Search

Friday, January 2, 2009

বিস্ময়কর এক মুক্তিযোদ্ধা!

এমন শ্বাসরুদ্ধকর আলামত আমরা বাদাম চিবুতে চিবুতে ছবিতে দেখি, ঠ্যাং নাচাতে নাচাতে রগরগে ফিকশনে পড়ি, তখন বড়ো ভাল লাগে, আমোদিত হই।

কিন্তু আমাদের গৌরবগাঁথাগুলো জানতে আগ্রহ বোধ করি না। যে বালক আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক-আর্মীর বাংকারে গ্রেনেড ছুঁড়ে বাংকার বিধ্বস্ত করেছিল! যার সাহস কল্পনাকেও হার মানায়! তাঁকে নিয়ে কয়টা মুভি হয়েছে, ক-কলম লেখা হয়েছে?

আমরা কি জানি সেই বালকটি এখন আদৌ কোথায়? নিদেনপক্ষে, কেমন কাটছে তাঁর দিনকাল? আমাদের এইসব জানার প্রয়োজন নাই, সময়ই বা কোথায়! আমরা এইসব অসমসাহসী বালকদের কথা অবলীলায় বিম্মৃত হই। সময়ের ধুলায় এইসব নাম চাপা পড়ে থাকে! আমরা এঁদের আত্মত্যাগ, সাহসের কথা জানতে আগ্রহবোধ করি না!
মুক্তিযুদ্ধ বলতে আমরা ঘুরেফিরে কয়েকটা নামের অবদানের কথাই জানি - ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো দিনের পর দিন শুনে আসছি। তাদেঁর কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি- চর্বিতচর্বণ। যেন রেকর্ডের পিনটা আটকে গেছে, আটকে গেছি আমরাও। একই বৃত্তে অনবরত ঘুরপাক খাওয়া আর চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলা।

এই অসমসাহসী বালকটির নাম শহিদুল ইসলাম লালু। বঙ্গবন্ধু তাঁকে কোলে নিয়ে রেখেছেন। এই লালু সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য এই মুহূর্তে আমার কাছে নাই। আসলে এইসব তথ্য রাখা হয় না- রাখার প্রয়োজন কী!

লালুদের কথা বলে তো লাভ নাই, কারণ লালু কোন দল করতেন না। দলবাজ ব্যতীত কাউকে কি মুক্তিযোদ্ধা বলা সমীচীন? জন্মের পর থেকেই আমাদের বিভাজন শুরু হয়ঃ জন্ত না অজন্ত, হিন্দু না মুসলিম, বিএনপি না আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার?
কিন্তু একজন, সে মানুষ কিনা এটা আমাদের জানার খুব একটা আগ্রহ নাই!

*ছবিটি, লালু নামের সেই বালকের। ছবিটি আফতাব আহমদ তোলেনঃ ২৪ জানুয়ারী, ১৯৭২ সালে।

তাঁকে নিয়ে যথেষ্ঠ তথ্য আমার কাছে ছিল না। পরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, একজন। এই অংশটুকু অষ্ট্রোলিয়া প্রবাসি মাহবুব সুমনের মন্তব্যাকারে মন্তব্য থেকে নেয়া। তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
"লালুর কথা প্রথম পড়ি বংগবীর কাদের সিদ্দিকীর বইয়ে। বেশ ক বছর আগে দৈনিক প্রথম আলোর শনিবারের সাপ্লিমেন্ট ম্যাগ 'ছুটির দিনে' লালুকে নিয়ে কভার স্টোরি করে হয়। সেটা পড়ে উনার সেই সময়কার অবস্থার কথা জানতে পারি। সেই সময় উনি মিরপুর সিরামিক কারখানার সামনে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান চালাতেন।
মুক্তিযুদ্ধে উনার ভুমিকা ও সেই ভুমিকার কথা বলে সরকারের কাছে কিছু চাওয়া আছে কিনা তা জানতে চাইলে উনি বলেছিলেন , 'একজন মুক্তিযোদ্ধার সব চাইতে বড় পাওয়া স্বাধীন দেশ', তার আর কিছু চাওয়ার ছিলো না সরকার বা অন্য কারো কাছে।
জানি না কি অবস্থা উনার এখন, সেদিন গিয়েছিলাম সিরামিক কারখানায়, দোকানটি আর নেই সেখানে। কে জানে, হয়তো ভেঙে দিয়েছে অবৈধ স্থাপনা বলে ! ছবির বংগবন্ধুও আজ নেই। সেই বংগবীর কাদের সিদ্দিককিও আজ অন্য জগতের মানুষ।
সেই লালু, লালুই রয়ে গিয়েছেন। কিছুই পাননি দেশের কাছ হতে। বাঘা সিদ্দিকীর বইয়ে ‘জাহাজ মারা হাবিন’ বলে বিখ্যাত মেজর হাবিব বীর প্রতীকের কথা পড়েছিলাম। বেশ ক বছর আগেও উনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন অসুখে ভুগে, দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে। হয়তো লালুও সেই একি পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্যালুট এই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যারা কিছু প্রতিদানের আশা না করেই যুদ্ধে গিয়ছিলেন এবং এখনও কিছু আশা করেন না"।
*এই অগ্নিপুরুষকে আমরা সম্মান জানাই এমন করে; এই পত্রিকা-মিডিয়ারাই আমাদের মগজ ধোলাই করে, আমাদের শেখায়! পরিশেষে বিষাদে বলি, মুক্তিযুদ্ধ এখন একটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য!
...

                               

1 comment:

Anonymous said...

now I among your readers