পুলিশ হেফাজতে তিন মৃত্যু, এই নিয়ে হাইকোর্ট অসাধারণ একটা কাজ করেছেন। হাইকোর্টকে সেলাম ঠুকি বারবার। কারণ কখনও কখনও এমনটা মনে হতো, এই গ্রহে বুঝি আমাদের আর কোন দাঁড়াবার জায়গা নাই। শেষ ভরসাস্থল হাইকোর্টেও যখন দেখি দাঁড়াবার জায়গা নাই [১] তখন আকাশপানে তাকিয়ে থাকি। নিজের প্রাণটাকে তখন বড়ো তুচ্ছ মনে হয়।
এমনিতে পুলিশের অজস্র অপরাধের প্রতি হাইকোর্ট রা কাড়েন না কিন্তু নিজেদের প্রতি পুলিশের তাচ্ছিল্য বুকে বড়ো বাজে! তাই বিচারকের প্রতি সম্মান না জানাবার কারণে তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহুদুল হককে আদালত অবমাননার দায়ে ২ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ১ মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করেছিলেন।
এবার হাইকোর্ট যে অসাধারণ কাজটা করেছেন সেটা হচ্ছে, কেবল রুলই জারী করেননি, কিছু নির্দেশনা আলাদা করে উল্লেখ করেছেন। যেমন তদন্ত কমিটিতে পুলিশ থাকতে পারবে না, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাসপাতাল প্রথমেই হাইকোর্টে দাখিল করবে। মামলায় আদালতে আইনি সহায়তার জন্য এগারো আইজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে কারা কারা থাকবেন তাঁদের নামগুলোও সুস্পষ্টরূপে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে সতর্ক করা হয়েছে আগ বাড়িয়ে এমন কোন মন্তব্য না করতে যা তদন্তকে প্রভাবিত করে।
এবং এই মৃত্যু ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু পুলিশ অফিসারকে ১৯ জুলাই হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি হলফনামায় মৃত্যুর কারণ, প্রেক্ষাপট উল্লেখ করার জন্য। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১১ জনকে ২১ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দেয়ার নির্দেশ।
আমার স্পষ্ট বক্তব্য, এই খুনগুলোর সঙ্গে পুলিশ জড়িত এটা প্রমাণিত হলে যত দ্রুত সম্ভব এই পুলিশদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। সেটা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নাকি ফায়ারিং স্কোয়াডে সেটা নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই।
আমি মনে করি, হাইকোর্টই পারে আমাদেরকে এই সব পোশাকধারী গুন্ডাদের হাত থেকে রক্ষা করতে। এই দেশের একজন মানুষ খুন করলে তার ফাঁসি হয় কিন্তু পুলিশের কী হয়! কিসসু হয় না! পুলিশ খুনের মত অজস্র কান্ড ঘটায় কিন্তু এদের শাস্তি হচ্ছে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা। এই ক্লোজ করা হলে একজন পুলিশের শাস্তি কেমন করে হয় আমি জানি না! ওই স্যার কিছুদিন পুলিশ লাইনে বিশ্রাম নেয়ার পর মোটা অংকের টাকা লেনদেন করে আরেক জায়গায় পোস্টিং নেন। ওখানে গিয়ে আরও বিপুল উদ্যমে কুকর্ম করা শুরু করেন। কচু গাছ কাটতে কাটতে ডাকাত আর পুলিশ লাইনে ঘুরতে ঘুরতে আরও দুর্ধর্ষ পুলিশ অফিসার!
কর্মরত অবস্থায় অপরাধের কারণে কয় জন পুলিশম্যানের ফাঁসি হয়েছে? ইয়াসমিন হত্যা মামলা ব্যতীত আমার তো মনে পড়ছে না।
পুলিশ দিনাজপুরের ইয়াসমিন নামের অভাগা মেয়েটিকে শারীরিক চরম নির্যাতন করে তাঁকে হত্যা করে। একটা ঠেলাভ্যানে করে পুলিশ নিদারুণ অবহেলায় রাস্তায় ফেলে রাখে। এই মামলাটিকে পুলিশ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। এদের এই অপচেষ্টায় পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচে এরা পার পেয়ে যান।
তারপরও এটা একটা বিশাল কাজ হয়েছিল, নয় বছর পর এই খুনের খুনিদের বিচার হয়েছিল। রংপুর কারাগারে এই পুলিশ নামের পশুদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে রাষ্ট্র শাস্তি দিয়েছিল।
ওই পুলিশদের নাম ছিল মঈনুল হক এবং আবদুস সাত্তার। ইয়াসমিন হত্যা মামলায় এদেরই ফাঁসি হয়েছিল।
আমাদের দেশে ফলোআপের চল খুবই কম। হঠাৎ মিডিয়া ক্ষেপে না গেলে আমাদের জানার উপায় থাকে না। তৎকালিন চট্টগ্রামের উপকমিশনার (বন্দর) আলী আকবর খান যে অপরাধটা করেছিলেন এটা খুনের চেয়েও কম না। আমরা এটাও জানি না এই মহোদয়ের কি শাস্তি হয়েছিল? নাকি ইনি উপ থেকে পুরোস্তুর কমিশনার হয়ে বসে আছেন। এই দেশে সবই সম্ভব কেবল উপরঅলার সঙ্গে ভাল যোগাযোগ থাকলেই যথেষ্ট! এই উপরঅলা যে কে এটা বলা মুশকিল। প্রায়শ আমার মনে হয়, এদের আটকাবার জন্য এই দেশে কেউ নাই। তখনই হাইকোর্টের ভূমিকার বড়ো প্রয়োজন হয়ে দেখা দেয়।
আমি একটা লেখায় লিখেছিলাম সাংবাদিকদের পুলিশে ঢুকিয়ে দেয়া হোক এবং পুলিশদের কবিতা লেখার জন্য রেখে দেয়া হোক [২]। যে পুলিশ মহোদয়গণ আমাদের সোনার ছেলে আসিফদের হাত ভেঙে দিয়েছিলেন এদেরই বা কি শাস্তি হয়েছে [৩]? এই অপরাধ কি খুনের চেয়ে কম? আমাদের দেশে পুলিশ কিছু কাজ-কারবার বড়োই বিচিত্র, কেউ অভিযোগ না করলে [৪] এরা নাকি নড়াচড়া করতে পারেন না! অশ্লীলতার সংজ্ঞা [৫] কি এটা আমি ভালো জানি না কিন্তু যখন দেখি পুলিশ বলছে 'আমরা জনগণের বন্ধু' তখন বাক্যটা আমার কাছে বড়ো অশ্লীল মনে হয়।
*ঋণ: ভোরের কাগজ, এএফপি
সহায়ক লিংক:
১. সাধুবাদ-মুর্দাবাদ: http://www.ali-mahmed.com/2008/12/blog-post_08.html
২. পুলিশ লিখবে কবিতা: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_09.html
৩. এটা কি খুব বড়ো চাওয়া মি.প্রেসিডেন্ট: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_2646.html
৪. বিষবৃক্ষ গাছে জয়তুন ফল ধরে না: http://www.ali-mahmed.com/2010/02/blog-post_6667.html
৫. অশ্লীলতার সংজ্ঞা: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_22.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Thursday, July 8, 2010
পুলিশ জনগণের বন্ধু!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
3 comments:
ভিডিও লিঙ্কটি দেখে গা শিউরে উঠল।নিজেদের দাবী আদায়ের জন্যে শিক্ষার্থিদের এই প্রাপ্য ছিলো?এদের সাথে যদি পুলিশ এই ভাষায় কথা বলে বাকিদের তাহলে কি অবস্থা!!
এই পুলিশ অফিসারের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করি।
যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে প্রমোশন হওয়ার @দীপ
সম্ভাবনা একদম বাতিল করে দেয়া যাচ্ছে না।
Post a Comment