ছবিঋণ: মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হান্নান। তাঁর বাবার লেখা চিঠি।
ছবিঋণ: মুক্তিযোদ্ধা (দুর্দান্ত ক্ষোভে পরিচয় দিতে যার তীব্র অনীহা)। ৭১-এর স্টেনগানের গুলির খোসা।
মুক্তিযুদ্ধের আরও ছবি
"২০ এপ্রিল, ২০০১ প্রথম আলো এএফপি’র বরাত দিয়ে প্রথম পাতায় বিশাল একটি ছবি ছাপিয়েছিল। ছবিটা যে কী ভযাবহ তা যারা একবার দেখেছে দ্বিতীয়বার দেখতে চাইবেন না। আফসোস, আমি মতিউর রহমানের মত 'নেকাপড়া' জানা মানুষ হলে নিশ্চয়ই এখন এখানে পোস্ট করে দিতাম! কিন্তু আমি মতিউর রহমানের মনন স্পর্শ করার কু-ইচ্ছা প্রকাশ করি না।
ছবিটা এমন, বিডিআর কর্তৃক হত, গ্রামবাসী বাঁশে ঝুলিয়ে পুরোদস্তর ইউনিফর্ম পরা একজন মৃত বিএসএফ-এর লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে শব বয়ে নিয়ে যেতে দেখেছি কুকুর শুকরের।
প্রথম শ্রেণীর (এদের দাবীমতে) দৈনিকটির সৌজন্যে যে দৃশ্য দেখেছি এতে আমি স্তম্ভিত, ক্রদ্ধ। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। মানবজাতির নগণ্য একটা অংশ হিসাবে আমি লজ্জিত। নিজেকে বড় নগ্ন-কাতর মানুষ মনে হচ্ছে।
যে বিএসএফ পোশাকধারী মানুষটার মৃতদেহ হাত-পা বেঁধে কুকুর-শুকরের মত ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, প্রথম শ্রেণীর দৈনিক কর্তৃপক্ষ কী মনে করেন এই গ্রহে ওঁর কোন প্রিয় মানুষ নেই! এই গ্রহে কি এমন একটা ভালবাসার ক্ষুদ্র শেকড়ও ছিল না যে এই মানুষটাকে অমানুষিক শক্তিতে ধরে রেখেছিল। এতো গেল মানবিক দিক, মুদ্রার এক পিঠ। অন্য পিঠ।
ভারত যারা চালাচ্ছেন তারা যদি এই একটা ছবির কারণে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন এর দায় কে নেবে, এই প্রথম শ্রেণীর দৈনিক, না এএফপি? তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম এএফপি। কিন্তু মুক্তচিন্তা-শক্তচিন্তা, প্রথম শ্রেণীর দৈনিক বলে নিজের ঢোল নিজেই যে ফাটিয়ে ফেলছে তাদের কী কোন দায়বদ্ধতা নেই? ফলাও করে লিখে দিলেই হলো আজ আমাদের পত্রিকা ছাপা হলো এত লক্ষ বাহাত্তর হাজার ... শূন্য ... শূণ্য কপি। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আমরা নিজেরাই। কী অসভ্য অহংকার!
যুদ্ধের প্রয়োজনে একজনকে গুলি করে মেরে ফেলা আর তাঁর মৃতদেহের প্রতি অপমান করা কী একই কথা! পত্রিকাটির পোষা বুদ্ধিজীবী মহোদয়গণ কী বলেন? ত্রিকালদর্শী গব্বর চৌধুরী স্যার কী বলেন, ছবিটির অন্য কোন সমস্যা নেই তো- আসলে এটা একটা কুকুরের ছবি ছিল বিচিত্র করণে মানুষের ছবি হয়ে গেছে? স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জি, এস , এম পদ্ধতিতে নিশ্চই সুদূর লন্ডন থেকে রহস্য উদঘাটন করে ফেলেছেন। প্লিজ স্যার, ফরমায়েসী সুদীর্ঘ একটা কলাম লিখুন। প্রথম শ্রেনীর দৈনিকে নিশ্চয়ই ছাপা হবে।
এদেশে ক্ষমা প্রার্থনা করার চল তেমন নেই নইলে প্রথম শ্রেণীর দৈনিকটির সম্পাদককে বলতাম, সমস্ত পাঠকের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
দৈনিকটির সম্পাদক পার্কের গাছ কাটা নিয়ে মর্মস্পর্শী এক প্রতিবেদন লিখেছিলেন- চোখ বড় বড় করে, লেখাটা পড়ে ভাবছিলাম জলভরা চোখে, আহা কী মায়া গো লোকটার মনে! এমন বড় মাপের মানুষটার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রত্যাশা কী খুব বড় চাওয়া?"
*এই অংশটুকু নেয়া হয়েছে 'সাদাকে কালো বলিব' (২০০৫) থেকে
**একটি নিরীহদর্শন বোমা 'লিটল বয়' যেমন যথাসময়ে কেড়ে নিতে পারে অসংখ্য প্রাণ তেমনি এমন একটা ছবি কী তান্ডব করতে পারে তা সময়ই বলে দেয়! কেবল একটা ছবির কী অপরসীম ক্ষমতা তা আগাম আঁচ অনেকেই করতে পারেন না! আজ মনে হচ্ছে, ক্ষমা প্রার্থনার আকুলতা ছাই, মানুষটাকে চাবুক মারা প্রয়োজন ছিল।