আনন্দমোহন কলেজে দুঃসহ ঘটনা, সবাই নীরব শিরোনামে যে খবরটা ছাপা হয়েছে এটা পড়ে চোখের জলে নাকের জলে অনেকের আন্ডারওয়্যার ভিজে যেতে পারে কিন্তু আমাকে খুব একটা প্রভাবিত করে না কারণ এই স্বাভাবিক! এমনটা হবে এ তো আর বিচিত্র কিছু না। আমাদের সন্তানদের আমরা যেমনটা করে বড়ো করছি তারা তেমনটা করেই বড়ো হচ্ছে, এর ব্যত্যয় হবে কেন? লাগাব ধুতুরা গাছ এটায় কী আম ধরবে নাকি? প্রকৃতির নিজস্ব একটা নিয়ম আছে না? অন্যথা হলেই রাগ করে, দুর্দান্ত রাগে তার পিঠে সওয়ার তার সন্তানকে ফেলে দেয়। প্রকৃতি নিয়মের বাইরে যেতে পছন্দ করে না, তাঁর অনন্ত ভ্রমনে থামাথামি নাই।
এর আগের পোস্টে আমি বলেছিলাম আমার এক বন্ধু বলছিলেন, এই দেশের লেখকরা এখন পুতিয়ে গেছেন! আসলে কেবল লেখক না এই দেশের বিবেক নামের জিনিসটা এখন জাদুঘরে রাখার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। প্রায়শ বড়ো অসহায় হয়ে পড়ি- দাঁড়াবার কোন জায়গা নাই! কার কাছে যাই, কোথায় যাই?
তো, আমরা অতি আগ্রহে লাগাচ্ছি বিষবৃক্ষ এটায় কী জয়তুন ফল ধরবে এই আশা নিয়ে আছি বুঝি? এই ছেলেগুলো যে কান্ড করেছে এটার জন্য তো এরা দায়ী না, দায়ী আমরা। ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে যখন হত্যা করা হয়, একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (তিনি আবার মায়ের জাত) তখন বলেন, "...এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা কোন ব্যাপার না। এমনটি ঘটতেই পারে...।"
তো, আনন্দমোহন কলেজেন এই ঘটনাকে খুব বড়ো করে দেখার অবকাশ কই? পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম ফারুক যদি বলেন, "...এ ঘটনার কথা পরে লোকমুখে শুনেছি। ...কেউ কোন অভিযোগ করেনি।" (প্রথম আলো)
যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমনটা মনে করেন সেখানে এসপি সাহেবের এ কথায় আমরা অবাক হবো কেন?
আচ্ছা, একটা বিষয় আমার জানার খুব ইচ্ছা, কেউ যদি আমাকে খুন করে ফেলে আর আমার পরিবারের বা অন্য কেউ যদি অভিযোগ না করে তাহলে কী পুলিশ আমার হত্যাকারীকে ধরবে না? এসপি সাহেবের কথা শুনে তো মনে হচ্ছে, ধরবে না। আইনের কিলাশে(!) টর্ট আইন আমার খুব আগ্রহের বিষয় ছিল। যতটুকু মনে আছে, কেবল এই কথা বলার জন্য এসপি সাহেবের বিরুদ্ধে টর্ট আইনে মামলা হতে পারে, একজন প্রাণ হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এই আশংকায়।
থাকুক, এইসব আইনের প্যাচাল! আমাদের দেশের বিবেক ওরফে সুশীল সমাজের কথায় আসি। সম্প্রতী ৫জন খুনির ফাঁসি হল। এই নিয়ে কারও দ্বিমতের কিছু নাই- কেউ অন্যায় কররে তাকে শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু এই ফাঁসিকে উপলক্ষ করে আমরা যে অন্ধকারের খেলা দেখলাম এটার সঙ্গে কেবল তুলনা চলে হটেনট জাতির সঙ্গে। আমাদের দেশের বিভিন্ন টাইপের মিডিয়া যেটা করেছে এরা ক্রমশ আমাদের ভেতরের পশুটাকে বার করে নিয়ে আসছে। এই জাতি আজীবন এদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে- কারণ আমরা চাই জঙ্গলের আইন, ফিরে যেতে চাই অন্ধকারে।
যে লোকজন লাশের গায়ে থুথু ফেলেছে এদের খুব একটা দোষ দেয়ার কিছু নাই। মন্ত্রীগোছের লোকজন যখন টক-শোতে এই কাজটাকে বাহবা দেন, তাহলে এদের দোষ দেব কেন? আমাদের দেশের লেখালেখি জগতের লোকজন নীরব। কাউকে দেখলাম না এই নিয়ে টুঁ-শব্দ করতে। ৫ খুনির একজন, আর্টিলারী মহিউদ্দিন ফাঁসি দেয়ার সময় অসুস্থ ছিলেন অনেক সূত্র থেকে এটা জানা গেছে। তিনি তাঁর পরিবারের লোকজনকেও বলেছিলেন, "আমি অসুস্থ, আমাকে এখনই ফাঁসি দিবে না।" এই বক্তব্যটা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তাঁর স্বজনদের কাছ থেকে শুনেছি।
জেলকোড অনুযায়ী একজন অসুস্থ মানুষকে কি ফাঁসি দেয়া যায়? কই, কাউকে দেখলাম না এই নিয়ে প্রশ্ন করতে! আমার একজন বন্ধু আরেকটা চমৎকার কথা বলেছেন, আমেরিকায় যেমন ১/ ১১ নিয়ে কোন কথা চলে না তেমনি আমাদের দেশে এদের নিয়ে। এরা পিতৃভূমি নিয়ে, আমরা মাতৃভূমি নিয়ে কস্তাকস্তি করছি।
প্রকারান্তরে আমরা যে এদের মত হয়ে যাচ্ছি এই খোঁজে আমাদের কাজ কী! অন্যকে নগ্ন করতে গিয়ে নিজে দিগম্বর হলে দোষ নাই?
আমার কাছের লোকজন এখন আমাকে নিয়ে সত্রাসে থাকেন (ইতিমধ্যে তাঁদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মত কিছু ঘটনা ঘটেছে)। এদের সাফ কথা, আমি যেন এইসব আগুনসম বিষয় নিয়ে লেখালেখি না করি। সবার পেছনে কেউ-না-কেউ, কোন-না-কোন দল আছে, আমার পেছনে কে আছে। যেখানে দেশের শক্তিশালি লেখকদের এই নিয়ে বিকার নাই সেখানে আমার মত ৩ টাকা দামের কলমবাজের এইসব নিয়ে মাতামাতি করার প্রয়োজন কি। এদের কেমন করে বোঝাই একজন মানুষ একবারই মারা যায়- কেউ বিছানায়, কেউ ব্যাটলফীল্ডে। বিচিহারা এবং মাতৃহারা- এদের মত অভাগা আর কেউ নাই!
এঁদের এ কেমন কথা, আমি কী তাহলে এখন থেকে সিনেমার বিজ্ঞাপন লিখব? হা ভাই, আসিতেছে...।
আজিব, যা সত্য তা নিয়ে লিখতে পারব না? বিচিত্র এ দেশ- বিচিত্রসব কান্ড! এখানে হাজার-হাজার রাজনৈতিক মামলার দোহাই দিয়ে কতশত চোর-চোট্টা পার পেয়ে যাচ্ছে অথচ আমাদের দেশের সোনার শ্যূটার আসিফের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা যাচ্ছে না। এই বেচারা অনুশীলন করবে নাকি কোর্টে হাজিরা দেবে? সত্যিই এমন বিচিত্র দেশের দেখা মেলা ভার!
আমি বলছি না ওই খুনিদের শাস্তি দেয়া না হোক। অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে কারণ ৩৮ বছর কেন ৩৮০ বছর পরও রক্তের দাগ মুছে ফেলা যায় না। কিন্তু লাশের গায়ে থুথু, জুতা মেরে? একজন অসুস্থ মানুষকে ফাঁসি দিয়ে? তাহলে কী আমরা এদের পর্যায়ে নেমে আসব? নাকি এদের ছাড়িয়ে যাব? এই প্রজন্ম এইসব দেখে দেখে বড়ো হচ্ছে, বিভিন্ন উপায়ে এদের ভেতরের পশুটাকে আমরা বার করে নিয়ে আসছি। কতো উপায়েই না! এই দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি মায়া এখন সেল কোম্পানিগুলোর, ঘটা করে আমাদের মগজ ধোলাই করছে এরাই। এফ.এম রেডিও শেখায় বিচিত্র ভাষা, ততোধিক বিচিত্র কর্মকান্ড! একজন প্রফেসর বাথরুম উদ্বোধন করেন, শিক্ষকরাও করেন দলবাজী! শেখাচ্ছে মিডিয়া, কেমন করে উঁচুমাপের লোকজনকে অসম্মান করতে হয়। হরতালের নামে একজন অফিসযাত্রীকে উলঙ্গ করে ফেলা যায় আবার টিভির উপস্থাপকও হওয়া যায়। কতোশত উদাহরণ!
এই প্রজন্ম একেকটা চলমান পশু হবে এ আর নতুন কী!
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Saturday, February 6, 2010
বিষবৃক্ষ গাছে জয়তুন ফল ধরে না
জীবনটাই যখন নিলামে: ২

আজ বেছে বেছে সব মন খারাপ হওয়ার ব্যাপারগুলো ঘটছে। হাতের নাগালে পড়ার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। লোপা কষ্টের শ্বাস ফেলল। ও নিজে বাংলায় মাস্টার্স করেছে, কী শখই না ছিল বই পড়ার। অথচ কী একটা মানুষের পাল্লায় পড়েছে, রাব্বি হচ্ছে একেবারে উল্টোটা!
আজিব একটা মানুষ, ভুলেও যদি একটা বই পড়ে দেখত। লোপা তো প্রথম প্রথম বুঝে উঠতেই পারত না একজন মানুষ কেমন করে বই না পড়ে থাকতে পারে! দু-এক বার জোর করে পড়াবার চেষ্টাও করেছে কিন্তু ৫ মিনিটের মাথায় মানুষটা ভোঁস ভোঁস করে নাক ডাকতে শুরু করেছে। অথচ ওর অফিস সংক্রান্ত মার্কেটিং-এর ঢাউস বইগুলো পড়তে তার কোন সমস্যা নাই। কেবল পড়েই ক্ষান্ত দেয় এমন না। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়বে, লাইন বাই লাইন মার্কার দিয়ে আন্ডার-লাইন করবে, প্রয়োজনীয় নোট নেবে। কখনও খটকা লাগলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে প্রয়োজনীয় উপাত্ত খুঁজে বের করবে, ওই ঢাউস বইগুলোর মার্জিনে মন্তব্য করবে। এখানেই শেষ না, মার্জিনের মন্তব্যগুলো তার ল্যাপটপে নিয়মিত আপডেট দেবে। ক্ষণে ক্ষণে, জনে জনে ফোন করবে। সে এক দক্ষযজ্ঞ!
লোপা যে বইটা খুলে বসেছে এটায় পড়ায় মন নেই, কেন যেন এগুচ্ছে না। খুঁজে ওর নিজের ডায়েরিটা বের করল। এক সময় চুটিয়ে লিখত। সুমন এবং ওর মধ্যে একটা অলিখিত প্রতিযোগীতা চলত। সুমন অবশ্য ঝুলাঝুলি করত, আপুনি, পত্রিকা অফিসে লেখাটা পাঠিয়ে দেই। লোপা সলাজে আপত্তি করত, ধুর, আমাদের লেখা পত্রিকাওয়ালাদের ছাপাতে বয়েই গেছে। ইশ, সুমনবাবু কী এক লেখক হয়েছেন! একপাতা লিখতে দশটা বানান ভুল করে তার লেখা ছাপাবে পত্রিকা, হি হি হি।
সুমন চোখ লাল করে তাকাত। রাগে চিড়বিড় করে বলত, তুই যা লিখিস এগুলো দিয়ে বাচ্চার ইয়েও কেউ পরিষ্কার করবে না।
লোপা ফি-রোজ নিয়ম করে নিজের কোন লেখা না-লিখলেও লিখে যেত। অন্যদের মত নিজের কথাবার্তা না। যা-সব পড়ত তাই লিখত। কোন লাইন, প্যারা, কবিতা ভাল লেগে গেলে টুকে রাখত। এভাবে ওর কত ডায়েরি যে ভরে গেল! কারও বড় কোন লেখা লিখে রাখতে সমস্যা মনে হলে পাতাটা কেটে রেখে দিত। দেখা যেত ওদের বাসার পত্রিকা, ম্যাগাজিনের অনেক পাতা কাটা।
মা খুব রাগ করতেন কারণ তিনি কাগজগুলো সের দরে বেচে দিতেন। দোকানদারের কাছ থেকে কঠিন অভিযোগ আসত, খালাম্মা, আপনাগো কাগজ লয়া বড়ো দিগদারি, পাতায় পাতায় ঢুলা! ঘটনাটা কি কইনছেন, এইটা তো ইন্দুর কাটে না, বেলেইড দিয়া কাটা। বাইচ্চারে সামলান নাইলে একদিন হাত-হুত কাইটা দরবার লাগাইব।
মার সেকি রাগ। রাগের তোড়ে লোপার পিঠে গুম গুম করে কিল। ইশ, মা কী জোরেই না মারতেন! আবার চোখে জল নিয়ে মন খারাপ করে বলতেন, লোপানি, ব্যথা পাইছস?
হি হি হি। আহা, কীসব দিন! কীসব ভাল লাগা কবিতা! জীবনানন্দ দাশের কবিতাটা পড়ে মনটা আরও খারাপ হলো:
“একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসব না পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষূর বিছানার কিনারে।”
আবার কি ফিরে আসব না পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষূর বিছানার কিনারে।”
রত্মেশ্বর হাজরার এটাও কেমন মন উদাস করে দেয়:
“মৃত্যু ও মৃতের অধিকার নিয়ে সে
একবার সভাও ডেকেছিল ময়দানে
যদিও সেই সভায় সে নিজে ছাড়া উপস্থিত ছিল
বাতাস
বিকেল বেলার রোদ
মাঠের নির্জনতা
আর বিস্ময়।”
একবার সভাও ডেকেছিল ময়দানে
যদিও সেই সভায় সে নিজে ছাড়া উপস্থিত ছিল
বাতাস
বিকেল বেলার রোদ
মাঠের নির্জনতা
আর বিস্ময়।”
রনজিৎ দাসের এই কবিতাটা কী অদ্ভুত:
“শুঁয়োপোকাটির সঙ্গে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি, ঠিক তারই মত
স্থূল ও মন্থর, ও পাখিদের খাদ্য হয়ে, আত্মবিষসহ
যদি তার মতো কোন অবিশ্বাস্য রূপান্তর পেয়ে যাই শুধু এই লোভে।”
স্থূল ও মন্থর, ও পাখিদের খাদ্য হয়ে, আত্মবিষসহ
যদি তার মতো কোন অবিশ্বাস্য রূপান্তর পেয়ে যাই শুধু এই লোভে।”
লোপা পাতার পর পাতা উল্টে যাচ্ছে। ক্রমশ মনটা ভালো হয়ে আসছে। দুম করে নিজের অজান্তেই অনেক ক-টা বছর পেছনে চলে গেছে। কত হাবিজাবি প্রসঙ্গই না লিখে রেখেছে! হি হি হি।
লিখে রেখেছে, কী কী করলে একজনকে মহাপাতক বলা যায়? মহাপাতক:
এক, ব্রহ্মহত্যা
দুই, ব্রহ্মস্বাপহরণ
তিন, সুরাপান
চার, গুরুপত্মীহরণ
পাঁচ, মহাপাতকী সংসর্গ
আচ্ছা, ব্রহ্মহত্যা মানে কি? ব্রাক্ষণকে হত্যা করা? ব্রহ্মস্বাপহরণ, এইটারই বা অর্থ কী! সুরাপান বোঝা গেল, মদ্যপান। কিন্তু গুরুপত্মীহরণ, গুরুর পত্মীকে নিয়ে পলায়ন। সর্বনাশ, আগে কী কেউ গুরুর পত্মীকে নিয়ে ভেগে যেত নাকি? ছি-ছি, এ তো বিরাট অন্যায়! কেউ এমনটা ভাবে কেমন করে? শিক্ষকের স্ত্রীর সঙ্গে...ভাবতেই ওর গা গুলাচ্ছে।
মহাপাতকী সংসর্গ, মহাপাতকীর কাছ থেকে দূরে থাকা- উহুঁ, হবে কাছে থাকা? আচ্ছা, মহাপাতকীর সংজ্ঞা কী? এটার অর্থ এখন কোথায় পাওয়া যাবে? দূর ছাই!
রাব্বিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে? মনে হয় না ও বলতে পারবে। তারচে বড় কথা, বিরক্ত হবে, চরম বিরক্ত। অফিসে ফোন করা ও একদম পছন্দ করে না। ব্যস্ত থাকলে না ধরলেই হয় তাই বলে অফিসে ফোন করা যাবে না কেন? অফিস কী ওর মাথা কিনে নিয়েছে! একজন চাকরি করলেই অফিস আওয়ারে কয়েক মিনিটের জন্যও তার নিজস্ব সময় থাকবে না? এর মানে কী! লোপা ঠিক করল ও ফোন করবেই, রাব্বি বিরক্ত হলে হবে। দেখা যাক।
অনেকবার রিঙ হওয়ার পর রাব্বি ধরল। কোন এক বিচিত্র কারণে ওর মনটা আজ তরল।
রাব্বির উৎফুল্ল গলা, হ্যালো হানি।
কি বললা?
যা শুনলা।
ফাজলামি করছ নাকি?
দূর-দূর! ফাজলামি করব কেন! কেউ কী বউয়ের সাথে ফাজলামি করে। ফাজলামো করতে হয় অন্য মেয়েদের সাথে।
লোপা বিরক্ত গলায় বলল, শস্তা রসিকতা করবে না। শুনতে ভালো লাগছে না। বস্তি-বস্তি লাগছে।
সত্য কথা বললে দোষ, এটা কি ঠিক?
হ্যা, ঠিক।
আচ্ছা যাও, বলব না। এখন বলো কেন ফোন করেছ। একটু পরে একটা মিটিং আছে।
আচ্ছা, তোমরা কী সারা দিন মিটিং-এর উপরই থাকো। কাজ করো কখন?
আরে, এ বলে কী! কাজ আবার কী! মিটিংই তো কাজ। আমাদের এখানে একটা কথা চালু আছে। কোন কাজ না থাকলে চলো একটা মিটিং ডাকি। আর আমাদের অফিসে একটা মাদারি-বস আছে, বুঝলে। এ কয়বার হাগা করবে এটার জন্যও মিটিং ডেকে বসে থাকে। মিটিং ডেকে সোজা বাথরুমে ঢুকে পড়ে। এ মনে হয় দক্ষিণহস্ত ব্যবহারে পারদর্শী।
মানে?
দক্ষিণহস্ত-। থাক, এটা তোমাকে বলা যাবে না।
কেন বলা যাবে না।
এটা একটা কুৎসিত কথা।
তোমার কুৎসিত কথা বলার প্রয়োজন কী!
ইয়ে, মানে-।
লোপার বিরক্তি বাড়ছে, তোমার মুখে বস্তি-মার্কা কথা শুনতে ভাল লাগে না।
রাব্বি বলল, আচ্ছা বেশ, বলো ফোন করেছো কেন?
তুমি মহাপাতকী কাকে বলে জানো?
আজিব, তুমি মহাপাতকী কাকে বলে এটা জানার জন্য ফোন করেছো?
হুঁ।
না, মহাপাতকী জানি না তবে মহাপাতকের খোঁজ দিতে পারি।
লোপা আগ্রহী গলায় বলল, কেমন?
আমাদের অফিসের সৈয়দ হচ্ছে একজন আপাদমস্তক মহাপাতক। আরে, ওই মাদারিটা আর কী, আমার বস!
আবারও ফাজলামো করছ।
আরে না, সত্যি। এ যদি মহাপাতক না হয় আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে গু সাফ করব। টাটকা গু।
রাব্বি, তোমার সাথে কথা বলাই ভুল।
বিশ্বাস করো, আমি বাড়িয়ে বলছি না। অফিসের পিয়নকে দিয়ে সিগারেট আনিয়ে পয়সা দেয় না। শুয়োরটার নাকি মনে থাকে না। কুত্তাটা একদিন করল কি-
রাব্বি, তোমাকে না বলেছি আমার সঙ্গে কুৎসিত কথা বলবে না, বলিনি?
আচ্ছা যাও, বলব না। আচ্ছা শোনো ওই কুত্তাটা একদিন করেছে কি-।
রাব্বি, খবরদার আর একটা ফাজিল কথা বলবে না।
আচ্ছা যাও, বলব না।
আমি কয়েকটা বইয়ের নাম বলে দেই, তুমি কি আসার সময় নিয়ে আসতে পারবে?
পাগল, আমি কোথায়-কোথায় গিয়ে বই খুঁজব। আমাদের অফিসে ঢাউস-ঢাউস প্রচুর বই আছে। চাইলে এগুলো নিয়ে আসতে পারি।
লোপা খানিকটা আগ্রহী হয়ে বলল, কি বই?
এই মার্কেট রিসার্চের উপর বিখ্যাত লেখকদের বই। দাঁড়াও তোমাকে লেখকের নামটা বলি-।
লোপা ফোন রেখে দিল। রাগে ওর শরীর চিড়বিড় করছে। রাব্বির এইসব আচরণ ওর অসহ্য লাগে। মানুষটার মধ্যে সামান্যতম ঔচিত্য বোধ নেই!
লোপা রেখে দেয়া বইটা আবার পড়া শুরু করল, পাতাটা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়নি। এতক্ষণ চুলের কাটাটা খুঁজে পাচ্ছিল না এখন বইয়ের মাঝে পেল। জমাটি গল্প কিন্তু কেন যেন পড়া এগুচ্ছে না। ওর মনটা বিক্ষিপ্ত এটা একটা কারণ হতে পারে, আবার এ-ও হতে পারে লেখায় ওকে ধরে রাখার ক্ষমতাটা লেখকের নাই।
*জীবনটাই যখন নিলামে: ১
বিভাগ
জীবনটাই যখন নিলামে
Subscribe to:
Posts (Atom)