Search

Sunday, October 21, 2012

পরিসংখ্যান-জিনসংখ্যান-প্রেতসংখ্যান

পরি-জিন-প্রেত। এরা বসে বসে হাওয়া খেয়েই কেবল দিন পার করে। কাজকামের তো আর বালাই নাই। এদেরকে তো আর আপিস নামের কারাগারে আটকে থাকতে হয় না। বাজারের ব্যাগ নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরঘুরও করতে হয় না। সামান্য কিছু টাকা নামের ময়লা কাগজের জন্য আত্মা বন্ধকও রাখতে হয় না।

পরিদের নিয়ে যতটুকু শোনা যায় তা এমন, এমনিতে এরা খুবই ভাল। মাইডিয়ার টাইপের। কেবল দোষের মধ্যে যেটা সেটা হচ্ছে কাউকে পছন্দ হলে তাকে নাকি উঠিয়ে নিয়ে যায়। সবাইকে না। কারণ আমি আমার বাসার ছাদে অনেক রাতে হাঁটাহাটিঁ করে দেখেছি পরি আমাকে উঠিয়ে নেয়া দূরে থাকুক ভুলে কখনও বলেনি, এই যাইবা?
এতে একটা বিষয় পরিষ্কার হল সেটা হচ্ছে যাকে-তাকে নিয়ে এদের আগ্রহ নাই। অতি রূপবান না-হলে পরিবাজারে দাম নাই, পরিস্তান যাওয়ারও কোনো উপায় নাই কেবল 'লেখকস্তানে' ছাতাফাতা লেখালেখি করা চলে।

যাই হোক, রূপবান ছেলেদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া ব্যতীত পরিদের তো অবসরই অবসর। তাদের অবসর কাটে কেমন করে, জটিল আঁক কষে? ওই আঁক কষার নামই সম্ভবত 'পরি-সংখ্যান'।
এমনিকে এই গ্রহে বিচিত্র-সব পরিসংখ্যান আছে। আমেরিকার ঘটনা। আমেরিকার পরিদের সম্ভবত লাজ কম। তাই তারা আঁক কষে বের করে, "...শতকরা পঁয়তাল্লিশ জন মেয়ে বলেছে প্যাট্রিক সোয়াজের পাছা সবচেয়ে সুন্দর..."। (সুত্র: আমেরিকা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল)
আমাদের দেশের পরিরা লাজুক নইলে এখানেও আমরা পেতাম, "...শতকরা নিরানব্বই দশমিক নয় নয় জন মেয়ে বলেছে অনন্ত জলিলের পাছা সবচেয়ে সুন্দর...। শতকরা এত জন বলেছেন জলিলের বাচনভঙ্গি সুন্দর...!"।
(ডা. নিজাম চৌধুরী আমাকে একবার বলছিলেন, যেদিন জলিল শুদ্ধ করে বলা শুরু করবে সেদিনই তার ক্রেজ শেষ হয়ে যাবে।)
কেন-কেন? জলিল শুদ্ধ করে বলতে যাবে কেন? আরে, এই বঙ্গাল দেশে বাংলা ভাষাটা শুদ্ধ করে বলে ক-জন? একজন অধ্যাপক, একজন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ [০] বাংলা ভাষাটাই মৃত্যুর আগপর্যন্ত শুদ্ধ করে বলতে শিখবেন না।


'জিনসংখ্যান'
জিনদের মধ্যে নাকি ভাল জিন যেমন আছে, আছে খারাপ জিনও। খারাপ জিনেরা যে 'জিনসংখ্যান' করে তার নমুনা:
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, "দেশের ৯৫ লাখ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে"

প্রথম আলো যথারীতি তাদের 'পেয়ারের লুক' মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামালের মুখ দিয়ে বলিয়েছে এটা। এরা পারেও!
আসলে মিডিয়া পারে না এমন কোনো কাজ নেই- পারে না কেবল ছেলেকে মেয়ে, মেয়েকে ছেলে বানিয়ে দিতে। কী সর্বনাশ, এটাও তো একবার করে দেখিয়েছিল এরা। [১] 

"দেশের ৯৫ লাখ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে"। অতি উত্তম। কিন্তু কবে-কোথায়-কেমন করে-কোন পদ্ধতিতে এই 'জিনসংখ্যান' করা হয়েছিল এটা আমাদের জানার উপায় নেই। আনুমানিক শতকরা এতো ভাগ মানুষ বললেও না-হয় চিঁ চিঁ করে খানিকটা মেনে নেয়ার ভঙ্গি করা যায়। কিন্তু যখন বলা হবে দেশের ৯৫ লাখ মানুষ তখন তো নড়েচড়ে বসতে হয়।
কারণ এই 'জিনসংখ্যান' আমার জন্মের পূর্বে বা বোঝার মত জ্ঞান হওয়ার আগে করা হয়ে থাকলে আমার কোনো বক্তব্য নাই কিন্তু আমার জন্মের পর বা 'বুঝ' হওয়ার পর এই 'জিনসংখ্যান' করা হয়ে থাকলে আমার কথা আছে। কই, আমার কাছে তো কেউ জানতে আসেনি, 'আইচ্ছা, কইনছেন দেখি, আপনে কি বিষণ্নতায় ভুগতাছেন, আপনে কি লুডিওমিল খান'?


হাতের নাগালে যাকে পেয়েছি তাকেই জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু কেউ তো বলল না তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তাহলে? নাকি কোনো মেশিন আছে এমন? যেমন ধরা যাক, আমি রেলগাড়িতে করে যাচ্ছিলাম কোথাও, ব্যস আর যায় কোথায়! পুরো রেলগাড়ি স্ক্যান করা শ্যাষ। রেলগাড়িতে ক-জন মানসিক রোগি এর একটা প্রিন্ট আউট গাড়ির পেছন দিয়ে বেরিয়ে, 'হাওয়ামে উড়তা যায়ে'। আহা, যাবেটা কোথায়! খপ করে ধরে ফেললেন। মানসিক রোগি, সরি, মানসিক ডাক্তার; ধুর কি লিখছি ভুলভাল; মনেরোগ চিকিৎসক ধরে ফেললেন। হতে পারে না এমনটা, বেশ পারে...।

আমার কাছে কেউ আসেনি কিন্তু সত্যটা এবেলা আমি স্বীকার গেলুম, এই শর্মা বিষণ্নতায় ভুগছে। গোপনে 'খপর' নিয়ে দেখেছি, আমি ব্যতীত যে দু-চারজন পাঠক ছিলেন তারা আমার বিষণ্নতার লেখা পড়ে লম্বা দিয়েছেন। এখন আমি নিজেই নিজের পাঠক, মনিটরে ঠ্যাং তুলে আরাম করে নিজের লেখা নিজের পড়ি। কিন্তু এরা জানল কেমন করে?

যখন আমরা এটা পড়ি, কী উল্লসিত বোধই না করি,
"...যেমন গত বছর প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৮ বছর"।
৬৮ বছর? শোনো কথা! যে দেশের অধিকাংশ মানুষই অপুষ্টির শিকার সেই দেশের মানুষের গড় আয়ু নাকি ৬৮ বছর! চোখ বন্ধ করে খানিকটা ভাবা যাক কেউ আশিতে মারা যাবে কেউ চল্লিশে কিন্তু দিনশেষে হিসাব হবে এমন, গড় ৬৮ বছর।
এই 'জিনসংখ্যান' করার সময় কেমন করে জটিল আঁক কষা হয়েছিল এটা জানতে আমার আগ্রহের শেষ নাই। জিন মহোদয়গণ কি জানেন আমাদের দেশে অধিকাংশ মেয়েদের বিয়ে হয় অপ্রাপ্ত বয়সে। যে বয়সে গোল্লাছুট খেলার কথা সেই বয়সে তার কোলে একটা শিশু। এই অপুষ্ট মা, ততোধিক অপুষ্ট শিশু [২] শত বছর বাঁচে বলে মনে হয়, নাকি?
ওহো, যে দেশের জনসংখ্যা আমরা একবার শুনি ১৫ কোটি, ক-দিন পরই শুনি ১৬ কোটি, তারপরই শুনি ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে সেই দেশে আমরা কেমন অনায়াসেই না বের করে ফেলি গড় আয়ু ৬৮ বছর। অংক করার সময় এক-দুই-দেড় কোটি কোনো বিষয়ই না।

'প্রেতসংখ্যান':
প্রেতদের নিয়ে একটাই কথা বলা চলে এরা অতি বদ। আকাম-কুকামই এদের কাজ। তো,প্রেতসংখ্যানটা ব্লগের ভাষায় বলি, হয়, 'সেরামই' হয়।
একটা বিজ্ঞাপন ঘটা করে ছাপা হত, বাংলানিউজটোয়েন্টিফরডটকম-এর। "প্রতিদিন ৩ কোটি ৫০ লাখ পাঠকের প্রিয় অনলাইন"

বেশ-বেশ! খুবই আনন্দিত হলুম। ২০১১ সালে একটা হিসাব দেয়া যেতে পারে এখানে। মোট জনসংখ্যার মাত্র সাড়ে তিন ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমাদের দেশে। মোটা দাগে বললে ৫০ লক্ষ মানুষ। "5,570,535 Internet users as of Dec, 2011; 3.5% of the population, according to ITU." [৩]
"...By 2011 however, the number of Internet users in Bangladesh had seen phenomenal growth of over 900% bringing the total number of users to 5,501,609 (3.5% of the total population...)।" [৪] 


যে দেশে মাত্র ৫০ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেই দেশে এই ওয়েব-পোর্টালটায় প্রতিদিন 'গুছনেংটি' দিয়ে সাড়ে তিন কোটি মানুষ হামলে পড়ছে। কোথায় খাওয়া, কোথায় ঘুম, কোথায় হাগু করা। সব পোর্টাল ছেড়েছুঁড়ে কেবল এইটার উপর এসে বসে থাকা! ভাগাড়ে যেমন সমস্ত কাক এসে জড়ো হয়।
এই সব জটিল কচকচানিতে না-গিয়ে এই চালবাজ ব্যাটাদের কেবল এটাই জিজ্ঞেস করি, তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নিলাম, প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি হিট হয়েছে। আহেম। কিন্তু সাড়ে তিন কোটি হিট হলেই সাড়ে তিন কোটি পাঠক এটা কোন গর্দভ বলল আপনাদেরকে? একজন পাঠক বিশ-পঞ্চাশবার ক্লিক করলে এটাকে ক-বার ধরা হবে? এই চালবাজিটা এরা শিখেছে প্রথম আলোর কাছ থেকে। প্রথম আলো দিনের-পর-দিন এই কাজটাই করত। গর্বের সঙ্গে প্রথম আলো লিখত, "আজ অনলাইন পাঠকসংখ্য ৭ লাখ..."। [৫]


আমাদের মানুষদের জন্য 'মানুসংখ্যান' কবে হবে সেটাই দেখার অপেক্ষায়...। 

সহায়ক সূত্র:
০. ইয়াজউদ্দিন...:
http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_8885.html 
১. ছেলেকে মেয়ে, মেয়েকে ছেলেতে রূপান্তর: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_04.html
২. অপুষ্ট জাতি...: http://www.ali-mahmed.com/2012/01/blog-post_26.html
৩. internetworldstats: http://www.internetworldstats.com/asia/bd.htm
৪. wikipedia: http://en.wikipedia.org/wiki/Internet_in_Bangladesh
৫. পাঠকসংখ্যা...: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_28.html

No comments: