আমার কাছে জার্মান থেকে একটা গাইড-লাইন পাঠানো হয়েছে। বিতং করে অনেক কথা লেখা। ট্যাক্সিতে চড়তে পারবা না, কেবল সকালের নাস্তা মাগনা খাইতে পারবা, ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুরো প্রক্রিয়াটাই আমার পছন্দ হয়নি। সবাই আমাকে বলার চেষ্টা করছেন, এটাই নাকি নিয়ম।
নিয়ম? কার নিয়ম, কোথাকার নিয়ম, কার জন্য নিয়ম? আমার কি দায় পড়েছে পৃথিবীর তাবৎ নিয়ম মেনে চলার! এতো নিয়ম মানলে তো আমি ক্যারিয়ার নিয়েই মাথা ঘামাতাম, টিফিন ক্যারিয়ার হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম না।
এই গাইড-লাইন থেকে কেমন একটা করপোরেট-করপোরেট গন্ধ ছড়াচ্ছে, যেমন বুশের শরীর থেকে ছড়ায় সালফারের গন্ধ!
আমি তো করপোরেট জগতের মানুষ না, লেখালেখি ভুবনের মানুষ। প্রকৃতির হাতে হাত রেখে, লেখালেখি নামের আমার ছোট্ট ভুবনটাকে [১] নিয়ে তীব্র সুখী একজন মানুষ। আমি তো ফরমায়েসি লেখক না যে আমার লেখালেখিকে অন্যে নিয়ন্ত্রণ করবে। আমার ৩ টাকা দামের কলম তো আমি কারও কাছে বিক্রি করব না। আমি কারও বানানো নিয়মের তোয়াক্কা করি না। অন্য ভাষার অতিথীরা এই নিয়মে উল্লসিত হলে হোক না, আমার কী!
বাংলাদেশের সম্মানের প্রশ্ন জড়িত না থাকলে আমি যাওয়াটা বাতিল করে দিতাম। এদের ভঙ্গিটাই আমার পছন্দ হয়নি! আমি এদের কঠিন নিয়ম মেনে একের পর এক খরচ করব। প্লেনের টিকেট কাটা থেকে শুরু করে হোটেলের বিল; আমি হিসাব করে দেখেছি, আনুমানিক ২ লক্ষ টাকা আমাকে খরচ করতে হবে। এদের কি ধারণা, প্লেনের টিকেটটা পাঠিয়ে দিলে আমি এটা বিক্রি করে কটকটি খেয়ে ফেলতাম? আচ্ছা, প্লেনের টিকেট ১ লক্ষ একুশ হাজার টাকায় কয়টা কটকটি পাওয়া যায়?
তো, এরপর এই বিলগুলো এদের কাছে সাবমিট করতে হবে, তারপর এরা আমাকে টাকা দেবেন। লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, করপোরেট-করপোরেট গন্ধ!
ইশ রে, হিল্লি-দিল্লি ঘোরার শখ যে আমার নাই [২] আর আমি তো ওই দেশে চাকরির জন্য যাচ্ছি না। এমন কোন গোপন ইচ্ছাও কখনও ছিলই না। দেশে আমরা অনেক যন্ত্রণায় থাকি, হররোজ মারা যাই তবুও দেশ ছেড়ে প্রবাসে থাকার চেয়ে আমি আমার মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করি। এটা কেবল আমার নিজের অনুভূতি, অন্যরা নিজের সঙ্গে গুলিয়ে না ফেললেই ভাল করবেন।
এরা কেন বুঝতে চান না, একজন লেখক এবং একজন করপোরেট ভুবনের ম্যানেজারের মধ্যে অনেক ফারাক। তাও কী এক লেখক- ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার! ওয়েব-সাইটে লিখে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। ওহে, কে বলল এই কথা, একজন ব্লগার নামের নিধিরাম সর্দার ২ লক্ষ টাকা নিয়ে বসে আছে?
এক্ষণ এই নিয়ে আমি এদের সঙ্গে কুতর্কে যাব না কারণ এখন ঠিক এই বিষয়ে হইচই করার মানে হচ্ছে দেশকে ছোট করা। এরা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবে, ওহ, পুও(র) বেংলাডেশ, পুও(র) বেংলাডেশি! কোনক্রমেই এই সুযোগটা আমি এদের দিতে চাচ্ছি না। কোন অবস্থাতেই আমি আমার দেশকে ছোট হতে দেব না, মরে গেলেও না।
আমি এদের এই তথাকথিত প্রক্রিয়া মেনে নিয়ে যাব, অবশ্যই যাব। তবে বিল সাবমিট করব কি করব না এটা সময়ই ঠিক করে দেবে।
*বৈদেশ পর্ব, তিন: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_12.html
সহায়ক লিংক:
১. সালতামামি, ২০০৯: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_31.html
২. বৈদেশ পর্ব, এক: http://www.ali-mahmed.com/2010/05/blog-post_10.html
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, May 11, 2010
বৈদেশ পর্ব: দুই
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
10 comments:
অবশ্যই বিল সাবমিট করবেন।
দেখা যাক। এটা নির্ভর করবে ওই সময় আমার মনের অবস্থার উপর।
উপায় নাই শুভ ভাই। নিয়ম তো মানতেই হবে। তাদেরকেও তো অডিটের মুখোমুখি হতে হয়। সিস্টেম তৈরি না করলে প্রতিষ্ঠান চালানো যায় না। সারা পৃথিবী এই নিয়মেই চলছে। আমি গত বছর কাতার গেলাম আইসিটি সম্মেলনে। সেখানেও নিজের টাকায় গিয়ে সব বিল সাবমিট করতে হয়েছে। টাকা পেয়েছি কয়েক মাস পরে।
মাথা গরম কৈরেন না। :-)
টিকেট নিজে কেন কাটবেন? ওদের বলেন কেটে দেবে। আজকাল তো অনলাইন ই টিকেটের যুগ।
আমি শেষবার যখন জার্মানীতে আইআইজের কনফারেন্সে গেলাম এরপর আমাকে একগাদা কাগজে সাইন করতে হল। যার মধ্যে একটিতে লেখা ছিল আমি সাইন্টোলজির সদস্য না এই মর্মে স্বীকারোক্তি - আমি অবাক চোখে তাকালে আমাকে বলা হল হ্যা জানি এগুলোর কোন মানে নেই তোমার জন্যে - কিন্তু সরকারী ব্যুরোক্র্যাসী - সই করে ছেড়ে দাও।
এ দুনিয়াটা আমাদের নিজেদের মত করে চলে না। দেশ ভেদে ভিন্ন কাজ কারবার। তাই মাঝে মধ্যে এমন অদ্ভুদ ব্যাপরগুলোর ভিতর দিয়ে যেতে হয়।
Boss, jaiyen na
অডিট?
