রাব্বি অফিসে এসে গুম মেরে বসে আছে। নিজের রুম থেকে বের হয়নি। আজকাল অফিসে মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
মুনিম প্রায় নিঃশব্দে চা-র কাপ টেবিলে নামিয়ে রাখল। সাথে ঝকঝক করছে এমন একটা কাঁচের গ্লাসে পানি। চায়ে চুমুক দিয়ে বরাবরের মত রাব্বির সেই একই অনুভূতি হলো। ওর ধারণা, মুনিমের চা হচ্ছে পৃথিবীর সেরা চা। লোপাও চমৎকার চা বানায় কিন্তু মুনিমের ধারেকাছেও নেই। অজান্তেই রাব্বির মুখ থেকে তৃপ্তির অস্ফুট শব্দ বের হলো।
মুনিম ভয়ে ভয়ে বলল, স্যার, চা ভাল হয় নাই?
না, ভাল হয় নাই।
কি করুম স্যার, কন। অন্যদিন যেমন বানাই আজও তেমনি বানাইলাম।
আরে না, ভাল হয় নাই কেন বললাম, জানো। খুব, খুবই ভালো হয়েছে। আচ্ছা মুনিম, তুমি অফিসের সবার জন্য কি একই চা বানাও?
রাব্বির এই প্রশ্নটা অনেক দিন থেকে করবে করবে করেও করা হয়নি। কারণ আছে। বেশ ক-দিন ভুলে শামসিরের চা ও চুমুক দিয়ে ফেলেছিল, ওই চা-টা আহামরি কিছু ছিল না।
মুনিম থেমে থেমে বলল, জানি না, স্যার। তয় আপনার চা-টা যখন বানাই মন থিক্যা।
বলো কি!
স্যার, এই অফিসে আপনেই একজন স্যার যে আমাদের মতো ছোট মানুষদের দাম দেন।
ধুর।
আপনারে আইজ বলি, আপনারে নিয়া এই অফিসের অন্য পিয়ন, ড্রাইভার কি কয় জানেন? অনেক অফিসে অনেক সাহেব দেখছি কিন্তু রাব্বি স্যারের মত দেখি নাই। তিনি সবার ভাল-মন্দ জিগান। সবার সাথে হাত মিলান। তাইনের লগে হাত মিলায়া যেই সুখ এইটা কোন তুলনা নাই।
রাব্বির কেমন লজ্জা-লজ্জা লাগছে। বিব্রত গলায় বলল, আচ্ছা, এখন তুমি যাও।
মুনিম বেরিয়ে যেতে যেতে ইতস্তত করছে দেখে রাব্বি বলল, তুমি কি কিছু বলবে?
না স্যার।
আচ্ছা ঠিকাছে।
মুনিম প্রায় দরোজার কাছে গেয়ে ফিরে আসল।
মুনিম, কিছু বলতে চাইলে বলো?
স্যার, একটা কথা বলি, রাগ করবেন না তো?
কেন, কথাটা কি রাগ করার মত?
স্যার, ছোট মুখে বড়ো কথা হইলে মাফ কইরা দিয়েন।
আচ্ছা যাও, আগেই মাফ করে দিলাম। এখন বলো।
আপনি এই অফিসের সবাইরে বিশ্বাস কইরেন না। খুব কাছের মানুষরেও না।
রাব্বি অবাক, এটা কেন বললে?
স্যার, আপনে আগেই বলছেন রাগ করবেন না।
তা বলেছি। কিন্তু এইসব কি বলছ!
স্যার, আপনার ভালার জন্যই কইলাম। আর কিছু জিগায়েন না। যাই স্যার।
রাব্বি অবাক হয়ে ভাবছে, এটা সত্য ও সবার ভালো-মন্দ খোঁজ করে, এটা ওর সহজাত অভ্যাস। আশ্চর্য, এই সামান্য বিষয়টা এরা মনে করে বসে থাকে! এটা নিয়ে আবার আলোচনাও হয়! এতো অল্পতে মানুষজন মুগ্ধ হয়ে পড়ে। আশ্চর্য!
এখন এটা ছাড়িয়ে ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, মুনিম এমনটা কেন বলল! নিশ্চয়ই ও কিছু জানে। অযথা একটা বিষয় বলে মুনিম ওকে বিভ্রান্ত করবে এটা ও বিশ্বাস করে না। মুনিম কোন এক বিচিত্র কারণে ওকে পছন্দ করে এটায় কোন সন্দেহ নেই।
রাব্বি গুছিয়ে মেইলটা লিখল। এম.ডি বরাবর মেইলটা পাঠিয়ে দিল। বুকের ভেতর থেকে একটা অজানা ভয় পাক খেয়ে উঠল। তীর বেরিয়ে গেছে, এখন এটা নিয়ে ওর করার কিছুই না। ওর সব কিছু এখন খড়গের উপর ঝুলছে। হয় খুব ভালো কিছু ঘটবে, নয় সব কিছু ভেঙ্গে পড়বে।
হইচই করে শামসির ঢুকল। শামসির কেবল ওর কলিগই না, অসম্ভব ভালও বন্ধুও।
আরে-আরে, আমাদের রাব্বি মিয়া দেখি ল্যাপটপের উপর উঠে বসে আছে। বিষয় কী? কোন প্রেজেন্টেশন বানাচ্ছিস নাকি?
নারে।
তো, কাহিনি কী!
এম.ডি-কে একটা মেইল করলাম।
ওরি বাবা, ডরাইছি। তোর দেখি হট-লাইন। একেবারে এম.ডি। বাপ, একটু ঝেড়ে কাশো।
‘ব্যাকবোন’।
মানে!
কেন, তুই জানিস না?
মনে পড়ছে না।
আরে, মনে নাই তোর, আমাদের জন্য একটা সুযোগ রাখা হয়েছিল। অফিসিয়াল কোন বিষয়ে যে-কারো বিরুদ্ধে রং-ডুয়িং কিছু ঘটলে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল অভিযোগ করা যাবে।
হুম। মনে পড়েছে। তো?
একটা অভিযোগ করলাম।
কার বিরুদ্ধে?
সৈয়দ বাসের।
বলিস কী?
হুঁ।
করেছিস কী!
কি আর করা, যা করার করে ফেলেছি।
শামসিরের চোখে আতংক, কি এমন সমস্যা হলো যে তুই ফট করে এম, ডিকে মেইল করে বসলি।
শুনলে তোর মাথা খারাপ হয়ে যাবে!
মাথা খারাপ হলে দেখা যাবে। তুই সমস্যাটা বল।
রাব্বি ড্রয়ার খুলে বিলের কপিগুলো বের করল। একে একে কাগজগুলো গুছিয়ে শামসিরের হাতে দিল।
শামসির বিলের কপিগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সময় নিয়ে।
রাব্বি চেয়ারে দোল খেতে খেতে বলল, কি বুঝলি?
সবই বুঝলাম, কিন্তু-।
কি?
শামসির এবার রাগি গলায় বলল, কোম্পানির টাকা জাহান্নামে যাক, তোর সমস্যা কী!
কী বলিস! কোম্পানির টাকা সৈয়দ খেয়ে ফেললে আমার সমস্যা নাই।
তোর সমস্যা কী, তোর টাকা তো আর না। নাকি তোর বাপের টাকা!
রাব্বি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে দেখে শামসির তাড়াহুড়া করে বলল, ভাল কথা, তুই একবার আমার সাথে এই বিষয়ে কথাও বললি না।
সরি রে, আমার আসলে মাথা কাজ করছিল না।
তুই জানিস না সৈয়দের হাত কত লম্বা, জানিস না?
হুঁ।
তারপরও!
হুঁ।
মেইলটা কি পাঠিয়ে দিয়েছিস, নাকি পাঠাসনি?
না, পাঠিয়ে দিয়েছি।
ক্রাইস্ট, ঠিক বলছিস?
হুঁ।
শামসির আর কিছু না লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলতে লাগল। যাওয়ার সময় বিষণ্ন গলায় বলল, তুই ভুল করেছিস, বিরাট ভুল।
রাব্বি অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল, হুঁ!
রাব্বির মনটা আরও বিষণ্ন হলো। শামসির যে কেবল ওর ভাল বন্ধু এটুকুই না, এমন খুব বিষয় আছে যা ওরা নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে না। এমনও দেখা গেছে পুরো অফিস একদিকে ও এবং রাব্বি আরেক দিকে। আজ পর্যন্ত এমন কোন বিষয় নাই দুজনের মতের মিল হয়নি। অথচ আজ শামসিরের আচরণ ওর কাছে কেমন দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। রাব্বি খানিকটা বিভ্রান্ত, এই কাজটা ঠিক হলো নাকি বেঠিক এটা শামসিনের আচরণে স্পষ্ট হয়নি। এটাই ওকে ভাবাচ্ছে...।
* জীবনটাই যখন নিলামে: http://tinyurl.com/2522ss6
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Saturday, October 16, 2010
জীবনটাই যখন নিলামে: ৭
বিভাগ
জীবনটাই যখন নিলামে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment