Search

Monday, April 14, 2014

নতুন বছর, তোমার কাছে...



পূর্বের লেখায় বলেছিলাম এর কথা পরে বলব [১]। এর নাম সুমাইয়া। এমন চমৎকার নাম কে রেখেছে কে জানে! এর খোঁজ আমাকে দিয়েছিলেন জসীমের মা। জসীমের মার নাম আমি জানি না! সবাই বলে জসীমের মা, আমিও বলি জসীমের মা।
জসীমের মা আমাকে জানিয়ে ছিলেন, এই মেয়েটা নাকি বিচিত্র। কুকুরের সঙ্গে এর সখ্যতা। কুকুরের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে, কুকুরকে জড়িয়ে ধরছে। সত্য-মিথ্যা বলতে পারব না কারণ আমি নিজের চোখে দেখিনি।


প্রায় ১০/১৫ দিন ধরে একে স্টেশনে দেখছি। বিস্তারিত জানতে ইচ্ছা করেনি। কেবল এটুকুই জানি এর বাবা-মা কেউ নেই! ৫/৬ বছরের এই মেয়েটা একা-একা থাকে।
প্রথম দিকে জসীমের মাকে বলে-কয়ে একে দেখে রাখার জন্য বলেছিলাম। জসীমের মার সঙ্গে এর হৃদ্যতা দেখে চোখ ভরে গিয়েছিল। জসীমের মার সঙ্গে লেখার ছবিটায় এর এক অংশও আসেনি! ক্যামেরা নামের যন্ত্রের সেই ক্ষমতা কই। যেদিন এর চুলের জন্য এটা-সেটা নিয়ে গিয়েছিলাম সেদিনই কে যেন এর মাথা কামিয়ে দিল। মনের দুঃখে জসীমের মা এর জন্য নিয়ে যাওয়া চুলের জিনিসপত্র নিজের মাথায় পরে নিয়েছিলেন।
কপাল, জসীমের মা এখন আর এই এলাকায় নেই। মেয়েটি আবারও একা হয়ে পড়ে।

এর দেখভালের জন্য যেমন-তেমন একটা উপায় খুব জরুরি হয়ে পড়ে। এই ছোট্ট মেয়েটার অন্ধকার ভুবন সম্বন্ধে বোঝার ক্ষমতা একেবারেই নেই। জসীমের মার কাছেই শুনেছিলাম এ ছেলেদের সঙ্গেও সমান তালে খেলে, মেলামেশা করে, ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ে। যা তার জন্য অসম্ভব ঝুকিপূর্ণ।

স্টেশনেরই এক মহিলা, জান্নাতের মা (জান্নাত, এদের এমন চমৎকার নাম রাখাটা আমাকে চমৎকৃত করে) অনেক বলে-কয়ে এটা-সেটার লোভ দেখিয়ে খানিকটা দাদাগিরি করে অন্তত এটুকু রফা করা গেল যে, এই মেয়েটি রাতে জান্নাতের মার কাছে ঘুমাবে। এই ব্যবস্থাটাই এখন পর্যন্ত চলে আসছে। কিন্তু এটা যে কোনো স্থায়ী সমাধান না এ আমি বিলক্ষণ জানি। আমার বুদ্ধিশুদ্ধি গুলিয়ে যায়, লজ্জায় নিজেকে পোকা-পোকা লাগে এরচেয়ে ভাল কোনো ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না বলে।
এর জন্য আর্থিক সহায়তাটা এখন জরুরি না, যেটা জরুরি সেটা হচ্ছে একটা নিরাপদ আশ্রয়। নতুন বছরের কাছে আপাতত আমার এটাই চাওয়া...।

আমার বিরুদ্ধে কঠিন অভিযোগ আছে যে আমি বিভিন্ন জনের অন্ধকার দিক নিয়ে কথা বলি। হবে হয়তো! তবে আমি যে নিজের অন্ধকারের পশুটার গায়ের গন্ধটাও বেশ টের পাই। যেমন আমি প্রতিদিনই অপেক্ষায় থাকি সুমাইয়া নামের মেয়েটি কোথাও চলে গেলে দায় এড়িয়ে আরামের শ্বাস ফেলব। কিন্তু আমার মুখে ছাই দিয়ে সুমাইয়া দিব্যি আছে। এই যেমন আজ সকালে দেখি সুমাইয়া এবং জান্নাত কুড়িয়ে পাওয়া ছেঁড়া জুতা প্রাণপনে টানাটানি করে পরার চেষ্টা করছে। জান্নাতকে কে যেন দিয়েছে জামাটা ঢলঢলে জামাটা গায়ে দিয়ে দিব্যি খুশি। ঘটনা কিছুই না- পহেলা বৈশাখের ছোঁয়া লেগেছে এদের মাঝেও।

   
১. http://www.ali-mahmed.com/2014/04/normal-0-microsoftinternetexplorer4.html