তাঁর স্ত্রীর কথোপকথনের ভাষারীতি সামান্য পরিবর্তন করে প্রায় হুবহু তুলে দেই:
এই বুইড়া মানুডার লাশ ১২ ঘন্টা গাছে ঝুইল্যা ছিল। কেউ নামায় নাই, নামাইতে দেয় নাই। চেয়্যারমেন, মেম্বার হগলের হাতে-পায়ে ধইরাও কুনু লাভ হয় নাই। আমার সোয়ামি করত আম্লিগ, আমার সোয়ামির ভাতা বন্ধ কইরা দিছিল যে ইশকুল মাস্টার, বিএনপির তোতা মিয়া, হে একটু চেষ্টা করলেই হইত কিন্তুক হে থানাত ফোন কইরা কইল, লাশ যেন নামান না হয়। ইউএনও অফিসে গেলে হেরা কইল, চেয়্যারমেন মেম্বারের কাছে যাও। ইতা কইরা মানুডা ঝুলতাছিল, কেউ আগায়া আসে নাই। মামুন ডাক্তার এই ভালা মানুডার লিগা আমার বুইড়া মানুষটারে কাডাকাডি (পোস্ট-মর্টেম)করে নাই।
দাফন লইয়াও অনেক ঝামেলা হইছিল। হেষে হের দাফন হইল। দাফনের পর মিলাদের লিগা সরকার থিক্যা দশ হাজার টেকা দিছিল। এক টেকাও পাই নাই, এই টেকা মাইরা দিছে। আমার সোয়ামির, মুক্তিযুদ্ধার কাগজগুলা কে নিয়া গেল কইতামাও পারতাম না। আমার এক পুত থাইকাও নাই, হে বউ লইয়া আলগা হইছে। আরেকটা চিটাগাং-এ ছুড একটা চাকরি করে, ঠিকমত টেকা-পয়সা দিতে পারে নাই। দেহার আমার কেউ নাই। খালি সোহরাব সাম্বাদিকরে টুক্কুর কইরা ফোন করলে টাক্কুর কইরা আয়া পড়ে। পুলাডা কী ভালা, আমার মাতার চুলের সমান হেতে আয়ু পাক।"
*ভাল ক্যামেরা যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ সেলফোনে এটা ধারণ করা হয়েছে। ছবি এসেছে যাচ্ছেতাই- তবুও আমার আনন্দের শেষ নাই! অন্তত, এই ভদ্রমহিলার বেদনা-অকৃত্রিম অভিব্যক্তি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। ধারণকৃত অংশ অনেক বড়ো, আমার নেটের যা স্পীড তাতে পুরোটা আপলোড করা প্রায় অসম্ভব। কাটছাঁট করে যতটুকু দেয়া সম্ভব হলো এতেই আমার সম্তুষ্ট থাকা ব্যতীত উপায় কী!
**জনাব, মো. সোহরাব হোসেন এবং জনাব, দুলাল চন্দ্র ঘোষ সহায়তা না-করলে এই অসাধারণ কাজটা করা আমার পক্ষে সম্ভব হত না। তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।