Search

Friday, February 28, 2014

নসিহত


আমাদের মৌলভি সাহেবরা ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে অনবরত আমাদেরকে নসিহত করেন, শুনিবেক আলেমের পন্দ নসিহত। আট-দশটা চোঙ্গা (যার প্রচলিত নাম মাইক) লাগিয়ে মৌলভি সাহেবরা মধ্যরাত পর্যন্ত তোতাপাখির মত বকে যান, বাবারা লাইনে থাকিস।

বে-লাইনের আমরা লাইনে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি, ভাল তো। মধ্যরাতের বিষয়ে অনেকে বলবেন, জোশ চলে আসে বিধায় রাত গড়ায়। বটে! ওয়াজের পূর্বেই মাইকিং করে যে ঘোষণা দেওয়া হয়, ওয়াজ হবে মধ্যরাত পর্যন্ত এর সহিহ ব্যাখ্যা কী! এরা কি ধরে নেন মধ্যরাত (আমি রাতভর ধরে এই কর্মকান্ড করতেও দেখেছি) পর্যন্ত সমস্ত মানুষ জেগে বসে আছে, এমনকি খেটেখাওয়া মানুষও যাকে ভোরে অমানুষিক কাজে যেতে হবে? বা কোনো মানুষের অসুস্থ থাকার উপায় নেই! অথবা অন্য কোনো ধর্মের লোকজনের ওই এলাকায় থাকার যো নেই?

ইসলামের ঝান্ডাধারী সৌদির মত দেশগুলোর মৌলভি সাহেবরা আট-দশটা চোঙ্গা লাগিয়ে ওদের দেশে এমন নসিহত করার চেষ্টা করেছেন এমনটা আমার জানা নাই। নাকি ওইসব দেশের লোকজনকে লাইনে রাখার কোনো প্রয়োজন নাই?
ছবিতে আমরা যে দৃশ্য দেখছি এটাও একটা ওয়াজ-মাহফিলের। ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যাবে এখানে একটি চালু রাস্তা বন্ধ করে ওয়াজ মাহফিলের নামে নসিহত করা হচ্ছে। অনেকে বলবেন, এটা তো আয়োজকদের কান্ড- মৌলভি সাহেবদের উপর তো এ দোষ বর্তায় না। হুম, তা বটে! তা মৌলভি সাহেবরা কী চোখ বন্ধ করে রাখেন যে এটা তাদের চোখে পড়ার কোনো উপায় নেই? সবাইকে যেভাবে এঁরা লাইনে থাকার বিস্তর উপদেশ দেন সেখানে নিজেদের গাড়ির ব্রেক না-থাকলে তো সমস্যা।

আসলে টোলের পন্ডিত, মৌলভি সাহেবদের শেখা তো সেই কবেই শেষ- এরা কেবল আমাদেরকে শেখান।

Thursday, February 27, 2014

ব্যাটন, হাতবদল হয় মাত্র



সায়েরা বেগমকে [১] নিয়ে লেখার পর মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এঁদের মধ্যে একজন ভদ্রমহিলাও আছেন বিধায় তাঁর নাম প্রকাশে অনুমতির একটা বিষয় জরুরি হয়ে পড়ে। অনুমতি চাওয়ার পর তিনি সাফ না করে দেন। নাম প্রকাশে তিনি ইচ্ছুক নন।
Muquit Mohammad-এর কাছে আর অনুমতি চাওয়ার চেষ্টা করিনি কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম তিনিও একই পথে হাঁটবেন। তাই Muquit Mohammad-এর অনুমতির আর তোয়াক্কা করিনি। বেচারা সাগর পারে বসে দাঁতে দাঁত ঘষবেন। এই নিয়ে আমি কাতর না কারণ তিনি তো নিজের দাঁতই ঘষবেন- খুলে আসলে তাঁরটা খুলে আসবে, আমার সমস্যা কোথায়!

সায়েরা বেগমের অপারেশনের পূর্বে এবং পরে যে টাকার প্রয়োজন হবে সেটার পুরোটার ব্যবস্থা হয়নি বলে আমি অনেকখানি চিন্তিত ছিলাম। যা হোক একটা ব্যবস্থা হবে, হবেই এই দুর্দান্ত আস্থাটা ছিল বলেই আমি এবং Dulal Ghose তাঁকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমি আর দুলালকে এটা বলিনি যে পুরো টাকার ব্যবস্থা হয়নি।

সম্ভবত এরা দুলালের কাছে এই সম্বন্ধে শুনে থাকবে। পৌঁছার পর একে একে এই বান্দারা হাজির হয় লিমন ভূঁইয়া, রুবেল, সাহাদাত হোসেন। এরা মুঠ করে আমাকে টাকা এগিয়ে দেয়। আমি গুণে দেখার প্রয়োজন বোধ করি না কারণ এই স্বপ্নযাত্রায় আসলে টাকার অংকটা মূখ্য না, মমতা, একগাদা মমতাই কেবল, আর কিছু না।
এক পলকে আমি এটাও লক্ষ করি এরা যে টাকাটা আমাকে দিয়েছে এর মধ্যে অনেক খুচরো টাকাও আছে। আমি অনুমান করার চেষ্টা করি এই পাগলাগুলো কেমন কেমন করে টাকাগুলো যোগাড় করেছে।

এই ছেলেগুলোর সঙ্গে আমার এই প্রথম দেখা। এক ফাঁকে আমি লক্ষ করি লিমন দুলালের কানে কীসব যেন বলছে। আমি খানিকটা চিন্তায় পড়ে যাই, কী কথা তাহাদের মধ্যে? Limon Bhuiyan দুলালকে কী বলছে? আমার কান বড়ো বড়ো, এটা? অজান্তেই আমার হাত নিজের কানে চলে যায়।
আমি এবার রাশভারী গলায় দুলালকে বলি, ঘটনা কি?
দুলাল একগাল হেসে বলে, ঘটনা অন্য কিছু না। লিমন বলছে, ওর রক্তের গ্রুপ এ-পজেটিভ, সায়েরা বেগমের রক্তের প্রয়োজন হলে, গ্রুপ মিললে ও রক্ত দেবে।
আমি ভেজা চোখ আড়াল করে অন্য দিকে তাকিয়ে বলি, এহ-হ, বললেই হলো, মামাবাড়ির আবদার নাকি! আমার এবি-পজেটিভ, দেখবা ঠিক ঠিক আমারটা ম্যাচ করবে

আমার চেয়ে হয়তো লিমনের আবেগটা বেশি তাই সায়েরা বেগমের সঙ্গে তার রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করে। এখানে এসে অনায়াসে লিমন আমাকে হারিয়ে দেয়। কিছু-কিছু পরাজয়েও বড়ো সুখ।
যে গাইনি ডা. ফাউজিয়ার কাছে সায়েরা বেগমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রথম দিকে তিনি খুব একটা সহযোগিতা করছিলেন না। দুলালের মুখ ক্রমশ লম্বা হয়, অন্ধকারে ছেয়ে যায়! আমি এবার ডা. ফাউজিয়াকে বললাম, আপনি সম্ভবত সায়েরা খাতুনের সম্বন্ধে শুনে থাকবেন, তিনি এই-এই-এই...
এবার ডা. ফাউজিয়া ঝলমলে মুখে বললেন, আরে বলেন কী, চিনি তো খুব ভাল করে চিনি। আমি এঁর অপারেশন নিজে করব। এ তো আমার জন্য গর্বের
আমি আটকে রাখা শ্বাস ফেলি, যাক, একটা গতি হলো। দুলালের মুখের আধার ক্রমশ কেটে গেল।

এখন থেকে বেরিয়ে আমার নির্ভার লাগছিল। এই ছেলেগুলো আলগোছে সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। এরা ডানে গেলে আমিও ডানে যাই, বাঁয়ে গেলে বাঁয়ে। উপর-নীচে গেলে আমি কেবল অনুসরণ করি মাত্র। আসলে এরপর আর আমার করার কিছুই থাকে না। সায়েরা বেগমের একগাদা টেস্ট করানো হলো, কিছু টেস্ট ঢাকা থেকে করিয়ে আনতে হবে। অপারেশন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এই স্বপ্নযাত্রা একটা লম্বা দৌড়- এখানে থামাথামির কোনো স্থান নেই। এখানে ব্যাটন বদল হয় কেবল...।

Wednesday, February 26, 2014

একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু!

আমার একটি স্বপ্ন নিয়ে লিখেছিলাম, একটি স্বপ্ন এবং... [১]। অনেকে হয়তো খানিক অবাক হয়েছিলেন, খবরের খোঁজে নামের লোকাল একটা পত্রিকা নিয়ে ব্যাটা আবার স্বপ্নও দেখে! আমি তো লোকাল ইন্টারসিটি নিয়ে মাথা ঘামাই না। পত্রিকাটি আসল আমি পত্রিকা হিসাবে দেখছিলাম না, দেখছিলাম...।
এটার মাধ্যমে ছোট-ছোট স্বপ্নকে ছোঁয়ার চেষ্টা। যেমন ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই, স্কুলের হাজার-হাজার শিক্ষার্থিকে বিনামূল্যে সৌজন্য কপি দেওয়া এই কারণে যাতে করে এদের মধ্যে পাঠের অভ্যাস গড়ে উঠে।

সম্প্রতি এই পত্রিকার কিছু কর্মকান্ড আমার পছন্দ হচ্ছিল না বিশেষ করে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠা। এই পত্রিকার প্রধান হিসাবে এর দায় আমার উপরই বর্তায়।
কিন্তু এই দায় আমি কেন দিনের-পর-দিন, মাসের-পর-মাস, বছরের-পর-বছর ধরে বহন করব? আমার কী দায় পড়েছে?

এই পত্রিকার স্বপ্নদ্রষ্টা আমরা দুজনের মধ্যে একজন, যিনি পত্রিকার পুরো দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিলেন বলেই আমার রাজি হওয়া। কাগজ-পত্রে যার বিপুল ক্ষমতা, আসল ক্ষমতা। এই ক্ষমতার গন্ধ পত্রিকার অন্য লোকজনের তো অজানা থাকার কথা না তাই তাদের উদ্ধত আচরণ এমন সীমা ছাড়ায় যে এরা আমাকে না-জানিয়ে পত্রিকার ওয়েব-সাইট, ইমেইল আইডি পরিবর্তন করে ফেলার দুঃসাহস দেখায়!

কী আশ্চর্য, এরপরও তিনি আশা করেন আমি এদের সঙ্গে বসে সমঝোতার কথা বলব? বাদাম খাব? আহা, এটা বিস্মৃত হলে চলবে না তো যে আমি নদীর পানি- নদীর পানিতে লোকজন আবর্জনা ফেলে, মলত্যাগ করে, তাতে কী! নদীর পানি তো নদীর পানিই- একে আটকায় এই সাধ্য কার! আমার তো পুকুরের ঝকঝকে পানি হওয়ার কোনো প্রকারের গোপন ইচ্ছা নাই।

স্বপ্নগুলো ভিড় করে, খিলখিল করে হাসে, পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে- স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। গতকালই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া শেষ। আজ ফলাও করে জানিয়ে দিচ্ছি, এই পত্রিকার সঙ্গে আমি আর থাকছি না। এখন থেকে এই পত্রিকার কোনো দায়-দায়িত্ব আর আমার উপর বর্তাবে না।
আমি মহাপুরুষ নই বলেই প্রিয় জিনিস ছেড়ে দিতে কষ্ট হয়। আমারও হচ্ছে, স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান হচ্ছে। হোক। কঠিন মানুষের কাছে জীবনের কঠিন দাবী- এভাবেই প্রিয় জিনিস জীর্ণ বস্তুর মত ত্যাগ করতে হয়। এভাবেই শুরু করার নিয়ম- ক্রমশ এই গ্রহের সবচেয়ে বড়ো রহস্য সবচেয়ে প্রিয় জীবনকেও, ছোট্ট একটা হাসি ঝুলিয়ে ময়লা শার্টের মত ছুড়ে ফেলতে হয়...।

১. একটি স্বপ্ন এবং...: http://www.ali-mahmed.com/2013/10/blog-post.html

Tuesday, February 25, 2014

যেখানে দেখিবে ছাই।



ভরসা করা যা না এমন একজন মানুষ যখন আমাকে বললেন, আমার কাছে পুরান পরতিকা আছে, তখন আমি হেলাফেলা ভঙ্গিতে বললাম, কত পুরনো? তিনি যখন বললেন, অনেক পুরান
আমি এবার রসিকতা করি, কত পুরনো- যখন বড়ো তুফানটা হইছিল, তখনকার?

আমি আর কথা বাড়াই না কারণ এই সব কথার কথা। এর কাছে কাজের জিনিস থাকার প্রশ্নই আসে না। কারণ অনেক ভরসার মানুষকেও যখন সালাম-কালাম শেষ হওয়ার পরই বলেছি, আপনার কাছে পুরনো কি আছে? তিনি আলোকিত মুখে বলেছেন, আছে তো। তখন আমি লজ্জার মাথা খেয়ে কাতর হয়ে বলি, দেন না আমাকে। তখন মানুষটা অম্লানবদনে বলেছেন, ছিল তো, সংগ্রামে লুট হইয়া গেছে। শোনো কথা ব্যাটার।

যাই হোক, পরের দিন এই মানুষটা ঠিক ঠিক বগলে করে একগাদা বিবর্ণ পত্রিকা নিয়ে হাজির হন। ওয়াল্লা, এ তো দেখি সোনার খনি! আমার লোভের চকচকে চোখ লুকিয়ে রাখি যদি মানুষটা এটা দেখে উল্টো হাঁটা দেন, তাহলে উপায়! যাগ গে, এমনটা কিছুই ঘটে না। মানুষটা পত্রিকাগুলো আমার হাতে দিয়ে উদাস হয়ে বলেন, নেন, আরও লাগলে দিমু নে। ওরে মানুষ, যদি জানতে আমার নিরানন্দ জীবনে এমন আনন্দময় ঘটনা কোথায়?

অধিকাংশ পত্রিকাই ১৯৫৫/ ১৯৫৬ সালের। পত্রিকার নাম, তওহীদ। জামাতে ইসলামের সাপ্তাহিক পত্রিকা। দাম? এটা বুঝতে আমার ঘাম বেরিয়ে গেছে। ১০ পয়সা বোঝা যায় কিন্তু এর পূর্বে এই চিহ্নটা কী! অনেক কায়দা-কানুন করে জানা গেল, এটা দুই আনার চিহ্ন। দুই আনা মানে ১২ পয়সা, এর সঙ্গে যোগ হবে ১০ পয়সা। মোট ২২ পয়সা!

মাওলানা ভাসানিকে নিয়ে একটা প্রতিবেদন দেখছি, জনাব ভাসানীর সাহস হইবে কি? বটে রে, জনাব ভাসানীর সাহস হবে কেমন করে! জামাতে ইসলামীর আসল কর্তা এই মওদুদী সাহেবই তো মাওলানা ভাসানীর দাড়ি ছিড়ে ফেলেছিলেন। এটা আমার কথা না, এটা বলেছিলেন, মওদুদীর আপন সন্তান [১]। তিনি আরও বলেছিলেন, কেমন করে লাইনে দাঁড় করিয়ে বাঙ্গালিদেরকে পাখির মত গুলি করা হয়েছিল। ...মওদুদী তার কোনো সন্তানকে জামাতে ইসলামীর রাজনীতি করতে দেননি। মওদুদীর ভঙ্গিটা ছিল এমন, যেমন কোনো ড্রাগ স্মাগলার ড্রাগের পোঁটলাটা বাইরে রেখে আসে, ঘরে প্রবেশ করতে দেয় না, এমন।
বলিহারি...।

 ১. জামাতে ইসলাম এবং ইসলাম!: http://www.ali-mahmed.com/2013/07/blog-post_5646.html 

Sunday, February 23, 2014

বিবেক জেগে আছে...।


সায়েরা বেগমকে নিয়ে গিয়েছিলাম জেলার সদর হাসপাতালে একগাদা টেস্ট করার পর দুইটা টেস্ট দেওয়া হয়েছে ক্যান্সারের উপাদান আছে কি না এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। এটা এখানে হয় না বাইরের একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিরাম নিয়ে ঢাকা থেকে করে আনিয়ে দেবে। অন্তত তিন দিন সময় লাগবে। এটা নিয়ে পরে লিখব।

এই সূত্রে আমার চিনপরিচয় হয় একজন ডাক্তারের সঙ্গে। ডাক্তার সাহেবের নাম ডা. রানা নুরুস শামস। তিনি জেলা সদর সরকারি হাসপাতালের আরএমও- আবাসিক ডাক্তার। সকাল ১০টায় সরকারি হাসপাতালে এই ভদ্রলোককে খোঁজ করার পর জানা গেল তিনি হাসপাতালে নেই। কোথায়? খোঁজ করে জানা গেল, বেসরকারি ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আছেন। এই সরকারি হাসপাতালের ঠিক উল্টো পাশে ২০/২৫ ফিটের মধ্যেই এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থান। আমি যতটুকু জানি, এতো নিকটে কোনো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক বা হাসপাতাল করার জন্য অনুমতি দেওয়ার কথা না।
যাই হোক, গেলাম সেই বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এই ডাক্তার সাহেব ওখানে চেম্বারে অম্লান বদনে রোগি দেখছেন। প্র্যাকটিস বলে কথা- আহা, নইলে হাত পাকাবেন কেমন করে! রোগি ঠেলেঠুলে কথা বলার চেষ্টা। ভদ্রলোকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে আমি কোনো কথা বলব না কারণ অতীতে ডাক্তারদের নিয়ে প্রচুর লেখালেখির কারণে কোনো ডাক্তার আমার চিকিৎসা না-করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এই ভয়ে আমি আতংকিত হয়ে একটা তেলেছমাতি সোলেয়মানি তাবিজের কিতাব কিনেছি। মনোযোগ সহকারে পড়ছি। কুকুর কামড়ালে কি করতে হবে? সোজা! ...আয়াতটি কাসার থালায় পড়ে সাপ, কুকুর বা শিং মাছের দংশিত রোগির পিঠে লাগালে বিষ থাকাকালীন তা পড়বে না। বিষ নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে থালা নীচে পড়ে যাবে (এটি পরীক্ষিত আমল)। খুজলি রোগের ওষুধও যেমন আছে তেমনি প্রেমিকাকে বশীকরণের আশ্চর্য তদবীরও আছে। যাক, সেফ সাইডে আছি ভেবে আরাম-আরাম লাগছে।

তো, তিনি একজন গাইনির সঙ্গে দেখা করার কথা বলে এটাও বললেন, বলবেন রানা স্যার পাঠিয়েছেন  ভাল, নিজেই নিজেকে স্যার উপাধি দিচ্ছেন। কিছু টেস্ট করিয়ে ১১টায় ফিরলাম। স্যার দেদারসে রোগি দেখছেন, ১২ টায়ও স্যার রোগি দেখেই যাচ্ছেন। তেরোটা, আ মিন, ১টার সময় যখন কাজ শেষ করে ফিরে আসছি তখনও স্যার রোগি নিয়ে কস্তাকস্তি করছেন।

কিছু বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না সেটা হচ্ছে, রানা স্যার বেতনভুক্ত কর্মচারি হয়ে অফিস আওয়ারে যে প্রকারে খুল্লামখুল্ল বেসরকরি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রোগি দেখে যাচ্ছেন তাতে করে কোনো প্রকার ভয়, জড়তা তো স্যারের মধ্যে কাজ করতে দেখিনি! এই ছবিটা ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যাবে ডা. রানা পিজিটি করেছেন তিনটা বিষয়ে। আমি যতদূর জানতাম সিভিল সার্জন কর্তৃক পিজিটি বা এফসিপিএস প্রথম পর্ব, শেষ পর্ব লেখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল, এখন কী এটা নেই? এই ছবিটাটায় আরেকটু ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যাবে ওখানে লেখা আছে ডা. রানা রোগি দেখেন প্রতিদিন, সময়-টময়ের কোনো বালাই নেই!

পরের যে ছবিটা সেটায় দেখা যাচ্ছে, এই বেসরকারি ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঠিক উপরেই প্রেস ক্লাব- এখানে জেলার তাবড় তাবড় সাংবাদিদের নিয়মিত আনাগোনা। যাক বাবা, বাঁচা গেল! চিন্তার কিছু নেই- বিবেক জেগে আছে, আমি তাহলে আরাম করে ঘুমাই...।   

Saturday, February 22, 2014

আভূমি নত হই- হে, অমর মানুষেরা।




শিলচরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি ছবি ঋণ: বিবিসি (http://www.bbc.co.uk/bengali/multimedia/2010/05/100519_saassambangla.shtml)
শিলচর রেলস্টেশনের স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি ঋণ: http://en.wikipedia.org/wiki/Shilchar#Language_martyrs
ভাষার জন্য কারা পেরেছে এমন অকাতরে বিলিয়ে দিতে প্রাণ? আমাদের অগ্রজরা পেরেছেন- শহীদ বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর রহমান প্রমূখ । এরা যে কী একটা অসাধারণ কাজ করে দিয়ে গেছেন এটা কল্পনাতেই আসে না। মার মুখের ভাষাটা বলতে না-পারলে কী হতো এটা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। এটা খানিকটা হয়তো আঁচ করতে পারেন সেইসব প্রবাসী যাদের বাংলা বলার তেমন সুযোগ নেই।

আমাদের সেই সমস্ত আগুনমানুষদের পাশাপাশি ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন আসামের ১১ জন বাঙালি তরুণও। ১৯৬১ সালের ১৯ মে অঝোর বৃষ্টিতে গর্জে উঠে আসামের আগুনমানুষেরা, জান দেব, জবান দেব না। এঁরা কেবল বলার জন্যই বলেননি সত্যি সত্যি প্রাণ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন! শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলছিল কিন্তু কোনো প্রকার উস্কানি ব্যতীতই ভারতের আধা সামরিক বাহিনী দুপুরে নির্বিচারে গুলি চালায়। নিহত হন কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র পাল, সুকোমল পুরকায়স্থ, কানাইলাল নিয়োগী প্রমূখ এবং আহত হন অনেকে। 

এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে গোটা ভারত। আসামের শিলচরে বের হয় বিশাল এক শোক মিছিল। শিলচর শ্মশানে আগুন দিয়ে শেষ বিদায় জানানো হয় এই ১১ জন আগুন মানুষকে। আজও সেই শ্মশানে ১১ শহীদের স্মরণে ১১টি স্মতিস্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে।
শিলচর শহরে এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়েও স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ।

এতে কোনো সন্দেহ নেই বায়ান্ন-এর ভাষা আন্দোলন অসম্ভব রকমের প্রভাব ফেলেছিল আসামের সেই সমস্ত মানুষদের উপর। আমাদের অগ্রজেরা যে আগুন জ্বেলে দিয়েছিলেন তা বুক পেতে গ্রহণ করেছিল আসামের মানুষেরা।

আজ আমি মায়ের ভাষায় কথা বলি, ছাইপাশ লিখি, ঝগড়া করি, পাক খেয়ে উঠা দ্রোহকে সামাল দিতে গালি দেই- বাংলায়। আভূমি নত হই তোমাদের সবার জন্য। কেবল চাতকের হাহাকার- যদি, যদি কোনো এক বিচিত্র উপায়ে তোমাদের আগুনের সামান্য স্ফুলিঙ্গও ছিটকে পড়ে আমাদের গায়ে। যদি...।

Monday, February 17, 2014

হাবিবের শৈশব

আজ হাবিবকে (https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151941288182335?stream_ref=10) খেলার মাঝে যেভাবে দেখলাম তাতে করে মনে হচ্ছিল ক্রাচটা তার শরীরেই একটা অংশ।
একে, এদের দেখে কেবল আমার নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ছিল। শৈশব ফিরে আসে, বারবার।

 

Sunday, February 16, 2014

পোষ-আপোষ, আপোষহীন!

পূর্বে একটা লেখা দিয়েছিলাম, ফোর-হুইল, থ্রি-হুইল, টু-হুইল যেটায় আপনার ভাল লাগে, তবুও যান মাদাম, দোহাই লাগে তবুও যান।" কিন্তু আপোষহীন নেত্রী যাননি!

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন এসেছিলেন তখন খালেদা জিয়া হরতালের অজুহাতে দেখা করেননি। সেদিন জামাতের হরতাল চলছিল। এখন এই দেশের একটা শিশুও জানে বিএনপির ছেনেহের হাত না-থাকলে জামাতের পক্ষে হরতাল দেওয়া বা পালন করা সম্ভব না। খালেদা জিয়া এক ইশারাতেই সেদিনকার হরতাল বাতিল করা সম্ভব ছিল। অথচ তিনি তা করেননি। এবং এই অজুহাতে ভারতের রাষ্টপতির সঙ্গে দেখা করেননি।
অথচ এমনতরো সাক্ষাৎকার বহু পূর্বেই স্থির হয়ে থাকে।

সফরকালে জামাইবাবু প্রণব ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। কিন্তু জামাইবাবু বলে তাঁকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ ছিল না। এটা যে অসম্ভব বাজে রকমের একটা শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ এবং ভয়ংকর পদক্ষেপ এটা জানার জন্য দুঁদে রাজনীতিবিদ হওয়া লাগে না। ভারত যে এই প্রচন্ড অপমান বিস্মৃত হবে এটা ভাবারও কোনো অবকাশ ছিল না। যথাসময়ে যে এরা এর শোধ নেবে এতো আর বিচিত্র কিছু না।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি ভারতকে উপেক্ষা করে পশ্চিমা দেশগুলোর  উপর ভরসা করেছিল কিন্তু এরা ভুলে গিয়েছিল এখন ভারত হচ্ছে সেই উটকো প্রতিবেশির মত যার এখন দবদবার শেষ নাই। অন্যের সামনের দরোজা পেছনের দরোজা সবই যার চেনা। ইচ্ছা করলেই যারা সীমান্তে পাখির মত গুলি করে এদেশের লোকজনকে মেরে ফেলতে পারে। বিএনপি এটাও ভুলে গিয়েছিল সবই বিজিনেস, নাথিং এলস। সবাই বোঝে ব্যবসা। কোন দল ক্ষমতায় এটা এদের কাছে মূখ্য না।

খালেদা জিয়া সবই বুঝলেন কিন্তু বড় দেরিতে। নো-হুইল, যখন তার গাড়ির কোনো হুইলই আর অবশিষ্ট নাই! এখন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মার্চে ভারত সফরে যেতে। পোষ মানাতে চাইছেন আপোষহীন মনোভাবকে। 

Saturday, February 15, 2014

ভারত, বাহুত বাড়া গণতান্ত্রিক কান্ট্রি!

এটা শুনে শুনে কানের পোকা নড়ে গেছে যে ভারতের গণতন্ত্রের চর্চা অনেক পুরনো। বটে রে, এর নমুনা তো হালেই দেখলুম। ভারতের লোকসভায় বেজায় মারামরি হলো যে। কেবল মারামারি! ছুঁরি দেখানো, টেবিল-মাইক ভাঙ্গাই না; গোল মরিচের গুঁড়াও নিক্ষেপ করা হয়েছে। অবশেষে বেশ ক-জন সংসদ সদস্যকে এম্বুলেন্সে চ্যাংদোলা করে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হলো।

মরিচের গুঁড়া ছিটানোর বিষয়টা আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। আচ্ছা, তাহলে দাদারা কী মরিচের গুঁড়া ধুতির খুঁটে করে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিলেন? বেশ-বেশ! এমনিতে দাদারা কী ভেবে গোলমরিচ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন যে লোকসভায় নিজেরাই নিজেদের ইয়ে ভেজে খাবেন? শেষে নিজেদের ইয়ে খুঁজে না-পেয়ে মনের দুঃখে ছিটিয়ে দিলেন। তাই হবে। 

অবশ্য এমনিতে দাদারা পরম সহিষ্ণু। এরা নিজেরা না-খেয়ে ফেনসিডিল আমাদের দেশে পাঠিয়ে দেন। যেমনটা পাঠান মেয়াদ উত্তীর্ণ দুধ। নিজেদের শহরের সমস্ত বর্জ্য দিয়ে ভাসিয়ে দেন আমাদের দেশ [১]। নো ম্যানস ল্যান্ডে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে কাঁটাতারে বেড়া দিয়ে মুড়িয়ে দেন। আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করেন [২] সামান্য টাকা দিয়ে আমাদের দেশে নিজেদের জন্য আলাদা দুই দুইটা রেললাইন পেতে ফেলেন। কত্তো উপকার যে করেন আমাদের দাদারা সে লিখে শেষ করা যাবে না।

বুঝলেন, আমি গোলমরিচ নিয়ে ভারী চিন্তায় আছি। এরা তো রাশি-রাশি মলও বহন করেন- ভাগ্যিস, সেটা ছিটিয়ে দেননি। সম্ভবত ধুতির খুঁটে আটকে গিয়েছিল।

সহায়ক সূত্র:
১. দাদাদের দান: http://www.ali-mahmed.com/2014/01/blog-post_14.html

Friday, February 14, 2014

বনের পাখি, উড়ে যায়



হাবিবকে [১] আমি খুঁজছি দুদিন ধরে, হন্যে হয়ে। জানি না একে ক্রাচের ব্যবস্থা করে দিয়ে ভালোর মন্দ করলাম কিনা! ওর ক্রাচ আমার লম্বা পা-কে ছাড়িয়ে যায়। হাবিব উড়ে উড়ে বেড়ায়। আহা, ওর নাগাল পাওয়াটাই যে দুস্কর হয়ে পড়ল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে একে দেয়া এন্টিবায়োটিক অষুধ বুক-পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমি কোনো গাতক নই নইলে নির্ঘাত একটা গান বেঁধে ফেলতাম। ঘুরছি আমি, এদিক-ওদিক, বুক-পকেটে নিয়ে একগাদা ও-ষু-ধ

এমনিতে হররোজ স্টেশনে একবার চক্কর লাগাই কিন্তু গত দুদিন ধরে কয়েকবার করে চরকির মত ঘুরতে হচ্ছে। ফল শূন্য! গতকাল নাকি হাবিবকে দেখা গেছে ট্রেনে করে ঢাকার দিকে যেতে। যাওয়ার আগে নাকি (ভাত বিক্রেতা মহিলার কথামতে) তাকে গান গাইতেও দেখা গেছে! আমি খানিকটা আঁচ করতে পারি এ তো বিচিত্র কিছু না। যার কাছে গোটা বাংলাদেশই নিজের তার কাছে ছোট্ট একটা জায়গায় আটকে থাকা কেন!

আমি যে পূর্বে লিখেছিলাম, ...আমি আমার অল্প জ্ঞান নিয়ে এই শিশুটির মনঃসমীক্ষণ বোঝার চেষ্টা করছিলামব্যর্থ চেষ্টা- এই নিতল কুয়ায় দেখার ক্ষমতা আমার নাইআমি কেবল ভাবার চেষ্টা করছিলাম, বাবুলের কাছে জীবনটা কেমন?... অনেকে হয়তো এটা পড়ে হাসি গোপন করেছিলেন, ধুর, বাপুরে, একটা শিশুর মনের ভাব বোঝার আবার কী আছে! আমি সলাজে স্বীকার যাই, আমার বোঝার তেমন ক্ষমতা নাই কিন্তু অতীতে এদেরকে নিয়ে খানিকটা কাজ করার সুবাদে আমি জানি ব্যাপারটা কত দুরূহ। অনেকটা বনের পাখিকে পোষ মানাবার মত। আমার কারণে হাবিবের চেনা ভুবনটা খানিকটা তছনছ হওয়ায় আমি এর কাছে উপদ্রব বিশেষ, যন্ত্রণা।

বনের পাখি ফেরে, কি ফেরে না আমি জানি না! কেবল তীব্র আশায় থাকি পথভুলে পাখি ফিরবে। এর প্রতি আমার ভালোবাসায় খাদ না-থাকলে এও হয়তো ফিরে আসবে। ফিরবে কী! নাকি কারো-কারো কাছে অসহ্য ভালোবাসা সহ্য হয় না? জানি না-জানি না, জানি না আমি...।

*ঝাড়া তিন দিন পর হাবিবকে পেয়েছি ঠিক এই অবস্থায়, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন:

আমাকে দেখার পর আমি এর মনের ভাবটা খানিকটা বুঝতে পারছিলাম, আরি, এই যন্ত্রণা দেখি আবারও হাজির হয়েছে :)

সহায়ক সূত্র:
১. জীবন তোকে চাবকে দিলাম: http://www.ali-mahmed.com/2014/02/blog-post_12.html   

Wednesday, February 12, 2014

জীবন, তোকে চাবকে দিলাম



আহ জীবন লেখাটায় লিখেছিলাম [১], এই শিশুটির কাছে জীবনটা কেমন? আজ খানিকটা বুঝতে পারি। এই প্রসঙ্গে পরে আসছি।
প্রথমেই একটা তথ্যগত ভুলের বিষয়ে বলে নেই। এর নাম বাবুল না, হাবিব। আমার দুর্বল স্মৃতিশক্তি বা এ ভুল নাম বলেছিল- কোনোটাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ একে নামটা জিজ্ঞেস করার পর উত্তর দিতে অনাবশ্যক দেরি করেছিল। যেন নামে কী আসে যায়- এর নিজের নাম বলতেও ভারী আলস্য। কেমন করে হাবিব নামটা জানলাম সেটা বলি।
 এর একটা ক্রাচের ব্যবস্থা হলো যা হোক। দুয়েক বার উল্টে পড়ল কিন্তু অনেকক্ষণ এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করে বেশ রপ্ত করে ফেলল। আমি পূর্বেই লক্ষ করেছিলাম এ গা খুব নোংরা। এর সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হয় খুব সাবধানে কারণটা পূর্বেই বলেছি, এর ভুবনটা হয়ে আছে এলোমেলো।
আমি উদাস হয়ে বললাম, আচ্ছা, গোসল করলে কেমন হয়?
এ বলল, তুমি করবা?
এ আমাকে অবলীলায় তুমি-তুমি করে বলে। কোনো জড়তা নেই, আড়াল হয়ে থাকে নিখাদ তীব্র দাবী।
আমি আরও উদাস হয়ে বলি, নাহ, আমি না তুমি করবা
এ বলল, কেমনে করব? পা নাই, পুকুরে তো ডুইবা যাব
এ সুযোগ হারাতে দেওয়া যায় না। আমি হড়বড় করে বললাম, আরে নাহ, পুকুরে না। স্টেশনে গোসল করার জায়গা আছে
এ নিজে নিজেই গোসল করে। নিজের কাপড় কাচে।

স্টেশনে ভাত বিক্রি করে এমন একজন মহিলার কাছে একে রেখে চলে আসতে হলো কারণ সায়েরা বেগম [২] কী কারণে জানি অনেক দূর থেকে চলে আসছেন, আমার সঙ্গে তাঁর নাকি কি এক কাজ আছে।
একটু পরেই দেখি দুজন খেটেখাওয়া সহৃদয় মানুষ ধরাধরি করে এই শিশুটিকে নিয়ে আসছেন। দরদর করে এর মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। ঘটনাটা জানা গেল। এ খেতে বসেছিল। অসতর্ক এর হাতধোয়া পানির সামান্য ছিটা নাসির নামের একজন মানুষের গায়ে পড়েছিল। এই সামান্য কারণে ওই আজিজ নামের মানুষটা এই শিশুটির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি জীবনে এমন হতভম্ব কমই হয়েছি। এতো সামান্য কারণে, এর মতো একটা শিশুর মাথা ফাটিয়ে ফেলতে পারে পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ!

যাই হোক, একে ধরাধরি করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলো। সেলাই দেওয়া প্রয়োজন হলো। তখন কাগজে নাম লেখার প্রয়োজন হলে, নামটা জানা গেল, হাবিব।
পরে নাসির নামের ওই অমানুষটাকে তন্নতন্ন করে খোঁজা হলো। কিন্তু ওই শুয়োরের বাচ্চা উধাও হয়ে গেছে। জিআরপি ওসি আমাকে কথা দিয়েছেন, ওই হারাজাদাকে দেখামাত্র ধরে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
বিকেলে যখন হাবিবের সঙ্গে দেখা হলো তখন এর মাথার ব্যান্ডেজটা মনে হচ্ছিল যেন এটাও তার শরীরের একটা অংশ! শেষ যে ছবিটা এখানে আমি যোগ করছি এটা দেখে আমার কেবল মনে হচ্ছিল, সুমনের পাগলটা সাপ-লুডু খেলে বিধাতার সঙ্গে তবে হাবিব সাপ-লুডু খেলে কিনা জানি না; কেবল এটা জানি, হাবিবের কাছে জীবনটা হচ্ছে নস্যি-তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া। অনেকটা কাপড় কাচা বা বাতিল পুতুলের মত...।
...
চার দিনের মাথায় নাসিরকে ধরা হয়েছে। কখনও-কখনও জঙ্গলে চলে জঙ্গলের আইন...
এই সেই কুখ্যাত নাসির
সহায়ক সূত্র:
১. আহ, জীবন: http://www.ali-mahmed.com/2014/02/blog-post_11.html
২. সায়েরা বেগম: http://www.ali-mahmed.com/2013/12/blog-post_16.html