ভোরের কাগজে তখন (৯২-৯৩) প্রতি সপ্তাহে 'একালের রূপকথা' নামে একটা ফিচার লিখতাম। ওই সময় ওই পাতাটি দেখতেন সঞ্জীব চৌধুরী। দলছুটের সঞ্জীব চৌধুরী, লেখক বানাবার মেশিন!
তো সঞ্জীব চৌধুরী একদিন অফিসে বললেন: ভোরের কাগজে 'মেলা' নামের নতুন একটা পাতা বেরুচ্ছে, ...হক এর দায়িত্বে আছেন। লেখকদের কাছে মেলার জন্য লেখা চাচ্ছেন, আপনি মেলার জন্য একটা লেখা লিখে দেন।
আমি খুব একটা আগ্রহী ছিলাম না কারণ সঞ্জীবদার সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। তারপরও সঞ্জীব চৌধুরী ...হকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
...হক বললেন: মেলার জন্য মজার একটা লেখা লিখে দেন।
আমি বিনীতভাবে বললাম: মজার লেখা আসলে ঠিক কিভাবে লিখতে হয় আমি জানি না তবুও চেষ্টা করব। '
হা ঈশ্বর, এই লেখাটিই একমাস পর মেলায় ছাপা হলো। আমার 'ভীতিবি' লেখাটা ছাপা হবার পর বিষাদে মনটা ছেয়ে গেল।
তখন ঘটনা হয়ে গেছে অন্য রকম! 'মেলা' পাতাটিতে শুরু থেকেই টিভি সমালোচনা নামে একটি ফিচার চালু করা হয়েছিল ওই ফিচারটির নাম এবং লোগো 'ভীতিবি'। সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস ভীতিবি লোগোসহ টিভি সমালোচনা বেরুতে লাগল।
কেউ বলেনি কিন্তু নিজেকে তখন চোর চোর মনে হচ্ছিল! কেবল মনে হচ্ছিল, এখান থেকে আইডিয়া নিয়ে আমি আমার ওই লেখাটি লিখেছি!
সেই প্রথম খুব কাছ থেকে ছুঁরি খাওয়ার অভিজ্ঞতা!
সেই প্রথম খুব কাছ থেকে ছুঁরি খাওয়ার অভিজ্ঞতা!
আমার লেখা 'ভীতিবি' ব্যবহার করার জন্য আমার কাছ থেকে মৌখিক অনুমতিও নেয়া হয়নি, অন্তত জানাবার মত ন্যূনতম ভদ্রতাও করা হয়নি। এই সামান্য সৌজন্যটুকু দেখালে আমার মতো অখ্যাত লেখকের আনন্দের কোন সীমা থাকত না। কিন্তু ...হকদের মতো, যারা পত্রিকা চালান তারা কী একবারও ভাবেন না প্রত্যেকটি থিম একজন লেখকের নিজস্ব সম্পদ। পৃথিবীতে অসংখ্য থিম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, একজন লেখক ওইসব থিম- শব্দের ইট একের পর এক সাজিয়ে ইমারত বানান, চরিত্র সৃষ্টি করেন। কারও অনুমতি ব্যতীত থিম ব্যবহার করার অর্থ থিম ছিনতাই।
পৃথিবীতে অসংখ্য সম্পদ ছড়িয়ে আছে কিন্তু কারও অনুমতি ব্যতীত সম্পদ ছিনিয়ে নেয় কেবল ছিনতাইকারী। ... হকের মতো একজন জনপ্রিয় লেখক (জনপ্রিয় লেখক হওয়ার অনেক হ্যাপা) যখন থিম ছিনতাই করেন তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতেই হয়, হায়, একালের ব্রুটাস!
*আমার মনটা নরোম তাই এই মানুষটাকে ব্রুটাস বললাম। নইলে 'জুডাস' বলতে চেয়েছিলাম, 'একালের জুডাস'। জুডাসের মত বিশ্বাসঘাতক বিরল! যীশুখ্রীস্টের বারোজন শিষ্যের অন্যতম। জুডাসের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যীশুখ্রীষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়।
*আমার মনটা নরোম তাই এই মানুষটাকে ব্রুটাস বললাম। নইলে 'জুডাস' বলতে চেয়েছিলাম, 'একালের জুডাস'। জুডাসের মত বিশ্বাসঘাতক বিরল! যীশুখ্রীস্টের বারোজন শিষ্যের অন্যতম। জুডাসের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যীশুখ্রীষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়।