Search

Saturday, March 30, 2013

গাফফার চৌধুরী, আপনার জন্য কেবল করুণা...

আজকাল অনেকে আবদুল গাফফার চৌধুরীকে গোণায় ধরতে চান না। অবশ্য এর জন্য তাঁর অনেক ভূমিকা কিছুটা দায়ী! মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার প্রসঙ্গ এখানে আর আনলাম না।
কিন্তু "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি!...।"

যে গানটা গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর বিদ্রোহ করে। মস্তিষ্ক কোনো যুক্তি মানে না। নিজের জীবনটা তখন কী তুচ্ছই না মনে হয়...

গাফফার চৌধুরীর মত মানুষদের তো আমরা মাথায় করে রাখতাম...।
এমন একটা লেখা লিখে মরে গেলেই কী, নাই-বা হলো জ্যোৎস্না রাত! এই গানটির রচয়িতা যে আবদুল গাফফার চৌধুরী, এটা জানেন না এমন কেউ এদেশে আছেন বলে আমি বিশ্বাস করি না, এটা বলতে পারলে সুখি হতাম। কিন্তু..আমাদের দেশে যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মত ইংরেজি মাধ্যমের প্রাইভেট স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে। এখানে যেসব ফার্মের মুরগির বাচ্চার মত ছেলেরা পড়ছে, এদের যেসব কথাবার্তা শুনি!

যাই হোক, আমাদের দেশের অধিকাংশ মিডিয়া হচ্ছে ভুমিদস্যু, খুনি, চোর-চোট্টা ব্যবসায়িদের হাতে। আমি অন্য এক লেখায় লিখেছিলাম, গোলাম আযম যদি 'মুড়ির ঘন্ট' নামের পত্রিকা বার করে তাহলেও আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা সেই পত্রিকাতেও লিখবেন। কেবল টাকার অংকটা অন্যগুলোর চেয়ে বেশি হলেই হয়। টাকার অংকটা ভাল হলে উবু হয়ে পটিতে বসে পোজ দিতেও তাদের কোনো সমস্যা নাই। বেচারা, গাফফার চৌধুরীকে একা দোষ দিয়ে লাভ কী!

কিন্তু এটা অনেকেই বুঝতে চান না একজন লেখকের কেবল হাওয়া খেয়েই দিন চলে না। আমাদের দেশে একজন মেথরও মেথরগিরি করে দিনপাত করতে পারবেন কিন্তু একজন লেখক পারবেন না। প্রকাশক রয়্যালটির টাকা মেরে দেবেন।

ক্রমশ, অধিকাংশ, এই সব মেধাবী মানুষগুলো মিডিয়ার কাছে বিক্রি হয়ে যাবেন- ভাড়াটে লেখকে পরিণত হবেন। পত্রিকার চাহিদা অনুযায়ী ডিমে তা দেবেন।

আর আমাদের মিডিয়া! ভাল টাকা পেলে এরা পটিতে উবু হয়ে বসার ভঙ্গিতেও পোজ দেবে। দূরে যাওয়ার
২৯ মার্চ, ২০১৩
প্রয়োজন নেই। আজকের প্রথম আলোর এয়ারটেলের বিজ্ঞাপনটা দেখলে অনেকখানি আঁচ করা যাবে। বাচ্চু ভাইকে (মতিউর রহমান) আরও টাকা দিলে তিনি সম্পূর্ণ পৃষ্ঠাব্যাপি বিজ্ঞাপনটা ছাপিয়ে দিতেন। না-না, অবশ্যই পত্রিকার নামের জায়গাটুকু বাদ দিয়ে।

যাই হোক, এটাও অনেকে বুঝতে চান না ক্ষিধার জ্বালা বড় জ্বালা। তখন একজন মানুষ ক্রমশ ছাগলে রূপান্তরিত হয়, যা পায় তাই খায়। এই কারণে লেখকদের অনেক ক্রটি আমরা খানিক উদাসীন চোখে দেখি। কিন্তু সেই ক্ষুধাটা যখন মানুষটার মগজ খেয়ে ফেলে তখন আর অবশিষ্ট কিছুই থাকে না!

ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১০ সালের ঘটনা। ফেনীর জয়নাল হাজারী একটি বই লিখলেন, ' জয়নাল হাজারী বলছি '। গাফফার চৌধুরী এই বইয়ের মোড়ক উম্মোচনই করলেন। হতে পারে হাজারী তাঁর 'ল্যাংগটিয়া দোস্ত', দায়ে পড়ে এমনটা করেছেন।
সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে হাজারীর ক্যাডাররা মানবদেয়াল রচনা করে। সেখানে হাজারী এবং গাফফার চৌধুরী পরস্পরের হাত ধরে প্রবেশ করেন। তাদের উপর ফুলের পাপড়ি ছিটানো হয়। শ্লোগান উঠে, 'হাজারী ভাইয়ের পক্ষ থেকে গাফফার ভাইকে শুভেচ্ছা'। সেখানে হাজারী বলেন, "আমার জন্য জীবন দিতে পারে এমন সাংবাদিকও আছেন। ...সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, আমি ঢাকার মিডিয়া দখল করতে শুরু করেছি"।
পরে তার বই ১৭ কোটি মানুষ পড়েছিল নাকি ঢাকা দখল হয়ে গেল, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।

সেসময় গাফফার চৌধুরীও কিছু অমায়িক কথাবার্তা বলেছিলেন:
১. বাংলাভাই কারাগার থেকে কিছু লিখে গেলে সেই বইয়ের মোড়ক উম্মোচনও আমি করতাম।
২. হাজারী একজন ত্যাগী-নিষ্ঠাবান নেতা। শেখ হাসিনা তাকে বহিষ্কার করে গুরুতর অন্যায় করেছেন।
৩. টিপুকে (প্রথম আলোর প্রতিবেদক) হাজারী মেরেছেন এটা মিথ্যা প্রচারণা। এগুলো পত্রিকার কারসাজি।
(এই কথার পর আর কোনো কথা চলে না। আমাদের মেনে নিতেই হয়, টিপুকে টিপু নিজেই মেরেছেন। অবশ্য নিজেকে নিজেই মারার পদ্ধতিটা আমার ঠিক জানা নাই বলে বিস্তারিত আর বলি না।)

সবই বুঝলাম, কিন্তু... একটা কিন্তু থেকে যায়। এও সত্য, কাপড় খোলারও একটা সীমা আছে। সব খুলে ফেললে একজন সুদর্শন মানুষকেই ভাল দেখায় না তার উপর গাফফার চৌধুরীর মত বয়স্ক একজন হলে তো সর্বনাশ!

No comments: