Search

Thursday, September 4, 2014

পাপ!

আলতাফ মাহমুদ। অনেক পরিচয়ে সমৃদ্ধ। আলাদা করে যার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই ভাষা সৈনিক ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটির সুরকার হিসাবেই অমর হয়ে থাকবেন।
১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট এই মানুষটি হারিয়ে যান। পাকিস্তানি বাহিনী চোখ বেঁধে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয় কিন্তু সেই নির্যাতন কেমনতরো ছিল তা কী আমরা জানি? অন্যদের কথা জানি না কিন্তু আমার জানা ছিল না। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাঁকে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করা হয়েছিল। এরপরই তাঁর মৃত্যু হয়।

আহ, চোখ বন্ধ করে আমি কেবল খানিকটা আঁচ করার চেষ্টা করছি। আলতাফ মাহমুদের মস্তিষ্ক কতক্ষণ ধরে সচল ছিল? টগবগ করে ফুটতে থাকা পানিতে হাড়-মাংস সেদ্ধ হচ্ছে- এই অন্য ভুবনের সহ্যাতীত কষ্ট কতটা সময় ধরে এই মানুষটা সহ্য করেছেন। শারিরীক কষ্টের একপর্যায়ে নাকি মানুষ চেতনা হারিয়ে ফেলে- তখন কী কষ্টটা খানিকটা লাঘব হয়? জানি না, জানি না আমি। এই নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না। আমার মস্তিষ্ক নিরাপদ দূরত্বে থেকেও এই সহ্যাতীত বেদনার ভার নিতে চাচ্ছে না।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক শওকত ওসমান নিয়ম করে দিনলিপি লিখতেন। ১৯ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের তাঁর দিনলিপির পাতায় তিনি লিখেছেন: “...সুরকার আলতাফ মাহমুদের মৃত্যুর আরেকটা সুলুক পাওয়া গেল। ক্যান্টনমেন্টের ডাক্তার এই তথ্য যুগিয়েছেন। তাঁর উপর অকথ্য শারিরীক নির্যাতন চালায় জালেমেরা বেশ কয়েক দিন ধরে। পরে গরম পানিতে সিদ্ধ করে তাঁকে মারা হয়।...” 

আলতাফ মাহমুদ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। তাঁর বাসা মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানা ছিল। তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে উঠোনে চাপা দেওয়া বড়ো ট্যাংকে স্টেনগান, গুলি এবং অন্যান্য অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল। যা তাঁর জন্য কাল হয়েছিল। শওকত ওসমান খানিকটা অন্য মতও ব্যক্ত করেন যার সঙ্গে আমিও একমত। শওকত ওসমান দিনলিপিতে লিখেছিলেন: “...কিন্তু যারা অমন ঝুঁকির মুখে আলতাফ মাহমুদকে ঠেলে দিয়েছিল তারা ভাল কাজ করেনি। প্রতিভা তো বছর বছর জন্মায় না। ওরা এ কথা মনে রাখলে এই অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে বাংলাদেশ মুক্ত থাকত।...” 

আমি অতীতে বারবার বলে এসেছি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আদৌ সেনাবাহিনী ছিল না, এরা ছিল সাইকোপ্যাথ। এদেরকে যোদ্ধা বলতে আমি নারাজ। যুদ্ধের প্রয়োজনে বা তর্কের খাতিরে ধরে নেই অপ্রয়োজনেও কাউকে মেরে ফেলা এক কথা কিন্তু এরা যে ভঙ্গিতে খুনগুলো করেছে তা কখনই মানুষের আচরণ হতে পারে না। হালে আমরা প্রযুত্তির কল্যাণে পৃথিবী জুড়ে নৃশংসতার যে সমস্ত নমুনা দেখে হতভম্ব হই, বাকরুদ্ধ হই, থরথর করে কাঁপি; ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড দেখার সুযোগ থাকলে অনায়াসে বুঝতে পারতাম এখনকার নৃশংসতাকেও তা অনায়াসে ছাড়িয়ে যেত। পাকিস্তানিরা যা করেছে এ স্রেফ পাপ। বলা হয়ে থাকে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। কে জানে হয়তো সেই পাপের মাসুলই দিচ্ছে এরা...।

No comments: