Search

Monday, November 25, 2013

শৈশব ফিরে পাই, বারবার!

জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছিলাম রাস্তার পাশে, বিশাল সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটাকে। যে গাছটার সঙ্গে শৈশব-কৈশোর-যৌবনের অজস্র স্মৃতি জড়াজড়ি করে ছিল। কতশত স্মৃতি! আর যখন ফুলে ছেয়ে যেত তখন মনে হতো কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে! হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম। কী অপার্থিব এক সৌন্দর্য!

কিছু দিন আগে দেখলাম, গাছটা ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। শেষমেশ গাছটা মরেই গেল। একদিন গোড়াশুদ্ধ উপড়েও পড়ল। পাশ দিয়ে হেঁটে যাই- মৃত বিশাল গাছটা পড়ে থাকে তার অসংখ্য ডালপালা নিয়ে। একদিন...। একদিন চোখে পড়ে অদ্ভুত এক দৃশ্য! বিশাল গাছটার ডালপালার ছোট্ট একটা অংশ, কেমন যেন, অন্য রকম! মনে হচ্ছিল, দু-হাত দুপাশে ছড়িয়ে...অনুভূতিটা লিখে বোঝানো অসম্ভব, অন্তত আমার পক্ষে। অবশ্য গাছটার সঙ্গে যে খানিক বাতচিত হয়নি এই মিথ্যাচার করব না। তবে সঙ্গত কারণেই সেই আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। কারণ...?

এমনিতেই আমার বিভিন্ন কর্মকান্ডে কেউ-কেউ পশ্চাতে বলার চেষ্টা করেন আমার ব্রেনে নাকি সমস্যা আছে। এদের উপর আমার ভারী রাগ হওয়ারই কথা কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ হই। কারণ আমার ধারণা ছিল, আদৌ ব্রেন নামের জিনিসটাই আমার নাই। এদের কথায় খানিকটা ভরসা পাই। যাক, এক চা-চামচ সমান হলেও জিনিসটা আছে নইলে গোলমাল হয় কেমন করে!

বিশাল এই গাছের ছোট্ট এই অংশটুকুর জন্য আমি অস্থির হয়ে গেলাম। এটা পেতে অন্য রকম সমস্যা ছিল- এটার জন্য আমাকে বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে, লজ্জার মাথা খেয়ে একে-ওকে ধরাধরিও করতে হয়েছিল। যাক, অবশেষে কেবল এই অংশটুকু পাওয়া সম্ভব হয়েছিল।
ছোট্ট-ছোট্ট করছি বটে কিন্তু এই অংশটুকু নিয়ে আসতে কালঘাম বেরিয়ে গেল। সম্ভবত গোটা আষ্টেক লোকজনের সহায়তা নিতে হয়েছিল।
আমার বাসার সামনে যে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে এটার মাঝখানে এটাকে বসিয়ে দেয়া হলো। প্রথম দিকে দেখতে ভাল দেখাত না, কেমন ন্যাড়া-ন্যাড়া। ছি! অবশ্য এখন আর ন্যাড়া ভাবটা নেই।
বেচারা অনড়, রা নেই- তাতে কী! একে দেখলে যে আমি আমার হারানো শৈশব ফিরে পাই...।        

Saturday, November 23, 2013

জননী!


আজ স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছিআমার প্যান্টে টান পড়লে আমি ফিরে দেখি এই শিশুটিকেতার সোজাসাপটা প্রশ্ন, তোমার কাছে টেকা আছে?
আমি বললাম, থাকলে!
সে একগাল হেসে বলে, ভাত খামু
আমি বললাম, তোমার না কি?
তার ষ্পষ্ট উত্তর, রাজু মস্তান
তার বলার ভঙ্গি নামের বিশেষত্ব আমাকে চমকে দেয়আমি হাসি লুকিয়ে বলি, তুমি দেখি বিরাট মস্তান!
তার উত্তর,
আমি এইবার তাকে বললাম, তোমার মা কই?
সে একজন মহিলাকে দেখিয়ে বলে, ওইডা আমার মা
সে যে মহিলাকে দেখিয়ে দিলো একে আমি চিনিকারণ ওভারব্রিজের নীচে একে প্রায়ই শুয়ে থাকতে দেখেছিএর সঙ্গে কখনও কোনো শিশুকে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না

যে মহিলা স্টেশনে ভাত বিক্রি করে একে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি ওই মহিলার ছেলে?
তার কাছ থেকে যেটা জানা গেলএই রাজুর গল্পটা সহজ-সরল না, নেকখানি আঁকাবাঁকারাজুর মার মাথা এলোমেলো ছিলতার জন্মের শিশুটিকে (এই মহিলার ভাষ্য অনুযায়ী) মেরে ফেলে এরপর রাজুকে ফেলে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না! এরপর থেকে রাজু এই মহিলার কাছে থাকে, এই মহিলাটিকেই 'মা' ডাকে

আমি চুপ করে শুনে যাইতিনি আরও কীসব বলছিলেন কিন্তু আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম নাকেবল আমার মাথায় ঘুরপাক খায়, রাজুকে এখন দেখভাল করছেন যে মহিলা তিনি নিজেই অসুস্থ! পূর্বেই বলেছি, প্রায় সময় আমি তাঁকে দেখেছি ওভারব্রিজের নীচে শুয়ে থাকতেকখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি তাঁর দিন চলে কেমন করে? অথচ কী অবলীলায় এই শিশুটিকে তিনি কোলে তুলে নিয়েছেন

আমার মত ভদ্দরনোকের ভাবাভাবি করেই দিন পার হয়- এঁর এতো ভাবার সময় কোথায়!

Friday, November 22, 2013

একজন ‘পাইপমানুষ’!

আমার এক সুহৃদ আমার লেখালেখি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকেন। তার এই উদ্বেগ অনেক গুণ বেড়ে গেল যখন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধ্যাদেশ-২০১৩ আইনটার অনুমোদন দেয়া হলো। ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে। একজন পুলিশ বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে এসে কাউকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেলে ‘কিসসু’ করার নেই।
এটা স্রেফ একটা কালো আইন- কোনো প্রকারেই এই আইনটাকে আইন বলা চলে না, কারো হাত-পা বেঁধে সাঁতরাবার প্রয়াস মাত্র। প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য এমন আইন করা হলে এরা সবাই একাট্টা হয়ে তুলকালাম করে ফেলতেন। কিন্তু এই আইনটার বেলায় এরা ঝিম মেরে রইলেন!


কারণটা সম্ভবত এমন, ওয়েবে যারা লেখালেখি করেন এরা তাদের বাড়া ভাতে ছাই দেয়ার চেষ্টা করছেন। ওয়েবে লেখালেখি, বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়া ক্রমশ নিজেদের জন্য হুমকি মনে করছে। তাদের ‘পাছাভারী’ ভাবটা হালকা হয়ে যায় যে। এটা সত্য, ইলেকট্রনিক-প্রিন্ট মিডিয়ার কাউকে-কাউকে নিয়মিত বেতন পেতে সমস্যা হয় কিন্তু এই ভুবনেরই কাউকে-কাউকে আশি লাখ টাকার গাড়ি হাঁকাতেও দেখা যায়! একটা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধানকে এমনিতে লম্বা-লম্বা কথা বলতে শুনি। অথচ এই মানুষটার কারণে ওখানে চাকুরিরত এক মহিলাকর্মীকে নিয়মিত মনোবিদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। কারণটা সহজেই অনুমেয়...।

যাই হোক, সেই সুহৃদ, বিচিত্র কারণে আমার মত মানুষের জন্য তার বাড়াবাড়ি রকমের মমতা- এমন মমতায় মাখামাখি হয়ে অন্য ভুবনে যেতে ইচ্ছা করে না যে। তিনি আমাকে দু-দিন আগেও বলছিলেন, দেশের শক্তিমান মানুষদের নিয়ে না-লিখলেই ভাল। সেফ...।
এটা সত্য, আমি খুব দুর্বল একজন মানুষ কিন্তু লেখার সময় যা লিখতে যেটা মন সায় দিয়েছে, তাই লিখেছি। কারণ যখন লিখতে বসি তখন আমার নিজের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না- জাগতিক কোনো ভয় তখন কাজ করে না।


কিন্তু এখন কেন যেন দেশ, বড়-বড় সমস্যা নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করে না। আমার মধ্যে এখন যে ভাবনাটা কাজ করে সেটা এমন, শত-শত টন নিউজপ্রিন্টে লিখে বা ওয়েব তথ্যের ভারে তার কাত হয়ে গেলেই বা কী? এই দেশে ‘দুইজন ভদ্রমহিলা’ যেটা চাইবেন, যা চাইবেন; সেটাই হবে- এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো যো নাই। এই সব নিয়ে লেখাটা এখন আমার কাছে অপচয় মনে হয়, শব্দের অপচয়! এটা আমার নিজস্ব মত। কারো অন্য মত থাকলে তার সঙ্গে আমি তর্ক করতে যাব না।

আমি বরং ছোট-ছোট বিষয় নিয়েই থাকি না কেন। এই ছেলেটির সঙ্গে পরিচয় খানিকটা অন্য ভাবে। এই মাসের ১৫ তারিখে পত্রিকা বের হলো, (যেটার সঙ্গে আমি জড়িত)। রেল-ইস্টেশনে পত্রিকা বিতরণকারীদেরকে পত্রিকা বুঝিয়ে দেয়ার পর আমার হাতে বেশ কিছু বেঁচে যাওয়া পত্রিকা। একটা ট্রেন তখন স্টেশনে দাঁড়ানো। একজন যাত্রী কিছু একটা কিনতে স্টেশনে নেমেছিলেন সম্ভবত। আমার হাতে পত্রিকা দেখে বললেন, ‘আপনি কি পত্রিকা বিক্রি করেন’?

আমি হ্যাঁ-না কিছুই বললাম না। অসুখের কারণে প্রচুর ওজন কমেছে কিন্তু আমার চেহারায় যে হকার-হকার ভাব চলে এসেছে এটা জানা ছিল না। কী আর করা, কপালের ফের!
হঠাৎ আমার মনে পড়ল, ছুটির কারণে আজ সমস্ত জাতীয় পত্রিকা বন্ধ। ভাল একটা সুযোগ তো। আমি একটা ছেলেকে দাঁড়ানো দেখে তাকে বললাম, ‘তুমি কি গাড়িতে পত্রিকা বিক্রি করতে পারবা। অর্ধেক তোমার, অর্ধেক আমার’। ছেলেটা বেশ কিছু পত্রিকা বিক্রিও করে ফেলল।


তার সঙ্গে কথা হলো। আমাদের দেশের জন্য খুবই সহজ-সরল গল্প! মা মারা গেছেন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। চট্টগ্রাম থেকে এই বাচ্চা একা-একা এখানে চলে এসেছে।
আমি যে স্কুলটা চালাই এটার টিচারকে কাল বলেছিলাম, একে যেন স্কুলে নিয়ে যায়। কাল এই বাচ্চাটার নাগাল পাওয়া গেল না। টিচার কচ্ছপের মত লেগে রইলেন। আজ একে ঠিক-ঠিক পাকড়াও করলেন। একে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার দুইটা উদ্দেশ্য ছিল আমার। স্কুলটার নিয়ম হচ্ছে, এক ঘন্টার মধ্যে আধাঘন্টা খেলা, আধাঘন্টা পড়া। এই বাচ্চাটার ভুবন এলোমেলো হয়ে আছে। খেলার ছলে খানিকটা চেষ্টা করা। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে, এর সঙ্গে একটা যোগাযোগ থাকা।


স্কুলে সব বাচ্চাদের ছবি রাখার চেষ্টা করি- আজ স্কুলে যখন এর ছবি উঠাচ্ছিলাম তখন একবার আমি বললাম, ‘মুখটা এমন কইরা রাখছ ক্যান, একটু হাসো’।
ও হাসে- আমি মুগ্ধ চোখে এর হাসি দেখি। আমার হাসি ক্রমশ মিলিয়ে যায় যখন জিজ্ঞেস করি, ‘দুপুরে খাইছ’?
বাচ্চাটা এমনিতে খুব কম কথা বলে। দুয়েক বার জিজ্ঞেস করার পর বলল, ‘না’। যখন জানতে চাইলাম, ‘সকালে কি খাইছ’? এ চোখ নামিয়ে বলল, ‘সকালে কিছু খাই নাই তো’।

আমার আগেও এই অনুভূতিটা কাজ করেছে- আজও এটা ফিরে এলো। মাঝে-মাঝে নিজেকে মানুষ বলে মনে হয় না। মনে হয়, আমি স্রেফ একটা ‘পাইপমানুষ’! যে পাইপের এক পাশে, যার চালু নাম খাবার- অন্য পাশে আবর্জনা! খাবার...ভদ্রতা করে বললাম বলে নইলে খাবার না ছাই- মস্তিষ্ক খাবার নামে চেনে বলে নাহলে এও এক প্রকার বর্জ্য। গোটা গ্রহ বর্জ্যময়!


