আবেদ খানের নাকি লিখিবার ক্ষেত্র সংকুচিত হইয়া ক্ষুদ্রাদপি ক্ষুদ্র বিচির আকার ধারণ করিয়াছে। ইহা শুনিয়া হায়েনা হাসিতে হাসিতে লেলাখেপা হইয়াছে! অবশেষে লিখিবার ক্ষেত্রের জন্য কালের কন্ঠ নামক আস্ত একখানা পরতিকা(!) নাযিল হওয়ারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়াছে! কলমবাজ আর কাহাকে বলে! অবশ্য কাজটা মরদের মতই হইয়াছে বটি!
আজকাল বড়ো একটা ঢং হইয়াছে, পরতিকার সম্পাদক মহাশয়গণ প্রথম পাতায় ঘটা করিয়া লিখিয়া আমজনতার উদ্দেশ্যে বাতচিত করিয়া থাকেন। এই প্রথায় আমাদের মতিউর রহমান সাহেবও পিছাইয়া নাই। সম্পাদক মহাশয় বলিয়া কথা! সে যাক, তাহারা প্রথম পাতায় লিখুন প্রয়োজনে গোটা পৃষ্ঠা জুড়িয়া, আটকাইবে এহেন বুকের পাটা কাহার?
আবেদ খান আরও লিখিয়াছেন, "'কেউ কথা রাখেনি' কবিতাটা 'বোধ হয়' সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়েরই...।"
প্রথম পাতায় তাঁহার সুদীর্ঘ এই লেখার বিশদে যাইবার আগ্রহ নাই কিন্তু তাঁহার এই 'বোধ হয়' লইয়া আমরা কী করিব, তাহা বোধগম্য হইতেছে না! ইহা কোথায় রাখিব ভাবিয়া ভাবিয়া আকূল হইয়াছি! 'বোধ হয়' তাঁহার লিখায় সন্দেহের লেশ দিব্যি লেজ গজাইয়া দিয়াছে।
আমরা যাহারা হুদাহুদি লিখিবার চেষ্টা করি, যাহাদের নেকাপড়া(!) কম, তাহারা আটকাইয়া গেলে বোধ হয় লিখিয়া গা বাঁচাইবার চেষ্টা করিয়া থাকি কিন্তু আবেদ খানের মত কলমযোদ্ধা, মসিবীর- যিনি কেবল লেখার ক্ষেত্র তৈরি করিবার মানসে একখানা দৈনিক পরতিকা(!) অবতীর্ণ করিয়া থাকেন তিনি 'বোধ হয়' লিখিয়া দায় সারিবেন কেন? এই পরতিকার(!) শতেক কলমবাজ কাহারও নিকট হইতে জানিবার উপায় কি ছিল না? তাঁহারা কী মসিলিপ্ত হইয়া নিদ্রদেবীর কোলে দোল খাইতেছিলেন?
আবেদ খান ইচ্ছা করিলে তো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কেই একখানা ফোন লাগাইতেই পারিতেন, 'হাললু দাদা, কেম ছো? দাদা, 'কেউ কথা রাখেনি' ইহা কি আপুনি লিখিয়াছিলেন নাকি আপুনির খগের কলম'?
বেশ ফোনালাপ হইতে পারিত। সুনীল দাদা নাচিতে নাচিতে আবৃত্তি করিতেন। আয়ুষ্মান ভবঃ বলিয়া কালের কন্ঠের জন্য "আমার ভালো লাগা, গ্লানি ও স্বপ্ন" টাইপের আরেকখানি লেখা লিখিয়া ফেলিতেন।
'বোধ হয়' ইহা ভালো জিনিস বটি কিন্তু সংসদে গেজেট পাশ হইয়াছে এমন কোন লিখায় সংসদের কোন এক আইন প্রণেতা যদি লিখিয়া বসেন, "অদ্য হইতে এই আইন কার্যকরী হইল। ইহার উৎস 'বোধ হয়' সংবিধানে আছে।"
বাপস! বড়ো একটা ঝামেলা পাক খাইতে খাইতে পাকিয়া যাইবে!
আচ্ছা, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে আবেদ খানের ফোন করিবার কথা যে লিখিলাম, আমি এখন কিঞ্চিৎ ধন্ধে আছি, সুনীল দাদা বাঁচিয়া আছেন তো? শুনিয়া অনেকে আমাকে গাল পাড়িবেন, মনে মনে দুগগা-দুগগা বলিবেন। আহা, ভগবান তাঁহাকে বাঁচাইয়া রাখুন কিন্তু বুঝিলেন কিনা, আমাদের মত কলমচীর এই এক হুজ্জুত, ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার। কে আমাদিগকে তথ্যের যোগান দিবে, কে সংশোধন করিয়া দিবে, কে-কে-কে? কেহ না, বাহে, কেহ না।
অতএব আমার ইহাই লেখা শ্রেয় ছিল, 'বোধ হয়' সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাঁচিয়া থাকিলে, বোধ হয় আবেদ খানের নিকট ফোন থাকিলে, বোধ হয় নেটওয়র্ক ঠিক থাকিলে, বোধ হয়...।
|