আমি ঘরকুনো টাইপের মানুষ। এই কারণে অবশ্য ঠিক মানুষ হয়ে উঠা হলো না আমার। আমি এই মিথ্যা আনন্দ নিয়ে বেজায় সুখী, আমার বাসার দিকে যে রাস্তাটা গেছে তা স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা [৬]। এই করে করে আমার শেকড় বেরিয়ে গেছে, যাওয়া হয় না কোথাও। বৈদেশ দূরঅস্ত দেশেই কোথাও যাওয়ার কথা হল আমি বিভিন্ন ফন্দী আঁটি কেমন করে এড়ানো যায়। কমন হচ্ছে আমার পেট নেমে যায়, এই সব ক্ষেত্রে এটা ভালো একটা অসুখ তখন কেউ টানাটানি করতে চায় না। কেন সেটা নিয়ে আর বিস্তারিত বলি না।
যে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে জড়িত ছিলাম, এরা একবার ব্যংককের ২টা টিকেট দিল, হোটেলে থাকা-টাকাসহ। এরা বারবার জানতে চাইত, আমি কবে যাচ্ছি। আমি হাঁই তুলে বলি, দেখি। আমার এই দেখাদেখির পর্ব আর শেষ হয় না। এরা বিরক্ত হয়ে এক সময় হাল ছেড়ে দিল। লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে বলত, গেলে অনেক মজা করতে পারতেন।
আমি যে কারণে টিকেটটা পেয়েছিলাম, অন্য একজনও পেয়েছিলেন। তিনি ঘুরে এসেছেন। তিনিও চকচকে চোখে বলছিলেন, গেলে অনেক মজা করতে পারতেন।
আমি এবার খানিকটা আগ্রহী হলাম, কাওয়াই নদীটা দেখেছেন?
আরে ধুর, পাগল, নদীর অভাব আমাদের দেশে আছে নাকি যে থাইল্যান্ডে নদী দেখব। খুব মজা হইল, বুঝলেন।
তার কাছে জানতে চাই, কেমন মজা?
তিনি বললেন, নগ্ন নৃত্য একবার দেখলে মনে হবে স্বর্গে আছেন। চিন্তা করা যায় গায়ে একটা সুতাও নাই!
আমি বলি, গায়ে একটা সুতাও নাই?
কসম, কিচ্ছু নাই।
আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। এই গ্রহে এর থেকে কুৎসিত আর কি দেখার থাকতে পারে! আমি দেবতা না, নারী দেহ আমাকে আকর্ষণ করে না এমন না কিন্তু সম্পূর্ণ নগ্ন দেহ আমাকে কখনো আকর্ষণ করে না। তখন মিস ওয়ার্ল্ড এবং মিসেস জরিনার মধ্যে কোন তফাত থাকে না।
প্রকৃতির পছন্দের খানিকটা আমার রক্তেও প্রবাহিত। প্রকৃতি লাইট এন্ড শেড- আলো ছায়ার কাজ রেখে দিয়েছে। নইলে দিন-রাতের ব্যবস্থা থাকত না। কেবল দিন, সব আলোকিত হয়ে গেলে রহস্য বলে আর কিছু থাকে না। সাদা পাতার বই পড়ার কোন অর্থ নাই!
এখন পাসপোর্টটা বের করে দেখি এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সেই কবে! পাসপোর্টের জন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। এই দেশের অফিস-আদালত নিয়ে আমার স্মৃতি সুখকর না। ওই মানুষটাই সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমার কাজ হচ্ছে, কেবল একটা কাগজ দেখিয়ে পাসপোর্টটা নিয়ে আসব। এটুকুই আমার কাজ!
কখনো কখনো দিন শুরু হয় বাজে ভঙ্গিতে। যেতে হবে কুমিল্লা, পাসপোর্ট অফিসে। ইন্টারসিটি ট্রেনটা আজ চলছে গরুর গাড়ির মত করে। যে স্কুটারে উঠলাম এটা খানিক দূর গিয়ে থেমে গেল। ঘটনা কি, ড্রাইভার সাহেবের কাগজ-পত্র নাই। পুলিশ ধরপাকড় করছে। ড্রাইভার সাহেব পুলিশকে নিয়ে যে মধুর বাক্য ব্যয় করছেন এগুলো বললে হারপিক দিয়ে কুলি করতে হবে!
আমি বিরক্ত হয়ে বলি, খামাখা মুখ খারাপ করছেন কেন, এরা এদের দায়িত্ব পালন করবে না?
ড্রাইভার সাহেব এবার আরও ক্ষেপে গেলেন। ভাই, বইলেন না, ...পুতরা ঘুষের রেইট বাড়াইবার লাইগ্যা ইতা করতাছে।
পাসপোর্ট অফিসে যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়ির কাঁটা একটা ছুঁই ছুঁই। ভাগ্য ভাল নইলে একটা বেজে গেলেই স্যারদের দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যেত। উৎকট কোন ঝামেলা নেই, ছিমছাম। সেনাবাহিনীর একজন সদস্য চকচকে অস্ত্র কাঁধে নিয়ে টহল দিচ্ছেন। আমি সেনাবহিনী সদস্য নামের মানুষটার কাছে জানতে চাইলাম, পাসপোর্ট কোত্থেকে নিতে হয়। মানুষটা ইশারায় দেখিয়ে দিলেন। আমার ধারণা, এদের উপর সম্ভবত নির্দেশ থাকে ব্লাডি সিভিলিয়ানদের [১] কাছে শ্বাস নেয়া ব্যতীত মুখ খুলবে না।
নতুন কোথাও গেলে আমার মধ্যে একটা উদভ্রান্ত ভঙ্গি কাজ করে, সব কেমন গুলিয়ে যায় [২]। আমার বড়ো ধরনের সমস্যা আছে। শত-শতবার ঢাকা গেছি কিন্তু এখনও কোন ঠিকানা নিজে নিজে চিনে যেতে পারি না। বন্ধু-বান্ধব কেউ সঙ্গে না থাকলে হাতি দিয়ে টেনেও আমাকে কেউ কোথাও নিতে পারবে না [৩]। এই নিয়ে অনেক যন্ত্রণা আমাকে সহ্য করতে হয়, আমাকে নিয়ে বিস্তর হাসাহাসি হয়। কেউ হাসলে আমি তো আর মুখ চেপে ধরতে পারি না।
তো, কেউ না থাকলে আমি অন্যদের লক্ষ করি, এরা কি করেন। এরা যা যা করেন, মাথা খাটিয়ে আমিও তা তা করে পার পাওয়ার চেষ্টা করি। এখানে দেখলাম, একটা জানালা দিয়ে সবাই কাগজটা এগিয়ে দিচ্ছেন, নাম-ধাম জিজ্ঞেস করে পাসপোর্ট ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। খোলা একটা জায়গা, মাথায় উপর কিচ্ছু নেই। ঝাঁঝাঁ রোদ্দুর, সূর্য চামড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে।
আমি সেনাবাহিনীর সদস্যকে বললাম, এর মানে কি? এভাবে পাসপোর্ট নিতে হবে কেন!
মানুষটার পাথরচোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি কথা বাড়ালাম না কারণ মানুষটার ব্লাডি সিভিলিয়ানের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ আছে। কি আর করবে, বেচারার জন্য কষ্টই হয়।
আমি জানি না কেন, মাঝে-মাঝে আমার মস্তিষ্ক [৪] ফরম্যাট করে ফেলতে ইচ্ছা করে, এর ঘুম বড়ো প্রয়োজন। মস্তিষ্কই সমস্ত নষ্টের মূল। পশুর একটা মস্তিষ্ক থাকলে এই সব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় না।
এই দেশে অনেক কায়দা করে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কিছু বুদ্ধিমান মানুষদের বসিয়ে দেয়া হয়। এঁদের কাজ হচ্ছে, দেশের সাধারণ জনগণকে কতো রকমে অপমান-অপদস্ত করা যায়! এক ফোঁটা মুত্র ত্যাগেও [৫] এদের বড়ো আপত্তি!
এবার খানিকটা কঠিন কথা বলি, পাসপোর্ট সরকার আমাকে মাগনা দিচ্ছে না। জরুরী বিধায় এর জন্য আমাকে একগাদা টাকা খরচ করতে হয়েছে। এমন না যে চার আনা পয়সা কম নেয়া হয়েছে। কেন আমাকে চোর-চোট্টার মত রাস্তায় দাঁড়িয়ে আগুন রৌদ্র মাথায় নিয়ে হাভাতের মত হাত বাড়িয়ে রাখতে হবে? আমি কি ওখানে ভিক্ষা চাইতে গেছি?
যারা নিজের দেশে তার সন্তানদের সম্মান দিতে জানে না তারা কেমন করে আশা করে অন্য দেশ, অন্য দেশের লোকজন তাদের সম্মান করবে?
*বৈদেশ পর্ব: ২: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_11.html
সহায়ক লিংক:
১. আমি ব্লাডি সিভিলিয়ান: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_15.html
২. কাজীদা: http://www.ali-mahmed.com/2007/07/blog-post.html
৩. বন ভয়েজ, বইমেলা: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_27.html
৪. মস্তিষ্কের ঘুম: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_4207.html
৫. সভ্য: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_07.html
৬. ভালবাসার রসায়ন: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_24.html
valo laglo..thanks
ReplyDeleteআপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগছে। :)@tasnim
ReplyDeleteThis comment has been removed by a blog administrator.
ReplyDelete