আমি একটা ‘পাইপমানুষ’ এই বাচ্চাটার জন্য কী করব তাই বুঝতে পারছি না- আর আমি 'শ্লা' কিনা মাথা ঘামাব বড়-বড় সমস্যা নিয়ে...! আফসোস, আমার মৃত্যুর পর ঠিক-ঠিক এটা ছড়িয়ে পড়বে, 'একটি বর্জ্য উৎপাদনকারী যন্ত্র বিনষ্ট হলো...'।

Tuesday, November 19, 2013

দুই লক্ষ পেজ-ভিউ এবং গভীর কৃতজ্ঞতা...

ওয়েবে আমার লেখালেখির শুরু সামহোয়্যারইনব্লগে- তখন সম্ভবত ওখানে আমার হাজার খানেক পোস্ট ছিল। আমাদেরকে বাংলায় লেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি ওই সাইটটির প্রতি বিভিন্ন জায়গায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। কিন্তু নীতিগত কারণে ওখানে থেকে সরে যেতে হলো। আমার সমস্ত লেখা মুছে দিয়ে কেবল একটা পোস্ট রয়ে গেল যেটায় আমি আমার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে চলে এসেছিলাম। ওই পোস্ট এখনও ওখানে ঝুলে আছে।

এরপর আরও কিছু কম্যুনিটি ব্লগে বেশ কিছুদিন লিখলাম। কোথাও থিতু হতে পারলাম না। কারণ বিভিন্ন কারণে বনিবনা হচ্ছিল না। এর প্রধান কারণ 'দলবাজি'। এই বিষয়ে আমার সাফ কথা, ভাল লাগলে তালি, মন্দ লাগলে গালি।
তাছাড়া আমি কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণে থাকতে আরাম বোধ করি না। বা ফরমায়েসী লেখা লিখতে পারি না কারণ এই ক্ষমতাটাই না আমার। এই সব করে-করে ক্রমশ হয়ে পড়লাম দলছুট!

এরপর বেশ কিছুদিন ওয়ার্ডপ্রেসে নিজের একটা সাইট করে ওখানে লিখলাম। পরে ব্লগার (ব্লগস্পট) পছন্দ হলো, লম্বা একটা সময় ব্লগস্পটে লিখলাম। দেশে থেকে গুগলে একটা ডোমেইন কেনার অনেক হ্যাপা। পে-পলে কেনা লাগে, দেশে আবার পে-পলে কীসব ছাতাফাতা সমস্যা!
কেউ-কেউ আমাকে চমকে দেন- একেবারে হাঁ হয়ে যাই। একদিন দেখি মাহবুব সুমন, www.ali-mahmed.com নামে একটা ডোমেইন কিনে ফেললেন, ফি বছর বেচারা নিয়ম করে এটা আবার রিনিউও করেন! ভাড়া বাড়ি থেকে নিজের একটা বাড়ি হলো, বড়ই সুখের বিষয়!

তো, এই www.ali-mahmed.com, নিজের বাড়িতে নিজের মত করে থাকি- হাবিজাবি লিখি। আমার সুহৃদেরা আমাকে তখন কঠিন নিষেধ করেছিলেন যে এভাবে বিচ্ছিন্ন থেকে লেখালেখি করাটা বোকামী হবে। আমিও রসিকতা করে বলেছিলাম, কেউ না-পড়লে কী আর করা, মনিটরে পা তুলে, পেট ভাসিয়ে নিজের লেখা নিজেই পড়ব।

ওয়াল্লা, আজ দেখছি www.ali-mahmed.com -এর ‘পেজভিউ’ দুই লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। কী কান্ড! আমি জানি অনেক সাইটের কাছে এই সংখ্যাটা নস্যি! কিন্তু আমার যে ঘরভরা শিউলি ফুল...! সেইসব সদাশয় পাঠকদের প্রতি কেমন করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব সেটাই তো বুঝতে পারছি না ছাই...।

অবশ্য কিছু-কিছু পাঠকের কাছে দুঃখ প্রকাশও করি। এরা গুগলে রগরগে লেখা দিয়ে সার্চ দিয়েছেন আর গুগল ব্যাটা আমার বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে। যেমন, 'আমরা 'দুধ বিক্রি করে শুটকি খাওয়া জাতি' [১] শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধের উপর আমার চমৎকার একটা লেখা আছে। আমি আমার পাঠককে আমার চেয়ে বুদ্ধিমান, একেকটা ক্ষুরধার ব্রেন মনে করি তাই কীসব সার্চ দিয়ে এরা এই লেখা পড়ার জন্য এসেছেন বুঝে নিন :) ...
সহায়ক সূত্র:
১. দুধ বিক্রি করে...: http://www.ali-mahmed.com/2009/08/blog-post_05.html

Sunday, November 17, 2013

ফাজিল, কীসে তোমার পরিচয়?

রেল-স্টেশনের ওয়েটিং রুম। মাসের-পর-মাস ধরে এর টয়লেটটা বন্ধ থাকে। কেন? এই নিয়ে কেউ ভাল সদুত্তর দিতে পারলেন না। কারো আহামরি কোনো বিকার নেই- সম্ভবত সবাই ধরে নিয়েছেন এমনটাই হওয়ার কথা। জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকদেরও এটা চোখে পড়েছে এমনটা জানা নেই!

আমাদের দেশে ভয়ংকর এই বিষয়টা নিয়ে অধিকাংশ লোকজন কেন তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখেন এটা আমি জানি না! আগেও বলেছিলাম, কোটি টাকা খরচ করে একটা মার্কেট করবে কিন্তু একটা ওয়শরুম-টয়লেট করবে না, করলেও তালা মেরে রাখবে। এই তালার চাবি কার কাছে এটা বের করতে গিয়ে কেউ প্যান্ট নষ্ট করে ফেললে তাঁকে দোষ দেয়া চলে না।
পুরুষরা সুযোগ পেলেই রাস্তার কোথাও বসে কাজ সেরে ফেলে কিন্তু মহিলাদের পক্ষে সেটা অসম্ভব। আমার ধারণা, এই দেশে অধিকাংশ মহিলাদের ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ। এই বিষয়টা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছি তাই নতুন করে আর চর্বিতচর্বণ করি না [১], [২]

যাই হোক, আমি এস.এস ওরফে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্টকে খুঁজে বের করলাম। এই বিষয়ে জানতে চাইলাম, কেন দীর্ঘ দিন ধরে তালা বন্ধ? প্রথমেই তিনি জানতে চাইলেন, আপনি কি সাংবাদিক? আমি বললাম, না। এরপর তিনি যেটা বললেন তা বিস্মিত করার জন্য যথেষ্ট। বললেন, তাহলে আপনার সমস্যা কী!
আমি বললাম, আপনার কী ধারণা কেবল সাংবাদিকদেরই সমস্যা এটা, পাবলিকের না! আমি পাবলিক আর আমার সমস্যা হচ্ছে, আমার যখন প্রয়োজন হয় তখন আমি মুত্র বিসর্জন করতে পারছি না। তা এটা বন্ধ কেন?
স্টেশন মাস্টার বললেন, এই টয়লেটে সমস্যা আছে। ব্যবহারের উপযুক্ত না।
আমি নিরীহ মুখ করে বললাম, কি সমস্যা, প্যান ভাঙ্গা। যেই সমস্যাই থাকুক আপনি শুধু একবার বলেন আমরা পাবলিকরা এটা ঠিক করে দেই।
তিনি বললেন, এটা তো বললেই হয় না। রেলের নিয়ম-কানুন মেনে এটা যথাসময়ে ঠিক করা হবে।

এটা এই সব আমলা-গামলাদের পুরনো চাল। আইনের কিতাবের দোহাই দেয়া- যেমন তদন্ত কমিটির নাম করে জটিল সমস্যা ঝুলিয়ে দেয়া। ওই তদন্ত কমিটির ফলাফল কেবল পাওয়া যাবে তাদের বাবার বুক-পকেটে।
আমি নাছোড়বান্দার মতো আবারও বললাম, মাসের-পর-মাস তো বন্ধ তা আর কবে আপনারা এই সমস্যার সমাধান করবেন বলে মনে করেন?
স্টেশন মাস্টার এবার উষ্মা প্রকাশ করেন, আরে, পাশেই তো পাবলিক টয়লেট আছে। এতো সমস্যা তো হওয়ার কথা না।
উত্তরটা আমার কাছে স্রেফ ফাজলামী মনে হয়েছে! আমি রাগ চেপে এবার জানতে চাইলাম, আমি তো জানি পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে টাকা লাগে। আপনার নাম বললে কি বিনা পয়সায় ব্যবহার করতে দেবে?
কথাবার্তার নমুনায় তিনি হয়তো আঁচ করতে পারছিলেন ট্রেন লাইন থেকে নেমে যাচ্ছে তাই তিনি বললেন, আচ্ছা, এখন আমি ব্যস্ত আছি। আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব, এখন ট্রেন ঢুকছে...।
১. http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_09.html
২. http://www.ali-mahmed.com/2011/02/blog-post_15.html