Saturday, July 4, 2015

সেকাল-একাল।

আজকের অতিথি লেখক, শামস
"২০০৭ সাল। জীবনে প্রথম বাড়ির বাহিরে। মেডিকেল কলেজের প্রথম বছর। মায়ের হাতের রান্না বাদ দিয়া ডাইনিং-এ খাওয়া শুরু করিলাম। ১২ টাকার মিল। লাঞ্চ ডিনার মিলিইয়া ২৫ টাকা। ১ টাকা জমা থাকিত। চার পাঁচ মাসের জমানো টাকা দিয়া ইমপ্রুভ ডিনার হইত।

খাবারের মেনু ছিল নিতান্তই সাধারণ। আনলিনিটেড ভাত, একটা ভাজিভুজি বা ভর্তা অথবা মাছ বা মাংস। একটা মুরগিকে আমার ধারণা ৩২ পিস করা হইত। বিশাল বাটিতে ঝোলে ডুব দিয়া মাংস আহরণ করা হইত। আর মাছের পিসগুলো যিনি ফালাফালা করিতেন তিনি সম্ভবত বিশাল সার্জন হইবার প্রতিভা রাখেন। এহেন স্কিন গ্রাফটিং সাইজের পিস আমি জীবনে আর কোথাও দেখি নাই। গভীরতা যাহাই হউক না কেন ডালের গামলার তলা স্পষ্ট দেখা যাইত। আমরা প্লেট ভর্তি করিয়া ভাত লইয়া ডাল দিয়া ভাসাইয়া দিতাম। ভাত খাওয়া শেষে প্লেটে চুমুক দিয়া সুড়ুৎ সুড়ুৎ করিয়া অসভ্যের মত ডাল খাইতাম! কেহ ভ্রু পর্যন্ত কুঁচকাইত না!

সকালের নাস্তা খুবই সস্তায় করা যাইত। দুই টাকা করিয়া পরোটা, দুই টাকার ডাল, খিচুড়ি মাত্র পাঁচ টাকা প্লেট! আমরা অনেকেই টাকা-পয়সা বাঁচাইবার জন্য হাফপ্লেট খিচুড়ি আর একটা ডাল; মোট পাঁচটাকায় নাস্তা সারিয়া ফেলিতাম। হাউকাউয়ের সহিত নাস্তা শেষ করিয়া আনন্দ সহকারে লেকচার হইতে ফিরিয়া ঘুম দিতাম! ঘুম শেষে চারুমামার ক্যান্টিনের একটা সিংগাড়া, বাইরের দুই টাকার লাল চা খাইয়া ঘুম তাড়ইয়া আবার লেকচার বা ক্লাসে ফিরিতাম।

ইফতারে তাবলিগী খাওয়া বড়ই সাশ্রয়ী প্রমাণিত হওয়ায় তাহাই নিয়মিত চালু ছিল। মুড়ি ছোলা পিয়াজু বেগুনি জিলাপি সব একসাথে মাখাইয়া মাটিতে পেপার বিছাইয়া দিয়া আনন্দ সহকারে খাওয়া হইত। জিলাপি বা বেগুনির টুকরা একটু বেশি পাইবার জন্য হাতাহাতি পর্যন্ত হইয়া যাইত। কোন পার্টিতে দাওয়াত পাইলে আগে আগে পৌঁছাইয়া হাঁ করিয়া বসিয়া থাকিতাম প্যাকেটের আশায়। একটুও লজ্জা করিত না। আমাদের সময় সবাই একটু বেশিবেশিই বেহায়া ছিলাম যে!

ছাত্রজীবনে খুব একটা খানাপিনার সুযোগ পাই নাই। মফস্বল শহরে থাকায় বার্গার পিজ্জা এইগুলা খাইতে গিয়া চেকইন মারা হয় নাই। আফসোস, বড়ই আফসোস। আজকালের পোলাপাইন বাফেলো উইং, স্টেক খাইয়া পড়াশোনা করিতেছে। অবশ্যই উহাদের মেধা আমাদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি হইবে ইহা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাফেলোর মাথায় যে অনেক ঘিলু থাকে! আনন্দ মাপিবার কি কোন মেশিন আছে?

এয়ারকন্ডিশনে বসিয়া কেলাশ করিয়া, গ্লোরিয়া জিন্সের ইশপিশাল প্ল্যাটার খাইয়া ঢেকুর তুলিবার আনন্দ আর ধার-ধুরের বই জোগাড় করিয়া কেলাশ, তেলাপোকা ঘোরা ডাইনিং-এর ডাল-ভাত খাইয়া অসভ্যের মত ঘোঁৎ করিয়া ঢেকুর তোলার আনন্দটা মাপিয়া দেখতাম! আহা, বেশি সুখী হইতে কে না চায়?"

2 comments:

  1. //লেখাটি পড়ে নিজের সময়ে ফিরে গেলাম, সেই দিন আর ফিরে আসে না আসবে না//

    ReplyDelete
  2. মেহরাবJuly 4, 2015 at 12:25 AM

    শুভ ভাই,এটা না বললেই নয় আপনার অতিথীদের লেখাও স্বাদে অতুলনিয় ;)

    ReplyDelete

আপনার যে কোন মত জানাতে পারেন নিঃসঙ্কোচে, আপনি প্রাসঙ্গিক মনে করলে।