Search

Wednesday, July 31, 2013

রক্ষীবাহিনী

ছবি ঋণ: আফতাব আহমদ। তিনি ছবির সঙ্গে লিখেছেন, 'রক্ষীবাহিনীর কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'।
অ্যান্থনি মাসকারেনহাস রক্ষী বাহিনী সম্বন্ধে 'শেখ মুজিবের মিলিটারি ভীতি অধ্যায়'-এ লেখেন:
"...'১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেখ মুজিব নিজেই আমাকে বলেছিলেন যে তিনি একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনের বিরুদ্ধে। আমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মত একটা দানব সৃষ্টি করতে চাই না'।

...অক্টোবর, ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ চলছিল। আরবদের পক্ষে সমর্থনের নমুনা হিসাবে মিশরে বাংলাদেশের অতি উন্নতমানের চা পাঠানো হয় কারণ তখন বাংলাদেশের পক্ষে অস্ত্র বা টাকা দেয়ার সামর্থ্য ছিল না। মিশর এ উপহার অতি আনন্দের সঙ্গেই গ্রহন করে। ...
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত বাংলাদেশের এই বদন্যতার কথা ভোলেননি! তিনি বাংলাদেশকে ৩০টি 'টি-৫৪' ট্যাংক উপহার দিতে চাইলেন।
...কিন্তু শেখ মুজিব এই ট্যাংক গ্রহনে আগ্রহী ছিলেন না।...পরে তাঁর পররাষ্ট্র দপ্তর এবং মন্ত্রীরা বোঝালেন এই উপহার ফিরিয়ে দেয়াটা শিষ্টাচার বহির্ভূত।
শেষ পর্যন্ত এই ট্যাংক বাংলাদেশে আনা হয়েছিল...।

...শেখ মুজিব সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসাবে 'জাতীয় রক্ষীবাহিনী' নামে একটা প্যারা-মিলিটারি বাহিনী গঠন করলেন। ওই বাহিনীর সকল সদস্যই শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত আনুগত্য স্বীকার করে শপথ গ্রহণ করত। এই বাহিনীর নামটা শুনতে চমৎকার শোনালেও, বাস্তবে এই বাহিনী ছিল এক ধরনের প্রাইভেট আর্মির মত এবং এদের সঙ্গে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর খুব একটা পার্থক্য ছিল না।...
...শেখ মুজিবের বিরোধিতা দিন-দিন বাড়তে থাকলে এই সংখ্যা ৮ হাজার থেকে ক্রমশ ২৫ হাজার করা হয়। এদেরকে মিলিটারি ট্রেনিং, আর্মি স্টাইলের ইউনিফর্ম, আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়। রক্ষী বাহিনীর অফিসারদের মধ্যে প্রায় সবাই ছিলেন রাজনৈতিক একই মতে বিশ্বাসী।

রক্ষীবাহিনী দ্বারা সংঘটিত হত্যা-খুন, নির্যাতনের অজস্র প্রমাণ রয়েছে।...একটি ১৭ বছরের বালককে ৪দিন নির্যাতন করার পর তার লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট রক্ষীবাহিনীকে দোষী রায় দিয়ে তিরস্কার করেন। সুপ্রিম কোর্ট দেখতে পান, রক্ষীবাহিনী কোনো প্রকারের আইনেরই তোয়াক্কা করছে না, এমনকি কাউকে গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদের কোনো রেজিস্টার পর্যন্ত তাদের কাছে ছিল না।
সুপ্রিম কোর্টের এই তিরস্কারের পর শেখ মুজিব এই সমস্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ না-করার জন্য সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা খর্ব করেন।...

(পাশাপাশি)...
ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর আমাকে (অ্যান্থনি মাসকারেনহাস) বলেছিলেন, '...আমাদের জোয়ানদের খাবার নেই, অস্ত্র নেই...তুমি শুনলে অবাক হবে, তাদের জার্সি নেই, গায়ের কোট নেই, পায়ে দেয়ার বুট পর্যন্ত নেই। শীদের রাতে তাদেরকে কম্বল গায়ে দিয়ে ডিউটি করতে হয়। আমাদের অনেক সিপাহী লুঙ্গি পরে কাজ করছে। তাদের কোনো ইউনিফর্ম নেই। পুলিশ আমাদের লোকদেরকে পেটাতো।
...একবার আমাদের কিছু ছেলেকে মেরে ফেলা হলো...। আমরা শেখ মুজিবের কাছে গেলাম এবং বললাম, কে তাদেরকে এমন শাস্তি দিল! তিনি কথা দিলেন, বিষয়টা দেখবেন। পরে তিনি আমাদেরকে জানালেন, ওরা কোলাবরেটর ছিল বলে তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে'।..."

*এই লেখাটা নেয়া হয়েছে ,অ্যান্থনি মাসকারেনহাস-এর 'বাংলাদেশ: আ লিগেসি অব ব্লাড' থেকে।

No comments: