Search

Sunday, March 23, 2014

নিয়ম-অনিয়ম, অনিয়মই নিয়ম!



আমার এখানে আজ ছিল উপজেলা নির্বাচন। ক্ষমতার দিক থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই। তবুও লড়াইটা মর্যাদার। সরকারী দল তাদের সবটুকু ক্ষমতা ব্যবহার করার চেষ্টা করবে এ আর বিচিত্র কী! দলবাজির রঙির চশমা কারও চোখে না-থাকলে তার নমুনা যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে এটা চোখে না-পড়ার তো কোনও কারণ নেই।
এই নির্বাচন ঘিরে একজনের মৃত্যু হয়েছে বিজিবির গুলিতে। ব্যালট-বক্স ছিনতাই করলে সেনাবাহিনীকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কিন্তু এই ক্ষমতা বিজিবিকে দেওয়া হয়েছে কিনা এটা আমার জানা নেই। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম তাদেরকেও গুলি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
আচ্ছা, ওখানে কি ব্যালট-বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল? প্রথমে কি বিজিবি ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল? পরে কি পায়ে গুলি করেছিল? প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য কিন্তু ভিন্ন। ওখানে সত্যটা কি এটা আপাতত ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকুক।

কাছের লোকজনেরা জানেন কোন দল গেল এই নিয়ে আমার বিশেষ উৎসাহ নেই। তারপরও গেছি ভোট দিতে। আমি ঝামেলা এড়িয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করি কিন্তু ড্রেন রাস্তার মাঝখানে চলে এলে আমার কী দোষ? সবই কপাল! ব্যালট দেওয়ার পূর্বে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার দেখি আমার বাম হাতর বুড়ো আঙ্গুল নিয়ে টানাটানি করছেন।

এবেলা বলে রাখি, অনেক বছর ধরে বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলে একটা আংটি পরি। বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুলে এটাকে রাখাই আমার জন্য সুবিধাজনক। এটা নিয়ে কঠিন ব্যাখ্যা আছে আমার কাছে কিন্তু সেই ব্যাখ্যাটা এখানে দেওয়াটা আমার কাছে জরুরি মনে হচ্ছে না।
এবং পাথরটার বংশ পরিচয় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। এটাও জানি এটা চার আনায়ও কেউ নিতে চাইবে না। আর পাথর-টাথরের গুণাগুণ নিয়েও আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত না। আংটিটা ছিল আমার বাবার এটাই আমার কাছে জরুরি আর কিছু না।

যাই হোক, এ সত্য সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আংটিটা খুলে রেখে দিতে চাইছেন এটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম না। যৎসামান্য শংকাও কেটে গেল যখন তিনি আমাকে বললেন. এখানে টিপসই দেন
আমি বললাম, সরি, আমি টিপসই দেব না। সই করব
সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার রূঢ় গলায় বললেন, টিপসই দেন
আমি খানিক থমকে গিয়ে বললাম, আচ্ছা বলুন তো টিপসই ব্যতীত সই করার অপশন আছে কি না?
তিনি বললেন, আছে
আমি এবার বললাম, তাহলে আমি সই-ই করব
এবার সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার অসভ্য আচরণ করলেন। তিনি বললেন, সই করলে আপনি নিজের কলম দিয়ে করেন
আমি বললাম,আমি তো কলম আনিনি। আর আপনি কয়েক সেকেন্ডের জন্য আপনার কলমটা দিলে এতে তো খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। বেশ, তাহলে আমি কলম নিয়ে আসছি
এবার তিনি গজ গজ করতে করতে কলমটা দিলেন। পোলিং এজেন্ট যারা ছিলেন এরা বললেই পারতেন, দিক না সই অথবা আমাকে একটা কলম দিলেও হতো। উল্টো এরা কেউ-কেউ তাচ্ছিল্য করে বললেন, হুম, সই করলে তো সারাদিন লাগবে। একজন আবার বলে বসলেন, সবাই টিপসই দিল কোনো সমস্যা হলো না কেবল আপনার সমস্যা হয়ে গেল!
বটে! তাই তো, এদেশে অনিয়মই নিয়ম যে...।

আমি সই করে ব্যলটপেপার নিলাম কিন্তু আর কথা বাড়ালাম না। আমি যে মুহূর্তে গিয়েছিলাম তখন সেই বুথে আমি ব্যতীত অন্য কোনও ভোটার ছিলেন না। আমি আর কথা বাড়াইনি ইচ্ছা করেই। কারণ এখানে আমি একা আর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এরা সবাই মিলে ব্যালট-বক্স আমাকে ধরিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ডেকে নিয়ে এলেন। এরা দেরি না-করে দুম করে গুলি করে বসলেন। একটাই প্রাণ সেটাও কেড়ে নিলে আমি বাঁচব বুঝি! হাত-পা ছড়িয়ে থই থই রক্তের মাঝে পড়ে থাকব। কোনও দুঁদে সাংবাদিক আমার শরীর থেকে গলগল করে বের হওয়া রক্তের মাঝে সূর্যের প্রতিফলন আটকাবার চেষ্টা করলে তাকে তো দোষ দেওয়া চলে না। আমার মত এলেবেলে মানুষের ছবি ছাপাবার জন্য এর যে বড়ো প্রয়োজন আছে। বাই এনি চান্স, জাতীয় কোনও দৈনিকে ছবিটা ছাপা হয়ে গেলে সেটা হবে আমার জন্য অপার সৌভাগ্যের। কিন্তু এমন সৌভাগ্য আমি দেখে যেতে পারব না এটা আমি মেনে নিতে পারি না। কদাপি না...।

বিশএকুশ-একুশএকুশ



কথায়-কথায় বিশএকুশ। ধরুন, কাউকে বললাম, আমার এখানে একটা ঘুরান্তিস দিয়ে যান বা কিছু টাকা ধার দেন না প্লিজ। চটজলদি উত্তর, বিশএকুশ। প্রথম দিকে তো বুঝে কুলিয়ে উঠতেই পারতাম না! বাওয়া, বিষয়টা কী!
আহিস্তা-আহিস্তা জানা গেল, বিশএকুশ মানে হচ্ছে দু-হাজার একুশ সাল। সোজা কথায় দু-হাজার একুশ সালে তারা এই কর্মকান্ডগুলো করবেন। এই চাবুকের (!) গতি দেখে আমি নিরন্তর মুগ্ধ হই।

এমন গতির জন্য আমি দুজন মানুষকে খুব ইজ্জত দেইএকজন হচ্ছেন নাসিরউদ্দিন হোজ্জা আর আরেকজন হচ্ছেন, ডন কুইক্সোট অভ লা মানচা। হোজ্জা সাহেবের কথাটা আগে বলি। মানুষটা প্রচলিত স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতেন না' জারা হাটকে'- একটু অন্য রকম! গাধার পিঠে নাকি উল্টো করে বসতেন শোনা কথা! এটা শুনেছি এই কারণে বললাম কারণ হোজ্জা সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়নি বিধায় বুকে হাত দিয়ে (অবশ্যই নিজের) বলতে পারছি না। এও শুনেছি, গাধা এবং হোজ্জা সাহেবের গতি নিয়ে প্রায়শ ঝামেলা হতো টাইমিংটা সামান্য এদিক-ওদিক হয়ে যেত।
হোজ্জার একটা ঘটনা শেয়ার করি। যথারীতি গাধা উইথ হোজ্জা হোজ্জা সাহেব রওয়ানা দিলেন মরমর কোন রোগি দেখতেহোজ্জা সাহেব ই রোগির চল্লিশায় পৌঁছে গিয়ে শোনেন, গাধা নাকি এখানে ৪০ দিন ধরে দিব্যি লেজ নাড়াচ্ছিল! দেখো দিকি কান্ড!
 
হোজ্জার মত ডন কুইক্সোট অভ লা মানচা এই মানুষটাকেও আমি ভাল পাইইনিও নাকি তার ঘোড়া রোজিন্যান্টকে নিয়ে দাবড়ে বেড়াতেন- ফুল স্পিড আ্যহেড, কিন্তু গতি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতেন না এও শোনা কথা কারণ ডনের সঙ্গে এই বিষয়ে বাতচিত হয়নি। ডনের ঘোড়ার দুর্ধর্ষ (!) গতির সামনে হিমশিম খেতে হতো শামুককেও।

যাই হোক, বিশএকুশ- দু হাজার একুশ সালের এই গতির সঙ্গে আমাদের, অন্তত আমার তাল মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে বৈকি তাই এখন থেকে বিশএকুশ শুনলেই আমি বলি, একুশএকুশ...।

Monday, March 17, 2014

গল্প, নয় সে অল্প



এদের নিয়ে কাজ করার সুবাদে হররোজ এমন কোনও-না-কোনও একটা গল্পের মুখোমুখি হতেই হয়, এ তো আর নতুন কিছু না। আমাদের দেশে ক্রমশ এদের সংখ্যা বাড়ছে তাইএখন আমরা দেখি নিরাসক্ত দৃষ্টিতে। কিন্তু এই মেয়েটির ঘটনাটা একেবারেই অন্য রকম।

মেয়েটি বাকীতে সাদা-সাদা ভাত ঝোল দিয়ে মেখে খাচ্ছিল। যে ভদ্রমহিলা স্টেশনে ভাত বিক্রি করেন তাঁকে আমি চিনি অনেক বছর ধরে। প্রজেক্ট ন্যানো ক্রেডিটের একজন গর্বিত সদস্য [১]প্রজেক্ট ন্যানো ক্রেডিট নামটা জমকালো হলেও ন্যানো ক্রেডিট নিয়ে অল্প কথায় খুব সহজ করে বলি, বিনা সুদে টাকা ধার দেওয়া। সুবিধামতো কেবল মূল টাকাটা ফেরত দেওয়া।
এই ভদ্রমহিলার স্টেশনে ভাত বিক্রি করার জন্য টাকার প্রয়োজন খুবই অল্প। অনেকে হা হা করে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বেন, মাত্র ৩০০ টাকা! এই ভদ্রমহিলার নাম জানি না সবাই বলে, জসীমের মা, আমিও বলি, জসিমের মা। এই ভদ্রমহিলা যতবারই টাকা ধার নিয়েছেন ঠিক-ঠিক ফেরত দিয়েছেন। বাড়তি যে সুবিধাটুকু পাই সেটা হচ্ছে, স্টেশনের সমস্ত তথ্য এঁর নখদর্পণে। কে সকাল থেকে কিচ্ছু খায়নি, কে রাত থেকে উপোস সমস্ত তথ্যই পাওয়া যায় এঁর কাছে। আমার কাজের খুব সুবিধে হয়।

এই মহিলার দয়ার শরীর। বাকীতে লোকজনকে খেতে দেন, একটা ব্লেডের ব্যবস্থা করে দিলে পা ছড়িয়ে কারও নখ কাটতে লেগে যান। এই মেয়েটির সঙ্গে যখন কথা বলছি তখন পাশ থেকে একজন বললেন, হের লগে কথা কইয়া লাভ নাই হে ফাগল (পাগল)
আমি রাগ চেপে বললাম, আপনি কেমন করে জানেন এ পাগল?
লোকটির কাটা-কাটা উত্তর, হে আমার মাইয়া
আমি খানিক থমকে যাই। জসীমের মাকে জিজ্ঞেস করি, কথা সত্য?
জসীমের মা বলেন,
আমি খুবই অবাক হলাম। অদম্য রাগ চেপে লোকটাকে বললাম, আপনি কেমন বাপ যে নিজের মেয়েকে পাগল বলছেন! পৃথিবীর কোনও বাপ কী তার সন্তানকে পাগল বলে! বাপ-মাদের কাছে তো তার সন্তান সবচেয়ে আদরের, সুন্দর, নিখুঁত। শোনেন, আপনি আর কক্ষণো এই মেয়েটি পাগল বলবেন না, এর সামনে তো অবশ্যই না

আমি তো এই মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে তো কোনো প্রকারের অসঙ্গতি দেখলাম না। খুব গুছিয়ে উত্তর দিচ্ছিল এই মেয়েটি। নাম জানতে চাইলে তেলহীন-জট চুলগুলো ঝাঁকিয়ে বলল, শাবানা। বাপ মনে হয় বালকবেলায় শাবানার খুব মুভি দেখত। আমি যখন মেয়েটিকে বললাম, তুমি লেখাপড়া জানো? নেতিবাচক উত্তরের পর জানতে চাইলাম, তুমি পড়বা?
মেয়েটির উত্তর দেওয়ার পূর্বেই বাপ চিল-চিৎকারে বলল, না-না-না, মাইয়া মানুষের পড়ালেকা করা ভালা না

এর বাপটা আসলেই আসল পাগল তাই আমি এই কথা নিয়ে তার সঙ্গে কথা চালাচালিতে গেলাম না। কিন্তু এই হার্মাদ জানে না আমার পকেটে তাসের অভাব নেই। আমি গম্ভীর মুখ করে বললাম, ঘটনা কী, আপনে তো মাইয়ারে আরবিও পড়ান নাই! সর্বনাশ করছেন দেখি। তা, আরবি পড়লে তো সমস্যা নাই, নাকি?
মানুষটা হলুদ দাঁত বের করে বলে, নাহ, আরবি পড়লে তো খুবই ভালা
শাবানার জন্য আরবি বইয়ের ব্যবস্থা হয়। হালের আরবি বইগুলো চকচকে, ভেতরে আবার ফুল-ফলের ঝাঁ চকচকে ছবি। আমার বিস্ময়ের শেষ নেই- অল্পক্ষণেই দেখি শাবানা প্রথম পাঁচটা অক্ষর মুখস্ত করে ফেলেছে। বাপও দেখলাম, মেয়ের এই কেরামতি নিয়ে গর্বিত। হে হে করে বলছে, দেখতে হইব না কার মাইয়া

এদের নিয়ে কাজ করার সূত্রে আমার যে অল্প জ্ঞান সে থেকে আমি জানি, এরা একটা আলাদা খোলস দিয়ে নিজেদেরকে মুড়িয়ে রাখে। ওখানে আমার মত মানুষ স্রেফ একটা যন্ত্রণা বৈ আর কিছু না। এখানে তাড়াহুড়ো করা চলে না। করতে হবে রয়েসয়ে। কাল জসীমের মা নামের মায়াবতীকে পটাতে হবে শাবানার চুলের জট ছাড়াবার একটা গতি করতে। শাবানা মেয়েটিকে বই নিয়ে যে উচ্ছ্বাস দেখেছি তা আমার কাছে বিস্ময়কর বটে। পূর্বে কখনও কাউকে এতোটা উচ্ছ্বসিত হতে দেখিনি। এর এই প্রতিক্রিয়ার উৎস কী আমি জানি না- এর নিতল কুয়ার মতো মস্তিষ্কে উঁকি দেওয়ার ক্ষমতা আমার নাই। থাকলে ভালো হতো...।

১. জসীমের মা: http://www.ali-mahmed.com/2010/09/blog-post_07.html

Saturday, March 15, 2014

দ্বিতীয় ভাষা!



