Search

Tuesday, March 8, 2011

ছোট-ছোট গল্প!


স্কুলের কাজে হরিজনপল্লীর এই স্কুলটায় [১] প্রায়ই যাওয়া পড়ে। ওদিন যাওয়ার আরেকটা বিশেষ কারণও ছিল। চরকি টাইপের খুব শস্তায়, দেড় টাকা পিস করে কিছু খেলনা কেনা হয়েছিল তিনটা স্কুলের বাচ্চাদের জন্য।
এই স্কুলে এসে আমি চরম বোকামি করে ফেললাম। স্কুল শেষ হওয়ার আগেই খেলনাগুলো দিয়ে ফেলায় সব হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ল!‍ মাস্টার মশাইয়ের চোখ কালো থেকে নীল, নীল থেকে লাল হওয়া সবই পন্ড হলো! বাচ্চারা বানের জলের মত স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়ল। চরকির মতই সমস্ত হরিজন পল্লী চক্কর লাগাতে লাগল। ভাগ্যিস, নড়বড়ে স্কুলটার ছাদ উড়ে যায়নি!
আমার জীবনে দেখা অসাধারণ দৃশ্যগুলোর এটাও একটা, কসম আমার প্রিয় মানুষের! এটা জানতাম, এই ধরনের তুচ্ছ খেলনা পেলে এরা আনন্দিত হবে কিন্তু এতোটা তীব্র প্রতিক্রিয়া আমি আশা করিনি!

আমার এই আনন্দ খানিকটা নিরানন্দে পরিণত হয়। এখানে সুভাস দাস [২] নামের একটি পরিবারও থাকেন। এরা অন্যদের চেয়ে খানিকটা আলাদা, বাচ্চাদের শিক্ষায়, নিজেদের আচরণেও। এই পরিবারের সদস্যরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে। সমস্যাটা আমি খানিকটা আঁচ করতে পারছিলাম, বলার পর নশি্চিত হলাম। এই পরিবারের দুই মেয়ে এবং এক ছেলের স্কুলের ভর্তি ফি এবং বই কেনা মিলিয়ে কম করে হলেও ৩৬০০ টাকা প্রয়োজন। খানিকটা বিরক্তিও লাগে। কিন্তু বিরক্তি বোধ করার কোন অধিকার আমার নাই কারণ আমিই এদের আশ্বস্ত করেছিলাম মেয়েদের পড়া যেন বন্ধ করা না হয়। আমি ফাজিলের এখন আর পিছিয়ে আসার কোন সুযোগ নাই।

কিন্তু স্কুল এবং অন্য খরচের জন্য হিসাব করা টাকা। ইচ্ছা করলেই এখান থেকে দেয়া সম্ভব না। অসহায় লাগে বড়ো, একটু আগের তীব্র ভাল লাগা উবে গেছে কখন! মন খারাপ ভাব নিয়ে ফিরে আসতে আসতে আমার মনে পড়ে ন্যানো ক্রেডিটের একজন আনোয়ারা বেগমকে [৩] একজন সহায়তা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সমস্যাটা মিটে যাওয়ায় তাঁকে না করে দেয়া হয়েছিল। এই মানুষটাকে এখন বলে দেখব? কোন উপায় বের হলে এই বাচ্চাগুলোর একটা গতি হয়।

জানাবার পরই আহমেদ রফিক-উল- ইসলাম নামের এই মানুষটা ঠিক ঠিক আজই এই মেয়েদের ভর্তি ফি এবং বই কেনার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। আফসোস, ওই পরিবারটির আনন্দ এই মানুষটা দেখতে পারলেন না!
এই মানুষটার প্রতি ওই পরিবারের পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আর জানিয়ে রাখি আলাদা করে আমার নিজের ভাল লাগার কথা। আমার হারিয়ে যাওয়া ভাল লাগা, যেটার তীব্রতা স্পর্শ করার ক্ষমতা অন্য কারও নাই...।     

সহায়ক সূত্র:
১. স্কুল, এক: http://tinyurl.com/3xpuov5
২. সুভাস দাসের পরিবার: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_2524.html
৩. একজন আনোয়ারা বেগম: http://www.ali-mahmed.com/2010/12/blog-post_9184.html  

No comments: