"জামাল সাহেব ব্যালকনিতে রাখা রকিং চেয়ারে অনবরত দোল খাচ্ছেন। এ মুহুর্তে কেউ ভাববে মহা আনন্দে আছেন। কোমন চাপা কষ্ট; ফুসফুসটা খালি মনে হচ্ছে, লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছেন। ইভার শূণ্যতা এমন হবে বুঝতে পারেননি। মেয়ের বিয়ের পর সব বাবারই সম্ভবত খারাপ লাগে, কিন্তু তাই বলে এই বেদনার কোন মানে হয়! মেয়েটা সুখী হবে কি-না কে জানে? জয় ছেলেটাকে ওঁর অন্যরকম মনে হয়েছে, দশজনের চেয়ে আলাদা। ইভার সম্বন্ধে কিছুই গোপন করেননি, যেচে নিজ থেকেই সব বলেছেন। এটা ভুল হলো কি-না কে জানে, ভুল হলে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন। ছেলেটার সম্ভবত টাকা-পয়সার কিছু সমস্যা আছে। এটা সমস্যা নয়, ব্যাঙ্ক-এ প্রচুর পড়ে আছে। বছর দু’য়েক হলো ব্যবসা সব গুটিয়ে ফেলেছেন। এ বয়সে দৌড়াদৌড়ি করতে ভাল লাগে না, তাছাড়া হার্টের অবস্থাও খুব একটা সুবিধের নয়।
ব্যবসার কথায় মাবু ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। মাঝে মাঝে বলতেন, “মাবু ভাই, আপনি কি মহাপুরুষ?”
মাবু ভাই বলতেন, “ধুর, মহাপুরুষ হতে যাব কোন দু:খে। এদের কষ্টের শেষ নাই- ইচ্ছা হলেই সিঙ্গারা খেতে পারে না, লাফাতে পারে না।”
এ লোকটা তাঁর জন্যে কি না করেছেন! প্রথম জীবনে টাকার জন্যে ব্যবসা করতে পারছিলেন না। স্থাবর কোন সম্পত্তিও ছিল না যে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেবেন। মাবু ভাই তাঁর নিজের জমি বন্ধক রেখে লাখ পাঁচেক টাকা নিয়ে দিলেন, নগদ দিলেন আড়াই লাখ। প্রথম প্রথম কিছু লাভের টাকা দিতে পেরেছিলেন। ক্রমশ ব্যবসা খারাপ হতে থাকলে তিনি ব্যবসার টাকা খেয়ে ফেলতে লাগলেন, উপায় ছিল না। মাবু ভাই জানতেন না এমন নয়, কিন্তু এ নিয়ে একট কথাও বলতেন না। জামাল সাহেবের লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করত। ধর্মকর্মে বিশেষ আস্থা ছিল না। কায়মনে প্রার্থনা করতেন, প্রভু আমাকে দিয়ে ভিক্ষে করাও, টুঁ শব্দ করব না, এ লোকের কাছে জোচ্চর না হতে হয়।
মাবু ভাইকে মাঝে মাঝে দৃঢ় গলায় বলতেন, “আমি যদি মরে যাই কি হবে জানি না, বেঁচে থাকলে বিশ্বাস করুন, নয়-ছয় করব না। আমি জানি আমার মধ্যে ট্যালেন্ট আছে। এ দু:সময় চিরকাল থাকবে না।”
কখনও বা হতাশ হয়ে বলতেন, “মাবু ভাই, আর তো উপায় দেখি না। আসেন, দু’জনে তেত্রিশতলা থেকে ঝাঁপ দিই। পরকালে আমি আপনার চাকর হব।”
পনেরো-ষোলো বছরের বড় এ লোক এরকম বন্ধু হলো কি করে কে জানে! শুধু এই না। আরও যে কত ঋণ তা বলে শেষ করা যাবে না। যখনই ভেঙে পরেড়ছেন দেবদূতের মত পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দু:সময় কেটে গেছিল ঠিকই। তিনি জানতেন টাকা ফেরত দিলেই এসব ঋণ শেষ না না, হতে পারে না!
কিন্তু ওঁর জন্যে কিছু করলেই মাবু ভাই বিরক্ত হতেন, ”জামাল, ঢের হয়েছে, এবার থামো তো বাপু।”
কে শোনে কার কথা। জামাল সাহেব এসব কথা গায়ে মাখতেন না।
ইভার মা সশব্দে চা’র কাপ নামিয়ে বিরক্ত গলায় বললেন, ‘কী-সব কান্ড তোমার! চুরুটটা নিভে গেছে, এমন ভঙ্গিতে টানছ যেন ভেজা চুলো থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে।’
জামাল সাহেব দৃষ্টি থেকে বিষন্নভাব মুছে হাসি ফুটিয়ে তোলার চেস্টা করে ব্যর্থ হলেন। চা’র কাপ টেনে নিয়ে চুরুটটা ফেলে দিলেন। চায়ের কাপ-এ চুমুক দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ইভার মা, মেয়েটার জন্যে মনটা খুব অশান্ত হয়ে আছে।’
‘বিয়ে হলে মেয়ে পরের ঘরে যাবে, এটা তো নতুন কিছু না।’
‘এত মমতা দিয়ে... এই- এই জন্যে!’
‘এটাই মেয়েদের নিয়তি, বিয়ের পর সব এলোমেলো হয়ে যায়। নতুন করে শুরু হয় সব। মেয়ের বাবা, মা’র, সবার।’
জামাল সাহেব সামলাতে আপ্রাণ চেষ্টা করলেন, টুপ করে একফোঁটা চোখের জল চা’র কাপে পড়ল। স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলে ভাবলেন, জোবেদার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে।
জোবেদা বললেন, ‘আ:, কি ছেলেমানুষী করছ, ভালোয়-ভালোয় আপদ বিদেয় হয়েছে।’
জামাল সাহেব ঘর কাঁপিয়ে বললেন, ‘তোমার শরীর যেমন পালওয়ানের মত, মনটাও তেমনি।’
এটা জামাল সাহেব প্রায়ই বলেন হাসি হাসি মুখ করে। জোবেদা বেগমের পৃথুল দেহ দেখে তাই মনে হবে। বিয়ের পর পর এমন ছিলেন না, ওসময় মনে হত জোরে বাতাস এলে উল্টে পড়বেন।
জামাল সাহেব প্রায়ই বলতেন, ‘মোটা মেয়েদের কিন্তু আমার একদম পছন্দ না। সাবধান, রোজ তোমাকে উঠিয়ে মাপ নেব, একটু এদিক সেদিক হলেই, হুঁ-হুঁ, খাওয়া বন্ধ।’
ইভার হওয়ার পর হু-হু করে মোটা তকে থাকলেন। ধ্রুবা হওয়ার পর তো হিমালয় পর্বত। এ নিয়ে বাবা মেয়ে মিলে কী হাসাহাসি।
একদিন সবাই মিলে টিভি দেখছে। জামাল সাহেব উঁচু গলায় বললেন, “ইভা, বিটিভির শাড়ির বিজ্ঞাপন গুলো দেখেছিস?”
ইভা মগ্ন হয়ে টিভি দেখছিল। বাধা পেয়ে কপট রাগে বলল,“এই যে, ওল্ড ম্যান, বিরক্ত কোরো না তো। দেখব না কেন, না দেখে উপায় আছে?”
“তোর অন্য কিছু মনে হয়নি?”
“আ:, কি বলবে বলে ফেলো, খামোকা কথা পেঁচিয়ো না।”
“তিন মণের লাশগুলো বিভিন্ন মার্কা শাড়ি পরে কি অহঙ্কারী গলায় বলে, অমুক শাড়ি পরে আমি রূপবতী হইলাম- তমুক পরে রূপসী হইলাম, এইসব। যে যত মোটা সে তত রূপসী।
"কি আর করা, পাবলিক পছন্দ করে!"
“পাবলিক এসব খাচ্ছে, বলিস কি রে! পিলারের মত জিনিসগুলো যখন সোজা টিভি পর্দায় ছুটে আসে আমার তো ভয়ে আত্মারাম শুকিয়ে যায়, এই বুঝি হার্ট পাম্প করা বাদ দিল।”
ইভা বলল, “বাবা, তোমার কথা শেষ হয়েছে?”
“না, ইয়ে মানে ভাবছিলাম। হীরা কয়লায় চাপা পড়ে আছে রে, তোর মা কিন্তু ভাল শাড়ির মডেল হতে পারত। হাত বাঁকিয়ে আঁচল মেলে ঝলমল করে বলত, সবাই বলে আমি নাকি রূপসী, ব্যাপারটা ঘটে ঠিক তখনি যখন ইভার বাবা বলে। হা হা হা।”
আরেকদিনের কথা। ইভা মার পাকা চুল খুঁজে দিচ্ছিল। ইভার বাবা ছোটখাট শরীরটা নিয়ে ঝড়ের বেগে এলেন। হাতে ওই দিনের ইত্তেফাক। নিরীহ মুখে বললেন, “ইভা, এই দেখ সিনেমার একটা বিজ্ঞাপন।”
ইভা বাবার কৌতুকে উপচে পড়া চোখের দিকে তাকিয়ে পত্রিকা নিল। বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে একটা বিশাল দাঁড়িপাল্লা। পাল্লার একদিকে হাবিজাবি অনেক কিছু অন্যদিকে চর্বির ডিপো এক নায়িকা।
ইভা চাপা হেসে বলল, “যাও বাবা তুমি যে কি, কোত্থেকে এসব খুঁজে বের করো!”
“তুই কি বুঝলি সেটা আগে বল।”
“বোঝার কি আছে!”
"তুই দেখি গাধীর গাধী রে। সহজ ব্যাপারটা বুঝতে পারছিস না। এই দাঁড়িপাল্লার রশিগুলো বেশ মজবুত। কালেভদ্রে শুনিসনি? সিনেমায় তো অহরহ দেখা যায়, একটা চরিত্র আত্মহত্যা করতে গেছে, দড়ি ছিঁড়ে পপাত ধরণীতল- কি যন্ত্রণা বল দেখি। ওদের এই মার্কা দড়ি ব্যবহার করলে নিশ্চিন্তে মৃত্যু হত। আমরা কিন্তু বাজার মত করে ফেলব। আমরা বলব ‘জোবেদা মার্কা’ দড়ি ব্যবহার করুন। তোর মাকে একপাশে বসিয়ে এ দড়ির সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করে বাজারে ছাড়া হবে।"
বাবা-মেয়ে মিলে কী হাসি! জোবেদা বেগম পরে রাগ দেখাতেন ইভার ওপর। চুল ধরে দেয়ালে মাথা ঠুকে দিতেন, একা পেলে।
ইভার মার এ মুহূর্তে রাগ হওয়ার কথা, কিন্তু হাসি পাচ্ছে। হাসি গোপন করলেন, নইলে কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে। বয়স্ক লোকটা মাঝে-মাঝে কী ছেলেমানুষ হয়ে যায়।
জামাল সাহেব আরেকটা চুরুট ধরিয়ে ঘন ঘন টান দিয়ে নীলচে ধোঁয়ার আড়াল সৃষ্টি করে ফেলেছেন।
ধোঁয়ার আড়াল থেকে বিব্রত গলায় বললেন, ‘ইভার মা, কিছু মনে করো না। ইয়ে, ইভাকে আজ দেখতে যাওয়া যায় না?’
‘কি বলছ! কাল বিয়ে হলো আজ দেখতে যাবে কি!’
‘জাস্ট একটু দেখা করে আসব।’
‘আরে না, ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ভাল চোখে দেখবে না।’
‘জয় মনে হয় না কিছু মনে করবে।’
‘ওদের পরিবারে জামাই ছাড়াও তো অন্যরা রয়েছে।’
জামাল সাহেব গুম হয়ে বসে রইলেন। এ কেমন কথা, নিজের মেয়েকে দেখতে যেতে পারবেন না! বিয়ে হলেই সব অন্যরকম হয়ে যাবে।
ইভার মা বললেন, ‘এসব ভেবে ভেবে তোমার মাথা গরম হচ্ছে। এসো তো নাস্তা করে নাও, ঠান্ডা হচ্ছে।’
নাস্তার টেবিলে বসে জামাল সাহেব খাবার নাড়াচাড়া করতে লাগলেন। ধ্রুবাকে শুধু শুধু ধমক দিলেন, ‘পশুর মত চপচপ করে খাচ্ছ কেন?’
ধ্রুবা অবাক হয়ে বলল, ‘কই, চপচপ করে খাচ্ছি না তো!’
জামাল সাহেব চেঁচিয়ে বললেন, ‘ইয়েস-ইয়েস, খাচ্ছ।’
ধ্রুবা কাটা-কাটা জবাব দিল, ‘শুধু শুধু বকছ যে!’
‘ফাজিল মেয়ে, তুমি দিন-দিন অভদ্র হচ্ছ, চড় খাবে।’
ধ্রুবা পলকে মা’র দিকে তাকাল। তিনি চোখের ইশারায় মেয়েকে নিষেধ করলেন। মেয়ে সেটা উপেক্ষা করল। শক্ত গলায় বলল, ‘বাবা, তোমার যদি চড় দিতে ইচ্ছা করে দিয়ে ফেলো, এত কথার দরকার কি।’
ধ্রুবার বিষ্ময়ের সীমা রইল না, সত্যি সত্যি বাবা তাকে চড় দিলেন। বাবা চড় দিলেন, চড় দিলেন- এটা ভেবে ওর বুক ফেটে যেতে লাগল। সব কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। উঠে দাঁড়াতে দিয়ে চেয়ার উল্টে ফেলল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে ডাইনিং রুম থেকে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল।
জোবেদা বেগম স্তম্ভিত হলেন। লোকটা এমন করল কেন- এ তো আজ অবধি বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলেনি! বন্ধুর মত আচরণ করেছে। অনেকক্ষণ পর ক্ষীণ গলায় বললেন, ‘কাজটা কিন্তু ঠিক করলে না। এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তোলা ঠিক হয়নি।’
‘খুব বড় হয়ে গেছে। পিএইচডি করে ফেলেছে।’
‘একদম ছোট তো আর না, এবার এসএসসি দেবে। কাজটা তুমি ঠিক করলে না।’
‘এক কথা দু’বার বলছ কেন, ঠিক করিনি। বেশ করেছি।’
জামাল সাহেব যে কাজটা কখনও করেন না তাই করলেন, এঁটো প্লেটে হাত ধুয়ে উঠে পড়লেন। নিজের রুমে আধ শোয়া হয়ে পেপারে চোখ বুলাতে লাগলেন। জোবেদা বেগমের হাত থেকে চা’র কাপ নিয়ে মাথা নিচু করে বললেন, ‘ইভার মা, এ মেয়েটা বড় অভিমানী, এর দিকে একটু খেয়াল রেখো।’
‘খেয়াল রাখব মানে, আমি কি ওর সৎ মা?’
‘না-না, তা না, মানে একটা ব্যাপার-।’
‘কি আবার ব্যাপার, চড় দিলে মেয়ে কি দাঁত বের করে হাসবে?’
‘আঃ, এত ফড় ফড় করো কেন! ওইদিন দেখলাম এক ছেলের সঙ্গে রিকশায়। স্কুল ড্রেস পরা।’
জোবেদা বেগমের গা কাঁপতে লাগল। কী শুনছেন, একি শুনছেন! খাটে ধপ করে বসে তীব্র গলায় বললেন, ‘কি বলছ এসব, কখন দেখেছ?’
‘ওই যে যেদিন আমাদের গাড়ি পাঠাতে দেরি হলো, সেদিন।’
কথাটা বলে জামাল সাহেব একটু সরে বসলেন, জোবেদা হুড়মুড় করে বসাতে বিছানায় রাখা চা’র কাপ উল্টে চাদর মাখামাখি হয়ে গেছে। খাট যে এখনও দাঁড়িয়ে আছে কি মনে করে ভেবে অবাক হলেন।
জোবেদা বেগম গলার তীব্রতা বাড়িয়ে বললেন, ‘এই কথাটা আজ বলছ!’
