Search

Wednesday, October 3, 2012

আপনার জন্য খুব মায়া হয়!

মহাবিশ্বের [০] তুলনায় কী ক্ষুদ্রই না আমাদের এই ছোট্ট গ্রহ। এখানেই গাদাগাদি করে থাকে ৭০০ কোটি মানুষ। শোনো কথা, মানুষের চেয়ে নাকি পিপড়া বেশি, এমন কী ওজনেও!
আমাদের এই একটাই জীবন অথচ এই জীবনটাকে আমরা কত প্রকারেই না অহেতুক জটিল করি। যে শরীরটা নিয়ে আমাদের ভাবনার শেষে নেই সেই শরীরটা আসলে কী? শরীরের ৯৬ ভাগ জুড়েই আছে চারটা মৌলিক উপাদান অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন। বাকি চার ভাগের রসায়নটাতেই কী অদেখা ম্যাজিক লুকিয়ে থাকা?

যে ম্যাজিকের বিভ্রান্তিতে কোনো প্রিয়মানুষের শবের পাশে দাঁড়িয়ে এ ভাবনা খেলা করে, আহা, কী ম্যাজিক গো, কী তামাশা, মানুষটা এই ছিল এই নাই। নাইরে নাইরে নাই! আসলে তখন কেমন ভাবনা খেলা করে এটা গুছিয়ে বলা মুশকিল!
কল্পনা চাওলা রকেট থেকে যেমন এই পৃথিবীটাকে দেখে বিচিত্র ভাবনায় হুটোপুটি খান, পৃথিবী নামের এই ছোট্ট গ্রহের লোকজনেরা কীসব তুচ্ছ কারণেই না একে-অপরের প্রতি ঝাপিয়ে পড়ে। আফসোস, সেই কল্পনা চাওলাও কোনো এক কল্পনায় হারিয়ে যান।

যে মহাবিশ্বের বিস্তার ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ সেই মহাবিশ্বের অবশেষে কী গতি কে জানে! আমরা আমাদের মস্তিষ্কের ১০০ বিলিয়ন নিউরণ নিয়েও কেবল কল্পনাই করতে পারি! ছোট্ট এই গ্রহের মঙ্গলের জন্য যারাই চেষ্টা করেছেন তাঁরা কে ঠিক কে বেঠিক এটা এখানে আলোচনা করা আমার 'কম্মো' না। আর আমি গজ-ফিতা নিয়ে ঘুরে বেড়াই না যে মেপে-টেপে অবলীলায় বলে দেব অমুক তমুকের চেয়ে খানিকটা খাটো!  আমি খলিফাও না, ইশ্বরও না যে ফিতা গলায় ঝুলিয়ে বিমর্ষমুখে ঘুরে বেড়াব।

কিন্তু যখন এঁরা বলেন, "...তুমি কথা না শুনে ভ্রষ্ট হয়ে অন্য দেবতাদের কাছে সেজদা কর ও তাদের খেদমত কর; তবে আজ আমি জ্ঞাত করছি, তোমরা একেবারে বিনষ্ট হবে...।" (তৌরাত শরীফ: পঞ্চম খন্ড: দ্বিতীয় বিবরণ, ১৭/ ১৮)
"স্বধর্ম দোষযুক্ত হইলেও পরধর্ম হইতে বড়। যে স্বধর্ম পালন করে তাহার কোনো পাপ হয় না" (শ্রীমদ্ভগবদগীতা, অষ্টাদশ অধ্যায়, ৪৭)
"শরীয়তের প্রত্যেকটা হুকুম যে পালন করিয়া না চলে তাহার উপর অভিশাপ থাকে।" (ইঞ্জিল শরীফ, ৯ম খন্ড: গালাতীয়) 
"...তোমাদের মধ্যে যে-কেউ নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যাবে এবং অবিশ্বাসী হয়ে মারা যাবে, তাদের ইহকাল ও পরকালের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে...।" (কোরান, ২ সুরা বাকারা: ২১৭)
(প্রকারান্তরে বলে রাখা যেতে পারে, বুদ্ধ কিন্তু অসম্ভব বুদ্ধিমান ছিলেন বলেই অনেক জটিলতা এড়িয়ে গেছেন। তাঁকে যখন দশটি প্রশ্ন করা হয়েছিল তিনি এর কোনোটিরই উত্তর দেননি। তিনি স্পষ্ট করে বলতেন, 'আমি দেবতা নই'। -Octavio Paz: Las Palabres del arbol, 1998) 

এ সত্য, গোলটা বাঁধে ঠিক তখনই যখন সবাই চান তাঁর সন্তান দুধেভাতে থাকুক [১]। এর প্রভাব কি পড়ে না আমাদের মধ্যে? পড়ে নিশ্চই! নইলে কী আর আমরা এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষকে তাচ্ছিল্য করি- নিজেকে, নিজের ধর্মকেই সেরা ভাবি...! তাই কী ভুলে যাই, এক মানুষ বহু মানুষে বিভক্ত হয়। যেমনটা মানুষের শরীর বিভক্ত হয় হাতে, হাত বিভক্ত হয় আঙ্গুলে, কাজের সুবিধার জন্য। এত ধর্ম মানুষের কল্যাণেই জন্য কিনা, কে জানে! কে জানে, ঈশ্বরকেও ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করা হয়েছে কিনা এ কারণে, হয়তো বা!

এমনিতে কোনো কোনো মানুষকে দেখে আমি হাঁ হয়ে যাই তখন বুকের ভেতর থেকে তীব্র বেদনা পাক খেয়ে উঠে কেন এই মানুষটা তাঁর মত, কেন আমি ছলিমুল্লা আমার মত! তেমনই একজন মানুষ আমির খান। এই ভদ্রলোকের অসাধারণ অনুষ্ঠানগুলোর একটা দেখছিলাম, 'সাত্যমে বাজায়তে' (সাত্য...হিন্দি শব্দটা ঠিক লিখলাম কি না এটা জানার জন্য হিন্দিতে ডাব করা 'ডোরেমন' যেসব শিশুরা দেখে এদের অথবা 'ঘার ঘার কা কাহানি' যারা দেখেন সেইসব মহিলাদের জিগেস করতে হবে।)
তো, ওই অনুষ্ঠানে একজন আমির খানকে বলছিলেন, "...বৃন্দাবনের অতি পবিত্র জলের উৎস হচ্ছে দিল্লির মলমূত্র"।
সত্যটা হচ্ছে দিল্লির সমস্ত মল-মূত্র প্রবাহমান যে নদিতে ফেলা হচ্ছে তা গিয়ে মিশছে বৃন্দাবনে গিয়ে। বলা হয়ে থাকে ওখানকার নদিতে ডুব দিলে পাপমুক্তি হয়। অথচ কী অবলীলায়ই না তিনি এই সত্যটা উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন! তিনি নিশ্চিত ছিলেন ধর্মটা কাঁচের বাসন না যে হাত থেকে পড়ল আর টুকরো-টুকরো হয়ে গেল।

কারো ধর্মের প্রতি আবেগ থাকবে কি, থাকবে না এটা নিয়ে আমি কুতর্ক করতে চাচ্ছি না কিন্ত পাশাপাশি আমরা এটা ভুলে যাই কেমন করে, "যদি কেউ কোনো মানুষের জীবন বাঁচায়, তবে সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচাল"। (সুরা মায়িদা: ৩২) 
মানুষের জীবনের কথাই তো বলা হয়েছে, নাকি? বলা তো হয়নি অমুক ধর্মের লোকের জন্য এটা প্রযোজ্য তমুকের জন্য না! শত-শত বছর ধরে টিকে থাকা ধর্মগুলোর নিজেদের প্রতি আস্থা কী দুর্বল-ঠুনকোই না! মনে হয় কাঁচের একেকটা বাসন! যেন এর গায়ে এটা লেখা থাকা আবশ্যক, ইহা কাঁচের তৈয়ারি, সাবধানে নাড়াচাড়া করা আবশ্যক।

এই গ্রহে সবচেয়ে বেশি মুসলমান ইন্দোনেশিয়ায়। "... The largest Muslim country is Indonesia home to 12.7% of the world's Muslims followed by Pakistan (11.0%), India (10.9%), and Bangladesh (9.2%)...." [২] ওখানে ধর্ম গেল-গেল রে বলে খুব একটা রব শুনি বলে তো মনে পড়ছে না। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের 'মুছলমানেরা' ইসলাম ধর্মের দন্ডটা শক্ত করে ধরে না-রাখলে কী যে হতো এটা ভাবতেই শিউরে উঠি! পরে যোগ হয়ে আফগানিস্তান এখন দৌড়ে 'ফাস্টো' হয়ে যায়।

ছবি ঋণ: দৈনিক সমকাল
কবে থেকে ধর্ম এটা শেখানো শুরু করল, ধর্মের নামে কেমন করে একটা মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই দু-ভাগ 'হেমিকোর্পেরেকটমি' করা যায়! আহা, সে তো মানুষকে না, পশুকে রসিয়ে রসিয়ে...।
পশু জবাই করে নাকি মনের কালিমা দূর হয়। মাহাবুব ভাই নামের আমার এক সিনিয়র এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা পশুর নাকি এতে অনেকখানি আরাম হয়।

ধর্মের নামে বেচারা পশুদেরই এ ধকলটা সইতেই হয়। আহা, বেচারা পশু মহোদয়গণ! অবশ্য পশু বেচারাদের বেদনার কথা আমাদের জানার উপায় নেই কারণ এদের পক্ষে কথা বলার জন্য এদের তো 'পাহেলে রোশনি'-প্রথম আলোর মত চালু পত্রিকা নেই যারা 'সন্দেহে রোহিঙ্গা...' [৩] নামে একের-পর-এক সন্দেহের তীর ছুঁড়তে থাকবেন (শ্লা, কবে থেকে এইসব পত্রিকা সরকারী মুখপাত্র হিসাবে কাজ শুরু করল!) বা এদের তো আর পারিবারিক রাজনৈতিক দল নেই যারা 'পশু ক্লেশ নিবারণ' সংস্থার নামে একদল অন্যদলের গায়ে কাদা ছিটাবেন।
ফেসবুকের মত 'পশুবুক' নেই, নেই সেখানে সেসব দামাল ছেলেরাও; যারা অকাট্য আঁক কষে বুঝিয়ে দেবেন কোনো এক নির্বাচনের পরপরই যে অন্যায় হয়েছিল সেই অন্যায়ের ধারাবাহিকতায় এখন এটা করাটা মোটেও অসমীচীন নয়। বরং তখন নারীদের উপর চরম নির্যাতন হয়েছিল যা এবার হয়নি। এরা আবার খুব রসিয়ে রসিয়ে তখনকার এক ঘটনার উদাহরণ দেন, ...বাবারা তোমরা একজন একজন কইরা আসো...। আবার ট্যাগের নামে বিরাট চামচ-হাতা নাড়াতে নাড়াতে দেশপ্রেমিক স্বঘোষিত নব্য মুক্তিযোদ্ধা সেই চমচমের চকচকে কাগজে মুড়িয়ে আমাদের নাকের সামনে ঝোলাবেন। সেটা পড়ে আমরা রক্ত চাই-রক্ত চাই টাইপের এক লেখা প্রসব করব। সেটায় অনেক লাইক পড়বে।

আচ্ছা, ওখানে না মিলিটারি গিজগিজ করে? আমাদের মিলিটারিরা কবে থেকে এমন সুশীল হল? যারা ডিসির আদেশের জন্য ঝিম মেরে বসে ছিল! তারা কি তখন শহীদ কাদরীর কবিতা পাঠ করছিল:
"ভয় নেই/ আমি এমন ব্যবস্থা করব যাতে সেনাবাহিনী/ গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/ মার্চপোষ্ট করে চলে যাবে।..."

এই ডিসি-এসপির প্রমোশন হলে আমি বিন্দুমাত্র অবাক হব না। আর আমি আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অবশ্য দোষ দেই না, যে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা একই সময়ে ৬৪টা জেলায় বোমা ফাটাবার খবর রাখেন না সেই দেশে এই খবর রাখা কেমন করে সম্ভব?
লে বাবা, জাতীয় দৈনিকে এসেছে, এখন আবার 'লটুন' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, "...বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে প্রতি ঘরে ঘরে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়"।
আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। তবে একটা উপায় বাতলে দিতে পারি সেটা হচ্ছে, ঘরে-ঘরে, প্রতি ঘর থেকে একজন সদস্যকে নিরাপত্তা বাহিনীতে নিয়োগ দান করা। লটুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শোনেন, ওরা করবে কী, নিজেরাই নিজেদের ঘর পাহারা দেবে, বেতন দেবেন সরকারের পক্ষ থেকে আপনি। ভাল হয় বেতনটা বাড়িতে দিয়ে গেলে। আহ, যাক অবশেষে রুটিরুজির একটা পথ হচ্ছে আমার, কী আনন্দই না হচ্ছে...!

আমি বারবার যেটা বলে আসছিলাম, দেশটা এখন ফরমালিনে চুবানো আছে কেবল, যে-দিন ফরমালিন সরিয়ে নেয়া হবে সেদিন ভক করে গলিত শবের গন্ধটা ছড়িয়ে পড়বে। বুদ্ধ বেচারার উপর অহেতুক রাগ দেখানোটা আসলে শুধুশুধুই; এটাই আসলে আমাদের আসল স্বরূপ।

আসলে এর জন্য প্রকৃতপক্ষে কারা দায়ি এটা আমাদের কখনই জানা হবে না। কেবল যেটা জানা যাবে, রামুতে ঈশ্বর খুব কাঁদছিলেন...।

*'সাত্যমে বাজায়তে' এর ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন, s m mursalin (http://www.facebook.com/mursalin71)। হবে "সত্যমেব জয়তে"তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।

**অফ টপিক: পোড়া ত্রিপিটক দেখে যারা উল্লাস করছেন তাদেরকে ধার করা কথাটাই বলি: 
"...First they came for the jews. I was silent. I was not a jew. Then they came for the communists. I was silent. I was not a communist. Then they came for the trade unionists. I was silent. I was not a trade unionist. then they came for me. There was no one left to speak for me". (Martin Niemoller)

***বলছিলাম আমাদের আসল স্বরূপের কথা। চমৎকার এক লেখা লিখেছেন মশিউল আলম, "...মুসলমানদের বাড়ি ও দোকানে একটি ঢিলও পড়েনি। এই কাজ শুধু বাইরের লোকেরা এসে করেনি, কারণ বাইরের লোক জানে না, কোন বাড়িটা বৌদ্ধের কোনটি মুসলমানের...। [৪]

সহায়ক সূত্র:
০. মহাবিশ্ব...: http://www.ali-mahmed.com/2009/05/blog-post_07.html
১. তাঁদের সন্তান থাকুক...: http://www.ali-mahmed.com/2009/04/blog-post_06.html 
২. উইকি...: http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_countries_by_Muslim_population
৩. পাহেলে রোশনি: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2012-10-02
৪. কে ওদের অভয় দেবে?: http://eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2012-10-03 

4 comments:

Unknown said...

অনেকদিন পর।আশা করি বিরতিটা ছোট হয়ে আসবে।
শব্দটা মনে হয়,
"सत्यमेव जयते"
"সত্যমেব জয়তে"

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

"...শব্দটা মনে হয়,'सत्यमेव जयते' 'সত্যমেব জয়তে'"
আপনারটাই ঠিক হবে কারণ...। কাউকে বলবেন না যেন, আমার হিন্দি জ্ঞান ডোরেমন-দেখা শিশুদের প্রায় কাছাকাছি :D

"অনেকদিন পর।আশা করি বিরতিটা ছোট হয়ে আসবে।"
সম্ভবত না, মনে হয় না...
হালকা চালের কোনো এক লেখায় লিখেছিলাম, অবশ্য আমার সমস্ত লেখাই হালকা চালের। তো, হালকারও চেয়ে হালকা কোনো এক লেখায় লিখেছিলাম, লেখালেখির ভূত, রাস্কেলটাকে খুঁজছি; পেলেই হয়, পেটা গেলে ফেলব। হারামজাদা আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে!

তবে সলাজে এও স্বীকার যাই, পেটা কিভাবে গেলে ফেলা যায় এই পদ্ধতিটা ভাল জানি না। থাকুক, ভূত-রাস্কেলটাকে পেলে না-হয় পদ্ধতিটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

মোদ্দা কথা, আজকাল আর লিখতে ভাল লাগে না। ধুর, কী হয় লেখালেখি করে...। এই দেশটা এখন মনে হয় আমার না। এ দেশের লোকগুলোকে অপরিচিত মনে হয়। দলছুট আমার কেবলই মনে হয় একটা শীতনিদ্রার প্রয়োজন। বড় প্রয়োজন।

ভাল থাকুন। @s m mursalin

sourav said...

সত্যমেব জয়তে'"@s m mursalin
আপনি ফাস্ট হয়া গেলেন্ন ":-(

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

তাই তো দেখছি :) @ sourav