা দুলিয়ে হাঁটুক কিন্তু এটা নিয়ে আমি লিখতে পারব না এমন টিপসই আমি কখন কোথায় দিলাম?
আমার লেখালেখি তার সামনে কাউকে দাঁড়াতে দেয় না, আমাকেও না। লেখা আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমি না। সাদাকে সাদা বলব, কালোকে কালো। জনে জনে জিগেস করে আমাকে লিখতে হবে নাকি!
তাঁর তীব্র ক্ষোভ, আমি হিজড়াদের সঙ্গে উদাহরণ কেন দিলাম। তিনি কঠিন ভাষায় আমাকে এটাও জানিয়ে দিলেন, "হিজড়া না হয়ে আমি পুরুষ হয়ে জন্মেছি বলেই কী আমার এই অহংকার? হিজড়াদের প্রতি আমি তাচ্ছিল্য করেছি ইত্যাদি ইত্যাদি"।
আমার কাছে এদের হাঁটার ভঙ্গিটা এমন মনে হয়েছে তাই আমি হিজড়াদের সঙ্গে তুলনা করেছি। কেউ যখন চোখ থাকার পরও অন্ধের মত চলাফেরা করে তখন আমরা এটাই বলি, দেখো, কী অন্ধের মত হাঁটছে। এর অর্থ এটা না কোন অন্ধের প্রতি তাচ্ছিল্য করা। তাচ্ছিল্যটা করা হচ্ছে সেই মানুষটার প্রতি যে চোখ থাকার পরও অন্ধের মত ভঙ্গি করছে।
একটা আরবী প্রবাদ আছে, 'কোন ল্যাংড়া-লুলা দেখলে তাকে একটা লাথি দেবে কারণ সৃষ্টিকর্তা যাকে করুণা করেননি তাকে আমার করুণা করার প্রয়োজন কি'।
এই উদাহরণটাকে কি আমরা আক্ষরিক অর্থে গ্রহন করব? রূপক অর্থে কি কিছুই বলা যাবে না, মুখে তালা!
হিজড়া নামের ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের [২] নিয়ে আমি রসিকতা করতে যাব কোন দুঃখে! এঁদের যখন দেখি তখন নিজেকে বড়ো লজ্জিত মনে হয়, কেবল মনে হয়, কী অপার সৌভাগ্য নিয়েই না জন্মেছি। এঁদের নিয়ে এই উদাহরণ দেয়ায় যে মানুষটা আক্ষরিক অর্থে গ্রহন করেন তাঁর সঙ্গে ফিযুল বুলি কপচাবার চেষ্টা করতে আগ্রহ বোধ করি না। আমার এই অমানুষ [২] লেখাটা নিয়েও হইচই করা চলে। কেন আমি হিজড়াদের 'অমানুষ' বললাম? এরা কী মানুষ না? ইত্যাদি ইত্যাদি।
আহ, এইখানে এসে মানুষটার সঙ্গে আমার আর কোন যোগ থাকে না! আফসোস, বড়ই আফসোস। কপাল আমার, প্রিয় সব কিছু আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়! ইনি লিখেছেন, "যে রেমিট্যান্সের টাকায় গড়ে উঠা বিমানবন্দরের সুশীতল হাওয়া গায়ে মাখিয়ে আবেদ খান, আনিসুল হক, আলী মাহমেদরা বৈদেশ যাত্রা করেন"।
নো, নো স্যার, আপনি এখানে দুইটা ভুল করলেন!
এক: আনিসুল হক, আবেদ খানের সঙ্গে আমাকে গুলিয়ে ফেলে। এঁরা অনেক বড়ো মাপের মানুষ, এঁদের চোখে থাকে রঙিন চশমা। এঁদের সঙ্গে তিন টাকা দামের কলমবাজ আলী মাহমেদের তুলনা করাটা হাস্যকর। আমার কলম ড্যাম চিপ! রি-সেল ভ্যালুও নেই এঁদের কলমের আছে। বাজার উঠানামা করে বলে এরা হরদম কলম কেনাবেচা করতেই থাকেন কারণ বাজারে এর কদর আছে। এরা মুখিয়ে আছেন আপনাদের মত পাঠকদের জন্য চমৎকার সব কথা প্রসব করার জন্য। আর আমার কলম কেউ সাড়ে তিন টাকা দিয়েও কিনতে চাইবে না।
দুই: দুঃখিত স্যার, আমি আপনাদের এই অর্জনটাকে খাটো করছি না কিন্তু এটা আপনার ভ্রান্ত ধারণা, রেমিট্যান্সের টাকায় এয়ারপোর্ট-রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ করা হয় না।
আমি কি আপনাকে মনে করিয়ে দেব, এবারের বাজেটের ১,৩২,১৭০ কোটি টাকার মধ্যে আয়ের উৎসগুলো কি কি? জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, বহির্ভূত কর হচ্ছে ১,৩২,১৭০ কোটি টাকার মধ্যে ৬০ ভাগ! অর্থাৎ ৬০ ভাগ টাকা আসছে কেবল আমাদের দেয়া কর থেকে। এই টাকাটা আসে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে আমাদের কাছ থেকেই।
এটা আসে টাট্টিখানা হালের ওয়শরুমে আমরা ঘুম থেকে উঠে যখন দাঁত মাজি তখন থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাবার পূর্বে যে টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করি সেখান থেকে। এই টাকা থেকেই সরকার রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ-বিমানবন্দর বানায়, আপনাদের রেমিট্যান্সের টাকায় না।
রেমিট্যান্সের টাকায় দেশের চাকাটা বনবন করে ঘুরতে থাকে এটা সত্য, চাকাটায় আলাদা গ্রীজ যোগ হয় এও সত্য। আপনি বিমানবন্দরের হাওয়ার কথা বললেন বলেই এই উদাহরণটা দেয়া।
পোস্টের শুরুতে বলেছিলাম কাছ থেকে ছুঁরি মারার কথা এবং মেইলে ছোট্ট করে লিখেছিলামও, অতি পক্ষপাতদুষ্ট মানুষদের সঙ্গে কথা বলে আমি আরাম পাই না। এটা বলার কারণ হচ্ছে, আপনি এদের জন্য গভীর মমতা দেখিয়েছেন দেখে আমার ভাল লাগছে কিন্তু আপনি কি আমার এই পোস্টেই এটা পড়েননি? "...আমার প্রয়োজন ঘুম। কারণ এই সমস্তটা রাত আমার কেটেছে নির্ঘুম"।
আমার জার্নিটা ছিল প্রায় ২২ ঘন্টার! একফোঁটা আমি ঘুমাতে পারিনি। পরের সারাটা দিন আমার ছুটাছুটি, এর পরের দিনই আবার আমাকে ফেরার জন্য ছুটতে হয়েছে। আমার ঘুমাতে না পারার কষ্টটা আপনাকে দেখি বেদনাহত করল না! কই, মেইলে আপনি দেখি এই বিষয়ে একটা শব্দও ব্যয় করলেন না! কেন?
আপনার কি ধারণা জাগতিক কষ্টে কাবু একজন মানুষের মত আমার ঘুমের প্রয়োজন হয় না? নাকি তিন টাকা দামের 'কলমবাজ', এরা কেবল এই গ্রহে আসেন কৌপিন পরে উবু হয়ে লেখালেখি করে গ্রহ উদ্ধার করতে? এদের জাগতিক আর কোন চাহিদা নাই?
যেখানে একজনের যাতে ঘুম ভেঙে না যায় সেই কারণে মহা পবিত্র গ্রন্হ নিঃশব্দে পাঠ করার জন্য বলা হয় সেখানে আপনি একটা মানুষকে ঘুমাতে দেবেন না, চোখের পাতা এক করতে দেবেন না। বাহ, বেশ তো! যথার্থ কাগজপত্র-হোটেল কূপন থাকার পরও আপনি আমাকে হোটেলে যেতে দেবেন না, ঘুমাবার সুযোগ দেবেন না, কারণ কী, বাহে! কেবল যে ঘুমাতে দেবেন না এই-ই না; কোনো ব্যাখ্যাও দেবেন না, কি আমার অপরাধ? কোন কারণে আমার সঙ্গে এই আচরণ করা হচ্ছে? একজন ফাঁসির আসামীকেও তো তার অপরাধ জানিয়ে দেয়া হয়, কি কারণে তার ফাঁসি হচ্ছে।
আমার খুব দায় পড়েছে এদেরকে সভ্য বলার জন্য।
আরব জাতি নিয়ে আপনি চমৎকার সব কথা বলেছেন, শুনে প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার কথা। এরা আপনাদেরকে থাকার জায়গা দিচ্ছে ইত্যাদি। ভুল! এরা মানবতার কারণে আপনাদেরকে থাকার জায়গা দিচ্ছে এমনটা না, দিচ্ছে দায়ে পড়ে। কারণ এদের লোক প্রয়োজন। এমন অনেক কাজ আছে যেটা সে দেশের লোকজন করতে চায় না। আর এটা তো স্রেফ একটা লেনদেন। আমরা শ্রম দিচ্ছি এরা দিচ্ছে শ্রমের দাম। এখানেও এরা গুরুতর অন্যায় করছে, শ্রমের যথার্থ মূল্যটুকুও এরা দিচ্ছে না।
আমরা দেখেছি, কোন মুসলমান দেশে এরা কতটা আর্থিক সহায়তা দেন। আমাদের প্রকৃতিক দূর্যোগে এদের দানের বহর দেখে হাসি চেপে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে।
কেন যেন আপনার এই বিপুল উল্লাস আমাকে স্পর্শ করছে না। আরব জাতির প্রতি আপনার প্রালঢালা আবেগ থাকতে পারে, আমার নাই। আমি অধিকাংশ আরবদের পছন্দ করি না।
এরা একসময় বীর জাতি ছিল কিন্তু এখন একটা কাপুরুষ জাতি, এহেন কোন অনাচার-অন্যায় নাই যেটা এরা করে না। মুসলমানদের ক্ষতি অন্য ধর্মের লোকজনরা যতটা না করেছে তারচেয়ে অনেক বেশি এরা করেছে। ইরাকের পবিত্র স্থানগুলো যখন অপবিত্র হচ্ছিল তখন এরা বসে বসে তামাশা দেখেছে। আমি অপেক্ষায় আছি, এদের পবিত্র স্থানগুলো যখন অপবিত্র হবে সেটা দেখার জন্য, হিস্ট্রি রিপিট।
আমেরিকা ইসরাইল যখন সভ্যতার নমুনা দেখায় [৩] তখন এরা নিশ্চয়ই উট দৌড়াবার উল্লাস বোধ করে। করে না? উট দৌড়াচ্ছে, স্পীড-স্পীড মো(র) স্পীড। এতে জকির প্রাণ গেল নাকি উটের সঙ্গে বেঁধে রাখা শিশুটির তাতে কি আসে যায়?
ইসলাম ধর্মের দন্ড ধরে রাখা সৌদি আরবদের ধর্মের নমুনা দেখে চোখে জল চলে আসে। গভীর রাতে 'মুতোয়া' নামের পুলিশ বাঙালির ঘরে ঢুকে জিনিস তছনছ করে। খুঁজে পায় তাঁর মায়ের ছবি, সেই মানুষটার সামনে তাঁর মার ছবিটা ছিড়ে ফেলে বলে, হারাম। সেই মানুষটা কিচ্ছু বলে না কেবল দাঁত দিয়ে কামড়ে নিজের হাত থেকে রক্ত ঝরাতে থাকে।
এই বদমাশদের কে এই অধিকার দিয়েছে, জোর করে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে থানায় নামাজ পড়িয়ে বন্ড সই দিয়ে ছেড়ে দিতে? ইসলামে কোথায় এটা লেখা আছে?
ইরান একাই লড়ে যাচ্ছে, একে থামাতে হবে। আরব জাতি আছে না! সৌদি আরবের মত মহান ধার্মিক দেশ আছে কোন দিনের জন্য? ইরানে বোমা হামলা চালাবার জন্য ইসরাইলকে বিমান চলাচলের করিডর দিচ্ছে, জায়গা করে দিচ্ছে সৌদি আরব।
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো সাড়ে ২২শ কিলোমিটারের দূরুত্বে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্রের বাইরে। এখন সৌদি আরবের বদান্যতায় ইসরাইলি বিমান অতি সহজেই ইরানে বোমা ফেলতে পারবে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারবে। আমরা ইরানি শিশুদের দেখব ভাঙাচোরা পুতুলের মত মরে পড়ে থাকতে। যেমনটা আমরা দেখেছি প্যালেস্টাইনে, ইরাকে [৩]।
এমন আরব জাতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় (!) আমার মাথা নত হয়ে আসে। ইচ্ছা করে নিজেই নিজেকে খুন করে ফেলি...।
*বৈদেশ পর্ব, নয়: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_01.html
সহায়ক লিংক:
১. বৈদেশ পর্ব: সাত: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_3252.html
২. অমানুষ: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_30.html
৩. সভ্যতা: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_493.html
ইতিপূর্বে আমাকে নিয়ে বা আমার লেখা নিয়ে কেউ কেউ অতি উৎকট ভঙ্গি প্রকাশ করেছেন- কেউ কুৎসিত ছবি দিয়েছেন, তো কেউ ততোধিক কুৎসিত কথা লিখেছেন। যেসব সহযোদ্ধাদের সঙ্গে লেখালেখি করেছি তারা সকালে ফোনে চমৎকার কথা বলে অন্য নামে বিকালে ঈর্ষায় কঠিন লেখা লিখেছেন। এই সব আমার গা সওয়া। এদের ভঙ্গি চেনা, এদের দৌড় জানা। এদের প্রতি আলাদা কোনো টানও নেই আমার।
কিন্তু এখনকার বিষয়টা খানিকটা অন্য রকম। এখন যে মানুষটা আমার প্রতি যে ধারণা পোষণ করেছেন, তিনি আমার অসম্ভব পছন্দের একজন মানুষ ছিলেন বলেই আমার অনুভূতিটা অনেকটা খুব কাছ থেকে ছুঁরি খাওয়ার অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা আমার নতুন!
প্রশ্ন আসতে পারে মেইলে এই সব না লিখে এখানে কেন? তাঁর অন্য একটা মেইল "...রাতে আমার খিদে পায় বেশি, মা সবসময় আমার বিছানার পাশে বিস্কুটের টিন রাখতেন, এদেশ আসার আগ পর্যন্ত..."। এটা পড়ে আমার বুক ভেঙে কান্না আসছিল। আমার নয় ইঞ্চি মনিটর তখন ঝাপসা। এই মানুষটাই যখন এমন ভাষায় আমাকে আক্রমণ করেন তখন দরদর করে আমার শরীর থেকে রক্ত পড়ে। আমি ভেজা চোখে সেই রক্ত পড়া দেখি, আমার মোটেও ইচ্ছা করে না রক্তপাত থামাতে। আমার ইচ্ছা করে না তাঁকে বলি, তুমি আমাকে এভাবে ছুঁরি মারলে কেন? কার জন্যে?
ভাল হতো মেইলটার আদ্যেপান্ত এখানে তুলে দিতে পারলে। নীতিগত কারণে এটা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আর মেইলে উত্তর দিতে আমার আগ্রহ বোধ হয়নি কারণ এই মানুষটা নিজেও জানেন না তিনি মেইলে কী লিখেছেন! কী তীব্র ভঙ্গিতেই না আমাকে আক্রমণ করেছেন! দিনের-পর-দিন, মাসের-পর-মাস, বছরের-পর-বছর ধরে আমার লেখার মাধ্যমে আমাকে জানার পরও আমার সম্বন্ধে কী নীচু ধারণা! হা ঈশ্বর! আমার ধারণা, তিনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন, প্রার্থনা করি, ঠান্ডা মাথায় নিজের মেইলটা আবারও পড়লে খানিকটা আমাকে বুঝতে পারবেন।
তিনি আরবের কোনো এক দেশে থাকেন। সেই দেশ তাঁকে অনেক কটা বছর থাকতে দিয়েছে, লালন করেছে। সেই দেশের প্রতি তাঁর আছে সুগভীর মায়া। থাকুক, এতে আমার কোন বক্তব্য নাই কিন্তু তাঁর এই আবেগ আমাকেও স্পর্শ করবে এটা ভাবাটা বোকামী!
আমার লেখার যে অংশ নিয়ে তাঁর তীব্র আপত্তি তা হচ্ছে:
তো, দুবাই এয়ারপোর্ট দেখে আমি বিরক্ত। সুবিশাল অথর্ব এক জিনিস বানিয়েছে! ওই অনুযায়ী যথেষ্ঠ লোকবল চোখে পড়েনি। অসংখ্য পুরুষ নামের মহিলা চোখে পড়েছে। পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পিচ্ছিল সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে হিজড়াদের মত হাঁটাহাঁটি করতে থাকা লোকজন বাসাবাড়ির মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাত্রির লম্বা লাইন অথচ ডেস্কে দায়িত্বে থাকা লোকগুলো নিজেদের মধ্যে ফালতু আলাপ করছে। এটা বোঝাই যাচ্ছে কারণ একজন অন্যজনের গায়ে হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
যাত্রির লাইন লম্বা হয়, এতে এদের কিছুই যায় আসে না। স্রেফ দম্ভ, বেশুমার টাকার অহংকার! এই অসভ্যদের বোঝার এই বুদ্ধিটুকু কখনই হবে না যে যাত্রিরা দাঁড়িয়ে আছে এঁরা এই মুহূর্তে এদের অতিথি। আমি অন্য সময়ে প্রয়োজনে কঙ্গো এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করব কিন্তু এই সব অসভ্যদের দেশে ব্লাডার হালকা করতেও আগ্রহী হবো না। শপথ আমার লেখালেখির।
তিনি আমাকে মেইলে জানাচ্ছেন, "এই এয়ারপোর্ট দিয়ে প্রতিদিন দেড়লাখ যাত্রী যাতায়ত করেন"।
তো? তাতে আমার কী! দেড়লাখ যাত্রী যাতায়ত করলেই এই এয়ারপোর্টটা দেখে আমাকে বিগলিত হতেই হবে কেন? কারও শতকোটি টাকা থাকলেই মানুষটা একজন ভালমানুষ হবেন এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে? তার সব কিছুতেই লাফাতে হবে কেন?
জার্মানির 'ডুজলডর্ফ' এয়ারপোর্টের তেমন জৌলুশ নেই কিন্তু কোথাও কোনো অসঙ্গতি আমার চোখে পড়েনি। সম্ভবত ২ মিনিট লেগেছে আমার ইমিগ্রেশন পার হতে। আমার লাগেজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। জানাবার সঙ্গে সঙ্গে অন্তত চার-পাঁচজন মানুষ ছুটে এসেছিলেন। একজন অন্যজনকে একেকটা বিষয় চেক করার জন্য বলছিলেন। এঁরা বারবার আমাকে বলছিলেন, তোমার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নাই, আমরা দেখছি। এরা কিন্তু এমিরাটসের লোক ছিলেন না, ছিলেন বিমান বন্দরের।
কেউ যদি বলে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বানিয়েছে 'বুর্জ খলিফা'।
তো? এটা দেখে আমাকে কাত হয়ে যেতে হবে কেন? আমার কাছে এটা স্রেফ একটা জঞ্জাল! আমার কোনই আগ্রহ জাগে না যে এই জঞ্জালটা দেখে আসি। এই সব আবর্জনা দেখার জন্য অনেক বড়ো মাপের মানুষ রয়ে গেছেন, তাঁদের জন্য না-হয় থাকুক।
আমি এমিরাটসে দুবাই হয়ে যাচ্ছি এটা শুনে মাহাবুব ভাই নামের এক সিনিয়র বলেছিলেন, পারলে টিকেটটা বদলে ফেলেন কারণ দুবাই এয়ারপোর্ট একটা কুখ্যাত এয়ারপোর্ট। তিনি কর্পোরেট ভুবনের একজন মানুষ, তাঁকে হরদম এদিক-ওদিক যেতেই হয়। কিন্তু তখন তাঁর কথাটা তেমন গা করিনি।
আমার সঙ্গে ইউএন এর যে মুকিত বিল্লাহ ছিলেন তিনিও বলছিলেন পারলে তিনিও টিকেটটা বদলে ফেলতেন। কিন্তু আমাদের কারও এই উপায় ছিল না কারণ টিকেটগুলো কাটা হয়েছিল আমন্ত্রণকারীদের ইচ্ছায়, সুবিধায়।
মূল যে অংশটা নিয়ে ওনার ক্ষোভ, আমি কেন এটা লিখেছি, "অসংখ্য পুরুষ নামের মহিলা চোখে পড়েছে, পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পিচ্ছিল সাদা কাপড় গায়ে দিয়ে হিজড়াদের মত হাঁটাহাঁটি করতে থাকা লোকজন যেন বাসাবাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে"।
আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছিল, এখন আমি কি এটা বানিয়ে বানিয়ে লিখব, ওহ, কী একেকটা পুরুষ দেখলুম- সিংহাবলোকনন্যায়! এই পোশাকে একেকজনকে কী চমৎকারই না লাগছিল গো। আমি 'মুগধ'!
আচ্ছা, আমাদের এয়ারপোর্টে সব লোকজন লুঙি পরে থাকলে অন্যরা এই নিয়ে মন্তব্য করলে কি তার মুখ চেপে ধরা হবে, নাকি শূলে চড়ানো হবে?
তিনি আমাকে মেইলে জানিয়েছেন, এরা কেনো লম্বা কাপড় পরে থাকে। এটা এই প্রথম তাঁর কাছ থেকে জানলাম এমন না। চামড়াপোড়া গরম লু-বাতাস যখন বয়, বাতাসের সঙ্গে উড়তে থাকে গরম বালি; এ থেকে বাঁচার জন্য গোল চাকতিতে আটকে থাকা মাথার বড়ো কাপড়টা দিয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে উবু হয়ে থাকতে হয়।
সে তো মরুভূমির কাহিনি! দুবাই এয়ারপোর্টে, এখানে মরুভূমি এলো কোত্থেকে? তারপরও কারও ইচ্ছা হলে একটা না দুইটা পরুক, ইচ্ছা হলে আরও গা দুলিয়ে হাঁটুক কিন্তু এটা নিয়ে আমি লিখতে পারব না এমন টিপসই আমি কখন কোথায় দিলাম?
আমার লেখালেখি তার সামনে কাউকে দাঁড়াতে দেয় না, আমাকেও না। লেখা আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমি না। সাদাকে সাদা বলব, কালোকে কালো। জনে জনে জিগেস করে আমাকে লিখতে হবে নাকি!
তাঁর তীব্র ক্ষোভ, আমি হিজড়াদের সঙ্গে উদাহরণ কেন দিলাম। তিনি কঠিন ভাষায় আমাকে এটাও জানিয়ে দিলেন, "হিজড়া না হয়ে আমি পুরুষ হয়ে জন্মেছি বলেই কী আমার এই অহংকার? হিজড়াদের প্রতি আমি তাচ্ছিল্য করেছি ইত্যাদি ইত্যাদি"।
আমার কাছে এদের হাঁটার ভঙ্গিটা এমন মনে হয়েছে তাই আমি হিজড়াদের সঙ্গে তুলনা করেছি। কেউ যখন চোখ থাকার পরও অন্ধের মত চলাফেরা করে তখন আমরা এটাই বলি, দেখো, কী অন্ধের মত হাঁটছে। এর অর্থ এটা না কোন অন্ধের প্রতি তাচ্ছিল্য করা। তাচ্ছিল্যটা করা হচ্ছে সেই মানুষটার প্রতি যে চোখ থাকার পরও অন্ধের মত ভঙ্গি করছে।
একটা আরবী প্রবাদ আছে, 'কোন ল্যাংড়া-লুলা দেখলে তাকে একটা লাথি দেবে কারণ সৃষ্টিকর্তা যাকে করুণা করেননি তাকে আমার করুণা করার প্রয়োজন কি'।
এই উদাহরণটাকে কি আমরা আক্ষরিক অর্থে গ্রহন করব? রূপক অর্থে কি কিছুই বলা যাবে না, মুখে তালা!
হিজড়া নামের ঈশ্বরের বিশেষ সন্তানদের [২] নিয়ে আমি রসিকতা করতে যাব কোন দুঃখে! এঁদের যখন দেখি তখন নিজেকে বড়ো লজ্জিত মনে হয়, কেবল মনে হয়, কী অপার সৌভাগ্য নিয়েই না জন্মেছি। এঁদের নিয়ে এই উদাহরণ দেয়ায় যে মানুষটা আক্ষরিক অর্থে গ্রহন করেন তাঁর সঙ্গে ফিযুল বুলি কপচাবার চেষ্টা করতে আগ্রহ বোধ করি না। আমার এই অমানুষ [২] লেখাটা নিয়েও হইচই করা চলে। কেন আমি হিজড়াদের 'অমানুষ' বললাম? এরা কী মানুষ না? ইত্যাদি ইত্যাদি।
আহ, এইখানে এসে মানুষটার সঙ্গে আমার আর কোন যোগ থাকে না! আফসোস, বড়ই আফসোস। কপাল আমার, প্রিয় সব কিছু আমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়! ইনি লিখেছেন, "যে রেমিট্যান্সের টাকায় গড়ে উঠা বিমানবন্দরের সুশীতল হাওয়া গায়ে মাখিয়ে আবেদ খান, আনিসুল হক, আলী মাহমেদরা বৈদেশ যাত্রা করেন"।
নো, নো স্যার, আপনি এখানে দুইটা ভুল করলেন!
এক: আনিসুল হক, আবেদ খানের সঙ্গে আমাকে গুলিয়ে ফেলে। এঁরা অনেক বড়ো মাপের মানুষ, এঁদের চোখে থাকে রঙিন চশমা। এঁদের সঙ্গে তিন টাকা দামের কলমবাজ আলী মাহমেদের তুলনা করাটা হাস্যকর। আমার কলম ড্যাম চিপ! রি-সেল ভ্যালুও নেই এঁদের কলমের আছে। বাজার উঠানামা করে বলে এরা হরদম কলম কেনাবেচা করতেই থাকেন কারণ বাজারে এর কদর আছে। এরা মুখিয়ে আছেন আপনাদের মত পাঠকদের জন্য চমৎকার সব কথা প্রসব করার জন্য। আর আমার কলম কেউ সাড়ে তিন টাকা দিয়েও কিনতে চাইবে না।
দুই: দুঃখিত স্যার, আমি আপনাদের এই অর্জনটাকে খাটো করছি না কিন্তু এটা আপনার ভ্রান্ত ধারণা, রেমিট্যান্সের টাকায় এয়ারপোর্ট-রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ করা হয় না।
আমি কি আপনাকে মনে করিয়ে দেব, এবারের বাজেটের ১,৩২,১৭০ কোটি টাকার মধ্যে আয়ের উৎসগুলো কি কি? জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, বহির্ভূত কর হচ্ছে ১,৩২,১৭০ কোটি টাকার মধ্যে ৬০ ভাগ! অর্থাৎ ৬০ ভাগ টাকা আসছে কেবল আমাদের দেয়া কর থেকে। এই টাকাটা আসে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে আমাদের কাছ থেকেই।
এটা আসে টাট্টিখানা হালের ওয়শরুমে আমরা ঘুম থেকে উঠে যখন দাঁত মাজি তখন থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাবার পূর্বে যে টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করি সেখান থেকে। এই টাকা থেকেই সরকার রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ-বিমানবন্দর বানায়, আপনাদের রেমিট্যান্সের টাকায় না।
রেমিট্যান্সের টাকায় দেশের চাকাটা বনবন করে ঘুরতে থাকে এটা সত্য, চাকাটায় আলাদা গ্রীজ যোগ হয় এও সত্য। আপনি বিমানবন্দরের হাওয়ার কথা বললেন বলেই এই উদাহরণটা দেয়া।
পোস্টের শুরুতে বলেছিলাম কাছ থেকে ছুঁরি মারার কথা এবং মেইলে ছোট্ট করে লিখেছিলামও, অতি পক্ষপাতদুষ্ট মানুষদের সঙ্গে কথা বলে আমি আরাম পাই না। এটা বলার কারণ হচ্ছে, আপনি এদের জন্য গভীর মমতা দেখিয়েছেন দেখে আমার ভাল লাগছে কিন্তু আপনি কি আমার এই পোস্টেই এটা পড়েননি? "...আমার প্রয়োজন ঘুম। কারণ এই সমস্তটা রাত আমার কেটেছে নির্ঘুম"।
আমার জার্নিটা ছিল প্রায় ২২ ঘন্টার! একফোঁটা আমি ঘুমাতে পারিনি। পরের সারাটা দিন আমার ছুটাছুটি, এর পরের দিনই আবার আমাকে ফেরার জন্য ছুটতে হয়েছে। আমার ঘুমাতে না পারার কষ্টটা আপনাকে দেখি বেদনাহত করল না! কই, মেইলে আপনি দেখি এই বিষয়ে একটা শব্দও ব্যয় করলেন না! কেন?
আপনার কি ধারণা জাগতিক কষ্টে কাবু একজন মানুষের মত আমার ঘুমের প্রয়োজন হয় না? নাকি তিন টাকা দামের 'কলমবাজ', এরা কেবল এই গ্রহে আসেন কৌপিন পরে উবু হয়ে লেখালেখি করে গ্রহ উদ্ধার করতে? এদের জাগতিক আর কোন চাহিদা নাই?
যেখানে একজনের যাতে ঘুম ভেঙে না যায় সেই কারণে মহা পবিত্র গ্রন্হ নিঃশব্দে পাঠ করার জন্য বলা হয় সেখানে আপনি একটা মানুষকে ঘুমাতে দেবেন না, চোখের পাতা এক করতে দেবেন না। বাহ, বেশ তো! যথার্থ কাগজপত্র-হোটেল কূপন থাকার পরও আপনি আমাকে হোটেলে যেতে দেবেন না, ঘুমাবার সুযোগ দেবেন না, কারণ কী, বাহে! কেবল যে ঘুমাতে দেবেন না এই-ই না; কোনো ব্যাখ্যাও দেবেন না, কি আমার অপরাধ? কোন কারণে আমার সঙ্গে এই আচরণ করা হচ্ছে? একজন ফাঁসির আসামীকেও তো তার অপরাধ জানিয়ে দেয়া হয়, কি কারণে তার ফাঁসি হচ্ছে।
আমার খুব দায় পড়েছে এদেরকে সভ্য বলার জন্য।
আরব জাতি নিয়ে আপনি চমৎকার সব কথা বলেছেন, শুনে প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার কথা। এরা আপনাদেরকে থাকার জায়গা দিচ্ছে ইত্যাদি। ভুল! এরা মানবতার কারণে আপনাদেরকে থাকার জায়গা দিচ্ছে এমনটা না, দিচ্ছে দায়ে পড়ে। কারণ এদের লোক প্রয়োজন। এমন অনেক কাজ আছে যেটা সে দেশের লোকজন করতে চায় না। আর এটা তো স্রেফ একটা লেনদেন। আমরা শ্রম দিচ্ছি এরা দিচ্ছে শ্রমের দাম। এখানেও এরা গুরুতর অন্যায় করছে, শ্রমের যথার্থ মূল্যটুকুও এরা দিচ্ছে না।
আমরা দেখেছি, কোন মুসলমান দেশে এরা কতটা আর্থিক সহায়তা দেন। আমাদের প্রকৃতিক দূর্যোগে এদের দানের বহর দেখে হাসি চেপে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে।
কেন যেন আপনার এই বিপুল উল্লাস আমাকে স্পর্শ করছে না। আরব জাতির প্রতি আপনার প্রালঢালা আবেগ থাকতে পারে, আমার নাই। আমি অধিকাংশ আরবদের পছন্দ করি না।
এরা একসময় বীর জাতি ছিল কিন্তু এখন একটা কাপুরুষ জাতি, এহেন কোন অনাচার-অন্যায় নাই যেটা এরা করে না। মুসলমানদের ক্ষতি অন্য ধর্মের লোকজনরা যতটা না করেছে তারচেয়ে অনেক বেশি এরা করেছে। ইরাকের পবিত্র স্থানগুলো যখন অপবিত্র হচ্ছিল তখন এরা বসে বসে তামাশা দেখেছে। আমি অপেক্ষায় আছি, এদের পবিত্র স্থানগুলো যখন অপবিত্র হবে সেটা দেখার জন্য, হিস্ট্রি রিপিট।
আমেরিকা ইসরাইল যখন সভ্যতার নমুনা দেখায় [৩] তখন এরা নিশ্চয়ই উট দৌড়াবার উল্লাস বোধ করে। করে না? উট দৌড়াচ্ছে, স্পীড-স্পীড মো(র) স্পীড। এতে জকির প্রাণ গেল নাকি উটের সঙ্গে বেঁধে রাখা শিশুটির তাতে কি আসে যায়?
ইসলাম ধর্মের দন্ড ধরে রাখা সৌদি আরবদের ধর্মের নমুনা দেখে চোখে জল চলে আসে। গভীর রাতে 'মুতোয়া' নামের পুলিশ বাঙালির ঘরে ঢুকে জিনিস তছনছ করে। খুঁজে পায় তাঁর মায়ের ছবি, সেই মানুষটার সামনে তাঁর মার ছবিটা ছিড়ে ফেলে বলে, হারাম। সেই মানুষটা কিচ্ছু বলে না কেবল দাঁত দিয়ে কামড়ে নিজের হাত থেকে রক্ত ঝরাতে থাকে।
এই বদমাশদের কে এই অধিকার দিয়েছে, জোর করে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে থানায় নামাজ পড়িয়ে বন্ড সই দিয়ে ছেড়ে দিতে? ইসলামে কোথায় এটা লেখা আছে?
ইরান একাই লড়ে যাচ্ছে, একে থামাতে হবে। আরব জাতি আছে না! সৌদি আরবের মত মহান ধার্মিক দেশ আছে কোন দিনের জন্য? ইরানে বোমা হামলা চালাবার জন্য ইসরাইলকে বিমান চলাচলের করিডর দিচ্ছে, জায়গা করে দিচ্ছে সৌদি আরব।
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো সাড়ে ২২শ কিলোমিটারের দূরুত্বে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্রের বাইরে। এখন সৌদি আরবের বদান্যতায় ইসরাইলি বিমান অতি সহজেই ইরানে বোমা ফেলতে পারবে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারবে। আমরা ইরানি শিশুদের দেখব ভাঙাচোরা পুতুলের মত মরে পড়ে থাকতে। যেমনটা আমরা দেখেছি প্যালেস্টাইনে, ইরাকে [৩]।
এমন আরব জাতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় (!) আমার মাথা নত হয়ে আসে। ইচ্ছা করে নিজেই নিজেকে খুন করে ফেলি...।
*বৈদেশ পর্ব, নয়: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_01.html
সহায়ক লিংক:
১. বৈদেশ পর্ব: সাত: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_3252.html
২. অমানুষ: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_30.html
৩. সভ্যতা: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_493.html
5 comments:
যে মানুষটাকে নিয়ে আপনি এই মন্তব্য করেছেন তিনি আমার অসম্ভব পছন্দের একজন মানুষ। এবং আমার উপর তাঁর কিছু্ ঋণ আছে, মমতার ঋণ।
তাঁর সম্বন্ধে কটু কথা শুনতে ভাল লাগল না। আমি দুঃখিত, আপনার মন্তব্যটা মুছে দিলাম। সরি এগেইন। @সাজি***
শুভ ভাই,
ব্যাপারটা যখন খোলা ময়দানে নিয়ে আসলেন, তখন পুরো মেইলটা তুলে দিলেই ভালো হতো। তাতে আমার মতো আপনার ভক্ত যাঁরা আছেন তাঁরা বুঝতে পারতেন ঠিক কী ধরণের চাপাতি দিয়ে আপনাকে আমি কুপিয়েছি। আপনাকে আক্রমণ কিংবা অপমান করার ইচ্ছে থাকলে, এখন যেমন নাম-ঠিকানাহীন মন্তব্য করছি, তখনও সেটা করতে পারতাম। ব্যক্তিগত মেইলের কোনো প্রয়োজন পড়তো না। কিন্তু আমি চাইনি আমার প্রিয় মানুষটির ত্রুটি অন্যের সামনে তুলে ধরতে। অন্যদের মতো শুধু বাহবা দিতে আমি অভ্যস্ত না, ভুল করলে আমি সেটা বলবোই, আর ভুলটা যদি হয় প্রিয় মানুষের তাহলে তাঁর শাস্তিটা হবে সবচে' প্রকট। কারণ, আমি বিশ্বাস করতে চাই, আমার ভালো লাগার মানুষ অহেতুক ছিদ্রান্বেষী নন, গালিবাজ নন। যাকে ভালোবাসি তাঁর ত্রুটি বেশি আহত করে। নইলে আমার কী দায় পড়েছে, কে কী লিখলো না লিখলো!
