ইমদাদুল হক মিলন কালের কন্ঠে মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন, 'নষ্ট শিক্ষক' [১]। লেখাটা সময়োচিত-সময়োপযোগী, কাজের সময়ে কাজের একটা লেখা হয়েছে এই নিয়ে আমার কোনও অমত নাই কিন্তু এই লেখাটা পড়ছিলাম আর ভয়ে কাঠ হচ্ছিলাম, এই রে, মিলন সাহেব না হাত খুলে লিখে ফেলেন! এক জায়গায় তিনি লিখেছেন:
"...অন্য ছাত্রীরা চলে যাওয়ার পর পরিমল দরজা বন্ধ করে দেন। মেয়েটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মুখ বেঁধে ফেলেন। মেয়েটি হাত-পা ছোড়াছুড়ি শুরু করলে ওড়না দিয়ে তার দুহাত বেঁধে ফেলেন। গায়ের জামা-কাপড় খুলে তার ছবি তোলেন, তারপর চালান পাশবিক নির্যাতন...।"
আমার ধারণা, তিনি হাত খুলে লিখতেন
, আরও বিস্তারিত লিখতেন। ফাটিয়ে ফেলতেন কিন্তু ঠেকায় পড়ে সংযম দেখিয়েছেন। হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে গেছে, ওয়াল্লা, আমি তো এই 'পরতিকার' সাংবাদিক না, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক! (শাহআলম সাহেবের নোংরা ছিটাবার গুরু দায়িত্ব এখন যে তাঁর 'লরোম' কাঁধে!)
এখানে যে কথাটা তিনি এক বাক্যেই সারতে পারতেন, মেয়েটির শ্লীলতাহানি হয়েছে। তা না করে তিনি বেশ ফেনিয়ে লিখেছেন, মেয়েটি কিভাবে হাত-পা ছুঁড়েছে... ইত্যাদি ইত্যাদি। খাসলত যাবে কোথায়- এটা যে তাঁর বহু বছরের অভ্যেস!
লেখক মানুষ, এরা ফ্যাক্টের সঙ্গে ফিকশন মিশিয়ে লোফালুফির খেলা খেলেন নইলে বলতাম, বর্ণনাকারী স্বয়ং ওখানে উপস্থিত ছিলেন।
মিলন সাহেবদের মত লেখকদের এই এক সমস্যা, এঁরা পাঠকদের আস্ত নির্বোধ ভাবেন। এঁদের ধারণা পাঠক তাঁদের লেখা পড়ার সময় ব্রেন ফ্লাওয়ার-ভাসে জমা রেখে পড়তে বসেন। এঁরা যখন ধর্ষণের বর্ণনা দেন তখন এমন বিশদ বর্ণনা দেবেন পড়ে মনে হবে এঁদের হাতে কলম দিলে খাতায় আঁক কষে দেখিয়ে দিতেন।
তিনি যদি এটা লেখেন, বাথরুম সারার জন্য ট্রাউজার-প্যান্ট-লুঙ্গি-চাড্ডি খোলার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমি মোটেও অবাক হবো না। মিলনদের মত লেখকদের ধারণা পাঠক আস্ত গবেট- বাথরুম সারার ভঙ্গি কেমন পারলে ছবি একেঁ বুঝিয়ে দেন!
এক লেখায় আমি বলেছিলাম, মিলন সাহেবের অধিকাংশ বইয়ের নাম শুরু হয় ভালবাসার 'ভ' দিয়ে [২], এতে তেমন সমস্যা নেই। যার যেমন রুচি!
কিন্তু তাঁর এমন প্রচুর রগরগে (রগরগে শব্দটা ভদ্রতা করে বললাম, আসলে হবে পর্ণো। এখানে পর্ণো শব্দটা লিখলাম না :D ) লেখা আছে যেটা পড়ে ধন্ধ লাগে এই লেখকের হাত দিয়ে বেরিয়েছে পরাধীনতা, নুরজাহানেরর মত উপন্যাস!
যে বয়সে ছেলে-মেয়েরা পুতুল খেলে সেই বয়সের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিনি এমনসব কর্মকান্ড করিয়েছেন, যেসব ভাষা ব্যবহার করেছেন; তখন কেবল একটা কথাই মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে, ঈশ্বর, এই লেখকের শব্দ-শ্লীলতাহানি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করো। এই সব ভয়াবহ লেখা অল্পবয়সী পাঠকদের মস্তিষ্ক নিয়ে কি খেলা খেলে এ নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না।
পরিমলদের মত অমানুষদের হাত থেকে আমরা নিস্কৃতি চাই, কঠিন শাস্তি কামনা করি কারণ পরিমলরা কেবল একজন মানুষই না, অভিভাবকসম। একজন শিক্ষক ঠেসে ঠেসে আমাদের মাথায় আলো ভরে দেন, এই তাঁর কাজ। আলোর পাশাপাশি যখন অন্ধকার ছিটিয়ে দেন স্বভাবতই তখন আমরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি। বিচারের কাঠগড়ায় তাকে দাঁড় করাই।
একজন লেখকেরও এই আলোর খেলার, এই আলোময় কাজেরও পরিধি ব্যাপক। কিন্তু আমাদের মাথায় আলোর বদলে অন্ধকার ভরে দেয়ার জন্যে তাঁর বিচার হয় না, আফসোস! বরং আমরা তাঁকে মাথায় তুলে রাখি!
সৈয়দ হকের 'নিষিদ্ধ লোবানে' এক পাকিস্তানি মেজর বিলকিসকে শ্লীলতাহানি করার পূর্বে বিলকিসের সঙ্গে যে আলাপচারিতা করেন বলে সৈয়দ হক রসিয়ে রসিয়ে-তারিয়ে তারিয়ে যে বর্ণনা দিয়েছেন, হুমায়ূন আজাদের ভাষায় তা হচ্ছে:
"...পাকিস্তানি মেজর নয়, আসলে লেখকই (সৈয়দ হক) মানসিক ধর্ষণ করেছেন বিলকিসকে। মগজে পচে যাওয়া গন্ধে ভরে আছে তার সমস্ত মন্তব্য"।
মিলন স্যার 'নষ্ট শিক্ষক' লেখার এক জায়গায় এসে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, "...শিক্ষকরাও কেউ কেউ কেন এভাবে নষ্ট হয়ে গেলেন? আমরা এখন কার কাছে যাব, কোথায় যাব? কে দেখাবে আলোর পথ?"
মিলন স্যারের কথা ধার করে আমিও এই প্রশ্ন করতে চাই, লেখকরাও কেউ কেউ কেন এভাবে নষ্ট হয়ে গেলেন? আমরা এখন কার কাছে যাব? কে দেখাবে আলোর পথ?
সহায়ক সূত্র:
১. নষ্ট শিক্ষক: http://www.dailykalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=Sports&pub_no=576&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=169856
২. ইমদাদুল হক মিলন...: http://www.ali-mahmed.com/2010/01/blog-post_29.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Saturday, July 9, 2011
নষ্ট শিক্ষক- নষ্ট লেখক!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
6 comments:
সুন্দর লেখা।
কি বলার কথা কি বলছি ?
ক শনার কথা কি শুনছি ?
:) @মুরাদুল ইসলাম
অবোধ্য! @Easy Social Bookmarking
ঠিক বলেছেন। আসলেই বর্তমানে আমাদের লেখক+সিনেমা নির্মাতা সবাই হলো ধর্ষন সম্পর্কে পিএইচডি করা। তারা অপরকে ধর্ষন করা শিখান। কউ লেখালেখি করে আর কেউ সরাসরি ভিলেন এর মাধ্যমে অভিনয় করিয়ে
হুঁ। এরা আমাদেরকে বড়ো নির্বোধ ভাবেন। পাঠকদের প্রতি এঁদের আছে তাচ্ছিল্য, স্রেফ তাচ্ছিল্য @manik raton
Post a Comment