ট্যাংক-মানব [১] অসুস্থ। পায়ের গুরুতর সমস্যা। থেরাপি দিতে হবে লম্বা সময়। ঢাকা গেছেন চিকিৎসার জন্য। মানুষটা ফোনে বলছিলেন, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি মনে মনে বলি, দোয়া-টোয়া জানি না, আপনাদের মত লোক এই দেশে দ্রুত কমে যাচ্ছে। আপনাদের মত লোকদের যে আমাদের বড়ো প্রয়োজন।
এই মানুষটার সঙ্গে আমার আবারও বসার কথা ছিল। শেষ যেবার তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন অনেক কথাই বিশদ জানা হয়ে উঠেনি। এরশাদ সাহেব [২] ব্যতীত এই দেশের বিখ্যাত কিছু দেশপ্রেমিকের (!) কীর্তি বিস্তারিত জানার ছিল। আমার জাগতিক সমস্যার কারণে এটা আর হয়ে উঠেনি।
এই মানুষগুলো যে কী অল্পতেই না খুশি হন! বাচ্চাদের আঁকাআঁকির একটা অনুষ্ঠানে [৩] ফজলুল হক ভূঁইয়াকে নিয়ে একটা আয়োজন করা হয়েছিল। অকস্মাৎ আমার মনে পড়ল, আরে, এই অনুষ্ঠানে তো এই মানুষটাকেও বড়ো প্রয়োজন। বাচ্চা, শিক্ষক, গার্জেন, আমরা এই মানুষটার মুখ থেকেও যুদ্ধের সময়ের কিছু অভিজ্ঞতা জানি না কেন? অনুষ্ঠানের সমস্ত আয়োজন সমাপ্ত এমন সময়ে একজন মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো বেয়াদবির সামিল। কিন্তু মানুষটাকে যে বড়ো প্রয়োজন।
আমি দ্বিধায় পড়ে যাই। মানুষটাকে এই মুহূর্তে বলব কেমন করে, তিনি এটা কেমন ভাবে নেবেন? আমি ভয়ে ভয়ে সকালে ফোন করি, খানিকটা অসুস্থ জানার পরও আমি নির্দয়ের মত বলি, আপনি কি দয়া করে আজ একটু আসতে পারবেন?
মানুষটা জানতে চান আসার কারণ। আমি যখন বলি, বাচ্চারা আপনার মুখ থেকে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শুনবে তখন তিনি আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করেননি। কেবল বলেন, আসছি।
আমি অবিশ্বাসের দোলায় দুলতে থাকি। অনেকটা পথ তার উপর আকাশের অবস্থা ভাল না। যে কোন মুহূর্তে মেঘ তার সমস্ত ঝাপি খুলে দেবে। কিন্তু মানুষটা আমাকে অবাক করে দিয়ে একগাদা টাকা খরচ করে একটা স্কুটার নিয়ে চলে এসেছিলেন। তাঁর এই মহানুভবতার কথা আমি ভুলব না।
অ, ট্যাংক-মানব, আমি অতশত বুঝি না, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। আপনাকে যে আমাদের বড়ো প্রয়োজন...।
সহায়ক লিংক:
১. ট্যাংক-মানব: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_03.html
২. এরশাদ সাহেব: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_09.html
৩. আঁকাআঁকির অনুষ্ঠান: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_4596.html
এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময় যেভাবে লেখা গেছে, ক্যারিকেচার, কার্টুন আঁকা গেছে আওয়ামী শাসনামলে সেটা ছিল স্রেফ একটা স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন! একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (!) শহিদুল আলমকে নগ্ন পায়ে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। কোথায় নিয়ে গেল সেটা আবার অনেক পরে জানা গেল। কোর্টে আবার 'মাই লর্ড' বিচারক পুলিশকে জিজ্ঞেস করছেন, পুলিশ আসামীর (শহিদুল আলমের) ফোনের পাসওয়ার্ড নিয়েছে কিনা, সেদিনই লেখালেখির কফিনে পেরেক ঠোকা হয়ে গেল...!
Saturday, July 17, 2010
ট্যাংক-মানব, আমরা আপনার অপেক্ষায়...
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)

No comments:
Post a Comment