আপনি লিখেছেন:
"আমার জার্নিটা ছিল প্রায় ২২ ঘন্টার! একফোঁটা আমি ঘুমাতে পারিনি। পরের সারাটা দিন আমার ছুটাছুটি, এর পরের দিনই আবার আমাকে ফেরার জন্য ছুটতে হয়েছে। আমার ঘুমাতে না পারার কষ্টটা আপনাকে দেখি বেদনাহত করল না! "
না, করলো না। কারণ, ঠিক ঐসময় আরেকজন মানুষ ঘুমের তোয়াক্কা না করে ১২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মধ্যরাত থেকে সকাল অবধি এয়ারপোর্টে গিয়ে বসেছিলো,এক উচ্চপদস্থ ব্যক্তির আশ্বাসে মাত্র ১% সম্ভাবনা নিয়ে, আপনার সাথে একমিনিটের জন্যে হলেও একবার দেখা করার জন্যে। আপনার কি মনে পড়ে ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে একটা মেইল করেছিলাম, কারো মোবাইল থেকে হলেও একটা কল দেওয়ার জন্যে?
কিন্তু কল করবেন কি, আপনি তখন ছিদ্রান্বষণে ব্যস্ত!
"তিনি আরবের কোন এক দেশে থাকেন। সেই দেশ তাঁকে অনেক কটা বছর থাকতে দিয়েছে, লালন করেছে। সেই দেশের প্রতি তাঁর আছে সুগভীর মায়া। থাকুক, এতে আমার কোন বক্তব্য নাই কিন্তু তাঁর এই আবেগ আমাকেও স্পর্শ করবে এটা ভাবাটা বোকামী!"
-ঠিক। কিন্তু এই বোকামিতো আমি করিনি। আমি তো আপনাকে বলিনি এদের আপনার ভালো লাগতেই হবে। মেইলের শুরুতে আমি লিখেছিলাম, বিরক্ত কিংবা অনুরক্ত হওয়ার অধিকার সম্পূর্ণ আপনার। আমি আপত্তি জানিয়েছিলাম এই জায়গায়: " সুবিশাল অথর্ব এক জিনিস বানিয়েছে!"
বিশ্বের ব্যস্ততম একটি এয়ারপোর্ট, এতো সুবিশাল করে বানানোর পরও যাত্রী সামাল দিতে পারছে না বলে আরো একটা এয়ারপোর্ট বানাচ্ছে। আর সেটাকে অথর্ব বলে রায় দিয়ে আপনি আপনার ভক্তদের কাছে অজ্ঞতার পরিচয় দিন এটা আমি চাইনি বলেই আপত্তি। ঠিক তেমনি এদের পোশাক আপনার পছন্দ হয়নি বলে এদেরকে "মহিলা", "হিজড়া" আখ্যা দিয়ে নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করুন সেটাও চাইনি। চাইনি শুধুমাত্র কয়েকজন অফিসারের আচরণে পুরো একটি জাতিকে অসভ্য আখ্যা দিয়ে আপনি খাটো হোন।
কারণ, আপনার এই গালিগালাজে আরবদের কিছু যায় আসেনা; কিন্তু আমরা যারা আপনার লেখা পড়ি, আপনাকে ভালোবাসি, আমরা চাইনা পুরস্কারপ্রাপ্তির উত্তাপে রাতারাতি আপনি অহেতুক ছিদ্রান্বেষী কিংবা গালিবাজ হয়ে উঠুন। এই না চাওয়ার পেছনে যে-পক্ষপাত সেটা আরবদের প্রতি নয়, আলী মাহমেদের লেখার প্রতি, একজন প্রিয়-শ্রদ্ধেয় মানুষের প্রতি।
'বুর্জ খলিফা'র কথা আমি লিখিনি। আপনি এমনভাবে সেটা এবং আরো কিছু কথা উপস্থাপন করলেন, পাঠক ভেবে বসতে পারেন ওগুলো আমার বক্তব্য।
আমি জানতে চেয়েছিলাম, আপনার আমার ঐতিহ্যের পোশাক ফতুয়া পরে যে আপনি পুরস্কার আনতে গেছেন, সেটা দেখে যদি কোনো জার্মান রাতে ঘুমোবার পোশাক বলে কটাক্ষ করতো আপনার কেমন লাগতো?
আপনি উত্তর দেননি। নিশ্চয়ই খারাপ লাগতো, কারণ, এটা আমাদের প্রিয়, গর্বের পোশাক। ঠিক তেমনি আরেকটি জাতির পোশাক আপনার পছন্দ হয়নি বলে এদেরকে "মহিলা" "হিজড়া" আ্খ্যা দেওয়াটা কি উচিৎ? দিয়ে কি আপনি বড় হতে পেরেছেন?
কমিউনিটি ব্লগে একজন আলী মাহমেদকে যখন গালি দেওয়া হয়, তখন আপনার খারাপ লাগে, আপনি বারবার সেটা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করেন। কিন্তু একজন আলী মাহমেদ যখন পুরো একটি জাতিকে গালি গালাজ করেন তখন?
উটের জকির কথা উল্লেখ করেছেন, ওটা এখন অতীত। বর্তমান সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়ে সবাইকে ফেরত পাঠাচ্ছে নিজ নিজ দেশে। বিডিনিউজ24 এর এই সংবাদটা পড়তে পারেন।
http://www.bdnews24.com/details.php?id=164689&cid=2
ইরাকযুদ্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ে এদের ভূমিকা নিয়ে লিখতে গেলে, বই হয়ে যাবে। এদের প্রতি আমার আলগা কোনো দরদ নেই। তাই বলে সরকারের অনৈতিক কাজের জন্যে আমি এদেশের মানুষকে দায়ী করবো না, এদেশের মানুষকে অসভ্য বলবো না। আমেরিকান সরকারের ইরাক আক্রমণের দায়ে আমি সেদেশের মানুষকে যুদ্ধবাজ, অসভ্য বলতে পারি না।
আপনি লিখেছেন:
"দুঃখিত স্যার, আমি আপনাদের এই অর্জনটাকে খাটো করছি না কিন্তু এটা আপনার ভ্রান্ত ধারণা, রেমিট্যান্সের টাকায় এয়ারপোর্ট-রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ করা হয় না। "
হা হা হা! আমার বড়ো জানতে ইচ্ছে করছে, রেমিট্যান্সের টাকায় এয়ারপোর্ট-রাস্তা-ঘাট-ব্রিজ কিছুই করা হয়না, তো, এই টাকায় কী করা হয়? এটা কি যাকাতের মতো আলাদা করে মসজিদ-মাদরাসা-এতিমখানায় দান করা
হয়? রেমিট্যান্স জিনিসটা কী, দাদা?
"আমি কি আপনাকে মনে করিয়ে দেব, এবারের বাজেটের ১,৩২,১৭০ কোটি টাকার মধ্যে আয়ের উৎসগুলো কি কি? জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, বহির্ভূত কর হচ্ছে ১,৩২,১৭০ কোটি টাকার মধ্যে ৬০ ভাগ! অর্থাৎ ৬০ ভাগ টাকা আসছে কেবল আমাদের দেয়া কর থেকে। এই টাকাটা আসে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে আমাদের কাছ থেকেই। এটা আসে টাট্টিখানা হালের ওয়শরুমে আমরা ঘুম থেকে উঠে যখন দাঁত মাজি তখন থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাবার পূর্বে যে টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করি সেখান থেকে। এই টাকা থেকেই সরকার রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ-বিমানবন্দর বানায়, আপনাদের রেমিট্যান্সের টাকায় না। "
খুবই ভালো কথা। আপনি সরকারকে কর দেন, কিন্তু আমি এবং আমার পরিবার সরকারকে যেটা দেই সেটা কী? খড়? আপনি টাট্টিখানায় যান, দাঁত মাজেন, টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করেন। অতি উত্তম! আমি এবং আমার পরিবার না হয় টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করি না, দাঁত মাজিনা, হাগু করিনা; কিন্তু আমার পরিবারের এতোগুলো সদস্য গ্যাসবিল, বিদ্যুত বিল, ফোনবিল, পণ্যদ্রব্য কেনা থেকে শুরু করে প্রতি কদমে কদমে সরকারকে যেটা দিচ্ছি সেটা কী, দাদা? এবং এই টাকার উৎসটা কী?
লিখেছেন:
"আরব জাতি নিয়ে আপনি চমৎকার সব কথা বলেছেন, শুনে প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার কথা। কেন যেন আপনার এই বিপুল উল্লাস আমাকে স্পর্শ করছে না। আরব জাতির প্রতি আপনার প্রাণঢালা আবেগ থাকতে পারে, আমার নাই। আমি অধিকাংশ আরবদের পছন্দ করি না।"
কই! মেইলে আমি আরব জাতি নিয়ে 'চমৎকার সব' কথা বলেছি বলে তো মনে পড়ে না। আমি আপনার লেখার সমালোচনা করেছি, আপনার ভুল ধরিয়ে দিয়েছি, আপনি ছিদ্রান্বেষী গালিবাজে পরিণত হচ্ছেন কিনা সেই ভয় প্রকাশ করেছি। কিন্তু আরবদের প্রতি গদগদ ভাব তো প্রকাশ করিনি।
পোস্টের শুরুতে আক্ষেপ করেছেন ঢাকা বন্দরে একজন অফিসারের আচরণে, আপনি শংকা প্রকাশ করেছেন, অফিসারের এহেন আচরণে অন্য দেশের মানুষ ভুল বুঝতে পারে। অর্থাৎ, অফিসার সৌজন্যতা না জানলেও আমরা বাংলাদেশের মানুষ সেরকম নই। ঠিক এই যুক্তিটা কেন কাজ করলো না দুবাই বন্দরে!
গত পোস্টের একেবারে শেষে আপনি জানাচ্ছেন:
"এটা তো আমি করতে পারি না, হিটলারের মত মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য গোটা জাতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা। জার্মান একজন মা যখন কাঁদবেন তার সঙ্গে আমিও কাঁদব, তিনি হিটলারের মা হলেও...।"
হিটলার অসংখ্য মানুষ নিধন করার পরও আপনি জার্মান জাতিকে মাফ করে দিতে পারেন, একজন জার্মান মা কাঁদলে, ব্যথিত হয়ে আপনিও কাঁদতে পারেন। কিন্তু আরবদের বেলায় এই কঠোরতা কেন? একজন ইমিগ্রেশন অফিসারের কারণে? এদের পোশাক, হাঁটার ভঙ্গি আপনার পছন্দ হয়নি বলে?
....
এক মন্তব্যে না আসায় দুইবারে দিতে হলো। সময় কম, নইলে আরো বিশদ লেখার ইচ্ছে ছিলো।
এই পোস্টের লেখা বা মন্তব্যের সূত্র ধরে কেউ এখানে আর কোন মন্তব্য করবেন না, প্লিজ।
Post a Comment