Thursday, December 30, 2010

একজন হাফ তস্কর এবং ফুল গবেট

'রামায়ন' নিয়ে একটা সিরিজ লেখা শুরু করেছিলাম। আদিকান্ড [১] এবং অযোধ্যাকান্ড [২] লেখার পর উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। দাদাদের যন্ত্রণায় আগ্রহ উবে গেল। কিন্তু আজ আমি বুকে হাত দিয়ে বলি, কোন বিশেষ ধর্মকে খাটো করার কোন গোপন ইচ্ছা আমার ছিল না।

বিষয়টা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। দুম করে চাপা পড়ে থাকা শবটা সামনে চলে এলো! এই সুমহান কাজটি করেছেন 'অর্নব আর্ক' নামের একজন। তিনি নিজের পরিচয় দেন এভাবে: "...স্নাতক সম্মান অধ্যয়নকারী ও অবিনির্মানবাদী লেখক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।"
লেখক কারা এই নিয়ে এখনও আমার ধন্ধ কাটেনি এরিমধ্যে আবার অবিনির্মানবাদী লেখক- ওয়াল্লা! বড়ই চিন্তার কথা, অবিনির্মানবাদী লেখক কাদের বলে কে জানে! এরা টাইপ করার জন্য কি ব্যবহার করেন, 'পাঙুল'- এটা নিয়েও কেউ ভাবনায় তলিয়ে গেলে তাকে দোষ দেয়া চলে না। এরা আট লাইন টাইপ করলেই কী দেড়শো লাইন হয়ে যায়, হতে পারে না এমনটা, বেশ পারে।
 
যাই হোক, এই অবিনির্মানবাদী লেখক স্যার অর্নব একটি ওয়েব সাইটে লিখেছেন, "রামায়নের পাতা থেকে কিছু মজার কাহিনী (পর্ব এক)

:):):):)

" [৩]এই লেখায় তিনি বলছেন: "প্রত্নতত্ত্বের অধ্যয়নকারী হিসেবে আমাদের সিলেবাসের অংশ হিসেবে অনেক কিছুই শিখতে হয়। আমরা যাই পড়ি অন্তত একটি কথা বলতে পারি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার দড়ি ছিড়তে গেলে যা করা দরকার তা একরকম জানতে হয়।...।ইত্যাদি ইত্যাদি।
কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি এভাবে, "কৃতজ্ঞতা স্বীকার: প্রফেসর ডঃ মোঃ মোজাম্মেল হক (আমার কোর্স শিক্ষক), আলী মাহমেদ (একজন ব্লগার যিনি পূর্বে এই বিষয়ে লিখেছেন)।" 

আমার নামটা এখানে এসেছে, আনন্দিত হওয়ার কথা কিন্তু মনটা বিষাদে ছেয়ে গিয়েছিল কারণ এই সুবিশাল লেখার দাঁড়ি-কমা-মন্তব্য সমস্ত কিছুই আমার পোস্ট থেকে নেয়া, অবিকল [১] [২]। এই সুবিশাল লেখায় মন্তব্য আকারে যা এসেছে কেবল এই আট লাইন আমার না।
তাই বাধ্য হয়ে আমাকে ওখানে স্যারের লেখায় মন্তব্য আকারে লিখতে হয়:
"ডিয়ার অর্ণব আর্ক, এই দীর্ঘ লেখায় উপরের আট লাইন এবং ইমোটিকন ব্যতীত একটা বাক্যও আপনার না। এই আট লাইনের মধ্যে কোনটা প্রফেসর ডঃ মোঃ মোজাম্মেল হক (আমার কোর্স শিক্ষক)-এর এবং কোনটা মোঃ আদনান আরিফ সালিম অর্ণব, স্নাতক সম্মান, অধ্যয়নকারী ও অবিনির্মানবাদী লেখক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-এর? দয়া করে যদি একটু জানাতেন তাহলে কৃতজ্ঞতা।" 
এর উত্তর পাওয়া যায়নি কিন্তু এটাও আমার জানা হয়ে উঠেনি, আমার বিনা অনুমতিতে আমার লেখা থেকে প্রায় দেড়শো লাইনের এই লেখার উপরে কেবল আট লাইন জুড়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার কিনা উনার কোর্স শিক্ষক প্রফেসর ডঃ মোঃ মোজাম্মেল হক এবং উনি নিজে! আর
প্রতিটা লাইন, প্রতিটা শব্দ আমার লেখা থেকে নিয়ে কেবল এটুকু লিখে দিলেই দায় শেষ হয়ে যায়?
 
অথচ আমার সাইটে গোটা গোটা অক্ষরে লিখে  রেখেছি, "আমার বিনা অনুমতিতে কোন লেখা কোথাও প্রকাশ করা যাবে না"। তারপরও মানুষটা আমার নাম উল্লেখ করেছেন বলে অর্ণব আর্ক নামের মানুষটাকে তস্কর-চোর বলি কেমন করে? যে-কোন প্রকারে আমার নামটা তো উল্লেখ করেছেন। আহা, কী একটা ধরন, "আলী মাহমেদ (একজন ব্লগার যিনি পূর্বে এই বিষয়ে লিখেছেন)"।
উই মা, আমি ধন্য। জেনে ভাল লাগছে আমি এটা নিয়ে পূর্বে লিখেছি, এটা না-বললে  জানাই হতো না! এবং আমি যে একজন ব্লগার স্যারের কাছ থেকে এই স্বীকৃতি পেয়েও ভাল লাগছে।
কেবল যে এই লেখাটি হুবহু অন্য সাইটে পাবলিশ করা হয়েছে বলেই না, আমি ক্রুদ্ধ অন্য কারণেও। এই সুবিশাল লেখায় উপরের আট লাইন ব্যতীত অর্ণব নামের মানুষটার 'রসিকলাল' টাইপের হাসির ইমোটিকনের অযথা ব্যবহার। যে ধর্ম কোটি-কোটি মানুষের বিশ্বাস করে সেই ধর্ম নিয়ে এমন স্থুল রসিকতা আমার বিন্দুমাত্র পছন্দ হয়নি, তাও আমার অনিচ্ছায় আমার লেখাকে জড়িয়ে। এটা আমার ব্যক্তিগত মত, অধিকাংশ ধর্মের উপাদানই হাসির উদ্রেক করে সেখানে কেবল একটি ধর্মকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ বলেই আমি মনে করি।

বিষন্নচিত্তে আপনাকে বলতেই হয়, ডিয়ার অর্ণব আর্ক, আপনার গবেটসুলভ আচরণ মেনে নিতে পারলাম না বলে দুঃখ প্রকাশ করি।

সহায়ক সূত্র:
১. আদিকান্ড: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_07.html 
২. অযোধ্যাকান্ড: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_31.html 
৩. অর্নবের লেখা: http://www.somewhereinblog.net/blog/Archaeologistaurnab/29291344

13 comments:

  1. কে যেন বলেছেন, একটা বই থেকে নিলে হয় চুরি, আর কয়েকটা থেকে নিলে হয় গবেষণা। অর্ণব সাহেব নিজেকে 'গবেষক' (তাঁর প্রোফাইলে লেখা আছে, তিনি অতীত নিয়ে 'গবেষণা' করতে পছন্দ করেন।) প্রমাণ করার জন্যে আদিকান্ড ও অযোধ্যাকান্ড মিলিয়ে ঝালমুড়ি খাওয়ানোর প্ল্যান করেছিলেন পাঠকদের, কিন্তু বেরসিক আপনার জন্যে তাঁর ঝালমুড়ির ব্যবসা লাটে ওঠার যোগাড়! :)

    ReplyDelete
  2. অর্নব আর্ক পোস্ট করার মিনিট ত্রিশেকের মধ্যে পোস্টটা আমি দেখেছিলাম। এখন আবার দেখলাম। অর্নব, তিনি যখন উপসংহার টানতে গিয়ে লিখলেন 'একজন ব্লগার যিনি পূর্বে এই বিষয়ে লিখেছেন, আলী মাহমেদ' রীতিমতো হাসি পেল।
    প্রায় সব মন্তব্যকারী মন্তব্যের প্রতিমন্তব্যে তিনি লিখেছেন কয়েকপর্বে তিনি এটা শেষ করবেন, লিখছেন শুধু মজা পেয়ে, তিনি এর কিছুই বিশ্বাস করেন না।
    শওকত আহমেদ বলেছেন: কেবল এক ব্রক্ষ্ণাস্ত্রই নাকি কাফি। এটা একবার ছুঁড়লে ফিরিয়ে নেয়া যায় না। এর সঙ্গে অনেকটা মিল পাওয়া যায় আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের।

    ভাই সেই আমলেরই অস্ত্র তীর ছুঁড়ে আবার কিভাবে ফিরিয়ে নিত?
    ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৪৯
    লেখক বলেছেন: ভাই আজকাল এমুন কিছু ঘটতেছে যা পৌরাণিক আকাম কুকামকেউ হার মানায়। আমি জাস্ট মজা পাইছি বলেই এই ধারাবাহিক লেখা শুরু করছি। আসলে পৌরানিক ব্রহ্মাস্ত্র বা আধুনিক পারমানবিক বোমা এগুলোর থেকেও মারাত্ত্বক অস্ত্র আছে । তা অইলো আমাগো নেতা নেত্রীদের মুখ। এইটা ডেন্জারাস মাল।
    ভাই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য ।


    অর্নব আর্কের মন্তব্য পড়ে কিন্তু মোটেও খারাপ লাগছে না, রীতিমতো উপভোগ করছি।

    ReplyDelete
  3. আরেকটু আগে সামুতে বিদ্রোহী ভৃগু নামে এই লিঙ্কে http://www.somewhereinblog.net/blog/bidrohy/29298962আপনার (মুক্তিযোদ্ধা + খিচুরী + কেকা চৌধুরী) লিখাটা দিসিলো........... কিনতু কমেন্ট করতে যায়া লিখাটা উধাও হয়া গেসে.......

    ReplyDelete
  4. উনি (বিদ্রোহী ভৃগু) অবস্য লিখা শেষে আপনার সুত্র ইউস করসিলো..... কিনতু অনুমতি নিসিলো কিনা জানা ছিলো না...... অনুমতির বেপারটা জানার জন্য কমেন্ট করতে যায়া দেখি লিখা উধাও......

    ReplyDelete
  5. "একটা বই থেকে নিলে হয় চুরি, আর কয়েকটা থেকে নিলে হয় গবেষণা। অর্ণব সাহেব নিজেকে 'গবেষক'...।"
    কয়েকটা জায়গা থেকে চুরি করে ঝালমুড়ি বানালে তাও না-হয় একটা কথা ছিল কিন্তু আমারই লেখা জোড়া দিয়ে নাম দিয়ে বসে প্রফেসর ডঃ মোঃ মোজাম্মেল হক (গবেষকের কোর্স শিক্ষক)। আফসোস, ভাল করে চুরি করাও শিখল না! © ডিউক জন

    ReplyDelete
  6. "অর্নব আর্কের মন্তব্য পড়ে কিন্তু মোটেও খারাপ লাগছে না, রীতিমতো উপভোগ করছি।"
    সেই! কিছু কিছু মানুষের কর্মকান্ড দেখলে নির্বোধ মানুষটার প্রতি করুণাও হয়। অর্ণব আর্ক তেমন একজন মানুষ। @রুবাইয়্যাত

    ReplyDelete
  7. না, আমার অনুমতি নেয়া হয়নি- এই বিষয়ে কিছুই জানি না। আর বলবেন না, চোর-চোট্টাদের যন্ত্রণায় অস্থির। ধন্যবাদ, আপনার তথ্যের জন্য। @mutasim

    ReplyDelete
  8. Vai, he doesn't have knowledge about copyright which is reserved to you.
    Even having poor knowledge on writing references.
    I have to say that this aornob is nonsense as we have entered in the digital world and we can see what's gong to wrong...
    vai chor cori korbe tai bole to theme thakle cholbena, aro besi besi kore likhben ....

    ReplyDelete
  9. ধন্যবাদ, আপনার সহৃদয় মন্তব্যের জন্য...। @palash

    ReplyDelete
  10. ai deshe chor beshi na gobeshok.....ai niye akta gobeshona howa dorkar?

    ReplyDelete
  11. সহমত।
    এই দেশে ঘুষখোর বেশি, না সুদখোর‌ এটা বের করার পাশাপাশি এটাও বের করা যেতে পারে, চোর বেশি না গবেষক। :-)
    @your doctor

    ReplyDelete
  12. ডাক্তার সাহেবের সাথে একমত হইলাম |

    ReplyDelete

আপনার যে কোন মত জানাতে পারেন নিঃসঙ্কোচে, আপনি প্রাসঙ্গিক মনে করলে।