একটা বহুজাতিক কোম্পানিকে অডিট মানতে হয় না? কই, এরা তো এমনটা করেনি- এরা আমার নামেই টিকেট ইস্যু করেছিল। যে কারণে আমি না যাওয়ায় অন্য কেউ যেতে পারেনি। অথচ এটা এরা করলে আমি কিছু মনে করতাম না। কারণ এদের সঙ্গে আমার ব্যবসা ছিল।
নিয়ম? মানুষের জন্য নিয়ম, নাকি নিয়েমের জন্য মানুষ? মানুষ মারা যাচ্ছে আর সংবিধান বগলে চেপে সংবিধানের ধারা কপচানো কোন কাজের কাজ না!
বিষয়টা আমার ভাল লাগেনি কারণ আমি কোন ট্রেনিংসংক্রান্ত কাজে যাচ্ছি না। অন্তত বাংলায় আমি কেমন করে লেখব এটা অন্য কোন ভাষার লোকজনের কাছ থেকে শিখতে আগ্রহী না।
মাথা আমার গরম না, বরফঠান্ডা। :)@মুকুল
"টিকেট নিজে কেন কাটবেন? ওদের বলেন কেটে দেবে। আজকাল তো অনলাইন ই টিকেটের যুগ।"
এটা আমি করব না কারণ আমি কোন অবস্থাতেই আমার দেশ নিয়ে কথা বলার সুযোগ দেব না। যেটা পোস্টে বলেছি, ওহ, পুওর বেংলাডেশ, পুওর বেংলাডেশি। আমাকে কেউ তাচ্ছিল্য করুক কিন্তু দেশকে নিয়ে কেউ তাচ্ছিল্য করবে এটা আমার সইবে না। তাই টিকেট আমি নিজেই কাটব।
"যার মধ্যে একটিতে লেখা ছিল আমি সাইন্টোলজির সদস্য না এই মর্মে স্বীকারোক্তি"
কিছু মনে করবেন না, এমনটা আমাকে বলা হলে আমি সই করব না।
না, এদের বানানো নিয়ম কেবল আমাদের জন্য। আমাদের দেশে সাদা চামড়ার লোকজন যখন খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে বেড়ায় তখন আমরা বলতে পারি না যে, এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশ খায় না। কারণ, আমাদের শিরদাঁড়া হয়ে যায় মাখনের মতন নরোম।@রেজওয়ান
ভাইরে, এটা আমি করতে পারি না। দেশকে অসম্মান করা হয়, অন্তত এই ইস্যুতে...।@Rabbi
"না, এদের বানানো নিয়ম কেবল আমাদের জন্য।" - ওই ফর্ম অন্যান্য দেশের থেকে আসা অতিথিদের জন্যেও করতে হয়েছিল। আমি অন্তত বলতে পারি - জার্মানি নির্দিষ্ট দেশের জন্যে বর্ণবাদমূলক কাজ করবে না। ওদের কিছু আলাদা নিয়ম আছে।
আপনি নিজে টিকেট কাটলে তো বিল জমা দিতে হবেই। এটি সরকার কেন যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্যেই প্রযোজ্য।
"ওই ফর্ম অন্যান্য দেশের থেকে আসা অতিথিদের জন্যেও করতে হয়েছিল।"
রেজওয়ান, ভাইরে, ওটা আমি বুঝতে পেরেছি, কেবল আমাদের জন্য না।
আমার কথা হচ্ছে, ওদের এই সব নিয়ম কেন আমাকে মানতে হবে, আমার কি দায় পড়েছে?
কেউ কেন এমন নিয়ম বানাবে, তোমাকে লিখিত দিতে হবে, আমি চোর না!
সত্যি বলি রেজওয়ান, বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত হলে, আমার তো ওখানে সর্দি ফেলারও ইচ্ছা নাই।
কথা সেটা না। কথা হচ্ছে, এরা যখন আমাদের দেশে আসবে তখন খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরে ঘুরবে, এটাই হচ্ছে কথা।
বেশ-বেশ, তা সৌদি আরবে খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে দেখাক না, আমরাও দেখি। :)
Post a Comment