দাদাদের দাদা লিখলে অনেকে আবার নাগ করেন। তারা নাকি আমার এই ভঙ্গির মাঝে বিষ বাষ্পের আড়ালে আমার হাসি-হাসি চাঁদমুখ দেখতে পান। ওরে, ভ্রুল-ভ্রুল! দাদাদের দাদা বলার অন্য কারণ নেই দাদাদের দাদাগিরি থেকেই এর যোগ। দাদা-বড়ভাই তো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, বড়ভাইদেরকে আমরা যেমন সমীহ করি ইজ্জত দেই তেমনি দাদাদেরকেও। এতে কারো লাল-নীল হওয়ার কিছু নাই।

দোষ তো ওদের না, বাপু। দোষ আমাদের। অন্যায় তো কিছু করছে না- ভারত তার নিজ শহরকে অক্ষত রাখার জন্য সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দেয় আর এদেশে আমরা রেললাইন বসিয়ে দেই। মাগনা তো না, টাকা দিচ্ছে তো। এতে আমাদের দেশের হাজার-হাজার লোক উচ্ছন্নে গেল নাকি কার বাপ-দাদার হাড়ের উপর দিয়ে রেললাইন বসত সেটা বলা অশোভনীয়! রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নাম করে সুন্দরবন বিপন্ন হলো তো কী হলো? সুন্দরবন তো আর ওদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে না। দাদা-বড়ভাইদের শহরে একটা ফেনসিডিলের কারখানা নেই সমস্ত কারখানা আমাদের সীমান্ত ঘেঁষে কিন্তু আমাদের সন্তানদেরকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য তো নিয়ে আসি আমরাই, নাকি? এমন যে কতশত উদাহরণ।

এখন বিয়েতে আর হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো বাজে না, বাজে হিন্দি চটুল গান। শিক্ষিত পরিবারের ছেলেপেলেরা সপরিবারে বিকট শব্দে বাজায়, শিলা কি জাওয়ানি। এই পরিবারের একজন, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কাজ করেন এমন একজনকে বিমলানন্দে মাথা নাড়াতেও দেখেছি। এ সত্য, এটা তো আর ওরা বলে দেয়নি বাছা, আমাদের গান না-বাজালে কিন্তু বিবাহ সিদ্ধ হবে না। তাহলে?
বড়দের কথা নাহয় বাদই দিলাম। ছোট্ট-ছোট্ট বাচ্চারাও এখন হিন্দিতে বাতচিত করে, ম্যায় জিয়ান হু, ম্যায় আচ্ছা হু। হিন্দিতে ডাব করা ডোরেমনের ফল। ওরা কী মাধার দিব্যি দিয়েছিল যে বাংলায় ডোরেমন ডাব করলে মিসাইল ছুড়ে সমস্ত কলাগাছ শুইয়ে দেবে? তা, বাকী ছিল খেলার কল্যাণে সংস্কৃতি। সে ষোলোকলাও পূর্ণ!

সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর নমুনা আমরা দেখেছি। ভাল কথা, এ আর রহমান অস্কার বাগিয়েছেন তাই আমরা তাকে বগলে করে রাখব কিন্তু যেভাবে সুরের মূর্ছনায় আমরা মূর্ছা গেছি তাতে করে মনে হচ্ছে আমাদের দেশের কোনো গাতকদের জন্য আর কিছু রাখিনি। মিডিয়াও ফেনা তুলবে এ আর বিচিত্র কী! যেখানে জাতীয় দুলাভাই শাহরুখ এলে আমাদের মন্ত্রী বাহাদুর মাটিতে বসে হাঁ করে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

একটা কৌতুক বললে বিষয়টা খোলাসা করতে সুবিধে হয়। এক 'মহিলা শেয়াল' ফাঁদে আটকা পড়ল। পাশ দিয়ে যাচ্ছিল...। থাক, এটা বলে কাজ নেই। অশ্লীলতার ধোঁয়া তুলে আমার পালকে নিন্দার নতুন উপাধি আর যোগ করি না কারণ এমনিতেই আমার বন্ধু সংখ্যা শূন্যের কোঠায় শেষে এটা ঋণাত্মক হয়ে যাক এই নহে মোর প্রার্থনা...।

কেবল একটাই দাবী হিন্দি ভাষাকে তার যথার্থ মর্যাদা দেওয়া হোক। আমাদের দেশে হিন্দি হোক দ্বিতীয় ভাষা। মানতে হবে, মেনে নাও। কালো হাত ভেঙ্গে দাও।         

Friday, March 14, 2014

রিকশা পেইন্টিং



১৯৯৪ সালে জাপানে ফুকুওকা শহরে ‘Rickshaw Painting-Traffic Art in Bangladesh’ একটি আর্ট শো হয়েছিল। তখন কিছু জাপানি প্রথম বাংলাদেশের নাম শুনেছিলেন এই রিকশা পেইটিং-এর কল্যাণে। কয়েকজন জাপানির মধ্যে রিউনোসুকো আকুতাগাওয়া নামের অন্তত একজন জাপানির কথা মনে পড়ছে যিনি এই রিকশা-আর্টের কল্যাণে এদেশের কথা শোনেন যেটা তিনি ঝলমলে চোখ-মুখ করে এটা বলছিলেনও।

অবশ্য আমাদের দেশে অতি উচ্চ মানের যে সমস্ত পেইটিং-এর মিডিয়াতে ফলাও করে আমার চল রয়েছে সেই সমস্ত পেইটিং-এর যেসব ছবি আমরা মিডিয়ায় দেখি তার সামনে অধিকাংশ মানুষগুলো যে রকম মাছি-হাঁ মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা একবারে ম্যাট্রিক পাশ করেছেন বটে কিন্তু পেইটিং সম্বন্ধে এদের যে ধারণা তা আঁরি মাতিসের লা বাতু-এর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
দুঁদে চিত্রশিল্পী আঁরি মাতিস-এর তখন দুনিয়াজোড়া নাম১৯৬১ সালে নুঅর্কের মর্ডান আর্ট গ্যালারীতে এই শিল্পীর শিল্পকর্ম লা বাতু (দ্য বোট)-এর প্রদর্শনী চলছিল 
কোন এক হাবামানব ছবিটা উল্টো করে টাঙিয়ে দিলদেখা গেল একটা নৌকা ওল্টো করা, নৌকার ওপরে সাগর, নীচে আকাশ এবং মেঘ 
পৃথিবীর আনাচে-কানাচে থেকে তাবড় তাবড় সমালোচক এলেনকেউ কাঁধ ঝাকালেন, কেউ-বা পা নাচালেনছবির বিভিন্ন দিক নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলেন
পরে জানা গেল ছবিটা ভুলে উল্টো করে রাখা ছিল। পরে অবশ্য এদের অনেকেই অস্বীকার করেছিলেন যে তারা ওখানে যাননি, গেলে কী আর এমন ভুল তাদের চোখ এড়াতো? তা বটে!
আমাদের দেশে একজন দেখেছিলাম গরুর দিকে এমন গরুরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে- ভাগ্যিস, গরুটা জীবিত ছিল না নইলে ঠিক কেঁদে ফেলত।

যাই হোক, রিকশা নিয়ে দেশ-বিদেশে আরও অনেক আয়োজন হয়েছে বিধায় জাপানের আর্ট শোর খবরটা পুরনো, তবে আমার কাছে এখন যেটা গুরুত্বপূর্ণ খবর মনে হচ্ছে সেটা হচ্ছে রিকশার পেছনে আঁকাআঁকি নামের এই রিকশা আর্টের আয়ু খুব একটা বেশি নেই- অনেকটা হারিয়ে যাওয়া চাদরঘেরা রিকশার মতো। কারণ ক্রমশ পায়ে-চালিত রিকশাগুলোর জায়গায় স্থান করে নিচ্ছে ব্যাটারি-চালিত রিকশা।  আধুনিক এই জিনিসের পিছনে লোকজন এই আঁকাআঁকি করতে যাবে কোন দুঃখে। সর্বত্র আধুনিকতার ছোঁয়া যে...।



Tuesday, March 11, 2014

ঈ-কারের ছড়াছড়ি!

এই পোস্টারে ধর্মীয় শিক্ষকদের নামগুলো দেখছি এমন:
১. কাদেরী
২. হেলালী
৩. কুতুবী
৪. কাসেমী
৫. আহমদী
৬. হোসেইনী
৭. নিজামী
৮. ফারুকী
৯. রব্বানী
একজনকে পেয়েছিলাম ওনার নাম ছিল, বুলবুলী

ঈ-কারের এই ছড়াছড়ির কারণটা বুঝতে আমার বেগ পেতে হচ্ছিল। একজন খতিব সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, নামের এই হাল কেন? ঈ-কার ব্যতীত সহীহ নাকি ঈ-কার সহ?
তিনি জানালেন, ঈ-কার ব্যতীতটাই সঠিক কিন্তু ঈ-কার যুক্ত করা হচ্ছে যেমন পাকিস্তানের সঙ্গে ঈ-কার যুক্ত করে পাকিস্তানী।

ভাল...!  

Sunday, March 9, 2014

যাত্রা শুরু


পূর্বের লেখায় বলেছিলাম ব্যাটন পরিবর্তন হয় মাত্র [১]। যাত্রায় থামাথামির কোনো স্থান নেই কিন্তু যাত্রার শুরুতেই আমরা হোঁচট খেলাম। সকালেই আমি এবং দুলাল চলে গেছি জেলা শহরে। সাহাদাতও চলে আসে। একে একে অন্যরাও আসে। সায়েরা বেগমের অপারেশন হওয়ার কথা ছিল আগামীকাল। আজ কেবল ভর্তিপর্ব। তাঁর সমস্ত টেস্টই ভাল এসেছে কিন্তু আজ অকস্মাৎ বলা হলো তাঁর হিমোগ্লবিন কম বিধায় রক্তের প্রয়োজন। তাঁর রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ- আমাদের কারো সঙ্গেই তাঁর রক্তের মিল নেই।

বেশ পূর্বে এক শিশু আমাকে বোকা বানিয়েছিল এটা জিজ্ঞেস করে, কোন ব্যাংকে টাকা নাই? যথারীতি আমি পারিনি! শিশুটি হি হি করে উত্তরও দিয়েছিল, ব্লাড ব্যাংকে টাকা নাই। ওর কাছেই এটা জেনেছিলাম, ব্লাড ব্যাংকে টাকা নাই। আজ এই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে এসে জানলাম, এখানে রক্তও নাই।
এই হাসপাতালে এক ফোঁটা রক্তের বড়ো অভাব কিন্তু মটর সাইকেলের অভাব নেই! ছবিতে যে সমস্ত মটর সাইকেলগুলো দেখা যাচ্ছে তা কেবল হাসপাতালের এক অংশেরই তোলা। এই সমস্ত মটর সাইকেল সবই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের। এদের কাজ কী এখানে! ডাক্তার সাহেবদেরকে অন্তর্বাস ব্যতীত সবই দেওয়া। নাকি এটাও দেওয়া শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে?
জানি অনেকে বলবেন অন্য কথা। তা ফি-রোজ নতুন নতুন ওষুধ বের হয় নাকি যে ডাক্তার সাহেবদেরকে গুণাগুণ অবহিত করতে হবে? আমাদের দেশে আইন করে দেওয়া আবশ্যক যে কোম্পানির ওষুধের গুণাগুণ লেখা লিফলেটগুলো ডাক্তার সাহেবদের কাছে কেবল ডাকে পাঠাবার ব্যবস্থা রাখা। আর যেসব ডাক্তারের ওই সমস্ত লিফলেট পড়ার যোগ্যতা নাই তাদের সনদ কেড়ে নেওয়া।  

রক্ত নেই-এখন আমরা কী করি, কোথায় যাই? যাদের রক্ত দেওয়ার কথা তারা তো সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। রক্ত দেওয়ার কথা যার, লিমনের আজ ডেন্টলের কি এক পরীক্ষা।
সাহাদাত একে-ওকে ফোন করে। ঠিক-ঠিক একটা ব্যবস্থা হয়। অতি দ্রুত চলে আসে জেবা নামের ফুটফুটে এই মেয়েটি, প্রথম এই-ই রক্ত দেয় সায়েরা বেগমকে-

সায়েরা বেগমকে জড়িয়ে ধরে এর কী অপার আনন্দ! । সন্ধ্যায় দেবে লিমনের ভাই। আগামীকালের অপারেশনের জন্য যে দু-চার ব্যাগ রক্ত লাগবে এটা নিয়ে আমার দুঃশ্চিন্তা নেই কারণ এই ছেলে-মেয়েরাই ঠিক-ঠিক একটা উপায় বের করে ফেলবে। আসলে এখানে আমার তেমন বিশেষ কোনো কাজ নেই কেবল গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া।


আমি নিয়মিত ওখানে অন্য কারণে। সায়েরা বেগম আমার কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন তাঁর অপারেশন পর্বে আমি যেন অবশ্য অবশ্যই উপস্থিত থাকি। আমি জানি না আমি উপস্থিত থাকলে কী তারতম্য হবে কেবল জানি এই মনিহার আমার মত বাঁদরের গলায় শোভা পায় না।  
১.ব্যাটন, হাতবদল হয় মাত্র: http://www.ali-mahmed.com/2014/02/blog-post_4053.html

Saturday, March 8, 2014

বাঘের দুধের পায়েশ




এই সাইনবোর্ডের শানে-নজুল কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না! দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান, আগামাথা তো কিছুই বুঝতাছি না?
দোকানদার অতি যত্ন সহকারে বুঝিয়ে দিলেন। বোদ্ধু শাহ হচ্ছে নাম। হযরত যোগ হয়েছে।

আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। আবারও জানতে চাই, বাঘ সোয়ারী-এর ঘটনাটা একটু খুলে বলেন তো?
আমার অজ্ঞতার কারণে দোকানদার আমাকে বুদ্ধু ঠাউরালেন সম্ভবত। এমন সহজ বিষয়টা বুঝতে পারছি না! তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, আপনে বাঘ চেনেন না?
আমি গা দুলিয়ে বলি, চিনি, বিলক্ষণ চিনি
দোকানদারের উষ্মা এবার আর গোপন থাকে না, চিনলে আবার জিগান ক্যান! হুজুর বোদ্ধু শাহ বাঘের উপর সওয়ার হয়ে চলাফেরা করতেন বইলাই ওনার নাম হইছে, হযরত বোদ্ধু শাহ বাঘ সওয়ারী (রহঃ)

আমি আমার নির্বুদ্ধিতার কারণে পারলে গলে যাই আর কী! তবুও চিঁ চিঁ করে বলি, হযরত বোদ্ধু শাহ এবং বাঘ সোয়ারী-এর মাঝে একটা কমা দিলে বা বাঘের ছবি দিলে তাহলে আর এই সমস্যাটা হতো না।

ভাগ্যিস, এই সময়ে এটা হলে বাঘ বাঁচাও লোকজনেরা বাঘের প্রতি অনাচারের কারণে তেব্র পরতিবাদ করতেন। সরকার বাহাদুরও বাঘের প্রতি এই অন্যায়ের কারণে ফাটকে আটকাতেন। ওই সব উঁচু কথা নিয়ে আমার সমস্যা না আমার মাথায় যেটা ঘুরপাক খাচ্ছে ওই বাঘের খাওয়া-খাদ্য কি ছিল? বাঘ তো আর ঘাস খায় না যে মুঠো-মুঠো ঘাস ফেলে দিলেই হলো!
আর বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকাবার যে সমস্ত কথা শুনি বা বাঘের দুধ মেলে তা পূর্বে বিশ্বাস করতাম না কিন্তু এখন আর সেই সন্দেহটার ছিটেফোঁটাও আমার মধ্যে নেই। বাঘের দুধ কেবল মেলেই না বাঘের দুধের পায়েশ বা হালুয়া কেউ খেলেও আর যে-কেউ অবাক হোক অন্তত আমি হই না।