Search

Friday, June 7, 2013

অটল ইমারত এবং...!

রানা প্লাজা ধসে যাওয়ার পর একজন রাজমিস্ত্রি আমার বাসায় এসেছেন। এই বয়স্ক মানুষটা অনেকটা সুফি টাইপের! কোনো এক বিচিত্র কারণে আমাকে পছন্দ করেন। তাঁর সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করেন।
ওদিন বলছিলেন, 'এই দেখেন, দেশে যে বিল্ডিং সব পইরা যাইতাছে এর কারণ হইল আমাগো লোভ। সব দুই নাম্বার জিনিস...'।
আমি খুব একটা আগ্রহ দিয়ে শুনি না কারণ এ তো আর নতুন কিছু না! কিন্তু তার পরের কথা আমাকে চমকে দেয়! তিনি বলছিলেন, 'আপনে কি এখনকার রড দেখছেন, প্যাচাইন্যা'?
আমি বললাম, 'জ্বী, এর পেছনে কারণও আছে। যতটুকু জানি, কোনো কিছু প্যাঁচানো থাকলে, এর সহনশক্তি বেড়ে যায়'।

তিনি বাবরি চুল দুলিয়ে বললেন, 'ভালই বলছেন কিন্তুক...। আপনে কি দেখছেন, এই সব রড বাড়ি করার আগে মানুষ দিনের-পর দিন বাইরে ফালায়া রাখে। রডে জং ধরে! আমরা যারা পুরানা মিস্ত্রি আছি হেরা শিরীষ কাগজ দিয়া রডের জং সাফ করি। কিন্তু প্যাচাইনা রডের কারণে রডের জং সাফ করা যায় না, যতই চেষ্টা করেন এইডা কিন্তু সম্ভব হইব না। আপনে যখন ঢালাই দিবেন তখন এই রডের জংয়ের কারণে সিমেন্ট ভাল কইরা আটকাইতে পারব না। বিল্ডিংডা দুর্বল হইয়া যাইব। একটা সময় ভাইঙ্গা পড়ব'।
তাঁর কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে মনে হয়েছে কিন্তু এই বিষয়ে তেমন জ্ঞান নাই আমার। আমার বন্ধুতালিকায় কোনো ইঞ্জিনিয়ার সাহেব থেকে থাকলে এই বিষয়ে জানালে সুখি হই।
...
কালকের (৫ জুন, ২০১৩) দৈনিক সমকালের খবর হচ্ছে, 'অপ্রীতিকর ঘটনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল অপারেটর গ্রেফতার'। শিরোনাম দিয়ে পাঠক কিছুই বুঝতে পারবে না। তবে সংবাদটা পড়লে জানা যাবে যেটা, "...সেতুর প্রধান প্রকৌশলী জানান, ...'সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি এমআর হাসান ...বঙ্গবন্ধু সেতুর পূ্র্বপাড়ে তিনি দুটি গাড়ির টোল না দিয়ে সেতু পার হতে গেলে বিনা টোলে সেতু পারের সিগন্যাল পেয়ে টোল অপারেটর আসাদ আলী গাড়ি দুটির গতিরোধ করেন। বিচারপতির নির্দেশে সেতু পশ্চিম থানার পুলিশ আসাদকে আটক করে'।"
পরে আমরা জানতে পাই, দায়িত্বরত আসাদ আলীকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এটা ছাপা হয়েছে সমকালের ১৯ পৃষ্ঠায়, সিঙ্গেল কলামে। সমকালের সম্পাদকের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা এবং বয়স হয়েছে, এখন তাঁকে এটা শেখানোটা এক পন্ডশ্রম যে, কোন খবরের কতটা গুরুত্ব, কোন খবর কোন পাতায় ছাপা উচিত বা শিরোনামই কী হবে! আর পাঠক ৮০০ থেকে ১০০০ পয়সা দিয়ে পত্রিকার প্রথম পাতার ছাতাফাতা নিউজ পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকে না।

যাই হোক, বিচারপতির এই সংবাদটার বিষয়ে কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বিচারপতি এমআর হাসানের কী এটা জানা ছিল না যে, টোল না-দিয়ে সেতু পার হওয়া যায় না? একজন বিচারপতির এটা জানা নেই! 

এদিকে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার সমকালকে বলেন, "...টোল আদায়কারীর আচরণগত কারণে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে..."।
ভাল, টোল আদায়কারীর আচরণে সমস্যা ছিল। মানুষটার শাস্তি পাওনা ছিল, বেশ। আমরা পূর্বে এমনটা দেখেছি, কোনো কারণে বিচারপতি ক্ষুব্ধ হলে সংশ্লিষ্ট মানুষটিকে বা সেই সংস্থার কর্ণধারকে কোর্টে ডেকে নেয়া হয়েছে। একটা ন্যূনতম ট্রায়াল হয়েছে, প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থাও হয়েছে। পূর্বে একজন ট্রাফিক পুলিশের আচরণের কারণে এবং একজন আইজির আচরণ-বক্তব্য সন্তোষজনক না-হওয়ার কারণে তাকে ২০০০ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই জরিমানার কারণে সেই আইজিকে চাকুরিও হারাতে হয়েছিল।

এই ক্ষেত্রেও অন্তত এমনটা হলেও আমরা সুখি হতাম। কিন্তু এই প্রশ্নটা থেকেই যায়, বিচারপতির এটা জানা নেই যে টোল দিতে হয়?
আমরা জানি, একজন বিচারপতির এক্সেস ক্ষমতা বিপুল। তিনি অনেক ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু, একটা কিন্তু রয়েই যায়! সুপ্রিমকোর্ট আমাদের শেষ ভরসাস্থল। এই অটল স্থাপনা আমাদের অহংকার। কিন্তু যখন কোনো কারণে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের মনে বিন্দুমাত্র বিশ্বাসের ফাটল ধরে তখন আমরা আতঙ্কিত হই...।

No comments: