লেখক: Ibrahim khalil Sobak (সবাক): (https://www.facebook.com/share/1BbMt6XzyB/) [লেখকের লিখিত অনুমতিক্রমে]
"জরুরি সংবাদপত্র বহনকারী সিএনজিতে করে ফিরছিলাম। ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়াতেই দু'পাশে দু'টি মোটরসাইকেল এসে থামে। তারপর গুলি করে। আমি সিটের ওপর ঢলে পড়ি। উপস্থিত সাধারণ মানুষ এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে মৃত ঘোষণা করেন। ব্যাপারটা নিশ্চয় আপনি জানেন?
তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, জানি-জানি। ঘটনা দুপুরে ঘটেছে, তাই তো'?
আমি বলি, 'জ্বি'।
'সেক্ষেত্রে তোমার জন্য জুরাইনে দাফনের জায়গা করা হয়েছে, তুমি সেখানে চলে যাও'?
'এখনই যেতে পারবো না। আমার একটা জরুরী কাজ আছে'।
তিনি আবারও বলেন, 'সব কাজ শেষ না-করে এভাবে মরতে গেলে কেন? এখনতো ঝামেলা হয়ে যাবে'!
আমি কাতর হয়ে বলি, 'দেখুন, আমার ছেলে জানালা দিয়ে খেলনা কবুতর ফেলে দিয়েছে। কেউ তাকে সেটা তুলে এনে দেয়নি! এখন সে কান্না করছে। ...আচ্ছা, আমার ছেলের নামটা যেন কী? না থাক, আপনি বরং আমার বাসার ঠিকানাটা বলুন, আমি বাসায় যাব। বিশ্বাস করুন তাকে খেলনা কবুতরটা তুলে এনে দিয়েই সোজা জুরাইন চলে যাব। কসম'!
তার চোখে খানিকটা অবিশ্বাস, 'কিন্তু, তুমি যে ঠিকঠাক জুরাইনে গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়বে, তার গ্যারান্টি কী? রেকর্ড দেখে তো তখন মনে হয় না পৃথিবীতে তোমার কোনো কাজকর্ম আছে; সবসময় একজন কর্তব্যহীন দাসের মতো গায়ে বাতাস লাগিয়ে হাঁটতে। এখন এসব বলে কোনো লাভ হবে না, বলো'!
'কিন্তু, আমার বাসার ঠিকানা তো এত দীর্ঘ না। ঠিকানার আগে পরে কোনো প্রশ্ন অথবা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন নেই। আপনি কি আমার সাথে প্রতারণা করছেন'?
তার কন্ঠে খানিকটা উষ্মা, 'কথা না বাড়িয়ে তুমি এখনই জুরাইন চলে যাও—যত দ্রুত সম্ভব। শহরের মানুষজন টের পেলে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। মৃত্যুর পর এভাবে টং দোকানে বসে চা খাওয়া যায় না, বুঝলে! এটা উচিত না!
'দেখুন, আমাকে বাসায় যেতেই হবে। আমার ছেলের সাথে ওই কবুতরের টান আছে। কবুতরের ঠোঁটে সে চুমু খায়, বুকে নিয়ে ঘুমায়। আমি না-গেলে আর কেউ বাসার পেছন থেকে তার এই ভালোবাসার কবুতরটা এনে দেবে না। কবুতর এনে না-দিলে আমার ছেলেটা ঠিকমতো খাবে না, ঘুমাবে না। অনিয়ম করতে করতে সে শুকিয়ে যাবে, শরীর নষ্ট হয়ে যাবে।
তার বড় তাড়া, ' শোনো, এখান থেকে ...ওই যে লাল বাসটায় উঠলে তোমাকে জুরাইন নামিয়ে দেবে। বাসের কেউ তোমাকে দেখবে না, কন্ডাক্টরও ভাড়া চাইবে না। কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি নতুন কবরের পাশে নেমে যেও'।
আমি বিরক্তি গোপন করে বলি, 'আমার বাসার ঠিকানা না-দিয়ে আপনি চায়ের অর্ডার দিচ্ছেন কেন? এই... এই... আপনি চা খাবেন না, বাসায় যাওয়ার জন্য আমাকে কোন রঙের বাসে উঠতে হবে বলুন, আমি পাশাপাশি দুটি জারুল ফুলের গাছ দেখে আমার বাসা চিনে নেব; আপনি শুধু বাসটা ধরিয়ে দিন'।
'লাল বাস! জুরাইন যাওয়ার জন্য লাল বাসে উঠতে হবে'।
'আহা, প্রতারণা করবেন না। আপনি সিগারেট ধরাবেন না। কোন রঙের বাসে উঠে বাসায় যাব, বলুন। এক্ষুনি বলুন'!
তিনি এবার নরোম গলায় বলেন, 'জুরাইনগামী লাল রঙের বাসটি দাঁড়িয়ে আছে, তুমি যাও। আরে, যাও তো'!
'এই, এ-এ-এই..., আপনি কিন্তু এখনই দোকানদারের টাকা শোধ করবেন না। দোকানদারকে টাকা দিয়ে চলে যাবেন না। দয়া করে আপনি আরও এক কাপ চা খান, আরও একটি সিগারেট ধরান। আরও এক দণ্ড... এই যে, এখানটায়... এখানটায় বসুন। আর আমার বাসার ঠিকানাটা দিন।দোহাই লাগে, এভাবে চলে যাবেন না। বাসার ঠিকানাটা দিয়ে যান।
দেখুন, আমাকে বাসায় যেতেই হবে। আমার ছেলের সাথে ওই কবুতরের প্রেম আছে। কবুতরের ঠোঁটে সে চুমু খায়, বুকে নিয়ে ঘুমায়। আহা, আমি না-গেলে আর কেউ বাসার পেছন থেকে তার ভালোবাসার কবুতর এনে দেবে না। কবুতরটা এনে না-দিলে আমার ছেলে ঠিকমতো খাবে না, ঘুমাবে না। অনিয়ম করতে করতে সে শুকিয়ে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে।
বুঝলেন, আমাকে বাসায় যেতেই হবে। আমার ছেলের সাথে ওই কবুতরের প্রেম আছে। কবুতরের ঠোঁটে সে চুমু খায়, বুকে নিয়ে...।"
(২০১৩ সালে যখন মৃত্যু তাড়া করে ফিরতো, তখন লেখা)
-লেখক: Ibrahim khalil Sobak (সবাক): (https://www.facebook.com/share/1BbMt6XzyB/)
No comments:
Post a Comment
আপনার যে কোন মত জানাতে পারেন নিঃসঙ্কোচে, আপনি প্রাসঙ্গিক মনে করলে।