আমার কুখ্যাত স্মৃতিশক্তির জন্য বিস্তর হাসাহাসি হয়। ওদিন চিবিয়ে চিবিয়ে একজন বলছিলেন, আই বেট, গোল্ডফিসের স্মৃতিশক্তিও তোমার চেয়ে খারাপ না।
আমার অপরাধ এটুকুই, ওনাকে বলেছিলাম, আমার সঙ্গে একটু গুলশান যাওয়ার জন্য। ওনার রাগের কারণ হচ্ছে, গুলশানের ওই ভবনে পরপর দু-হপ্তা আমি গিয়েছি (যদিও দু-বারই আমার সঙ্গে একজন ছিলেন), তো তৃতীয়বার না চেনার কোন কারণ নেই।
এখন ওনার বদ্ধমূল ধারণা আমি রসিকতা করছি।
কী আর করা, জ্যাম না থাকলে আধ-ঘন্টায় যাওয়া যায় তবুও হাতে ঘন্টা তিনেক সময় নিয়ে আল্লাহ ভরসা বলে নিজে নিজেই রওয়ানা দিলাম। হাতে যথেষ্ঠ সময় এটাই ভরসা। স্কুটারওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি গুলশান দুই-এর এই ভবনটা চেনেন তো?
আমার দেখার ভুল না হয়ে থাকলে স্পষ্ট দেখলাম, মানুষটা মাথা ঝাঁকালেন। যাক, চিন্তার কোন কারণ নেই তাহলে। স্কুটারে আমি মুখ কঠিন করে বসে রইলাম। মুখ কঠিন করার প্রয়োজন আছে, ব্যাটা যদি একবার বুঝতে পারে আমি কিছুই চিনি না তাহলেই সেরেছে।
আমি জানতাম ভজকট একটা হবেই, হলোও তাই। গুলশানে ঢুকে এ জিজ্ঞেস করছে, এইবার কোন দিক দিয়া যামু?
আমার সত্যি সত্যি মেজাজ খারাপ হলো। আমি বললাম, উড়াল দিয়া যান। আপনি না বললেন আপনি চেনেন!
মানুষটা আর কথা বাড়ালেন না, একে-ওকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কেউ সামনে বলে তো কেউ পেছনে। লোকজনও বদ, না চিনলে বল চিনি না। ভুল রাস্তা বলে দেয়ার মানে কী!
এক সময় বিরক্ত হয়ে স্কুটার থেকে নেমে আমি হাঁটা ধরলাম।
বাহ, আমাকে নিয়ে লোকজন একটা তামাশার পাত্র বানিয়ে দিয়েছে দেখি! গোটা জাতিই যে গোল্ডফিস মেমোরির এতে বুঝি দোষ হয় না, না? তখন দেখি এতে কোন লাজ নাই!
এরশাদ সাহেব যখন তিন তিনটা আসন থেকে সংসদ সদস্য পদের জন্য দাঁড়ান তখন আমি এটাকে বছরের সেরা কৌতুক মনে করে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে উল্টে পড়ার দশা হয়েছিল। কিন্তু এই তিনিই যখন তিনটা আসন থেকেই জয়ী হন তখন আমার হাসি লজ্জার কাশিতে পরিণত হয়।
কবি এরশাদ সাহেবের সমস্ত কুকর্ম বিস্মৃত হলেও [১] না-হয় আমি মেনে নিতাম কিন্তু তিনি এমন একটা অন্যায় করেছিলেন যা ক্ষমার অযোগ্য। তিনি যদি অমর হন তাহলে কোন কথা নেই কিন্তু মরণশীল হলে মৃত্যুর সময় এর শাস্তি অবশ্যই ভোগ করবেন।
সেলিম নামের একটি শিশুকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সেলিমের ফাঁসির আদেশ রদ করার জন্য আবেদনও জানিয়েছিল। কিন্তু এরশাদ সাহেব সে আবেদন উপেক্ষা করে সেলিমের মৃত্যুদন্ডাদেশকে অনুমোদন দেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সে সময়ের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের কাছে জরুরি আবেদনে এটাও জানায়, সেলিমের মৃত্যুদন্ড দিলে সেটা হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদের সুস্পষ্ট লংঘন।
কারণ ১৮ বছরের নিচে কাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া যায় না, দিলে সেটা হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লংঘন।
এবং যেহেতু সেলিমের বিচার হয়েছে সামরিক আদালতে (সামরিক আদালত চালু করা হয়েছিল ১৯৮২-র মার্চ মাসে)। সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই। যদিও প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার।
১৯৮৫ সালে ঢাকার মিরপুরের ১৪ বছরের মোহাম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় খুনের। মামলা চলার পুরোটা সময় তাকে রাখা হয়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে।
অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাকে ফাঁসি দেয়ার পূর্বে তার বাবা মাকে একটা খবর পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
কেবল আমার স্মৃতিশক্তিই যাচ্ছেতাই, না? আমাকে নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করতে বড়ো উল্লাস হয়, না? আমার মেমোরি গোল্ডফিসের মত? আর জাতি হিসাবে আমাদের মেমোরি গোল্ডফিসের চাইতেও খারাপ এটা বললে বুঝি সূর্য একহাত নিচে নেমে আসে!
নইলে কী আর ধার্মিক এরশাদ সাহেব [২] তিন তিনটে আসন থেকে দাপটের সঙ্গে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাও একটা আবার ঢাকার আসন থেকে। যেখানে সমস্ত শিক্ষিত মানুষের বাজার, প্রখর স্মৃতিশক্তির লোকজন! নির্বাচনের পূর্বে নিজেদের দলে টানার জন্য দুই নেত্রী ওনার হাত ধরে কম টানাটানি করেননি। ভাগ্যিস, এরশাদ সাহেবের যে হাত ছিঁড়ে যায়নি! আমরা কত দ্রুত সব ভুলে যাই! বড়ো বিচিত্র এই দেশ!
*ঋণ: আ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিউজ লেটার, আজকের কাগজ ০৬.০৭.৯১
সহায়ক লিংক:
১. কবি এরশাদ: http://www.ali-mahmed.com/2009/03/blog-post_09.html
২. মহান এক শাসক: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_3701.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Wednesday, June 16, 2010
গোল্ডফিস মেমোরি জাতি!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
4 comments:
ঠিক বলছেন,আমরা ভুলে যাই সব কিছু এরশাদ এমন কোন সেক্টর নাই যেটাকে দুষিত করে নাই।অফটপিক,ভবনটা কি জার্মান এ্যামবেসী?
হ্যাঁ, ভবনটা জার্মান এমব্যাসি :)। @শাওন
Arsad ki tore hoga marse?
ডিয়ার Anonymous,
সচরাচর ড্রাগ এডিক্ট টাইপের মানুষদের লোকজন ঘৃণা করে, আমি করি না কারণ এরা অসুস্থ। এদের চিকিৎসা প্রয়োজন।
কিন্তু কিছু মানুষ থাকে চিকিৎসার বাইরে। এদের নিয়ে আমার আগ্রহ বড়ো কম। আপনি তাদের একজন!
মন্তব্যটা ডিলিট করলাম না কারণ এই টাইপের মানুষদের নমুনা থাকা প্রয়োজন।
নিম্ন শ্রেণীর একটা প্রাণীকে তাড়াবার জন্য আমি একটা শব্দ ব্যবহার করি। শব্দটা হচ্ছে 'হুশ কু...'।
ওই প্রাণীটা এখন ব্লগিংও শুরু করেছে এমনটা আমার জানা নাই বিধায় আপনার ক্ষেত্রে শব্দটা ব্যবহার করতে পারছি না!
আপনার অর্জিত এই মনন, ভাবনা, বক্তব্য রেখে দিন সো কলড নো মডারেশন সাইটগুলোর জন্য। ওখানে ওরা হন্যে হয়ে আপনাকে খুঁজছে।
আপনাদের খুরাঘাতে বড্ডো ধুলা উড়ে, আমার আবার ডাস্ট এলার্জি আছে। তদুপরি নেক্সট টাইম আসলে আরেকটু সতর্কতা অবলম্বন করবেন। আমার জন্য অনুমান করা কঠিন না আপনার আসল অবয়ব।
জুম্মা জুম্মা ৭ দিনও হয়নি এসেছেন বুদ্ধির খেলা দেখাতে! যে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সেইসব মাঠ নিরাসক্ত ভঙ্গিতে বহু পূর্বেই ছেড়ে এসেছি।
গেট লস্ট।
Post a Comment