আজকের কালের কন্ঠের স্বাধীনতা দিবস ২০১০-এর বিশেষ সংখ্যায় (পৃষ্ঠা: ৩) 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি' লেখায় মুক্তিযুদ্ধের অসম্ভব বিখ্যাত এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে। ছবিটির নীচে লেখা আছে, "ছবি: সংগৃহিত"।
এটার মানে কী! কালের কন্ঠ, "ছবি: সংগৃহিত" লিখে কী রসিকতা করা হলো, নাকি এই কু-অভ্যাসটা প্রথম আলো থেকে শিখল?
এটা অসম্ভব বিখ্যাত একটা ছবি। এই ছবিটি উঠিয়েছেন নাইব উদ্দিন আহমদ। এই নিয়ে আমার একটা লেখা থেকে অংশবিশেষ দিচ্ছি:
"মুক্তিযুদ্ধের তেমন বিশেষ ছবি আমাদের নাই! ওই সময় আধুনিক তো দূর অস্ত, সাধারণ ক্যামেরাই বা আমাদের দেশের কয়জনের কাছে ছিল! নাইব উদ্দিন আহমেদ। যে অল্প ক-জন মানুষ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দূর্লভ কিছু ছবি আমাদের উপহার দিয়েছেন তাঁদের একজন!
একজন মুক্তিপাগল মানুষের সবটুকু শক্তি নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, সামান্য একটা ক্যামেরা নিয়ে! স্টেনগানের চেয়েও ঝলসে উঠেছে তাঁর হাতের ক্যামেরা! একজন অন্য রকম যোদ্ধা!
একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে তিনি পাক আর্মি এবং এ দেশে তাদের সহযোগী রেজাকার, আল বদর, আল শামসদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বর্হিবিশ্বে পাঠিয়েছেন তাঁর দূর্লভ ছবিগুলো। সমস্ত পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে পাক আর্মির নৃশংসতা, বর্বরতা! গঠিত হয়েছে জনমত, বেড়েছে আন্তর্জাতিক ধিক্কার!
সব বিশ্ববিদ্যালয় তখন পাক আর্মির টর্চার ক্যাম্প। একদিন নাইব উদ্দিন আহমেদকে আটকানো হয়। ফটোগ্রাফারের পরিচয়পত্র দেখে পাক আর্মির মেজর কাইয়ুম নাইব উদ্দিনকে বললেন, তুমি কি ক্যামেরা ঠিক করতে পারো, আমার ক্যামেরাটায় সমস্যা হচ্ছে?
নাইবউদ্দিন ক্যামেরাটা দেখেই বুঝলেন, ক্যামেরা ঠিক আছে। শুধু লক করা অবস্থায় আছে, লকটা খুলে দিলেই হয়ে যাবে। ক্যামেরার লক ওপেন করে দেখলেন, আসলেই ঠিক আছে এবং ক্যামেরায় ফিল্ম ভরা। এ সময় তিনি দেখতে পেলেন, এখানে কিছু লোককে বেঁধে রাখা হয়েছে। খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় এলিয়ে পড়ে আছে একজন ধর্ষিতা। কাছেই কিছু বাড়ি পুড়ছে দাউ দাউ করে।
তিনি ক্যামেরা ঠিক করার ছলে, খুব দ্রুত কিছু ছবি তুলে নিলেন পাক মেজরের ক্যামেরা দিয়েই! তারপর আবার লক করে মেজরের হাতে ক্যামেরা ফেরত দিয়ে বললেন, এখানে তো ঠিক করা সম্ভব না, ময়মনসিংহে তার অফিসে আসলে ক্যামেরা ঠিক হয়ে যাবে। পরদিন মেজর নাইব উদ্দিনের অফিসে এলে, নতুন একটা ফিল্ম কিনে আগের ফিল্মটা মিছে ছল করে রেখে দিলেন।"
বিস্তারিত এখানে
No comments:
Post a Comment