Search

Friday, December 21, 2012

বিশ্বজিৎ এবং বিবেক নামের রাস্কেলটা

বিশ্বজিৎকে নিয়ে লিখব না ঠিক করেছিলাম কারণ কী লিখব! সবাই তো সবই লিখেছেন আমি আবার নতুন করে বেদনার জায়গাটায় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত নাই বা করলাম। কিন্তু...
প্রতিভাবান অনেকে, যারা এখানে লেখালেখি করেন, অনেক 'নেকাপড়া' তাদের। অনেকে আবার একেকজন চলমান দেশপ্রেমিক। কিন্তু আমি সবিস্ময়ে লক্ষ করলাম, এঁরা অধিকাংশই ব্যস্ত ছিলেন যারা বিশ্বজিৎকে খুন করেছে তারা কোন দলের এটা প্রমাণে। কেন এরা এমনটি করতে অতি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন? 'দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি', এই কারণে [১]?

ভঙ্গিটা পরিষ্কার, কাঁঠালটা অন্যের কাঁধে চাপিয়ে নিজে সটকে পড়ি। নিজের ঘর পরিষ্কার করে ময়লা-আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে রাস্তায় ফেলে আমরা খুব আরাম পাই। এরপর কেন রাস্তা ময়লা এটা নিয়ে মেয়রকে মায় সরকারপ্রধানকে গালি দিয়ে বিমল আনন্দ লাভ করি, গলাবাজি করি। তখন দেশটা যে ঠিক মতন চলছে না এই অংক মিলে যেতে আমাদের আর কোনো সমস্যাই থাকে না।

আমি পূর্বে অনেকবার বলেছি, 'এই গ্রহের সবচেয়ে বড় কারাগার হচ্ছে, বাংলাদেশ, হরতালে। ১৬ কোটি মানুষ কয়েদি'। আমার সাফ কথা, 'আমি কোনো প্রকারেই হরতাল মানি না, ঈশ্বরের মৃত্যুতেও না। কারণ হরতাল একটা দানব। জন্ম দেয় অজস্র দানবের'।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বলতে দেখলাম-শুনলাম, আমোদিত ভঙ্গিতে তিনি বলছেন, হরতাল কেমন করে করতে হয় এটা বাম দলের ডাকা হরতাল দেখে অন্য দলগুলো শিখুক। আহা, কী চমৎকার কথাই না বলেছেন!
(বাম দলের করা হরতাল নিয়ে খুব বলার কিছু নাই। আমরা ঝোলে মাখামাখি হয়ে কনুই ডুবিয়ে খাওয়া মানুষ, এক দিন কাঁটাচামচ দিয়ে কষ্টেসৃষ্টে খেয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করা চলে কিন্তু বললেই আমাদের সবার খাওয়ার ভঙ্গিটা বদলে যাবে না। আর বামদলের পাশাপাশি 'পুলিশদল' যেভাবে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে হরতাল সফল করেছেন এদের কথা না-বললে অবশ্য অন্যায় হয়। অচিরেই আমাদের পুলিশবাহিনী প্রেমের কবিতা লেখা শুরু করেছেন এটা জানলেও বিস্মিত হব না।)


ঠিক এই মুহুর্তে আমার কাছে এই তথ্যটা নাই যে, কোন দল কত দিন হরতাল ডেকে ছিলেন? তবে অনুমান করি, আওয়ামীলীগকে এখনও অন্য দলগুলো ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। তখন আমরা এও দেখেছি, শেখ হাসিনা হরতাল ডেকে বিদেশ চলে গেছেন। তখন গভীর রাতে হরতালের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সকালে ছোট-ছোট বাচ্চারা স্কুলেও চলে গেছে। আস্তে আস্তে যখন জানা গেল আজ হরতাল তখন ওই সব ছোট-ছোট বাচ্চাদের বাবা-মাদের উপর কেমন আতংকের ঝড় বয়ে গিয়েছিল তা কেবল অনুমানই করা চলে! নওগার জলিল সাহেবকে তখন আমার কাছে ঈশ্বর টাইপের কিছু একটা মনে হত। তিনি 'হও হরতাল' বললেই গোটা দেশ স্থবির হয়ে পড়ত।

আওয়ামীলীগ বিরোধীদলে থাকাকালীন দিনের-পর-দিন, মাসের-পর মাস, বছরের-পর-বছর ধরে একের-পর-এক হরতাল দিয়েছে কিন্তু বিএনপিকে এক সেকেন্ডের জন্যও ক্ষমতা থেকে হটাতে পারেনি! রিপিট, আবারও বলি, এক সেকেন্ডের জন্যও না। তাহলে ওই হরতালগুলো তখন কী প্রসব করেছিল, গণতন্ত্রের কোন ছানাটা? তখনই নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছিল, গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া।
ঠিক একই কাজ করছে এখন বিএনপি এবং তার সমমনা দলগুলো। এখন এদেরকে জিজ্ঞেস করলে এরা গা দুলিয়ে বলবে, আমরা তো এখনও আওয়ামীলীগের সমান হরতাল দেইনি। আমাদের রাজনীতিবিদ মহোদয়গণ বলিহারি, 'আমরা এখনও ওমুক দলের মত বা তমুকের সমান হইনি এটা বলে তারা আমাদের হাতে লেবেনচুষ ধরিয়ে দেন কিন্তু একবারও জন্যও এটা বলেন না প্রতিপক্ষের কাজটা কতটা যুক্তিসঙ্গত ছিল- তাদের মত অযথার্থ কাজ-কর্ম কেন করতে হবে। তাহলে আর পার্থক্য রইল কই?

তো, এখনও একই চিত্র, একই ভঙ্গি, একই নৃশংসতা, একই বর্বরতা! কিছুই বদলায়নি বরং নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। ভয়াবহতা কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আই বেট, বিএনপি যতই হরতাল দিক আওয়ামিলীগকে এক পলক পূর্বেও ক্ষমতা থেকে হটাতে পারবে না।

কঠিন এক প্রশ্ন, হরতাল না-থাকলে কী দেশে নৃশংসতা হয় না, হচ্ছে না? হচ্ছে তো। কিন্তু হরতালে সুবিধা হচ্ছে, এদিন কারো গাড়ি ভেঙ্গে ফেললে, গানপাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে [২], কাউকে নগ্ন করে ফেললে কেউ কিচ্ছু বলবে না কারণ সবাই জানে হরতালে এসব হয়েই থাকে [৩], এটা দোষের কিছু না। হরতালে লাশ পড়তেই পারে এতেও অবাক হওয়ার কিছু নাই। বরং হরতাল হয়েছে কিন্তু লাশ পড়ে নাই এটা আমাদের সবার জন্য দুঃচিন্তার, ভাবনার। রাজনৈতিক দলগুলো আলাদা করে ভাবনায় তলিয়ে যাবে, ওরে, সমস্যাটা কোথায়? মিডিয়া মুখ শুকিয়ে লিখবে, ঢিলেঢালা হরতাল। আমরা যারা পেট ভাসিয়ে পত্রপত্রিকা পড়ি, আমরা বলব, ধুস, শ্লা, বা..., আজকের হরতালে কোনো নিউজই নাই।

ছবি সূত্র: ajkalerkhabarbd.com
বিশ্বজিতের বিষয়টা নিয়ে আমরা এমন চমকে গেলাম কেন? কেন অস্থির হলাম এই খুনিছাত্র'-দের দেখে? ইতিপূর্বে আমরা কী এমন নৃশংসতা দেখিনি? 'খুনিছাত্র' বীরপুঙ্গবদের আমরা কী পূর্বে আর দেখিনি [৪]?
ছবি সূত্র: প্রথম আলো
দেখেছি। কারণ 'খুনিছাত্র', এরা বিলক্ষণ জানে খুন করলে কেউ এদের গোপন কেশও স্পর্শ করবে না, পুলিশ-টুলিশ খাম্বার ন্যায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম খাবে। আহা, শিক্ষক নামের তাদের বাবারাও যে দলবাজি করেন [৫]। বিচিত্র এই দেশ এই দেশে শিক্ষকদেরও সাদা-নীল-গোলাপির নামে দলবাজি করতে হয়।
ইশ, কী মজা, হাসতে হাসতে কী নৃশংস করেই না ছাদ থেকে ফেলে দেয়া যায় [৬]

বিশ্বজিতের বিষয়টা হচ্ছে, ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। বিশ্বজিৎ যদি কোনো রাজনৈতিক দলের হত তাহলে রাজনীতিবিদগণ পশ্চাদদেশ চাপড়ে তিন উল্লাস করতেন কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন বিকার দেখা যেত কিনা এতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে।
এমনিতে হরতালে একটা লাশের আমাদের বড় প্রয়োজন। বিএনপি প্রথমে বলার চেষ্টা করেছিল বিশ্বজিত তাদের দলের লোক। মিডিয়ার কল্যাণে বিষয়টা পানি পায়নি কারণ বিশ্বজিতের পরিবারের এবং স্বজনেরা সাফ বলে দিলেন, বিশ্বজিত কোনো দল করতেন না।
ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ আদাজল খেয়ে মাঠে নামল, যারা তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে তারা তাদের কেউ না। বরং এটা একটা কঠিন সাবোটাজ। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, একের-পর-এক টেক্কা ফেলে কে কাকে টেক্কা দেবেন তার এক প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেল। এই প্রতিযোগীতায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীও পিছিয়ে রইলেন না।


অথচ এই সবের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এক কথায় বলে দিলেই হত, ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে, সে যে কেউই হোক। পরে অবশ্য, উপায় ছিল না বলে যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে ধরা হয়েছে কিন্তু এর পূর্বেই নিরপরাধ কয়েকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। এদের শেষ গতি কী কে জানে! কত ধরনের অন্যায় যে আমরা করি! যেখানে বলা হয়, অপরাধী পার পেয়ে যাক তবুও যেন কোনো নিরপরাধ শাস্তি না-পায় সেখানে আমরা ঠান্ডা মাথায় নিরপরাধকে ফাঁসিয়ে দেই। এদের অভিশাপ তাড়া করুক নরক অবধি...।

আজ জাফর ইকবালের লেখা পড়ে আবারও খানিকটা ধন্ধে পড়ে গেলাম [৭]। এই মানুষটাকে আমি বিভিন্ন কারণে অসম্ভব পছন্দ করি। আমাদের দেশে অনুকরণীয় মানুষের বড্ডো অভাব যে। কিন্তু এই মানুষটার কিছু কর্মকান্ড আমার তীব্র অপছন্দের। এই টাইপের মানুষগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, চোখে অদৃশ্য কালো চশমা। এঁরা দেশে কোনো সমস্যা দেখতে পান না। হরতালের মত একটি দানব এঁদের চোখে পড়ে না। তিনি কখনও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি, হরতাল চাই না, মানি না। বলবেন না, কারণ...। আহা, তাহলে যে গণতন্ত্রের বাঁশগাছের বাঁশ তাঁর মাথায় ভেঙ্গে পড়বে- মরলে তো আর বাঁচবেন না তিনি! যাও-বা বলেন, হাস্যকর প্রলাপ বকেন!
একবার বললেন, 'শিক্ষাবিভাগকে হরতালের আওতার বাইরে রাখা হোক'। কী বালখিল্য কথা! আচ্ছা, বেশ যা হোক! হরতালে একজন পরীক্ষা দিতে ঢাকা থেকে সিলেট যাবে কী ঘোড়ায় চড়ে, নাকি এমবুলেন্সে চড়ে। নাকি জাফর ইকবাল কোলে করে নিয়ে যাবেন?

তাঁর লেখার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। লেখায় কেন যেন তিনি সাদাকে সাদা সরাসরি বলেন না, বললেও ঘুরিয়ে কাশি দিয়ে বলেন, এই যে আমার এই হাতে কি দেখতে পচ্ছেন, কালো, রাইট?
আমরা নিরীহ মুখে বললাম, মহতরাম, ইয়েস, কালো দেখলুম, তা সাদাটা কোথায়?
তখন তিনি কাশি দিয়ে বলেন, আচ্ছা বলুন তো আমার হাত কয়টা? এই ভাবে কথা চালাচালি চলতে থাকে, চলতেই থাকে। একটা সময় আসে তখন তিনি কি বলতে চাইছেন তিনি তো বুঝে যান কিন্তু আমরা আর বুঝে কুলিয়ে উঠতে পারি না [৮]। 

এটা সত্য, তাঁর লেখার কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হই। কিন্তু লেখায় এতো বেশি হাতের কাজ ভাল লাগে না। তাঁর লেখার সঙ্গে যারা পরিচিত, তারা পরিচিত তাঁর এই ভঙ্গির সঙ্গেও। একই টাইপের সাহস সঞ্চয়, একই টাইপের কাশাকাশি (তাঁর বাসায় টেলিভিশন নেই এটা কয়েক লক্ষ বার শুনতে হবে, শুনতে শুনতে তাঁর সাদা চুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের চুলও সাদা হয়ে যাচ্ছে। বেচারা টেলিভিশন!)। যেমন সাহস সঞ্চয়ের বিষয়টা। তিনি লেখেছেন:

"...ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর একটু সাহস সঞ্চয় করে আমি যখন খবরের কাগজগুলো পড়েছি...তখন আমি বুঝতে পেরেছি বিশ্বজিৎ লাল শার্ট পরেনি, রক্তে ভিজে তার শার্ট লাল হয়েছে..."।
তাঁর পূর্বের লেখায়ও এমনতরো সাহস সঞ্চয়ের নমুনা অসংখ্যবার পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি যখন লেখেন:
"...সবচেয়ে হৃদয়বিদারক কাজটি করলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। ঘোষণা দিলেন অভিযুক্তরা সবাই জামায়াত-শিবির কারণ..."।
এইখানে এসে আমি বেদনার শ্বাস ফেলি, কারণ বেচারা জাফর ইকবালের জন্য বড় মায়া হয়। আহা-আহা! যে মানুষটার সপ্তাহ খানেক লাগে শার্টের রঙ বোঝার জন্য সেই মানুষটার এটা বুঝতে তো বছর খানেক লাগার কথা যে, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহেন হৃদয়বিদারক কাজটি কেন করলেন, কার নির্দেশে করলেন? আবার তিনি লিখেন, "...কেন পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র হত্যাকারীদেরকে রক্ষা করার জন্য এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল"?

'রাষ্ট্রযন্ত্র', এই জিনিসটা কী? এটা কী গুগলের চালকবিহীন গাড়ির মত একটা জিনিস! কেউ এটা চালায় না, আপনাআপনিই চলে? রাষ্ট্রযন্ত্রের চাকাটাও সম্ভবত কেউ চালায় না, নিজেনিজেই ঘুরপাক খায়। অতএব কাউকে দায়ী করার প্রশ্নই আসে না।

যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আমরা অনেকে আবার সাদাকে কালো, কালোকে সাদা বলা নিয়েই আছি- খুনিরা কার দলের লোক এটা বের করতে পারলেই আমাদের সমস্ত কাজ শেষ। আমি আগেও বলেছি, আমরা এখন একটা শব, আস্ত শবটা জাস্ট ফরমালিনে চুবিয়ে রাখা হয়েছে। যেদিন রাসায়নিক পদার্থটা সরিয়ে নেয়া হবে সেদিন গলিত শব ভক করে গন্ধ ছড়াবে।
অসংখ্য মিডিয়াবাজদের সামনে খুনটা হয়েছে, এরা নির্বিকার ভঙ্গিতে সাটার টিপে গেছেন। নাইস শট-নাইস ক্লিপিং, পাছায় বসের আদরের চাপড় আটকায় কে? উচ্চপদস্থ পুলিশকর্মকর্তাসহ অসংখ্য পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছেন। আহা, আজ চীফ গোঁফে তা দিয়ে বলবেন, গুড হান্টিং!


রক্তে মাখামাখি হয়ে বিশ্বজিৎ নামের মানুষটা হাত-পা ছড়িয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন। ভাগ্যিস, কোনো ক্যামেরাবাজ তার রক্তে সূর্যের প্রতিফলনের যে অপরূপ সৌন্দর্য তা ধরে রাখার চেষ্টা করেননি। করলে আন্তর্জাতিক একটা তকমা পায়ে গড়াগড়ি খেত।
শত-শত মানুষ সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে, পান চিবুতে চিবুতে, দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে পাশ কাটিয়ে গেছেন। আমি নিশ্চিত, এদের মধ্যে আমিও ছিলাম; থাকব না কেন? আমিও যে এ দেশেরই একজন গো!
কেবল গোল বাঁধিয়েছেন একজন রিকশাচালক, রিপন সরদার। নিকটস্থ হাসপাতালে বিশ্বজিৎকে নিয়ে গেছেন! পাগল, বিশ্বজিৎ তো কোনো নামকরা ব্যক্তি না যে ডাক্তার সাহেবেরা চোখের নিমিষে চিকিৎসা শুরু করবেন। ব্যাটা মরেই গেলেই কী, কে আসছে হাসপাতাল ভাংচুর করতে?

অবশেষে রক্তে ভাসতে ভাসতে বেচারা বিশ্বজিৎ মরেই গেলেন। মরে আমাদেরকে নগ্ন করে দিয়ে গেলেন। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না কারণ আদিম যুগেও তো আমরা নগ্নই ছিলাম...।
বনফুলের অসাধারণ একটা গল্প আছে, 'বিবেক':
"...একটা ভীষণদর্শন বলিষ্ঠ লোক কী যেন খুঁজিয়া বেড়াইতেছে। তাহার হাতে প্রকান্ড একটা কলসি।
প্রশ্ন করিলাম, কী খুঁজিতেছেন?
আমার প্রতি অগ্নিদৃষ্টি হানিয়া সে বলিল, দড়ি।
দড়ি? আপনি কে?
তোমার বিবেক, রাস্কেল।"


আসলে বিশ্বজিৎ আলাদা করে কিছু না। বিশ্বজিতের এই ঘটনা কেবল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কালে কালে বেচারা 'বিবেক' আজ নিজেই একটা রাস্কেল! রাস্কেলটা পাগলের ন্যায় আচরণ করছে, উদভ্রান্ত হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে:
একজন ভাল রাজনীতিবিদ না, একজন ভাল মিডিয়ার লোক না, একজন ভাল পুলিশম্যান না, একজন ভাল ম্যানেজার না, একজন ভাল ব্যবসায়ি না, একজন ভাল ডাক্তার না, একজন ভাল লেখক না।
...সে খুঁজে বেড়াচ্ছে, একজন ভাল মানুষ...।

সহায়ক সূত্র:
১. দেশের চেয়ে দল বড়...: http://www.ali-mahmed.com/2010/11/blog-post_09.html     
২. গণতন্ত্রের হত্যকারী: http://www.ali-mahmed.com/2012/04/blog-post_29.html
৩. নগ্ন একজন মানুষ: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_22.html
৪. পুলিশ লিখবে কবিতা: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_09.html
৫. শিক্ষকদের দলবাজি...: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_19.html
৬. নীল-গোলাপী-সাদা: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_09.html
৭. জাফর ইকবালের লেখা: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-20/news/314515
৮. অসুখি রাষ্ট্রপতি...: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_8885.html

9 comments:

Shahadat Udraji said...

চুপচাপ দেখে গেলাম।

জিয়াউল হক said...

ভোরের কাগজে আপনার স্কুলের খবরটা পড়ে খুবি ভাল লাগল,আমরা আপনার মত স্কুল করার স্বপ্ন দেখি। আপনার স্কুল দেখার প্রচন্ড আগ্রহ,অনুমতি দিলে এসে দেখে যাব।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আরে না, অনুমতি আবার কী! যে-কোনো এসে দেখে যেতে পারেন, কেবল রবিবার স্কুল বন্ধ থাকে।
আর ভোরের কাগজের লিংকটা কি দিতে পারেন? @জিয়াউল হক

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

দুঃখিত, হবে, যে-কোনো 'দিন'... @জিয়াউল হক

:) @Shahadat Udraji

জিয়াউল হক said...

দেখুন এখানে
http://www.bhorerkagoj.net/new/blog/2012/12/23/90614.php

Anonymous said...

আপনি কি আরেকটা বিসয় খেয়াল করেছেন বাম মোর্চার হরতালে বিআরটিসির বাস চলে নাই?

জিয়াউল হক said...

আপনি লিখেছেন রবিবার স্কুল বন্দ থাকে কিন্তু পত্রিকায় পড়েছি সপ্তাহে পাচ দিন ক্লাস হয়?

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

লিংকের জন্য অজস্র ধন্যবাদ। আপনি খুঁজে না-দিলে আমার পক্ষে মুশকিল হয়ে যেত।

স্কুল কেবল রবিবারই বন্ধ থাকে, আমার তথ্যটাই সঠিক। পত্রিকায়, ছাপার অক্ষরের সব কথা বিশ্বাস করতে নেই :D @জিয়াউল হক

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

হুঁ, এও এক বিষ্ময়! @Anonymous