সাধনা ঔষধালয়। শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষ। একটি নাম! একটি ইতিহাস!
দুস্থ-অসহায় মানুষের কল্যাণে নিবেদিত একটি প্রাণ! তাঁর জীবনের একমাত্র সাধনা ছিল ‘সাধনা ঔষধালয়’। যে ঔষধালয়ের খ্যাতি এ দেশ ছাড়িয়েও সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। নব নব সৃষ্টির মাঝেই যোগেশ বাবু বেঁচে ছিলেন।
পঁচিশে মার্চ।
পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার অনেকেই এরই মধ্যে শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সমস্ত এলাকায় বাড়ী কাম কারখানায় কেবল যোগেশ বাবু রয়ে গেলেন। বিরাট এলাকা জুড়ে সাধনা ঔষধালয় কারখানা। এখানেই তিনি কাটিয়েছেন জীবনের অধিকাংশ সময়, গবেষণা করেছেন! তাঁর একমাত্র সাধনাস্থল এই কারখানা, এখানকার একেকটা ইটে আছে তাঁর মমতার ছোঁয়া! নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সাথীরা ছিল কারখানার শ্রমিকরা। সবাই যখন কাজ সেরে ফিরে যেত তখন কেবল থাকতেন, সুরুজ মিয়া এবং রামপাল।
সুরুজ মিয়া এবং রামপাল কারখানার দারোয়ান। তাঁরা দীর্ঘ ১৭ বছর যোগেশ বাবুর সঙ্গে কাটিয়েছে। ২৫ শে মার্চের পর সবাই যখন একে একে বাবুকে ফেলে চলে গেল, গেলেন না কেবল এই ২ জন! ২৫ শে মার্চের পরের ঘটনা। গভীর রাত। একটি মিলিটারী জীপ এসে থামলো। ৫/৬ জন সশস্ত্র সৈনিক জীপ থেকে নামলো। তাদের সবার হাতে ভারী অস্ত্র। একে একে গেটের তালা ভেঙ্গে ফেললো তারা। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লো।
পাহারাদার সুরুজ মিয়ার হাতের বন্দুকও গর্জে উঠলো। সেনাদের দিকে তাক করে তিনিও গুলি ছোড়া শুরু করলেন। শুরু হলো অসম যুদ্ধ। সামান্য অস্ত্র, সামান্যতম অস্ত্রচালনায় পারদর্শী একজন সাধারণ বাঙ্গালী সুরুজ মিয়া পাহারাদারের কাছে হার মানলো পাক সৈন্যরা। রাতের আধারে পাক সেনারা পালিয়ে গেল।
সুরুজ মিয়া যোগেশ বাবুকে বললেন পালিয়ে যেতে। যোগেশ বাবুর এক কথা, মরতে হয় দেশের মাটিতে মরব। আমার সন্তানসম এই সব ছেড়ে আমি কোথায় যাবো?
পরদিন সকাল। পাকিস্তানী আর্মি আবারও ফিরে এলো, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র এবং লোকবল নিয়ে। পাক সেনারা নীচে সবাইকে লাইন করে দাঁড় করালো।
এরা যোগেশ বাবুকে উপরে নিয়ে গেল। রাইফেলের মুখে ওই বয়স্ক মানুষটা কি বলেছিলেন তা কোনদিন আর জানা হবে না! পাক সেনারা তাঁকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছে। তাদের উল্লাসধ্বণী নীচে ভেসে আসছিল! নীচের লোকজনরা সুযোগ বুঝে পালিয়ে প্রাণ বাঁচালেন। যোগেশচন্দ্র ঘোষ নামের বয়স্ক এই মানুষটা শুধু পড়ে ছিলেন এলোমেলো ভঙ্গিতে, মৃত। শরীরে অজস্র বেয়নেটের দাগ নিয়ে। পাক আর্মিরা শুধু তাঁকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, লুটে নিয়ে গিয়েছিল যোগেশ বাবুর অর্জিত সমস্ত সম্পদ।
(কেবল নিতে পারেনি এ দেশের জন্য যোগেশ বাবুর একবুক ভালোবাসা!)
*তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ/ অষ্টম খন্ড
**ভাষা ঈষৎ পরিবর্তিত।
***শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষ রচিত কিছু অসাধারণ বই আছে। তাঁর লেখা 'আমরা কোন পথে', ১৯৪০ সালে প্রকাশিত এই বইটি ভাগ্যক্রমে পেয়েছিলাম। অপার আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। মানুষটার যে কী অসাধারণ পান্ডিত্য ছিল, ছিল দেশের জন্য তীব্র ভাবনা তা কেবল এই একটা বই পড়লেই অনেকখানি আঁচ করা যায়!
****মুক্তিযুদ্ধের কিছু ছবি: http://71photogun.blogspot.com/
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, October 5, 2010
নিধন: শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষ
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
4 comments:
চমতকার হচ্ছে,সিরিজটা চলুক। বাই দ্য ওয়ে আপনার স্কুল নিয়ে খবরটা কালেরকন্ঠে পড়লাম, নিউজটা দেখেছেন আলি ভাই?
http://dailykalerkantho.com/epaper/pop_up.php?img_name=2010/10/05/newspaper/images/26_100.jpg
darun. shuvechchha neben.
"...সিরিজটা চলুক...।"
সহসাই শেষ করব কারণ আমার মূল লেখালেখি ব্যাহত হচ্ছে।
"...নিউজটা দেখেছেন...।"
না পূর্বে দেখিনি, এখন দেখলাম। আপনার লিংকের জন্যে ধন্যবাদ। @রাশেদ
আপনার ভাল লাগছে জেনে আমারও ভাল লাগছে। ভাল থাকুন, অনেক। @Sushovan Biswas
Post a Comment