শাহানা বেগমকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন অন্য একজন মানুষ। অনুরোধটাও ছিল ওই মানুষটারই।
শাহানা বেগমের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়েতে আর্থিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিয়েতে সহায়তা দেয়ার মত কোন সুযোগ আপাতত আমার নাই এটা প্রথমেই জানিয়ে দেই। কেউ নিরাশ হলে আমার কীই-বা করার আছে?
কিন্তু শাহানা বেগমের জীবন-যুদ্ধের গল্প শুনে মনটা বিষণ্ন হয়। স্বামীর মৃত্যু হয়েছে অনেক কটা বছর। বাজারে তিনি সব্জী বিক্রি করেন। তাঁর দুই মেয়ে, বড়ো মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটটা কলেজে পড়ত। সব্জী-টব্জী বিক্রি করে করে, মেয়েটাকে অনেক দূরের কলেজে ভর্তি করিয়ে পড়াশোনা করিয়েছেন। এখন ভাল একটা ছেলে পেয়েছেন, বিয়ের ঝামেলাটা চুকিয়ে ফেলতে চান।
আলাপে জানা গেল এই ছেলে প্রায় অশিক্ষিত। একজন অশিক্ষিত ছেলের কাছে কেন মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন এটা জানতে চাইলে তিনি বিমর্ষ হয়ে জানালেন, তাঁর মত দরিদ্র মানুষের কাছে শিক্ষিত ছেলে তো আর আসবে না, উপায় কী! আশেপাশের সবাই এটাই সমীচীন মনে করছে এই ছেলেটার কাছে বিয়ে দিতে। ছেলের বংশ ভাল, ট্রাক্টর চালায় ইত্যাদি।
এই প্রসঙ্গে যখন কথা হচ্ছে তখন আমার সঙ্গের মানুষটা রাগে চিড়বিড় করে বললেন, না-না-না, এটা হতে পারে না। অশিক্ষিত একটা ছেলের কাছে আপনার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্যই কি আপনি এতো কষ্ট করে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন!
আমি চোখ দিয়ে ইশারা করে মানুষটাকে থামতে বললাম। জীবনটা সিনামা না। এখানে রক্ত চাই-রক্ত চাই টাইপের সংলাপ আউড়ানো চলে না। মেয়েটার এই বিয়ে থামিয়ে দেয়া চাট্টিখানি কথা না। এখানে এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে উঁচু স্বরে হাততালি দেয়ার মত সংলাপ বলবে, এই বিয়ে না-হলে এই মেয়েকে আমি বিয়ে করব।
যাই হোক, কথা প্রসঙ্গে এটাও জানা গেল শাহানা বেগম সব্জী ব্যবসা করার জন্য এক হাজার টাকা সুদে নিয়েছেন। এবার আমি খানিকটা নড়েচড়ে বসি। কারণ ন্যানো ক্রেডিটের [১] আওতায় এই টাকাটা দেয়া সম্ভব। একজন এই টাকাটা আমাকে দিয়েছিলেন এই শর্তে যেন কাউকে এই টাকাটা ব্যবসার জন্য দেয়া হয় এবং একজনকে দিলে ভাল হয়।
শাহানা বেগম আনন্দের শেষ নাই কিন্তু আমার মনে ঘোর সন্দেহ। আমি বলেই ফেললাম, আপনি এই টাকাটা আবার বিয়েতে খরচ করে ফেলবেন না তো?
শাহানা বেগম 'আইতাছি' বলে উধাও হলেন। ফিরে এলেন সুদখোর মানুষটা নিয়ে। সুদখোর মানুষটা টাকা বুঝে নিয়ে গেলেন। ঈশ্বর, এই মানুষটাকে তো আমি নিয়মিত মসজিদে যেতে দেখি!
আমার কাজ থেকে অকাজ বেশি। শাহানা বেগমের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। পূ্র্বেও উল্লেখ করেছি অহেতুক হাঁটাহাঁটির বাজে অভ্যাস আছে আমার।
আজ হাঁটতে গিয়ে শাহানা বেগমকে পেয়ে যাই। আরও দু্-একজন মহিলার সঙ্গে সব্জী বিক্রি করতে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকি। কেন? এমন তো আমার জানা নেই তিনি সব্জী বিক্রি করেন, তাহলে কেন? কিছু কিছু দৃশ্য আছে দেখতে ভাল লাগে, মনটা অন্য রকম হয়!
ফিরে এসে শাহানা বেগমকে যিনি আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তাঁর কাছে জানা গেল, আজ শাহানা বেগমের মেয়ের গায়ে হলুদ। অথচ এই মাটা সব ফেলে ঠিকই দোকানের পশরা সাজিয়ে বসেছেন।
বিয়ের আয়োজনের কি অবস্থা এটা জানতে চাইলে তিনি জানালেন, আত্মীয়-স্বজনরা সবাই কিছু কিছু করে সহায়তা করে অনেকটা এগিয়ে ফেলেছেন। লেপ-তোষক-বালিশে এসে এখন এই মহিলা আটকে আছেন। সব মিলিয়ে ২২০০ টাকার মামলা। পরের অংশটুকু শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। আহারে-আহারে, এই মাটা জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে ক্রেতার সঙ্গে কথা বলছেন, ঠিক ঠিক পয়সা গুণে নিচ্ছেন! মেয়েটা হয়তো গাল ফুলিয়ে বসে আছে, আম্মাটা যে কি, আজও বাজারে যেতে হবে কেন!
আমি খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি হয়তো কিন্তু মস্তিষ্ক কাজ করছে ঝড়ের গতিতে। অতি দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে এমন কাউকে যিনি এই টাকার সহায়তা দিতে পারবেন। অবশ্য না-পাওয়া নিয়ে আমার অস্থিরতা নাই। কাউকে-না-কাউকে পাওয়া যাবে এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই...।
সহায়ক লিংক:
১. ন্যানো ক্রেডিট: http://tinyurl.com/39dkbhh
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Wednesday, December 8, 2010
আজ তোমার গায়ে হলুদ, মেয়ে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment