কখনও কখনও আলোর ছটায় ফকফকা জ্যোৎস্নাকে ম্রিয়মান মনে হয়! সাধারণ আমরা যখন অসাধারণের মুখোমুখি হই তখন কেমন আড়ষ্ট হয়ে যাই। কেবল জনান্তিকে বলি, আহারে-আহারে, ভাগ্যবান হলুম বটি!
তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির উদ্দেশে শেখ সেলিম সাহেব বলেন, "...আপনারা যা পারেন করুন গিয়ে
। দেশের মানুষের ভালোর জন্য যা করার তাই আমরা করবো। আপনারা চিৎকার করতে থাকেন। যুক্তিসঙ্গত কিছু থাকলে নিয়ে আসুন।
আওয়ামী লীগই এই দেশকে জন্ম দিয়েছে। জন্মদাতা কোনো সন্তানের ক্ষতি করতে পারে না।" (bdnews24.com) [১]
আওয়ামী লীগই এই দেশকে জন্ম দিয়েছে এই নিয়ে এখন আর বাহাসে যাই না কারণ কারও জন্মের পেছনে কেবল বাবার হাত থাকে, না মারও, নাকি অন্য আর কারও কারও হাত ছিল; এই দেশ জন্মের সময় বয়সে কুলায়নি বলে এটা বিশেষ মনে নাই। যেটা চোখে দেখিনি এটা নিয়ে কুতর্ক করার জোর পাই না! সেলিম সাহেব সেসময় যখন বয়োপ্রাপ্ত ছিলেন তখন তাঁর কথাই ঠিক হবে!
তর্কাতর্কিতে না-গিয়েও ধরে নিলাম কেবল আওয়ামী লীগের লোকজনেরাই যুদ্ধ-টুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। বা এই দেশের সমস্ত যোদ্ধাই আওয়ামী লীগার ছিলেন...।
কিন্তু সেলিম সাহেবের এই কথার সঙ্গে একমত হতে পারলুম না বলে বড়ই ক্লেশ বোধ করছি। "জন্মদাতা কোন সন্তানের ক্ষতি করতে পারে না", এই কথাটা! আমাদের দেশেই এমন উদাহরণের অভাব নেই, জন্মদাতা সন্তানকে কোপ দিয়েছে, এসিডে পুড়িয়েছে। আহা, নইলে পত্র-পত্রিকায় 'পাষন্ড পিতার কান্ড' এই জাতীয় খবরগুলো পড়ে আমরা শিহরিত হবো কেমন করে? আমরা দেশপ্রেমিক বলে বিদেশের দিকে হাত বাড়াই না আর নইলে এই উদাহরণ এখানে দেয়া যেত, আমেরিকায় একজন জন্মদাতা তার সন্তানকে কুচিকুচি করে রান্না করে খেয়ে ফেলেছে।
সেলিম সাহেবের সমস্ত কথার সঙ্গে আমি একমত। তিনি যদি বলেন, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে, এটাও; কেবল এই কথাটা ব্যতীত।
মাত্র ক-দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জটিল এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, "...আমার চেয়ে কে বেশি দেশপ্রেমিক..."? [২]
এটা বড়ো মুশকিল হলো। না-না, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথা অবিশ্বাস করছি না কিন্তু আমাদের কাছে তো গজ-ফিতা নাই যে চট করে মেপে ফেলব।
এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। সাধারণ একজন মানুষের কথা বলি:
"মশিহুর রহমান। তিনি স্ত্রী, পুত্র, বন্ধুবান্ধবের শত-অনুরোধেও পালিয়ে যাননি। তার এক কথা, নিজে নেতা হয়ে, নির্দয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাবো জীবন রক্ষা করতে? আমার পক্ষে এটা সম্ভব না।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। পাকিস্তানীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে কাগজে সই করার জন্য মশিহুর রহমানকে বললে তিনি রাজী হননি। শুরু হয় তাঁর উপর অমানুষিক অত্যাচার। তাঁর শরীরের নানা অংশ আগুনে পোড়ানো হয়, তাঁকে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়, চাবুক মেরে সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়। তারপরও তাঁকে নত করা যায়নি!
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রথমে তাঁর বাম হাত কেটে ফেলে, যেন তিনি ডান হাতে সই করতে পারেন। অপার্থিব যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন কিন্তু তারপরও তাঁকে রাজী করাতে না পেরে তাঁর ডান হাত কেটে ফেলা হয়।
প্র্রতিদিনে একে একে তাঁর দুই পা, দুই হাতসহ শরীরের একেকটা অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। তারপরও মশিহুর রহমান বলেছেন, আমি জনগণের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারব না, লিখে দেব না। একসময় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। (সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৪৮)
আমাদের কাছে দেশপ্রেম মাপার ফিতা থাকলে বেশ হতো। চোখ বুজে নিশ্চিত হওয়া যেত। থাকলে বেশ হতো। আহা, নাই, আফসোস...।
...
এদিকে দেখি আরেক কাহিনী! শেখ হাসিনা ইয়া বড় বড় কলাম লিখছেন পত্র-পত্রিকায়। সেটা দোষের না কিন্তু আজ (২৭ জুন, ২০১১) প্রথম আলো [৩] এবং কালের কন্ঠ [৪] উভয়েই শেখ হাসিনার একই লেখা 'ভালোর পসরা' ছাপিয়েছে। একই লেখা। একযোগে প্রচারিত। ওহো, ভুল বললাম, একযোগে প্রকাশিত! মনে হচ্ছে প্রেস রিলিজ!
মিডিয়া আমায় করেছে বাক্যহারা! 'কেন্ডেসটেং', 'হাপটিল্লা'।
* 'কেন্ডেসটেং'-এর অর্থ আমি জানি না! 'হাপটিল্লা' সাদত হাসান মান্টোর নিজস্ব শব্দ। যার অর্থ মান্টো নিজেও জানতেন না। জানতে না এটা সম্ভবত ভুল বললাম, হয়তো জানতেন কিন্তু মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত লিখে আমাদেরকে জানাননি। আমার পড়াশুনা কম বিধায় তিনি মৃত্যুর পর এর অর্থ লিখেছিলেন কিনা এটা আমার জানা নাই।
বাক্যহারা হলে, বাক্য খুঁজে না-পেলে 'কেন্ডেসটেং', 'হাপটিল্লা'-এর মত অর্থহীন বাক্য-শব্দ চলে আসবে এতে অবাক হওয়ার কী আছে!
সহায়ক সূত্র:
১. bdnews24.com: http://bdnews24.com/bangla/details.php?id=163010&cid=2
২. কে বেশি দেশপ্রেমিক?: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=24&date=2011-06-19
৩. ভালোর পসরা, প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=12&date=2011-06-27
৪. ভালোর পসরা, কালের কন্ঠ: http://www.dailykalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=Hotel&pub_no=564&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=166127
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Sunday, June 26, 2011
দেশপ্রেম মাপার ফিতা
বিভাগ
ক্ষমতার অপব্যবহার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
কেন্ডেসটেং
কেন্ডেসটেং। :)@Anonymous
Post a Comment