ঢাকায় আমার যে অল্প ক’জন বন্ধু বান্ধব আছে, এরা যতোক্ষণ পর্যন্ত স্বীকার না যান, যে আমাকে স্টেশন থেকে নিয়ে যাবেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি ঢাকামুখো হওয়ার কথা কল্পনাও করি না! কাউকে পটাতে পারলে আমার আনন্দ দেখে কে, একেবারে হাত পা ঝাড়া! এদের পিছু পিছু আরামসে ঘুরে বেড়াই... আহ, কি যে শান্তি লাগে! ছোটবেলায় বাবার আঙ্গুল ধরে ঘুরে বেড়ানোর মজা পাই!
ঢাকায় গেলে আমার মনে হয় কোটি-কোটি পিপড়া কি এক কাজে-অকাজে সর্বদা ছুটে বেড়াচ্ছে। অনেকের হাসিতে মনিটরের পর্দা কেঁপে উঠবে, জানি কিন্তু এটাই সত্য; আমার কেবল মনে হয়, এই রে, হারিয়ে গেলাম বুঝি! তার উপর লোকেশন মনে না থাকার বিষয়ে আমি অতি কুখ্যাত!
লেখালেখির কাজে আজিজ সুপার মার্কেটে আমাকে প্রায়ই যেতে হতো, এখনো যেতে হয়। যার কাছে যেতাম তাঁর অফিস ছিল দোতলায়, যদিও ওঠার জন্য অনেকগুলো সিড়ি আছে কিন্তু মনে রাখার জন্য সব সময় আমি একই সিড়ি ব্যবহার করতাম। সমস্য হতো ওয়াশরুম বা বাথরুমে গেলে, ওই ফ্লোরেই কিন্তু একটু দূরে। এখানকার সব রুমগুলো প্রায় এক রকম হওয়ায়, ফিরে এসে আমি ঠিক চিনতে পারতাম না। পরে ভয়ে আর ওয়াশ রুমে যেতে চাইতাম না।
এখানে প্রুফ দেখার জন্য অনেকক্ষণ থাকা হয়, কাঁহাতক আর ব্লাডারের সঙ্গে যুদ্ধ করা যায়! পরে একটা বুদ্ধি বের করলাম, বাথরুম থেকে ফিরে এসে যে সিড়ি পেতাম সোজা নীচে নেমে যেতাম। তারপর সেই আমার অতি পরিচিত সিড়ি দিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে ফিরে আসতাম। একদিন ধরা খেয়ে গেলাম।
যার কাছে যাই, প্রকাশক, তিনি সিড়ি বেয়ে উঠার সময় আমার পথ আগলে দাঁড়ালেন, বললেন, বিষয়টা কি, গেলেন বাথরুমে, আসলেন নীচে দিয়ে!
আমি কথা ঘুরাবার জন্য বললাম, ইয়ে, মানে, নীচে একটা ইয়ে কেনার ছিল আর কি!
তিনি গলা ফাটিয়ে হেসে বললেন, চালবাজি করেন আমার সঙ্গে, এই নিয়ে আজ আপনাকে তিন দিন এই কান্ড করতে দেখলাম!
লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায়, ওই মানুষটার আর বুঝতে বাকী রইল না যে আমার স্মরণশক্তি গোল্ডফিশের সমান। কী লজ্জা-কী লজ্জা, সহৃদয় মানুষটা পরে অবশ্য আমার সঙ্গে অফিসের কাউকে দিয়ে দিতেন! আমি একজনের পিছু পিছু বাথরুমে যাচ্ছি, লজ্জার একশেষ! অনেক বলে-কয়ে আগের নিয়মটাই চালু রাখলাম।
এই সহৃদয় মানুষটা বিদায় দেয়ার সময় নীচ পর্যন্ত কেবল এগিয়েই দিতেন না, রিকশাও ঠিক করে দিতেন। প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিতেন, রিকশাওয়ালা কমলাপুর স্টেশন ঠিক ঠিক চেনে কিনা! লেখার জগতের এই মানুষটার এ ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না।
তবে প্রত্যেকবার কঠিন হুমকিও দিতেন, কে বলে আপনাকে ঢাকা আসতে, নেক্সট টাইমে যেন আপনাকে ঢাকায় যেন আর না দেখি!
ঢাকায় আমার থাকার কোন জায়গা নাই অথচ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নেই যে এমন না (আমি ঠিক জানি না, মনে হয় এমন, শহুরে লোকজনকে বিব্রত করা ঠিক হবে না) তবুও কেন জানি না কোথাও থাকা হয় না। অথচ অনেক যন্ত্রণা করে রাতের ট্রেনে সারা রাত কাবার করে ফিরেছি, পরের দিন ফেরা যাবে না এমন কোন দিব্যি কেউ দেয়নি, তবুও। কখনও সারারাত কমলাপুর স্টেশনে কাটিয়েছি, আমি নিশ্চিত মশারা সবগুলো দাঁত বের করে বলেছে, এমন গাধামানবকেই তো আমরা খুঁজছিলুম...। মশককুলের মধ্যে নিশ্চই এটা রটিয়ে দেয়া হয়েছিল, এমন ভালোমানুষের ছা আজকাল কোথায়! জানি না এইসব নিয়ে মশক মহোদয়গণ কোন সাহিত্য-ফাহিত্য রচনা করেছিলেন কিনা কিন্তু আমার যে ভারী লোকসান হয়েছে এমনও না।
এখানেই আমি পেয়েছি 'খোদেজা' উপন্যাসের একটা চরিত্র সোহাগকে। এর সঙ্গে পরিচয় না হলে আমি জানতেই পারতাম না এইসব অভাগা শিশুদের অধিকাংশই ড্যান্ডি নামের নেশায় আসক্ত।
এখানেই আমি দেখেছি, চাকরির ইন্টারভিউ দিতে আসা শিক্ষিত ছেলেগুলো কেমন করে পত্রিকা বিছিয়ে দিব্যি রাত পার করে দেয়।
তবে মানুষ হিসাবে নিজেকে বড় দীন-হীনও মনে হতো। কী অল্প ক্ষমতা নিয়েই না এসেছি! এই দেশে কী এমন কেউ নাই? এদের জন্য স্টেশনের কাছে একটা ডর্ম খুলবে? যেখানে প্রায় বিনামূল্যে এইসব শিক্ষিত ছেলে-মেয়েগুলো থাকতে পারবে। জটিলতার তো কিছু নাই। যারা চাকরির ইন্টাভিউর কার্ড দেখাতে পারবে তাঁরাই থাকবেন। দস্তরমতো নাম-ঠিকানা, সই-টিপসই যা যা প্রয়োজন রাখা হলো, একটা সফটওয়্যার বানিয়ে ডাটাগুলো রেখে দিলেই হয়। চাকরি পেয়ে পরে এরা সাধ্যমত পরিশোধ করবে। কেউ করবেন, কেউ করবেন না; তাতে কী আসে যায়?
আফসোস, কী একটা চুতিয়া জীবন নিয়েই এসেছি! শালার জীবন, কুতুয়া জীবন, আমি জুতা মারি এমন জীবনের!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, August 9, 2009
হায় ঢাকা...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment