হরিজন পল্লীতে কাজ করতে গিয়ে বিচিত্রসব বিষয় জানার সুযোগ হচ্ছে। এই বাচ্চাগুলোর যিনি মা, তিনি আবার আনন্দের মার বোন [১]। এঁরা দু-বোন দেখতে প্রায় একই রকম, প্রায়শ আমি গুলিয়ে ফেলতাম। এবং দুজনেরই সুখি-সুখি চেহারা, বাইরে থেকে দেখে কেউ আঁচ করতে পারবে না এঁদের কোন দুঃখ স্পর্শ করতে পারে!
এই পরিবারের বাচ্চাগুলো পিংকি, প্রিয়াংকা, পিয়াস। এদের মধ্যে দু-বোনের একজন পড়ে ক্লাশ নাইনে, অন্যজন সিক্সে। দু-ভাইয়ের একজন ফোরে, অন্যটা ছোট, 'আমাদের ইশকুল' [২]-এ পড়ে (ওর নামটা এখন মনে পড়ছে না)।
এই বাচ্চাগুলোর স্কুল ফি জমে গিয়েছিল। গতবার যখন 'পড়শী ফাউন্ডেশন'-এর লোকজন এসেছিলেন তখনই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এদের ফির টাকা দিয়ে দেয়া হবে। সমস্যা এটা না।
এই পরিবারের লোকজন একদিন আমাকে ধরে বসলেন, পরিবারের কর্তাকে বোঝাবার জন্য। তিনি বড় মেয়েটা, যে ক্লাশ নাইনে পড়ে তার পড়া বন্ধ করে দিতে চাচ্ছেন। আমি যেন মেয়ের বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলি। শোনার পর থেকে মেয়েটা খুব মনখারাপ করে আছে।
মনে মনে আমি বলি, হায়রে দুনিয়া, ঘরের মানুষকেই বোঝাতে পারি না বাইরের লোকজনকে কি বোঝাব!
আবার এই শংকাও কাজ করে, দেখা গেল মানুষটা ক্ষেপে গেল, তখন?
মুশকিল হচ্ছে মানুষটার নাগাল পাই না। আমি তক্কে তক্কে থাকি। সুভাষ চন্দ্র দাস নামের মানুষটাকে একদিন ঠিক-ঠিক পাকড়াও করি। তার সঙ্গে কথাবার্তা নিম্নরূপ:
আমি বলি, আপনি নাকি মেয়েটার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চাইছেন, সমস্যা কি?
তিনি বলেন, হাদে (শুধুশুধু) কি পড়া বন্ধ করতাম চাই, মেটরিকে ম্যালা টেকা লাগে।
অনেক দিন পর এসএসসির বদলে মেট্রিক শব্দটা শুনলাম। আমি অবাক হয়ে বলি, ম্যালা টেকা মানে কত টাকা লাগে?
তিনি মাথা চুলকে বলেন, হুনছি দশ হাজার টেকা লাগে। আপনেই কন, কোত্থিকা পামু এতো টেকা?
আমি বলতে গিয়ে সামলে নেই, কোন হা...। আমি অবাক হয়ে ভাবি, মানুষের জন্য শিক্ষা যে কত জরুরি, শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। মানুষটা শিক্ষিত হলে অন্তত সামান্য হলেও খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করতেন। 'কর্তাতান্ত্রিক' সমাজ আমাদের- এই পরিবারের অন্যরাও খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেনি। মেয়েটাও মাথা ঘামায়নি।
আমি সামলে নিয়ে বলি, কে বলেছে আপনাকে দশ হাজার টাকা লাগে! আমি ঠিক জানি না তবে হাজার দুয়েকের বেশি হওয়ার কথা না। আর এ তো এখন কেবল নাইনে পড়ছে। পরীক্ষার তো এখনও অনেক দেরী, এখনই আপনি মেয়েটার পড়া বন্ধ করে দেবেন এটা কেমন যুক্তি! আপনি মেয়েটাকে 'মেটরিক' পরীক্ষা দিতে দেন আর আপনার কাছ থেকে কেউ দুই হাজার টাকার বেশি চাইলে আমাকে আটকে রাখবেন। তাছাড়া আপনাকে তখন ফির টাকা নিয়ে যেন মাথা না ঘামাতে হয় সেটাও আমরা দেখব। আপনি কেবল বলেন, মেয়েটার পড়া বন্ধ করবেন না।
মানুষটা মাথা ঝাকান, আইচ্ছা।
আমি এবার চেষ্টাকৃত গম্ভীর হয়ে বলি, না আইচ্ছা না। আপনি আপনার বউ-বাচ্চার সামনে আমাকে কথা দেন।
মানুষটা এবার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলেন, আইচ্ছা, সবার সামনেই কইলাম। আইচ্ছা।
আমি হাসি চেপে বলি, আইচ্ছা, ঠিক আছে।
সহায়ক লিংক
১. আনন্দ: http://www.ali-mahmed.com/2010/08/blog-post_10.html
২. আমাদের ইশকুল: http://www.ali-mahmed.com/2010/07/blog-post_9016.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, August 10, 2010
শিক্ষার সমতুল্য কিছু নাই
বিভাগ
আমাদের ইশকুল: এক
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
2 comments:
ছাত্রজীবনে সব সময় চেষ্টায় থাকতাম ফাঁকিবাজির। সাধ আছে, কিন্তু সঙ্গতি নেই, এরকম গল্পগুলো যখন পড়ি, তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। আমার বাবা আমার পড়ালেখার পেছনে যত টাকা ঢেলেছেন, ততটা আউটপুট দিতে পারিনি, অথচ পত্রিকা খুললে দেখি অদম্য মেধাবিদের প্রায় অবিশ্বাস্য সব গল্প!
"ছাত্রজীবনে সব সময় চেষ্টায় থাকতাম ফাঁকিবাজির।"
হা হা হা। কার কাছে কী বলেন! ফাকিঁবাজি কত প্রকার ও কি কি তার উদাহরণ আমি নিজে।
"আমার বাবা আমার পড়ালেখার পেছনে যত টাকা ঢেলেছেন, ততটা আউটপুট দিতে পারিনি।"
ছ্যা! আউটপুট তো দূরের কথা। আপ্রাণ চেষ্টা করেও আমাকে তো মানুষই বানাতে পারেননি। @সুব্রত
Post a Comment