Search

Tuesday, August 18, 2015

প্রবীর সিকদার এবং শ্মশান...!

প্রবীর সিকদারের অসাধারণ একটা লেখা আছে, “বাংলাদেশ শুধুই আমার বাবার কবরস্থান![১]। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবীর সিকদারের পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। তাঁর বাবাকে খুন করে ঠিক কোথায় ফেলে রাখা হয়েছিল এটা তাঁর জানা নেই বিধায় তিনি সমগ্র বাংলাদেশকেই বাবার কবরস্থান হিসাবে সশ্রদ্ধচিত্তে কল্পনা করে থাকেন। তাঁর সন্তানকেও তিনি বলেও দিয়েছিলেন, 'তোমার চারপাশে যতো বড় বাংলাদেশ তার পুরোটাই তোমারই দাদুর কবরস্থান; কখনোই যেন দাদুর কবরস্থানের অমর্যাদা না হয়...।"

সম্ভবত প্রবীর সিকদার শেষ শয্যাকে বিভক্ত করতে চাননি বিধায় শ্মশানের স্থলে কবরস্থান লিখেছিলেন। পরম মমতায়, তীব্র আবেগে যে বাংলাদেশকে তিনি তাঁর বাবার কবরস্থান হিসাবে দেখে আসছিলেন সেই বাংলাদেশ যে কালে কালে সত্যি সত্যি শ্মশান হয়ে উঠবে এটা সম্ভবত তাঁর কল্পনাতেও ছিল না।

আফসোস, এই দেশে এখন কেবলই ‘পাইপমানুষ’! ‘পাইপমানুষ’ হতে পারলে কোনও সমস্যা নেই। পাইপের একদিকে (যাকে মুখ নামে আমরা চিনি) সুস্বাদু বর্জ্য (যার চালু নাম খাবার) ঢালো পাইপের অন্যপাশে দিয়ে বেরুবে দুর্গন্ধময় বর্জ্য। আহা, পাইপের আবার মস্তিষ্ক কী! অবশ্য যাদের এখনও মস্তিষ্ক রেকটামের সঙ্গে জড়াজড়ি হয়নি তারা কালের প্রভাবে এখন পুরোপুরি ‘জম্বি’। এরা বিচিত্র এক প্রাণী, না জীবিত না মৃত!

তো, প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আলোকিত একজন মানুষ (!) সহকারী সরকারী কৌঁসুলি স্বপন পাল। প্রবীর সিকদারের একটা স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তিনি মনে করছেন একজন মন্ত্রী বাহাদুরের বিরুদ্ধে উক্ত স্ট্যাটাসখানায় মাননীয় মন্ত্রী বাহাদুরের মানহানি ঘটেছে তাই সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন ফরিদপুরের বিচারিক আদালতে। এবং ফরিদপুরের কোনও আইনজীবী প্রবীর সিকদারে পক্ষে দাঁড়াবেন না কারণ এই বারের গঠনতন্ত্রে বলা আছে (ভাগ্যিস, গঠনতন্ত্রে এটা বলা নেই যে কেউ ঋণ পরিশোধ করতে না-পারলে তার শরীরের মাংস কেটে নেওয়া যাবে। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যেত) কোনও আইনজীবী মামলা করলে অন্য আইনজীবীরা ওই মামলার আসামীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না।

একজন দাগী আসামীও তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার অধিকার রাখেন। এটা তার নাগরিক অধিকার। একটা রাষ্ট্রের এই ক্ষমতা থাকা সমীচীন না যে তার কোনও নাগরিককে আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত করা হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ এই গ্রহের নিকৃষ্টতম মানুষটারও আছে।
আদালতের কাছে প্রবীর সিকদারের এটা জানাবার সুযোগ হলো না তিনি কেন স্ট্যাটাসের মাধ্যমে প্রাণনাশের শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন! অবশ্য “...ফরিদপুরের সন্তান প্রবীরের পক্ষে আগের দিন আদালতে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ালেও রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী নান্নু। তিনি বলেন, “প্রবীর সিকদার একজন খ্যাতিমান সাংবাদিকই নন, তিনি শহীদ পরিবারের সন্তান। আমরা আদালতকে বলেছি একজন পঙ্গু মানুষকে রিমান্ড না দিয়ে জামিন মঞ্জুর করার। কিন্তু আদালত না তা নাকচ করেছে। ..."  
(http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1012756.bdnews
ছবি ঋণ: http://www.dailyfaridpurkantho.com/?p=24538
এদিকে বিচারিক হাকিম প্রবীর সিকদারকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দিয়েছেন পুলিশ আবার ১০ দিনের রিমান্ডও চেয়েছিল কিন্তু দয়াবান বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আলবত-আলবত, রিমান্ডটা অতি জরুরি যে। আদালতে মামলা শুরু হওয়ার পূর্বেই প্রবীর সিকদারের ক্রাচের সঙ্গে আমরা হাতকড়া দেখেছি কিন্তু তাঁর ক্রাচের ফাঁপা অংশের ভেতরটা দেখার সুযোগ পাইনি। ক্রাচ নামের তাঁর এই ভয়ংকর অস্ত্রটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা আবশ্যক।
মাত্র একটা পা নিয়ে দেশ কাঁপিয়ে দেয় লিমন নামের ছেলেটি। যেখানে গোটা রাষ্ট্রের সমস্ত শক্তি তার একটা পাকে থামাতে হিমশিম খেয়ে যায় সেখানে এখন এসে যোগ দিয়েছেন প্রবীর সিকদার এক পা নিয়ে! যুদ্ধাপরাধিরা তার এক পা উড়িয়ে দিয়েছে তাতে কী তাঁর অন্য পাটা তো অবশিষ্ট আছে।

বড় বিচিত্র এই দেশ, এখানে লেখার জন্য কেউ কল্লা উড়িয়ে দিয়ে আবার ঘটা করে লেখেও, “আলহামদুলিল্লাহ, আজ একটাকে জাহান্নামে পাঠানো হলো”। এরা কাউকে জাহান্নামে পাঠালো নাকি নিজেরাই জাহান্নামে গেল এর উত্তর আমাদের মত সাধারণ মানুষের জানা নেই। কিন্তু এদের জানা আছে! এরা তুচ্ছ, সামান্য সৃষ্টি থেকে অসামান্য অসীম ক্ষমতাধর স্রষ্টা হয়ে উঠে যে। তো, এই দেশেই কেউ আবার লেখার জন্য হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে কয়েদখানায় আটকে রাখে।

প্রবীর সিকদার যে লেখাটা লিখেছিলেন, "...চারটা পায়ে একটা কুত্তা আমার আছে দুই আর দুইটা পা থাকতো যদি আমিও কুকুর হই।" আহা, দুইটা পা তো আমাদের জন্য, আর দুইটা পা থাকতো যদি আমরাও কুকুর হই। প্রবীর সিকদার কী লেখাটা খানিকটা সংশোধন করে লিখবেন, আর তিনটা পা থাকতো যদি...।

সূত্র:
১. বাংলাদেশ শুধুই আমার বাবার কবরস্থান!: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_4.html