জামাল সাহেব চুপ করে রইলেন। একে না বললেই ভাল হত, শুধু শুধু যন্ত্রণা করবে। এ এসব ব্যাপারে বড় বেশি সেনসিটিভ।
‘বলো, কি ভেবে আগে বললে না; মেয়ের এত বড় সর্বনাশ তুমি চেয়ে চেয়ে দেখছ! তোমার জন্যেই বড় মেয়েটার আজ এ অবস্থা, জয় যদি জানতে পারে...।’
জামাল সাহেব গলার রগ ফুলিয়ে বললেন, ‘চুপ, ইভা সম্বন্ধে আর একটা কথাও না। মেয়েটাকে তুমি অনেক যন্ত্রণা দিয়েছ। নিষ্পাপ একটা মেয়ে তোমার জন্যেই গত দুইটা বছর কী মানসিক যাতনাই না ভোগ করেছে।’
'শান্ত হও। ইভার প্রতি না-হয় অন্যায় করেছি, তাই বলে ধ্রুবাকে শাসন করব না?’
‘এখন কিছু বলা ঠিক হবে না। সুবিধা করে বলব।’
‘তোমার যত আজগুবী সব কথাবার্তা। মেয়েকে ধরে পিটিয়ে চামড়া খুলে ফেললে একদম সোজা হয়ে যেত।’
‘আমার সামনে থেকে দূর হও।’ ..."
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, October 6, 2009
কনক পুরুষ: ২
বিভাগ
কনক পুরুষ
নেতার সংজ্ঞা কি?
২৫ মার্চ।
যশোর।
মশিহুর রহমান।
স্ত্রী, পুত্র, বন্ধুবান্ধবের শত-অনুরোধেও তিনি পালিয়ে যাননি। তার এক কথা, নিজে নেতা হয়ে, নির্দয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাবো জীবন রক্ষা করতে? আমার পক্ষে এটা সম্ভব না।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। পাকিস্তানীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে কাগজে সই করার জন্য মশিহুর রহমানকে বললে তিনি রাজী হননি। শুরু হয় তাঁর উপর অমানুষিক অত্যাচার। তাঁর শরীরের নানা অংশ আগুনে পোড়ানো হয়, তাঁকে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়, চাবুক মেরে সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়। তারপরও তাঁকে নত করা যায়নি!
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রথমে তাঁর বাম হাত কেটে ফেলে, যেন তিনি ডান হাতে সই করতে পারেন। অপার্থিব যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন কিন্তু তারপরও তাঁকে রাজী করাতে না পেরে তাঁর ডান হাত কেটে ফেলা হয়।
প্র্রতিদিনে একে একে তাঁর দুই পা, দুই হাতসহ শরীরের একেকটা অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। তারপরও মশিহুর রহমান বলেছেন, আমি জনগণের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারব না, লিখে দেব না। একসময় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
(সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৪৮)
যশোর।
মশিহুর রহমান।
স্ত্রী, পুত্র, বন্ধুবান্ধবের শত-অনুরোধেও তিনি পালিয়ে যাননি। তার এক কথা, নিজে নেতা হয়ে, নির্দয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাবো জীবন রক্ষা করতে? আমার পক্ষে এটা সম্ভব না।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। পাকিস্তানীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে কাগজে সই করার জন্য মশিহুর রহমানকে বললে তিনি রাজী হননি। শুরু হয় তাঁর উপর অমানুষিক অত্যাচার। তাঁর শরীরের নানা অংশ আগুনে পোড়ানো হয়, তাঁকে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়, চাবুক মেরে সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়। তারপরও তাঁকে নত করা যায়নি!
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রথমে তাঁর বাম হাত কেটে ফেলে, যেন তিনি ডান হাতে সই করতে পারেন। অপার্থিব যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন কিন্তু তারপরও তাঁকে রাজী করাতে না পেরে তাঁর ডান হাত কেটে ফেলা হয়।
প্র্রতিদিনে একে একে তাঁর দুই পা, দুই হাতসহ শরীরের একেকটা অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। তারপরও মশিহুর রহমান বলেছেন, আমি জনগণের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারব না, লিখে দেব না। একসময় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
(সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৪৮)
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Posts (Atom)