Search

Monday, January 25, 2016

‘এক গেলাসের ইয়ার’!

এই সরকারের অর্জন বলে কিছু নেই এটা বলাটা অতিশয়োক্তি হয়ে যায়! কিন্তু এরা মাঝে-মাঝে এমন কিছু কর্মকান্ড করে বসবে যার কারণে অর্জনের কফিনে পেরেক ঠোকাই সার। পুলিশ ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বীকে পিটিয়ে মাদকব্যবসায়ি বলে ক্রসফায়ারের আতংকেও রেখেছিল। নাটের গুরু পুলিশ কর্মকর্তা এস আই মাসুদ শিকদারকে প্রচলিত আইনে শাস্তি দিলেই হয় তা না ঘটা করে আবার আইজিপি সাহেব বক্তব্যও রাখেন,‘রাব্বী ফৌজদারি অপরাধ করেছেন’। এই সমস্ত কর্মকান্ড দেখার কেউ নেই!
এক পা লিমনের বিরুদ্ধে আমরা গোটা রাষ্টযন্ত্রের কামান তাক করে থাকতে দেখেছি অথচ এর কোনও প্রয়োজন ছিল না আদৌ! ভুলের খেসারত দিলেই হতো…। বা হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে সন্তান-স্বামীর সামনে ফের যৌন নির্যাতন করা হয় যে গৃহবধুটিকে,তাঁর চোখ চোখ রাখার ধৃষ্টতা কার আছে এই দেশে?
এটা সবাই বিলক্ষণ জানে আইনের শাসনের বালাই নেই। ২৮ বছর চলে গেছে চট্টগ্রাম গণহত্যার এখনও বিচার হয়নি, ভাবা যায়? এখন এই বিচার হলেই কি না-হলেই কী!

হালে যে ঘটনাটা ঘটে গেল এমনধারা ঘটনায় ভেসে যায় পদ্মা সেতু! আসাদগেট নিউ কলোনির বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর রেখেই ভবনগুলো ভাঙ্গা শুরু হয়। একেক করে ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এমন অসভ্য কান্ড ঘটতে পারে এটা আমার কল্পনাতেও আসে না। আমি চোখ বন্ধ করে কেবল খানিকটা ভাবার চেষ্টা করতেই গা হিম হয়ে আসে। কারও বাচ্চা স্কুলে গেছে, পরিবারের কর্তা যথারীতি চলে গেছেন অফিসে বয়স্করা রয়ে গেছেন বাসায়; এমতাবস্থায় তাঁরা দেখলেন তাঁদের বসতবাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে! শপথ আমার লেখালেখির, সমস্ত ভাবনা গুলিয়ে আমার মস্তিষ্ক স্রেফ জমে যায়। গুছিয়ে লেখার অভ্যস্ত হাত খেই হারিয়ে ফেলে…।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৬
দৈনিক প্রথম আলো অসাধারণ একটা প্রতিবেদন ছাপিয়েছে, ‘ভেতরে মানুষ, বাইরে হাতুড়ির ঘা’ (বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৬)। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে: ”বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভবন ভাঙ্গা হয়েছে…বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, নিউ কলেনি সোসাইটি ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে আদালতের স্থগিতাদেশ আছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ বিষয়ে ১৮ জানুয়ারি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সেই শুনানি পিছিয়ে ২১ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করে ভেঙ্গেছে…।“

“বাসিন্দারা অভিযোগ করেন”, “বাসিন্দারা অভিযোগ করেন”, “বাসিন্দারা অভিযোগ করেন”, বেশ-বেশ, বাসিন্দাদের অভিযোগ থেকে আমরা জানলাম ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা ছিল। যে-কোনও অভিযোগ যে-কেউ করতেই পারেন কিন্তু পাঠকের এটা জানার উপায় নেই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে। এটা সত্য, কোনও সংবাদমাধ্যম কোনও প্রতিবেদনে নিজের মত প্রকাশ করতে পারে না কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটির কারণে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কাগজ এখানে স্ক্যান করে দিয়ে দেওয়াটাই সমীচীন ছিল।
স্পষ্টত এটা আদালত অবমাননা। এবম্প্রকার এহেন আদালত অবমাননা শাস্তিযোগ্য অপরাধ কি না সেটা আদালতের বিবেচ্য বিষয়।

অবশ্য এই সমস্ত পত্রিকার সংবাদের গুরুত্ব বোঝার আদৌ ক্ষমতা আছে কি না এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নও বটে। এবং এটা বোঝার জন্য নাসায় সিভি পাঠাবার প্রয়োজন পড়ে না। দৈনিক প্রথম আলো এই দিন এই সংবাদটি ছাপিয়েছে ভেতরে ৯ পৃষ্ঠায় এবং এই দিনই প্রথম পৃষ্ঠায় ঢাউস ছবি দিয়ে ছাপিয়েছে ‘হলুদ বাটো মেন্দি বাটো’।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০১৬
এটা হচ্ছে এদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন! এই হচ্ছে দেশের অগ্রসর একটা দৈনিকের নমুনা যারা ঘটা করে আমাদের শপথ করায়, দেশের আপামর জনতাকে বদলে দেওয়ার জন্য ‘গুছলেংটি’ খুলে -মুক্তকচ্ছ-কাছা খুলে নগ্ন হয়ে পড়ে। পত্রিকাটির ভেতরের ১৬ পৃষ্ঠার 'বিনোদন পাতায়' এটা ছাপালে এই পত্রিকার সর্দারদের কী পাঠক আহাম্মক বলত?
অথচ এদিনই ‘অধুনা’ নামে বাড়তি চার পাতায় মাহিয়া মাহির সুন্দর জীবন থেকে শুরু করে হাবিজাবি জিনিষে ঠাসা। ওখানে আমরা জানতে পারছি মাহিয়া মাহির প্রিয় খাবার ‘গরুর কালা ভুনা’। মাহিয়া মাহি গরুর কালা ভুনা, না কালা গরুর ভুনা খাবে নাকি তিমি মাছের ঝোল বা বাঘের দুধের পায়েস সেটা মতি ভাই বিশদ আকারে ছাপাবেন তাতে তো কোনও সমস্যা নেই। এখানেও কী ছাপাবার জায়গার আকাল হলো?

পত্রিকা চালনেো কম হ্যাপা না, খরচের বিষয়টা যে একেবারে বোধের বাইরে এমনও না কিন্তু তাই বলে...বাপু রে, আপনারা সবাই ‘এক গেলাসের ইয়ার’ সে নাহয় বুঝলুম তা শরীরে না সইলে এক পাত্র কম খেলে হয় না?

No comments: