Search

Saturday, January 9, 2010

জীবনটাই যখন নিলামে


ব্লগিং করে করে যে ক্ষতিটা হয়েছে, বড় কোন লেখা লিখতে এখন পাহাড়সম মনে হয়! উপন্যাস লেখার কথা মনে হলে এখন গা কাঁপে।

প্রকাশক সাহেব যখন বলেন, ৬ ফর্মার নিচে ছাপলে আমাদের পোষায় না, আমার মুখ শুকিয়ে আসে।
৪ ফর্মা লিখতেই আমার জান বেরিয়ে যায়।
আমি চিঁ চিঁ করে বলি, ইয়ে, এইবার ৪ ফর্মা...। আমি নিশ্চিত, প্রকাশক সাহেবের মুখ অন্ধকার হয়। দেখাদেখি আমারও মুখ ঝুলে পড়ে। ভাগ্যিস, মনিটরে তিনি আমার মুখ দেখতে পান না।

আসল লেখকেরা বই শুরুর আগে খানিকক্ষণ তবলা বাজান, প্রস্তাবনা-ভূমিকা এই সব নাম দিয়ে খানিকটা বাতচিত করেন। তবলা বাজালে গান তো হবেই। তাই আমিও লেখক হওয়ার চেষ্টায় কস্তাকস্তি করা একজন মানুষ, লেখকদের অনুকরণ করে কঠিন শব্দ প্রস্তাবনা নাম না-দিয়ে দিলাম:
"কি ছু ক থা, কি ছু গা ন!
২০০৮ সালের ঘটনা এটা। অস্ট্রেলিয়ার আয়ান ইউশার নামের এক ব্যক্তি নিজের জীবনটা নিলামে তুলে দেন। কেবল জীবনই না; তার পছন্দের সমস্ত কিছুই। বন্ধু-বান্ধব-বান্ধবী-স্ত্রী, তৈজসপত্র, জামাকাপড়, বাড়ি, গাড়ি, চাকরি সবই। কেবল তিনি পাসপোর্ট এবং ওয়ালেটটা নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন।
অনেকের কাছে হয়তো এটা রসিকতা মনে হতে পারে, এমন মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না কিন্তু আমার মাথায় কেবল ঘুরপাক খাচ্ছিল আয়ান ইউশার নামের এই মানুষটা কেন এমনটা করার কথা ভাবলেন! কেন? কেন! এটা হয়তো আমার কখনই জানা হবে না যেমনটা এখনও জানা হয়নি জীবনানন্দ দাশের ওই মানুষটা কেন এমন করেছিলেন?
“শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে-ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ’ল তার সাধ।
বধূ শুয়ে ছিল পাশে-শিশুটিও ছিল;
...আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে।”
মানুষটার কেন এমন করে চলে যাওয়ার সাধ হলো? আহা, এমন করে চলে যাবার সময় বধূ, শিশুটিও পাশে থাকবে কেন, আহা কেন? এ অন্যায়-এ অন্যায়! এমন বিপন্ন বিস্ময় কেবল কী ওই মানুষটার রক্তেই খেলা করে, আমাদের রক্তে খেলা করে না? টের পাই না আমরা, না? কি জানি! টের পেতে দেই না, টের পেলে হয়তো আর ফিরে আসা হবে না বলে? অদেখা ভয়ে...?
নাকি শামসুর রাহমান আগেভাগেই টের পেয়ে গিয়েছিলেন?
“যেদিন মরবো আমি, সেদিন কী বার হবে
বলা মুশকিল।
শুক্রবার? বুধবার? শনিবার? নাকি রবিবার?
যে বারই হোক,
সেদিন বর্ষায় যেন না ভেজে শহর, যেন ঘিনঘিনে কাদা
না জমে গলির মোড়ে। সেদিন ভাসলে পথ-ঘাট,
পূণ্যবান শবানুগামীরা বড়ো বিরক্ত হবেন।”

এই লেখাটার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার আয়ান ইউশার বা জীবনানন্দ দাশের নাম-না-জানা ওই মানুষটার সঙ্গে কোন যোগসূত্র নাই, এটা তাঁদের গল্প না। কিন্তু সত্যিই কী কোন যোগসূত্র নাই? আমাদের মাথায় কি কখনই এমন পাগলামি, রোখ চাপে না? অদেখা ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে- ইচ্ছা করে না লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ি?
আসলাম অনিচ্ছায়, যাবো অনিচ্ছায়; মাঝের দিনগুলোও অনিচ্ছাকৃত ভূমিকায়- সবিরাম অভিনয়! চেষ্টাকৃত অভিনয় করে করে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে মনে হয় না এমন, দূর-দূর, অসহ্য এক জীবন! অন্য একটা ভুবন নিদেনপক্ষে অন্য একটা ভুমিকার বড্ডো প্রয়োজন...।"

*জীবনটাই যখন নিলামে: এক

8 comments:

মোসতাকিম রাহী said...

যাক, অবশেষে বেরোচ্ছে!
বইয়ের কলেবর ছোট হোক, ক্ষতি নেই। আবার নিয়মিত হোন, শুভ ভাই। ব্লগে নিবন্ধ লেখার পাশাপাশি গল্প-উপন্যাস নিয়মিত লিখুন!

শুভেচ্ছা....

Ahmed Arif said...

বইটির প্রচ্ছদ কে করেছেন? আর মূল্য কতো ধরা হয়েছে?

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

বইটা এখনও হাতে পাইনি। প্রচ্ছদটা কে করেছেন এটা বলতে পারছি না।
আসলে মেইলে প্রচ্ছদটা পেয়েছিলাম। কে করেছেন এটা জেনে নিতে মনে ছিল না, সরি।

দামটা শুনেছি ১১০ টাকা। ছাড় বাদ দিয়ে সম্ভবত ৮২।

Ahmed Arif said...

অসুবিধে নেই। আসলে আমার ব্লগস্পটে তথ্য তুলে রাখবো বলে জানতে চাইছিলাম।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...
This comment has been removed by the author.
আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আপনার এ উদ্যেগের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আজই বই হাতে পেলাম। প্রচ্ছদটা করেছেন আহমেদ ফারুক।

Ahmed Arif said...

বইটির তথ্য এখানে তুলে রেখেছি:
http://blog.aumitahmed.com/2010/02/blog-post_8964.html

আশা করছি বইটি প্রাঠকপ্রিয় হবে।

এবার দেশ থেকে ডাকযোগে কিছু বই আনাবার চেষ্টা করছি। দেখি হয় কিনা।

আলী মাহমেদ - ali mahmed said...

আপনার লিংকটা দেখলাম। গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।