Search

Friday, October 29, 2010

লাশ, আমাদের বড়ো প্রয়োজন

ছবি ঋণ: প্রথম আলো
রূপগঞ্জ নিয়ে যে কান্ডটা ঘটে গেল এটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে জোর আলোচনা চলছে। আমার এই লেখার মূল উপজীব্য এটা না আর্মিদের জন্য এভাবে জমি কেনা ঠিক, কি বেঠিক; সেটা অন্যত্র লেখার প্রসঙ্গ।

অন্যায় হচ্ছে একটা চেইন, অনেকগুলো আংটা একটার সঙ্গে অন্যটা জড়িয়ে থাকে। এখানেও যা হওয়ার তাই হয়েছে, তে অবাক হ্ওয়ার কিছু নাই।
এটা কী রাতারাতি হয়েছে? রাতের আধারে কি এখানে সেনা ছাউনি গজিয়েছে? এটাও কি সদ্য ঘটল, একজনের জমি বিক্রি করার জন্য সেনাবাহিনীর অনুমতি নিতে হবে?
রূপগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার বলেছেন, "...জমি কেনাবেচা না করার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন সেনাসদস্যরা। ...জমি কিনতে বা বিক্রি করতে তাদেঁর অনুমতি নিতে হতো। সেনাসদস্যরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ভেতর বসে থাকতেন। তাঁরা গ্রামের লোকজনকে দলিল করতে দিতেন না। কেউ দলিল করলেও তাকে টিপ সই দিতে দিতেন না..."।
দলিল লেখক সমিতির আহ্বায়ক বলেন, "...জমি কেনাবেচায় সেনাসদস্যরা বাঁধা দিতেন। ভয়ে দলিল লেখকরাও ওই এলাকার দলিল করতে চাইতেন না"। [১] (প্রথম আলো: ২৫.১০.২০১০)

এমন অজস্র উদ্বৃতি দেয়া সম্ভব। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় দিনের-পর-দিন ধরে সেনাসদস্যরা এখানে তাঁদের সেনা আইন চালু রেখেছিলেন। দেশে কি মার্শাল ল চলছে যে ক্যান্টনমেন্টের আইন সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছে? এএইচএস ওয়েবসাইটে যে নকশা এঁরা দেখিয়েছেন- ভাগ্যিস, ওখানে মাকিংটা করা ছিল, নইলে যে সমগ্র বাংলাদেশ বোঝাতো। তখন আমাদের কি উপায় হতো?
রূপগঞ্জের মানুষদের এতো অল্পতে অস্থির হলে চলে! পাহাড়ি নামের এই আদিমানুষদের গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে- কই, আদিমানুষরা তো অস্থির হচ্ছে না। ২০০৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রুমায় সেনানিবাসের জন্য যে ৭৫০০ একর জমি নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল এর লেটেস্ট খবর কি? ৭৫০০ একরে কি হবে নাকি এর পরিমাণ আরও বাড়বে? কারণ জমি চাওয়া হয়েছিল, ৯৫৬০ একর।
তারচে ভাল হয়, সমগ্র বাংলাদেশকে সেনানিবাসের জন্য অধিগ্রহন করা হোক এবং আমরাও সবাই আর্মিতে ভর্তি হয়ে যাই, তাহলেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়। নাপিতদেরও ব্যবসা রমরমা হলো মাথায় বাটি বসিয়ে 'বাটিছাঁট'।

সেনাসদস্যদের নিয়ে যেতে সামরিক হেলিকপ্টার উড়ে চলে এসেছে। কোত্থেকে যে হেলিকপ্টারগুলো বের হয়ে আসে! ওহো, সামরিক হেলিকপ্টার, তাই বলুন! অসামরিক লোকজনের জন্য তো আর এটা না। অসামরিক লোকজনের প্রয়োজন হলে দু-একটা উদাহরণ বাদ দিলে হেলিকপ্টারের টায়ার পাংচার হয়ে যায়, না? আরে কি বলতে কী বলি, হেলিকপ্টটার কি রিকশা যে টায়ার পাংচার হবে?
একজন মারা গেছে। কিভাবে মরল এটা আমাদের জেনে কাজ নেই। হয়তো সেনাবাহিনীর লোকজনের অস্ত্রের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে গিয়েছিল। মানুষকে বাদ নিয়ে অস্ত্রের সঙ্গে কস্তাকস্তি করাটা সূখের বিষয় না। এদিকে সেনাবাহিনী বলছে দুর্ঘটনাবশত কয়েকটা গুলি বেরিয়ে গেছে।
আমি বলি কি, এখুনি ওই অস্ত্র নষ্ট করে ফেলা হোক কারণ যে অস্ত্র নিজে নিজে গুলি করা শিখে যায় এমন অস্ত্র রাখার কোন মানে নেই। 'সেফটি ক্যাচ' আমরা না চিনতে পারি, লিখতে ভুল করতে পারি; যারা অবগত তাদের তো না জানার কোন কারণ নাই।
এখন পর্যন্ত তিনজন নিখোঁজ। এই তিনজন অসামরিক বলেই এদের খোঁজার প্রয়োজন নাই। পূর্বেও আমরা দেখেছি, অসামরিক লোকজনের লাশ ভেসে যায়, ভরসা রুস্তম হামজা নামের দুই বুড়া হাবড়া। ফলে আমরা লাশ পাই না, পাই ছাগলের সঙ্গে রশি, ফ্রি।  [২]

এখন যেটা সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে, চার হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ আরেক বিচিত্র! চার হাজার মানুষকে আসামি করা হয় কেমন করে? চার হাজার মানুষের নাম-ধাম লেখা হয় কেমন করে? লেখার জন্য চুক্তিভিক্তিতে লোক নিয়োগ দেয়া হয়? নাকি অজ্ঞাতনামা লিখে দিলেই হয়? এরা তো কেবল চার হাজার সংখ্যা না, এঁদের একেকজনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একেকটা পরিবার। তার মানে হাজার-হাজার মানুষের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল। নিরীহ যারা তাদের কোন ভয় নেই এমন আশ্বাসবাণী শুনতে ভালই লাগে।
যেমন এটাও শুনতে ভাল লাগে যখন পত্রিকায় আসে, অমুক নতুন ওসি সন্ত্রাসীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। বাস্তবতা দাঁড়ায় এমন, আগের ওসি সাহেবের মাসোহারা ১ লাখ হলে ওনারটা হয়ে যায় ১ লাখ ২০ হাজার। মূর্তিমান আতঙ্ক যে...!
এদিকে এদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। হালে সেনাবাহিনীও মামলা করেছে। এঁরা পূর্বে বলেছে, দুর্ঘটনাবশত কয়েকটা গুলি বেরিয়ে গেছে; এখন বলছে, কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে! পুর্বে বলেছে, অস্থায়ি ক্যাম্প এখন বলছে, প্রশিক্ষণ ক্যাম্প!

কিন্তু আমার মনে যে প্রশ্নটা আসছে, এই সাব-রেজিস্ট্রার এই তথ্যটা এখন বলছেন কেন? তিনি তাঁর উর্ধতন কর্মকর্তা বা মন্ত্রণালয়ে জানালেন না কেন? নিরীহ কৃষকদের কাগজে চুল পরিমাণ সমস্যা থাকলে তাঁরা দেখি রয়েল বেঙ্গল টাইগার হয়ে যান। খুশি না করলে কলমই ধরেন না! আর দলিল লেখক ভাইজানরা, তাঁরা কি পূর্বে মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে বসে ছিলেন?
ওয়েল, এই সব তথ্য আমরা এখন জানলাম কেন? আমাদের চোখ হচ্ছে মিডিয়া। মিডিয়া রূপগঞ্জের এই সমস্ত তথ্য কি কেবল এখনই জানল? এই তথ্যটা পত্রিকায় এখনই কি ফলাও করে ছাপাবার মত যোগ্যতা অর্জন করল? যোগ্যতা অর্জন করার জন্য একটা তথ্যের কি লাগে, তথ্যটা কি ফলের মত পেকে টসটসে হতে হয়? এই ঘটনা ঘটার পূর্বে এই দেশের মিডিয়ার সমস্ত লোকজনরা কোথায় ছিলেন? নাকি অপেক্ষায় ছিলেন নিউজের জন্যে? একটা চমৎকার নিউজ...। যেটা পাবলিক খাবে ভাল?
মফস্বল সাংবাদিক নামের লোকজনরা কি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পূর্বে এটা নিয়ে সংবাদ পাঠিয়েছিলেন? না পাঠিয়ে থাকলে পত্রিকাওয়ালাদের যেটা এখুনি করা প্রয়োজন রূপগঞ্জের সমস্ত সাংবাদিকদের কারণ দর্শানো, কেন এই সমস্ত অনাচার নিয়ে পূর্বে রিপোর্ট করা হলো না। রূপগঞ্জের সাংবাদিকরা স্কুলের বাচ্চা হলে বলতাম, অফিসে ডেকে নিয়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখতে। নাকি রিপোর্ট করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ছাপানো হয়নি, সর্দি মুছে ফেলে দেয়া হয়েছে?

হতে পারে এমন কারণ আমাদের দেশের মিডিয়া-পত্রিকাওয়ালাদের মফস্বলের সাংবাদিকদের প্রতি আছে তাচ্ছিল্য। এখানেও আছে ব্রাক্ষ্ণন-শূদ্রের খেলা। আমাদের পত্রিকাওয়ালা ব্যস্ত থাকেন ঢাকার সংবাদ ছাপাবার জন্য। কোন নেতা ভাঙ্গা রেকর্ডের মত গান গেয়েই যাচ্ছেন, কোন নেতা সংসদে কোন কালারের শাড়ি পরে এসেছেন এই সব খবর ছাপিয়ে জায়গা কোথায়? এই সব খবরের জন্যে আমরা পাঠকরা যে মুখিয়ে থাকি। আবার এই মফস্বল সাংবাদিকদেরও সংবাদ ছাপাবার জন্য নাকি ধরাধরি করতে হয়। সুরেশ তেলের কথা মুখে মুখে- যে যত ভাল তেলবাজ তার সংবাদের ততই গুরুত্ব।

আচ্ছা, পত্রিকাওয়ালাদের কি গোয়েন্দা বিভাগ টাইপের কোন শাখা আছে কি? এরা কি জানেন, এদের মফস্বলের সাংবাদিকদের হালচাল? অধিকাংশ মফস্বলের সাংবাদিক এখন তথ্য খোঁজেন না, তথ্য তাকে খুঁজে ফেরে। আমি যে ঘুষকে স্পীড মানি বলি, এখানে এটার চালু নাম হচ্ছে 'কনভেন্স'। ভাই, আমার নিউজটা...সাথে কনভেন্সের নামে মফস্বলের সাংবাদিকের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় খাম। সেই খামে কি থাকে এটা জানার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হওয়া লাগে না।
আর বেচারা মফস্বল সাংবাদিকরা যাবেনটা কোথায়! অধিকাংশ পত্রিকাই এঁদের বেঁচে থাকার মত যথেষ্ঠ টাকা দেন না। প্রায় প্রত্যেকেরই সাইড বিজনেস নামে হাবিজাবি কিছু-না-কিছু একটা আছেই। দোকানের চেয়ারে বসে বসে নিউজ একটা পাঠিয়ে দিলে দেখতে যাচ্ছেটা কে, আটকাচ্ছে কে!
ফল যা হওয়ার তাই হয়, মিডিয়া নামের আমাদের চোখটা ঘোলাটে হয়ে আসে। ঘোলাটে চোখে আমরা সব দেখি ছায়া-ছায়া, তমোময়! এ চোখ আমাদের কী কাজে লাগে কে জানে! হ্যাঁ, এই পরিস্থিতি পালটে যায় যখন পরিস্থিতি চরমে, কয়েকটা লাশ পড়ে। তখন নড়েচড়ে বসে মিডিয়া, নাড়ায় আমাদের।

দিন-মাস-বছর ধরে চার চারটি সেনাক্যাম্প অথচ কেউ কিচ্ছু জানে না! না মিডিয়া, না প্রশাসন, না জনপ্রতিনিধি! এঁরা কি তখন কুহতুর পর্বতে ধ্যান করা জন্য দেশের বাইরে ছিলেন? ওয়াল্লা, এখন দেখি সবাই মুখ হাঁ করে রেখেছেন, এঁরা যে বোবা না এটা প্রমাণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এখন কত্তো কত্তো কথা...!

আসলে আমাদের লাশ বড়ো প্রয়োজন, নইলে আমরা আবার নড়াচড়া করতে পারি না, জোশ আসে না...।

সহায়ক লিংক:
১. প্রথম আলো: http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=2&date=2010-10-25
২. ছাগলের সঙ্গে রশি, ফ্রি: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_15.html  

1 comment:

Unknown said...

আশে পাশে নজর না দিয়ে সোজা সাপ্টা বলবো, এটা ছিলো আর্মি প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের জন্যে অবৈধ ভাবে ফৌজকে ব্যাবহার যা প্রচন্ড নিন্দনীয়। সামহ্যোয়ার ইন এ অনেক গলাবাজি হয়েছে পক্ষে বিপক্ষে, আমি একটাই কথা বলবো, সেটা হলো, ফৌজকে ব্যাবসা বা অন্য যে কোন প্রকার করাপশনের হাত থেকে নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ রাখা প্রয়োজন দেশের স্বার্থেই।

এএইচএস(আর্মী হাউজিং সোসাইটি টাইপ কিছু নাম বোধ হয়) ওয়েব সাইট এখন বন্ধ বোধহয়, তবে ওদের নিজেদের পাবলিশ করা ছবিগুলো আর একটা কালেকটেড ভিডিও আছে আমার কাছে, আপনি চাইলে মেইল করে দিতে পারেন, ফিরতি মেইলে পেয়ে যাবেন।

raatmojurএট জিমেইল ডট কম
dএটraatmojurডট মকম