পূর্বের পোস্টে [১] লিখেছিলাম, 'স্মল ক্রেডিট' নিয়ে। অতি ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের (বিশেষ করে নারীদের) বিনা সুদে অতি ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার প্রসঙ্গে।
আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, নামটা দেব 'স্মল ক্রেডিট'। পরে ভেবে দেখলাম, ইউনূস সাহেব [২] ক্ষেপে যেতে পারেন। রাগে চিড়বিড় করে বলে বসতে পারেন:
কী-ই-ই, আমি চালাই মাইক্রো ক্রেডিট আর তুই..., খামোশ! মামলা ঠুকে দিলে আটকাচ্ছে কে- রে হার্মাদ, বুরবাক, 'মাইক্রো বড়ো না 'স্মল' বড়ো, রে?
থাক বাবা, হুজ্জতে গিয়ে লাভ নাই। ইউনূস স্যার, আবেদ স্যার, এরা থাকুন ওনাদের চড়া সুদের মহৎ কারবার নিয়ে। এঁদের কেউ ঘাঁটাতে সাহস পায় না, আমি কোন ছার- ৩ টাকা দামের কলমবাজ! তাছাড়া ইয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা মোটেও ভাল কাজ না।
তাই নামটা এখন বদলে রাখলাম, 'ন্যানো ক্রেডিট'। আমি সামান্য মানুষ, কাজগুলোও অতি সাধারণ! ঋণটাও তথৈবচ- মাত্র ১০০০ টাকা! অতএব "ন্যানো"...।
মালতি রানী সাহা। থাকেন দেবগ্রামে। বয়স আনুমানিক ৫৫। প্রায় ২০ বছর পূর্বে তাঁর স্বামী তাঁকে ফেলে চলে যায়। ১ ছেলে, ১ মেয়ে। ছেলে বখাটে, মার খোঁজ রাখে না। অনেক কষ্টে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এখন এই ভদ্রমহিলা একা। কিভাবে তিনি দিনযাপন করেন এটা গবেষণার বিষয়।
সম্প্রতি এক সহৃদয় মানুষের সুপারিশে একটা কিন্ডার গার্টেনে আয়ার চাকরি নিয়েছেন। বেতন ছিল ২০০ টাকা, অনেক দেন-দরবার করে এখন ৩০০ টাকা।
কিন্ডার গার্টেনের এ এক বিরাট ফাজলামি। রোবট বানাবার এই সব ইশকুলে একজন টিচারের (অধিকাংশই মেয়ে/ মহিলা) বেতন ৬০০ টাকা! আমি জনে-জনে এটা জিজ্ঞেস করেছি, একটা শিক্ষিত মেয়ে এই বেতনে কেন একটা কিন্ডার গার্টেনে চাকরি করেন? কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। এদের ভাসা-ভাসা বক্তব্য, এই মেয়েটার তো আর আয় করার কোন সুযোগ নাই; বাসায় বসে থেকে কি করবে!
বিচিত্র এই দেশ, এই দেশের সব কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে ঢাকাকে ঘিরে। লোকজন সমস্ত কল-কারখানা ঢাকায় করে বসে আছে।
তবে একটা বিষয় উঠে এসেছে, কিন্ডার গার্টেনে পড়াবার সুবাদে, এই সব টিচারদের পরিচিতির কারণে বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়াতে সুবিধে হয়। মানে গার্জেনরা চোখ বুজে এদের টিচারের দায়িত্ব দেন।
যাই হোক, মালতি রানির প্রসঙ্গে ফিরে আসি। তিনি এই ইশকুলে কাজের শেষে বাচ্চাদের কাছে আচার, চকলেট টুকটাক জিনিস বিক্রি করতেন। সুদে টাকা নিয়েছিলেন, ১০০০ টাকার জন্য মাসে ৫০০ টাকা! ভাবা যায়! এই সুদখোররা অমর হয়ে জন্ম নিয়েছে নিশ্চয়ই।
আজকেই এই মানুষটাকে ১০০০ টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি আজই সুদখোরের টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবেন। এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলে ঠিক হয়েছে, মাসে-মাসে আমাদেরকে ১০০ টাকা করে দিতে তাঁর কোন সমস্যা হবে না। ১০ মাসে তিনি ১০০০ টাকা শোধ করে ফেলতে পারবেন। এরপর তার সংগে হিসাব শেষ!
এ-ই শুরু। মালতি নামের মানুষটা ১টা সংখ্যা। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি, এই সংখ্যাটা জ্যামেতিক হারে বাড়ছে। ১ থেকে ১০, ১০ থেকে...।
আমি পরাজিত হতে পছন্দ করি না। 'মালতি সাহা' নামের মানুষটা আমাকে পরাজিত হতে দেবেন না এটা আমি বিলক্ষণ জানি। তিনি সময় মত টাকাটা ফেরত দেবেন।
এ আমার স্বপ্ন, স্বপ্ন কখনও পরাজিত হতে পারে না, এ নিয়ে আমার কোন উদ্বেগ নাই।
*সদয় অবগতি: মালতি সাহা নামের এই মানুষটা যথা সময়ে টাকাটা ফেরত দিয়েছিলেন।
সহায়ক লিংক:
১. ইশকুল এবং বিবিধ: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_9016.html
২. ইউনূস সাহেব: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_12.html
১. ইশকুল এবং বিবিধ: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_9016.html
২. ইউনূস সাহেব: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_12.html

No comments:
Post a Comment