নাম পাল্টালে কী আসে যায়? রাজা মিয়া নামের মানুষকে দেখেছি ডাকপিয়নের কাজ করতে, ফকির চাঁদ নামের মানুষটা টাকার বস্তায় গড়াগড়ি খান। ধুতুরার নাম পাল্টালে কী গোলাপ হয়, হয় না? নিয়ম নাই!
মৃত্যুকে যে নামেই ডাকা হোক তা মৃত্যুই থেকে যায়, সে আপনি ক্রসফায়ার বলুন বা আত্মহত্যা কিংবা ফাঁসি (এরশাদ সাহেবের আমলে মিরপুরের ১২ বছরের বালককে ফাঁসির নামে খুন করা হয়েছিল, কর্নেল তাহেরকেও)। এই যে দেশে লাগাতার ক্রসফায়ার হচ্ছে কাহিনী কিন্তু একই, বুলেট পরস্পরকে ক্রস করার সময় বুক চিতিয়ে দেয়া মানুষটার না-মরে উপায় থাকছে না! বিডিআরদেরও দেখছি একই কাহিনী, ফট করে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা দুম করে এরা আত্মহত্যা করে বসছেন। নিজেকে নিজেই মেরে ফেললে-আত্মহত্যা করলে কার কী বলার আছে? একটা কিন্তু থেকেই যায়।
বিডিআর সদস্যরা আদালতকে জানিয়েছেন, 'পিলখানার ভেতরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেকে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন'।
গোল্ডা মায়ারের সেই বিখ্যাত উক্তিটা আবারও শেয়ার করি, 'নিজের হাতে হত্যা করা এবং হত্যার সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্যে কোন ফারাক নাই'। তেমনি কাউকে আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচিত করা, ঠেলে দেয়া আর খুন করার মধ্যে খুব একটা ফারাক আছে কী?
বিডিআর বিদ্রোহের পর এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে যাদের সম্বন্ধে বলা হচ্ছে হৃদরোগ, আত্মহত্যা ও নানা অসুস্থতাজনিত রোগ। কেবলমাত্র ২ বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হচ্ছে। ফরেনসিক রিপোর্টে এদের নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
আমরা এখনও সবটুকু জানি না হয়তো কখনও জানা হবে না, এই নারকীয় তান্ডব, ভয়াবহ-নৃশংস কান্ডটা কেন ঘটেছিল। এর পেছনে চেনা-অচেনা, কোন আকৃতির দানব, কেমন প্ররোচনা, কবেকার ক্ষোভ কাজ করেছে! বিডিআরের পোশাক পরা একজন মানুষ কেন দানবের ভূমিকায় অভিনয় করল?
আমি জানি না, এদেশের কোন মনোবিদ এদের মস্তিষ্কে উঁকি মেরে দেখেছেন কিনা- কোন নিতল থেকে এমন নৃশংসতা উঠে এলো, কেন এলো? অভাগা দেশ- আমাদের এতো সময় কোথায়! আমরা কখনও বিষবৃক্ষটার খোঁজ করি না, কয়টা ফল ধরল এই নিয়ে হইচই করে বিচি মাথায় তুলি।
সামান্য একটা ছবি কী নারকীয় তান্ডব ঘটাতে পারে এর খোঁজ রাখার সময় কোথায় আমাদের। ক-দিন পূর্বে জুইশ ওরফে ইসরাইল কর্তৃক যে শোডাউন করা হয়েছে এর যেসব ছবি আমরা দেখেছি আধুনিক মিডিয়ার কল্যাণে- এদের ধারণা মুসলমান মানেই টেররিস্ট! আমি নিশ্চিত পুতুপুতু টাইপের একটা বালকের হাতেও যদি ক্ষমতাটা দেয়া হয় সে কালবিলম্ব না-করে ইসরাইল নামের দেশটি পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলবে।
অথচ ১৯৯৪ সালে মাত্র কয়েক মাসে রোয়ান্ডায় ১০ লাখ মানুষকে অতি নৃশংসতায় হত্যা করা হয়েছে কিন্তু এ নিয়ে আমরা খুব একটা আবেড়তাড়িত হইনা কারণ বিভিন্ন কারণে ভয়াবহতার আঁচ আমাদের গায়ে লাগেনি।
*এই লিংকটা কেন দিলাম এটা আমি নিজেও জানি না। সম্ভবত মনের ভুলে...।
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Tuesday, September 29, 2009
ধুতুরাকে যে নামেই ডাকা হোক...
বিভাগ
দু:স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
Sunday, September 27, 2009
হাজামের হাতে সার্জনের ছুরি!
অন-লাইনে লেখালেখির সুবাদে আমার সঙ্গে অনেকেই কঠিন অমত পোষণ করতেন যে বিষয়টি নিয়ে, সেটা হচ্ছে গালাগালি। অল্প প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে গালির ফোয়ারা ছুটিয়ে দেয়া। এটা আমার কঠিন অপছন্দের। আমার স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, এটা লেখার-ভাবনার মান কমিয়ে দেয়।
কিন্তু উপন্যাসে গ্রামের অশিক্ষিত একটা চরিত্র, সে তো আর প্রতি শ্বাসে আসতে আজ্ঞা হোক, বসতে আজ্ঞা হোক বলবে না। নিম্নবিত্ত মহিলাদের দেখেছি অবলীলায় তার মেয়েকে 'হতিন' (সতীন) বলে অহরহ গাল দিতে। অর্থটা ভাবলেই গা গুলায়, রোম দাড়িয়েঁ যায়! মেয়েকে এই গাল দেয়ার অর্থ কী কুৎসিত-কী ভয়াবহ-কী জঘন্য এটা নিয়ে মাথা ঘামাবার আদৌ প্রয়োজন তাদের নেই।
খোদেজা নামের উপন্যাসের অংশবিশেষ একজনের অনুরোধে আমার নিজের সাইটে পোস্ট করেছিলাম। ওই উপন্যাসের চরিত্রের প্রয়োজনে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গালি এসেছে।
খোদেজা উপন্যাসটির অংশবিশেষ দাঁড়ি-কমাসহ একজন যৌবনযাত্রা নামের সাইটে কপি-পেস্ট করে দিয়েছিলেন যা আমাকে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ করেছিল। এই নিয়ে একটা লেখা দিলে যৌবনযাত্রার বাঘ মামা (অনুমান করি, তিনি ওই সাইটের একজন কর্তৃপক্ষ গোছের কেউ একজন) দু:খপ্রকাশ করেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি, আবারও করি।
যে-কোন প্রয়োজনে একটা লেখার লিংক দেয়া চলে কিন্তু বিনা অনুমতিতে, না জানিয়ে হুবহু কপি-পেস্ট করাটা অপরাধ। অবশ্য এদের আর দোষ দেই কেমন করে আমাদের দেশে এখনও প্রথম আলোর মত প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা একটা লেখা ছেপে দিয়ে দয়া করে লিখে দেয় 'ওয়েব সাইট অবলম্বনে' বা 'ওয়েব সাইট থেকে'। যেন ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো গণিমতের মাল-বহুভোগ্যা। পত্রিকা বা ছাপার অক্ষরে আমরা যা পড়ি তাই শিখি, শিখছিও তাই।
"শফিক নিমিষেই খোদেজাকে ছেড়ে নিরাপদ দূরুত্বে সরে এসে পশুর আক্রোশে ড্রাইভারকে গাল দিচ্ছে, ****নির পোলা, *** বেডির পোলা...।"
যৌবনযাত্রায় ওই লেখাটা পড়তে গিয়ে মজার এই বিষয়টা লক্ষ করলাম। আমার লেখাটার সবটুকুই হুবহু কপি-পেস্ট করা হয়েছে কিন্তু এই প্যারায় এসে গালিগুলো সেন্সর করা হয়েছে।
খোদেজা উপন্যাসের এখানে গালিগুলো না দেয়ার অর্থ হচ্ছে বিকলাঙ্গ একটা লেখা। শফিক নামের যে মানুষটা, এই গালি দিচ্ছে সে হচ্ছে গ্রামের বখা একটা ছেলে, ওসময় উদগ্র কামার্ত একজন মানুষ, পুরাপুরি বশে নিয়ে আসা শিকার (খোদেজা নামের শিশুটি) চোখের সামনে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তার আক্রোশ আমি মনশ্চক্ষুতে দেখতে পাই। এই মানুষটার পক্ষে ওই মুহূর্তে কাউকে মেরে ফেলা বিচিত্র কিছু না, যা সে পরবর্তি সময়ে করেছে। সে এবং তার সঙ্গিরা মেয়েটির চিৎকার থামাবার জন্য তার মুখে মুঠো মুঠো বালি গুঁজে দিয়েছে।
তো, এমন পরিস্থিতিতে শিকার যখন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, এখানে আমি যেমন আশা করি না তেমনি পাঠকের আশা করাটাও সমীচীন হবে না যে, চরিত্রটি সুর করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবে, যেতে নাহি দেব তবুও যেতে দিতে হয় পে-এ-এ-এ। এটা দেখানো আমার মত অলেখক, ৩ টাকা দামের কলমবাজের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের দেশের বড় মাপের লেখক স্যারদের জন্য না-হয় এটা তোলা থাকুক।
ওয়াল্লা, এঁরা কারণে-অকারণে যে কোন চরিত্রর মুখে রবিদাদার কোন গান-কবিতা বা উঁচুমার্গের কোন বাতচিত বসিয়ে দেন। এটা কেন করেন কে জানে- তিনি নিজে পছন্দ করেন বলে? একজন মাতালের ন্যায় যার রোদে মদ গিলতে হয়, বৃষ্টিতেও!
ওই সাইটে গালিগুলোকে সেন্সর করা দেখে আমি হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পারছি না। পাশাপাশি এই বাসনাটাও তীব্র হয়, বড় সাধ জাগে, অপারেশন থিয়েটারে হাজাম-নাপিতের হাতে সার্জনের ছুরি তুলে দিলে কেমন হয়? বাস্তবে দেখলাম না তাতে কী অন্তত এটা দেখে দুধের সাধ ঘোলে তো মিটল!
কিন্তু উপন্যাসে গ্রামের অশিক্ষিত একটা চরিত্র, সে তো আর প্রতি শ্বাসে আসতে আজ্ঞা হোক, বসতে আজ্ঞা হোক বলবে না। নিম্নবিত্ত মহিলাদের দেখেছি অবলীলায় তার মেয়েকে 'হতিন' (সতীন) বলে অহরহ গাল দিতে। অর্থটা ভাবলেই গা গুলায়, রোম দাড়িয়েঁ যায়! মেয়েকে এই গাল দেয়ার অর্থ কী কুৎসিত-কী ভয়াবহ-কী জঘন্য এটা নিয়ে মাথা ঘামাবার আদৌ প্রয়োজন তাদের নেই।
খোদেজা নামের উপন্যাসের অংশবিশেষ একজনের অনুরোধে আমার নিজের সাইটে পোস্ট করেছিলাম। ওই উপন্যাসের চরিত্রের প্রয়োজনে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গালি এসেছে।
খোদেজা উপন্যাসটির অংশবিশেষ দাঁড়ি-কমাসহ একজন যৌবনযাত্রা নামের সাইটে কপি-পেস্ট করে দিয়েছিলেন যা আমাকে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ করেছিল। এই নিয়ে একটা লেখা দিলে যৌবনযাত্রার বাঘ মামা (অনুমান করি, তিনি ওই সাইটের একজন কর্তৃপক্ষ গোছের কেউ একজন) দু:খপ্রকাশ করেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি, আবারও করি।
যে-কোন প্রয়োজনে একটা লেখার লিংক দেয়া চলে কিন্তু বিনা অনুমতিতে, না জানিয়ে হুবহু কপি-পেস্ট করাটা অপরাধ। অবশ্য এদের আর দোষ দেই কেমন করে আমাদের দেশে এখনও প্রথম আলোর মত প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা একটা লেখা ছেপে দিয়ে দয়া করে লিখে দেয় 'ওয়েব সাইট অবলম্বনে' বা 'ওয়েব সাইট থেকে'। যেন ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো গণিমতের মাল-বহুভোগ্যা। পত্রিকা বা ছাপার অক্ষরে আমরা যা পড়ি তাই শিখি, শিখছিও তাই।
"শফিক নিমিষেই খোদেজাকে ছেড়ে নিরাপদ দূরুত্বে সরে এসে পশুর আক্রোশে ড্রাইভারকে গাল দিচ্ছে, ****নির পোলা, *** বেডির পোলা...।"
যৌবনযাত্রায় ওই লেখাটা পড়তে গিয়ে মজার এই বিষয়টা লক্ষ করলাম। আমার লেখাটার সবটুকুই হুবহু কপি-পেস্ট করা হয়েছে কিন্তু এই প্যারায় এসে গালিগুলো সেন্সর করা হয়েছে।
খোদেজা উপন্যাসের এখানে গালিগুলো না দেয়ার অর্থ হচ্ছে বিকলাঙ্গ একটা লেখা। শফিক নামের যে মানুষটা, এই গালি দিচ্ছে সে হচ্ছে গ্রামের বখা একটা ছেলে, ওসময় উদগ্র কামার্ত একজন মানুষ, পুরাপুরি বশে নিয়ে আসা শিকার (খোদেজা নামের শিশুটি) চোখের সামনে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তার আক্রোশ আমি মনশ্চক্ষুতে দেখতে পাই। এই মানুষটার পক্ষে ওই মুহূর্তে কাউকে মেরে ফেলা বিচিত্র কিছু না, যা সে পরবর্তি সময়ে করেছে। সে এবং তার সঙ্গিরা মেয়েটির চিৎকার থামাবার জন্য তার মুখে মুঠো মুঠো বালি গুঁজে দিয়েছে।
তো, এমন পরিস্থিতিতে শিকার যখন হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, এখানে আমি যেমন আশা করি না তেমনি পাঠকের আশা করাটাও সমীচীন হবে না যে, চরিত্রটি সুর করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবে, যেতে নাহি দেব তবুও যেতে দিতে হয় পে-এ-এ-এ। এটা দেখানো আমার মত অলেখক, ৩ টাকা দামের কলমবাজের পক্ষে সম্ভব না। আমাদের দেশের বড় মাপের লেখক স্যারদের জন্য না-হয় এটা তোলা থাকুক।
ওয়াল্লা, এঁরা কারণে-অকারণে যে কোন চরিত্রর মুখে রবিদাদার কোন গান-কবিতা বা উঁচুমার্গের কোন বাতচিত বসিয়ে দেন। এটা কেন করেন কে জানে- তিনি নিজে পছন্দ করেন বলে? একজন মাতালের ন্যায় যার রোদে মদ গিলতে হয়, বৃষ্টিতেও!
ওই সাইটে গালিগুলোকে সেন্সর করা দেখে আমি হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পারছি না। পাশাপাশি এই বাসনাটাও তীব্র হয়, বড় সাধ জাগে, অপারেশন থিয়েটারে হাজাম-নাপিতের হাতে সার্জনের ছুরি তুলে দিলে কেমন হয়? বাস্তবে দেখলাম না তাতে কী অন্তত এটা দেখে দুধের সাধ ঘোলে তো মিটল!
বিভাগ
খোদেজা
Saturday, September 26, 2009
এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার
*শুভ'র ব্লগিং থেকে পুরনো লেখাটা আবারও দেয়ার কারণ হচ্ছে, এখন আবার দেখছি আমাদের মহান রাজনীতিবিদরা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হরতালের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের কথা বলে গলাবাজি করছেন। আমাদের রাজনীতিবিদ মহোদয়গণ অপচয়ে অভ্যস্ত, কথার অপচয় করবেন এ আর দোষের কী! নিয়মানুযাযী শীত যেমন আসি আসি করছে, হরতালও আসবে এতে সন্দেহ কী! প্রবল আশা, হরতালের পদ্ধতি বদলাবে- ডিজিটাল হরতাল নামের নতুন কোন জিনিস প্রসব হবে। কে জানে, বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি করে হয়তো হরতালের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হবে।
.............
"ভাবা যায়! এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার- কয়েদী সংখ্যা ১৪ কোটির উপরে! অবশ্য কারাগারটা ৩৬৫ দিন চালু থাকে না, এটা আমাদের জন্যে ভারী বেদনার! আবারও চালু হবে হবে ভাব...।
পৃথিবীতে ফাইভ স্টার সুবিধাসহ, বেশ কিছু বিচিত্র কারাগার আছে, ওইসব নিয়ে না হয় অন্য দিন কথা বলা যাবে। আমি যেটার কথা বলছি, এখানে আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন কেবল ইচ্ছা করলেই মুভ করতে পারবেন না। কারাগারটা হচ্ছে বাংলাদেশ, আমাদের সোনার বাংলাদেশ- গোটা দেশটাই সোনার হয়ে গেছে, কবর দেয়ার জায়গাটুকু নাই!
তিনি যেমন বলেছিলেন হও, আর হয়ে গেল, তেমনি বিরোধীদল (যখন যিনি ক্ষমতায় থাকেন না-বিরোধীদল বা যাহার জন্য প্রযোজ্য) বললেন, হরতালের নামে কারাগার হও- ব্যস, হয়ে গেল! এবং আপনার জীবনের দাম যাই থাকুক, এ দিন আপনার জীবন রক্ষার দায়িত্ব ঈশ্বর ব্যতীত আর কারও না। কী এক কারণে জানি এদিন ঈশ্বরের ভারী ঘুম পায়!
এদিন বড়ো মজা, অনেক চাকুরীজীবীকে অফিস করতে হয় না। এদের অহরহ প্রার্থনা থাকে, কেন যে সারাটা বছর হরতাল থাকে না। মাস শেষে খালি গিয়ে বেতনটা উঠিয়ে আনা। হরতালে আর কিছু না হোক আমরা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেই যাচ্ছি, জনশক্তি বড় শক্তি!
এদিন ইচ্ছা করলেই গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়। আমাদের অনেকের বাড়ীর চুলায় বিড়াল ঘুমায় কিন্তু এদিন আমাদের পায়ের শব্দে রাজপথ থরথর কাঁপে। ইচ্ছা করলেই গাড়ি ভেঙ্গে ফেলা যায়, ইচ্ছা করলেই পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়, আগুনের লেলিহান শিখায় আমাদের রক্তের কথা মনে পড়ে যায়। চড়চড় শব্দ করে যখন মানুষের চামড়া পুড়তে থাকে, শরীরে ঝনঝন করে একটা ভাললাগা ছড়িয়ে পড়ে! মানুষের চামড়া পোড়ার গন্ধে আমাদের এখন আর গা গুলায় না!
ঈশ্বর নিঃম্বাস বন্ধ করে রাখেন!
এদিন ইচ্ছা করলেই আমরা বাবার বয়সী একজন অফিসযাত্রীর গায়ের কাপড় এক এক করে খুলে উলঙ্গ করে ফেলতে পারি। এক সময় তিনি অবিকল ভিক্ষুকের গলায় ভারী কাতর হয়ে হাহাকার করে বলবেন, আমাকে কেউ আল্লারওয়াস্তে একটা কাপড় দেন। আমরা সবাই গোল হয়ে তামাশা দেখি- আহা, তার সন্তানকেও যদি এনে এ তামাশাটা দেখাতে পারতাম!
ঈশ্বর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন!
হরতাল এ গ্রহের সবচেয়ে কুৎসিত বেশ্যার গর্ভে যার জন্ম। হরতাল নামের গা ঘিনঘিনে জন্তুটা জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য দানবের। যে আমাদের, এক ফোঁটা রক্ত দেখলে গা গুলাতো আজ সেই রক্তের স্রোত মাড়িয়ে নির্বিকারচিত্তে আমরা হেঁটে যাই। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের গরম গরম রক্তের স্রোতের উপরে হাঁটাটা খুব জরুরী!
ঈশ্বর গালে হাত দিয়ে ভাবনায় তলিয়ে যান!
হরতাল নামের এ দানবটা ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে, আমরা নপুংসকরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। এ দেশের সেরা সন্তানরা তাদের মস্তিষ্ক গুহ্যদ্বারে জমা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। টনকে টন কাঁচামাল পচে র্দুগন্ধ ছড়ায়। বিদেশীদের মাথায় গন্ডগোল না থাকলে এ দেশে বিনোয়োগ করার কথা না, কেন করে আল্লা মালুম! হয়তো আর অন্য কোন দেশে আমাদের দেশের মতো শোষণ করার সুযোগ অপ্রতুল!
ঈশ্বর থুথু ফেলেন!
হরতালে একটা লাশ আমাদের বড়ো প্রয়োজন। যে হরতালে অন্তত একটা লাশ পড়বে না ওই হরতাল সম্বন্ধে মিডিয়া বলবে বা লেখা হবে, ঢিলেঢালা হরতাল।
একটা লাশ পেলে নেতাদের আনন্দ-আমোদের শেষ নাই। ঝড়ের গতিতে ছুটে যাবেন লাশের পরিবারের বাসায়, কোন একজনকে ধরে কান্না কান্না ভাব করবেন, মিডিয়া ফটাফট ছবি তুলবে।
আমি আইন সম্বন্ধে খুবই অল্প জ্ঞান রাখি, তবুও আমার অল্প জ্ঞান নিয়ে বলি, টর্র্ট আইনের মাধ্যমে অনায়াসে মামলা করতে পারার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়টা মামলা হয়েছে? হরতাল-অবরোধে, আমাদের ক্ষতির একশোটা কারণ থাকতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে কে বাঁধবে বেড়ালের গলায় ঘন্টা- এটা খুব চমৎকার একটা পাশ কাটানোর অপবুদ্ধি, গণতন্ত্রের মহাযন্ত্র।
আমাদের এ প্রজন্মই পারবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে। ইচ্ছা করলেই এটা সম্ভব, প্রয়োজন হলে চাঁদা তুলে মামলা করা যায়, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার।
ঈশ্বর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন...।"
.............
"ভাবা যায়! এ গ্রহের সবচেয়ে বড়ো কারাগার- কয়েদী সংখ্যা ১৪ কোটির উপরে! অবশ্য কারাগারটা ৩৬৫ দিন চালু থাকে না, এটা আমাদের জন্যে ভারী বেদনার! আবারও চালু হবে হবে ভাব...।
পৃথিবীতে ফাইভ স্টার সুবিধাসহ, বেশ কিছু বিচিত্র কারাগার আছে, ওইসব নিয়ে না হয় অন্য দিন কথা বলা যাবে। আমি যেটার কথা বলছি, এখানে আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন কেবল ইচ্ছা করলেই মুভ করতে পারবেন না। কারাগারটা হচ্ছে বাংলাদেশ, আমাদের সোনার বাংলাদেশ- গোটা দেশটাই সোনার হয়ে গেছে, কবর দেয়ার জায়গাটুকু নাই!
তিনি যেমন বলেছিলেন হও, আর হয়ে গেল, তেমনি বিরোধীদল (যখন যিনি ক্ষমতায় থাকেন না-বিরোধীদল বা যাহার জন্য প্রযোজ্য) বললেন, হরতালের নামে কারাগার হও- ব্যস, হয়ে গেল! এবং আপনার জীবনের দাম যাই থাকুক, এ দিন আপনার জীবন রক্ষার দায়িত্ব ঈশ্বর ব্যতীত আর কারও না। কী এক কারণে জানি এদিন ঈশ্বরের ভারী ঘুম পায়!
এদিন বড়ো মজা, অনেক চাকুরীজীবীকে অফিস করতে হয় না। এদের অহরহ প্রার্থনা থাকে, কেন যে সারাটা বছর হরতাল থাকে না। মাস শেষে খালি গিয়ে বেতনটা উঠিয়ে আনা। হরতালে আর কিছু না হোক আমরা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেই যাচ্ছি, জনশক্তি বড় শক্তি!
এদিন ইচ্ছা করলেই গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়। আমাদের অনেকের বাড়ীর চুলায় বিড়াল ঘুমায় কিন্তু এদিন আমাদের পায়ের শব্দে রাজপথ থরথর কাঁপে। ইচ্ছা করলেই গাড়ি ভেঙ্গে ফেলা যায়, ইচ্ছা করলেই পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া যায়, আগুনের লেলিহান শিখায় আমাদের রক্তের কথা মনে পড়ে যায়। চড়চড় শব্দ করে যখন মানুষের চামড়া পুড়তে থাকে, শরীরে ঝনঝন করে একটা ভাললাগা ছড়িয়ে পড়ে! মানুষের চামড়া পোড়ার গন্ধে আমাদের এখন আর গা গুলায় না!
ঈশ্বর নিঃম্বাস বন্ধ করে রাখেন!
এদিন ইচ্ছা করলেই আমরা বাবার বয়সী একজন অফিসযাত্রীর গায়ের কাপড় এক এক করে খুলে উলঙ্গ করে ফেলতে পারি। এক সময় তিনি অবিকল ভিক্ষুকের গলায় ভারী কাতর হয়ে হাহাকার করে বলবেন, আমাকে কেউ আল্লারওয়াস্তে একটা কাপড় দেন। আমরা সবাই গোল হয়ে তামাশা দেখি- আহা, তার সন্তানকেও যদি এনে এ তামাশাটা দেখাতে পারতাম!
ঈশ্বর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন!
হরতাল এ গ্রহের সবচেয়ে কুৎসিত বেশ্যার গর্ভে যার জন্ম। হরতাল নামের গা ঘিনঘিনে জন্তুটা জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য দানবের। যে আমাদের, এক ফোঁটা রক্ত দেখলে গা গুলাতো আজ সেই রক্তের স্রোত মাড়িয়ে নির্বিকারচিত্তে আমরা হেঁটে যাই। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের গরম গরম রক্তের স্রোতের উপরে হাঁটাটা খুব জরুরী!
ঈশ্বর গালে হাত দিয়ে ভাবনায় তলিয়ে যান!
হরতাল নামের এ দানবটা ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে, আমরা নপুংসকরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। এ দেশের সেরা সন্তানরা তাদের মস্তিষ্ক গুহ্যদ্বারে জমা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। টনকে টন কাঁচামাল পচে র্দুগন্ধ ছড়ায়। বিদেশীদের মাথায় গন্ডগোল না থাকলে এ দেশে বিনোয়োগ করার কথা না, কেন করে আল্লা মালুম! হয়তো আর অন্য কোন দেশে আমাদের দেশের মতো শোষণ করার সুযোগ অপ্রতুল!
ঈশ্বর থুথু ফেলেন!
হরতালে একটা লাশ আমাদের বড়ো প্রয়োজন। যে হরতালে অন্তত একটা লাশ পড়বে না ওই হরতাল সম্বন্ধে মিডিয়া বলবে বা লেখা হবে, ঢিলেঢালা হরতাল।
একটা লাশ পেলে নেতাদের আনন্দ-আমোদের শেষ নাই। ঝড়ের গতিতে ছুটে যাবেন লাশের পরিবারের বাসায়, কোন একজনকে ধরে কান্না কান্না ভাব করবেন, মিডিয়া ফটাফট ছবি তুলবে।
আমি আইন সম্বন্ধে খুবই অল্প জ্ঞান রাখি, তবুও আমার অল্প জ্ঞান নিয়ে বলি, টর্র্ট আইনের মাধ্যমে অনায়াসে মামলা করতে পারার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়টা মামলা হয়েছে? হরতাল-অবরোধে, আমাদের ক্ষতির একশোটা কারণ থাকতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে কে বাঁধবে বেড়ালের গলায় ঘন্টা- এটা খুব চমৎকার একটা পাশ কাটানোর অপবুদ্ধি, গণতন্ত্রের মহাযন্ত্র।
আমাদের এ প্রজন্মই পারবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে। ইচ্ছা করলেই এটা সম্ভব, প্রয়োজন হলে চাঁদা তুলে মামলা করা যায়, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার।
ঈশ্বর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন...।"
বিভাগ
শুভ'র ব্লগিং
Friday, September 25, 2009
মানুষ চলে যায়, রেখে যায় স্মৃতি: মুহম্মদ জুবায়ের
আমার অস্থিরতার বাতিকটা বড্ড ভড়কে দেয় আমায়। তখন আমার আমি কী করবে এটার আগাম ভাবনাটা নিতল। কোন একটা কিছুতে আটকা না পড়লে নিজেকে রক্ষা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়! এমনিতেই আজকাল অদেখা ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে, কেন যেন মনে হয় এমন, কতটা কাল ঘুমাই না!
অস্থির আমি, বিভিন্ন সময়ে অন লাইনে লেখাগুলোর প্রিন্ট নেয়া পাতাগুলো উল্টাই। আহারে, একেকটা মন্তব্য যেন একেকটা স্পর্শ! আমাকে নিয়ে কারও কারও ক্ষোভ, ভাল লাগা পড়ি। কখনও কখনও অক্ষরগুলো আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। আমার প্রতি কারও অহেতুক ভালবাসা এতো তীব্র যে লজ্জায় অধোবদন হই, এদের এই ভালবাসা ফেরত দেয়ার ক্ষমতা আমার কই! আসলে কেউ কেউ আমার মত ভুল মানুষকে বেছে নেন! জুবায়ের ভাইয়ের মন্তব্যটা চোখে পড়ে। বুকটা কেমন ধক করে উঠে।
মুহম্মদ জুবায়ের নামের এই মানুষটার সঙ্গে আমার তেমন হৃদ্যতা ছিল না। কিন্তু তবুও কেন যেন আমার মনে হত মানুষটা বাড়াবাড়ি রকম সাদাসিদা। না মান, না ভান, না অভিমান।
একটা ওয়েবসাইটে আমাকে নিয়ে বড় রকম একটা ঝামেলা হয়েছিল। ওখানে 'আমার সবিনয় বক্তব্য' (লিংকের এই লেখাটা মূল সাইটের লেখা না, কপি-পেস্ট। ওরা কেবল আমাকেই নিষিদ্ধ করেনি, লেখাগুলোও মুছে ফেলেছিল। যেটা একটা ভয়াবহ অন্যায় কারণ এর সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছিল অন্যদের করা মন্তব্যগুলো।
এমনটা কারার অধিকার কারও আছে বলে আমি মনে করি না!) নামে একটা পোস্ট দিলে ওখানে মুহম্মদ জুবায়ের এই মন্তব্যটা করেন। এখানে কিছু অংশ উহ্য রেখে হুবহু তুলে দিচ্ছি:
"শুভ, আপনার সঙ্গে ঠিক সেভাবে আমার জানাশোনা হয়নি। তবু আপনার জন্যে আমার একটা প্রস্তাব আছে। ঠিক আছে, মানবেন কি না তা আপনার সিদ্ধান্ত। আপনি তর্ক-বিতর্কে নাই গেলেন। শুধু লিখে যান।
... ...(এই অংশটুকু উল্লেখ করলাম না। অংশটুকুতে আমাকে নিয়ে অতিশয়োক্তি ছিল। আমার ধারণা, তিনি সবাইকে নিয়েই এমন উচ্ছ্বাস দেখাতেন) গদ্য লেখেন আপনি।
আর যদি একান্তই চলে যাবেন ঠিক করে থাকেন, তাহলে এইটুকু বলে যাবেন আপনি কোথায় লিখবেন। আমি গিয়ে পড়ে আসবো।"
পাখি উড়ে যায়- কে কাকে নাড়ায়- কে কোথায় চলে যায়?
জুবায়ের ভাই, এটা কোন কাজের কাজ হলো না। আমি ওই সাইটটা থেকে আপনাকে না-বলে চলে এসেছিলাম সত্য কিন্তু তাই বলে আপনি দুম করে এমন করে চলে যাবেন? এ অন্যায়-এ অন্যায়!
আমি এখনও লিখি। কেউ কেউ পড়েনও। আহারে, পড়েন না কেবল আপনি। এটা কী ঠিক হলো? এমন এক ভুবনে চলে গেলেন যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসে না। তবুও কথা দিয়ে কথা না-রাখা কী ঠিক, বাডি...?
অস্থির আমি, বিভিন্ন সময়ে অন লাইনে লেখাগুলোর প্রিন্ট নেয়া পাতাগুলো উল্টাই। আহারে, একেকটা মন্তব্য যেন একেকটা স্পর্শ! আমাকে নিয়ে কারও কারও ক্ষোভ, ভাল লাগা পড়ি। কখনও কখনও অক্ষরগুলো আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। আমার প্রতি কারও অহেতুক ভালবাসা এতো তীব্র যে লজ্জায় অধোবদন হই, এদের এই ভালবাসা ফেরত দেয়ার ক্ষমতা আমার কই! আসলে কেউ কেউ আমার মত ভুল মানুষকে বেছে নেন! জুবায়ের ভাইয়ের মন্তব্যটা চোখে পড়ে। বুকটা কেমন ধক করে উঠে।
মুহম্মদ জুবায়ের নামের এই মানুষটার সঙ্গে আমার তেমন হৃদ্যতা ছিল না। কিন্তু তবুও কেন যেন আমার মনে হত মানুষটা বাড়াবাড়ি রকম সাদাসিদা। না মান, না ভান, না অভিমান।
একটা ওয়েবসাইটে আমাকে নিয়ে বড় রকম একটা ঝামেলা হয়েছিল। ওখানে 'আমার সবিনয় বক্তব্য' (লিংকের এই লেখাটা মূল সাইটের লেখা না, কপি-পেস্ট। ওরা কেবল আমাকেই নিষিদ্ধ করেনি, লেখাগুলোও মুছে ফেলেছিল। যেটা একটা ভয়াবহ অন্যায় কারণ এর সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছিল অন্যদের করা মন্তব্যগুলো।
এমনটা কারার অধিকার কারও আছে বলে আমি মনে করি না!) নামে একটা পোস্ট দিলে ওখানে মুহম্মদ জুবায়ের এই মন্তব্যটা করেন। এখানে কিছু অংশ উহ্য রেখে হুবহু তুলে দিচ্ছি:
"শুভ, আপনার সঙ্গে ঠিক সেভাবে আমার জানাশোনা হয়নি। তবু আপনার জন্যে আমার একটা প্রস্তাব আছে। ঠিক আছে, মানবেন কি না তা আপনার সিদ্ধান্ত। আপনি তর্ক-বিতর্কে নাই গেলেন। শুধু লিখে যান।
... ...(এই অংশটুকু উল্লেখ করলাম না। অংশটুকুতে আমাকে নিয়ে অতিশয়োক্তি ছিল। আমার ধারণা, তিনি সবাইকে নিয়েই এমন উচ্ছ্বাস দেখাতেন) গদ্য লেখেন আপনি।
আর যদি একান্তই চলে যাবেন ঠিক করে থাকেন, তাহলে এইটুকু বলে যাবেন আপনি কোথায় লিখবেন। আমি গিয়ে পড়ে আসবো।"
পাখি উড়ে যায়- কে কাকে নাড়ায়- কে কোথায় চলে যায়?
জুবায়ের ভাই, এটা কোন কাজের কাজ হলো না। আমি ওই সাইটটা থেকে আপনাকে না-বলে চলে এসেছিলাম সত্য কিন্তু তাই বলে আপনি দুম করে এমন করে চলে যাবেন? এ অন্যায়-এ অন্যায়!
আমি এখনও লিখি। কেউ কেউ পড়েনও। আহারে, পড়েন না কেবল আপনি। এটা কী ঠিক হলো? এমন এক ভুবনে চলে গেলেন যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসে না। তবুও কথা দিয়ে কথা না-রাখা কী ঠিক, বাডি...?
বিভাগ
কী মায়া গো
Tuesday, September 22, 2009
গণতন্ত্রের শেকলে বাঁধা নগ্ন একজন মানুষ
সুমি জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে আছে, আচ্ছা জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়লে কী হয়!
ওর দৃষ্টিতে রাজ্যের বিষণ্নতা! হা ঈশ্বর, এ লজ্জা কোথায় রাখি? এ পাহাড়সম অপমান আমি লুকাব কোথায়! বাবার সামনে দাঁড়াব কী করে, চোখ তুলে তাকাব কেমন করে?
অথচ বাবা কী সহজ আচরণই করছেন। মানুষটাকে এ অভিনয় করতে কী অমানুষিক কষ্টই না করতে হচ্ছে।
অসামান্য একটা ঘটনা আমুল বদলে দিয়েছে ওদের অসম্ভব সুন্দর এই পৃথিবীটা। কেন এই বেঁচে থাকা- জীবনটা মনে হচ্ছে একটা গা ঘিনঘিনে ঘেয়ো কুকুর!
ওর বাবা একটা ক্ষমাহীন অপরাধ করেছিলেন। হরতালের দিনে অফিস যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ভদ্রলোকের সন্তানেরা তার বাবাকে একটা কঠিন শাস্তি দিয়েছে। না, মেরে ফেলেনি। মেরে ফেললেই হয়তো ভাল হতো অন্তত এ অপমানের বোঝা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হত না।
বাবাকে-বাবাকে, ওর প্রিয় বাবাকে, ওরা মধ্য রাস্তায় একেক করে কাপড় খুলে উলঙ্গ করে ফেলেছিল। পত্রিকাওয়ালারা ঘটা করে এ ছবি পত্রিকায় ছাপিয়েছে। একজন কাতর মানুষের ছবি। তথাকথিত গণতন্ত্রের শেকলে বাঁধা একজন নগ্ন মানুষ। পরিবারের শেকলে বাঁধা একজন দুর্বল মানুষ, যার আত্মহত্যা করার সাহসটুকুও নেই।
এ বড়ো বিচিত্র দেশ, এখানে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে একজন মানুষের মুখের কথায় ‘হরতাল’ নামের একটা শেকল গোটা দেশটাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে। বিশাল এক কারাগারে আটকে ফেলা যায় কোটি কোটি মানুষকে! নপুংসক কোটি-কোটি মানুষ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে আকাশ পানে। কখন, কোন সেই শুভক্ষনে অন্য গ্রহ থেকে নেমে আসবে কৌপিন পরা কোন এক মহাপুরুষ। গণতন্ত্রের এই নোংরা শেকল ভেঙে মেঘ গর্জনে বলবে, হে সৃষ্টির সেরা জীব, আজ থেকে তোমরা মুক্ত, স্বা-ধী-ন।
ফ্রী- ড-ম!
*পুরনো লেখা কিন্তু পছন্দের। পোস্টের সঙ্গে ছবিটার একটা শানে-নজুল আছে। কয়েদীর ওই অংশটুকু লেখার সূত্র এটা। এর মূল হোতা মিডিয়ার একজন সেলিব্রেটি (যিনি টিভিতে লম্বা লম্বা বাতচিত করে আমাদেরকে শেখান, নসিহত করেন), যিনি যুগ্ন-সচীব পদমর্যাদার এই মানুষটার একেক করে কাপড় খুলে ফেলেছিলেন, ভদ্রলোক হরতালে অফিস যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন এই অপরাধে।।
সহায়ক লিংক:
১. কয়েদির অংশবিশেষ: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_18.html
বিভাগ
সাদাকে কালো বলিব
Friday, September 18, 2009
তিনি
তাঁর মনে কোন আনন্দ নাই। অথচ কী যে বিপুল ক্ষমতা তাঁর! কী নেই- অমরত্ব, অসীম সময়, অফুরন্ত ক্ষমতা। কিন্তু তাঁর পরও তাঁর মনে কোন আনন্দ নাই। কেবল মনে হচ্ছে ক্যাপসুলের খোলে ঢুকে পড়লে বেশ হয়। সমস্যা নেই, ১০০ বছর-হাজার বছর-লাখ বছর স্থির করে নিলেই হয়। চলে যাবেন তাঁর ভাষায় সাময়িক নিদ্রায়- যথাসময়ে তাঁর সেই নিদ্রা ভাঙ্গানো হবে। কিন্তু এ যে নিজের কাছে নিজেই হেরে যাওয়া। কাউকে কৈফিয়ত দিতে হবে না কিন্তু নিজের চোখে চোখ রাখবেন
কেমন করে?
বিশাল এই স্পেস-শিপের অতি ক্ষীণ হাশহাশ শব্দ ব্যতীত আর কোন শব্দ নেই। এতেই বড়ো বিরক্ত লাগছে। এই স্পেস-শিপ চালাবার বিষয়ে ‘তিনি’ কখনই মাথা ঘামান না, এটা এতই নিখুঁত করে তৈরি করা হয়েছে নিজ নিয়মেই অনাদি কাল ধরে চলতে থাকবে। অতি উঁচুমানের আকৃতিহীন রোবটগুলো নিরলস তাদের কাজগুলো করে যায়, ক্লান্তিহীন।
বিরক্তি কাটাবার জন্য ‘তিনি’ ঘুরে ঘুরে তাঁর সংগ্রহশালা দেখছেন। কী বিপুল তাঁর সংগ্রহের সমাহার! তাঁর দীর্ঘ ভ্রমনে যেখানেই গেছেন স্মৃতিচিহ্ন কিছু-না- কিছু নিয়ে এসেছেন, সযতনে রেখে দিয়েছেন। একটা গ্রহ থেকে বেশ খানিকটা ধূসর মাটি এবং বিচিত্র একটা ফল নিয়ে এসেছিলেন। বিচিত্র তো বটেই- একবার খেলেই হয়েছে, নিয়ম করে এটা খেতে হবে। সবচেয়ে জটিল সমস্যা হচ্ছে, এটা অতি দুর্গন্ধময় পদার্থ উৎপন্ন করে। অসহ্য-সহ্যাতীত! প্রায়শ ভাবেন ফলটা ফেলে দেবেন কিন্তু অনাবশ্যক একটা মায়া পড়ে গেছে যে।
অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে ‘তিনি’ এটা-ওটা নাড়াচাড়া করছেন। কী খেয়াল চাপল এটা-সেটা মিশিয়ে তাল পাকিয়ে নিভাঁজ একটা অবয়ব তৈরি করলেন, অতি ক্ষুদ্র একটা আকৃতি। যখন প্রাণ সঞ্চার করলেন অবয়বটা গড়িয়ে গড়িয়ে এদিক-ওদিক গড়াতে লাগল। তিনি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলেন, কী অর্থহীনই না দেখাচ্ছে! অবয়বটাকে দাঁড় করিয়ে দিলে আরও হাস্যকর ভঙ্গিতে লাফিয়ে লাফিয়ে নড়াচড়া করতে লাগল। এবার ‘তিনি’ অবয়বটার নীচের অংশটা দু-ভাগ করে দিলে অবয়বটার নড়াচড়া-হাঁটাহাঁটি খানিকটা সহনীয় হলো কিন্তু ভঙ্গিটা কেমন আড়ষ্ট। এবার ‘তিনি’ উপরের অংশটা দু-ভাগ করলে অবয়বটার নড়াচড়ায় একটা ছন্দ এলো।
বিশাল এই স্পেস-শিপের অতি ক্ষীণ হাশহাশ শব্দ ব্যতীত আর কোন শব্দ নেই। এতেই বড়ো বিরক্ত লাগছে। এই স্পেস-শিপ চালাবার বিষয়ে ‘তিনি’ কখনই মাথা ঘামান না, এটা এতই নিখুঁত করে তৈরি করা হয়েছে নিজ নিয়মেই অনাদি কাল ধরে চলতে থাকবে। অতি উঁচুমানের আকৃতিহীন রোবটগুলো নিরলস তাদের কাজগুলো করে যায়, ক্লান্তিহীন।
বিরক্তি কাটাবার জন্য ‘তিনি’ ঘুরে ঘুরে তাঁর সংগ্রহশালা দেখছেন। কী বিপুল তাঁর সংগ্রহের সমাহার! তাঁর দীর্ঘ ভ্রমনে যেখানেই গেছেন স্মৃতিচিহ্ন কিছু-না- কিছু নিয়ে এসেছেন, সযতনে রেখে দিয়েছেন। একটা গ্রহ থেকে বেশ খানিকটা ধূসর মাটি এবং বিচিত্র একটা ফল নিয়ে এসেছিলেন। বিচিত্র তো বটেই- একবার খেলেই হয়েছে, নিয়ম করে এটা খেতে হবে। সবচেয়ে জটিল সমস্যা হচ্ছে, এটা অতি দুর্গন্ধময় পদার্থ উৎপন্ন করে। অসহ্য-সহ্যাতীত! প্রায়শ ভাবেন ফলটা ফেলে দেবেন কিন্তু অনাবশ্যক একটা মায়া পড়ে গেছে যে।
অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে ‘তিনি’ এটা-ওটা নাড়াচাড়া করছেন। কী খেয়াল চাপল এটা-সেটা মিশিয়ে তাল পাকিয়ে নিভাঁজ একটা অবয়ব তৈরি করলেন, অতি ক্ষুদ্র একটা আকৃতি। যখন প্রাণ সঞ্চার করলেন অবয়বটা গড়িয়ে গড়িয়ে এদিক-ওদিক গড়াতে লাগল। তিনি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলেন, কী অর্থহীনই না দেখাচ্ছে! অবয়বটাকে দাঁড় করিয়ে দিলে আরও হাস্যকর ভঙ্গিতে লাফিয়ে লাফিয়ে নড়াচড়া করতে লাগল। এবার ‘তিনি’ অবয়বটার নীচের অংশটা দু-ভাগ করে দিলে অবয়বটার নড়াচড়া-হাঁটাহাঁটি খানিকটা সহনীয় হলো কিন্তু ভঙ্গিটা কেমন আড়ষ্ট। এবার ‘তিনি’ উপরের অংশটা দু-ভাগ করলে অবয়বটার নড়াচড়ায় একটা ছন্দ এলো।
তাঁর মুখে খানিকটা তৃপ্তির ছাপ। আরে-আরে, দেখো দিকি এটা কেমন
ছুটাছুটি লাগিয়েছে! একসময় অবয়বটা ক্লান্ত হয়ে, উবু হয়ে কী যেন উঠাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। উপরের দুইটা অংশ ব্যবহার করেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। ‘তিনি’ সুবিধার জন্য উপরের দুইটা অংশের
একেকটা অংশের শেষ মাথায় কেটে পাঁচটা ভাগ করে দিলেন। বাহ, এইবার অবয়বটা সরু সরু কাঠি-আঙ্গুল
দিয়ে কী চমৎকার করেই না অনায়াসে পড়ে থাকা ছোট্ট জিনিসটা তুলে নিল। বাহ, বেশ তো, বেশ তো!
তাঁর বিষণ্ণ ভাবটা অনেকটা কেটে গেছে। অনেক, অনেক দিন পর ‘তিনি’ খানিকটা উত্তেজনা বোধ করছেন। যা হোক, একটা মনের মত কাজ পাওয়া গেল তাহলে।
’তিনি’ অবয়বটা নাম দিলেন 'লীআ'। ‘লীআ’ হয়ে গেল তাঁর সময় কাটাবার একটা মজার খেলা। ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন করে শেষঅবধি ‘তিনি’ যেটা দাঁড় করালেন, ওটার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলেন। নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না কুৎসিতসব জিনিস দিয়ে এমন চমৎকার একটা কিছু দাঁড় করানো যায়! কালে কালে ‘লীআ’ স্পেস শিপের যে-কোন স্থানে মহাআনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে, কেবল একটাই নিষেধাজ্ঞা। ‘তিনি’ ফলটার বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছেন। খবরদার, এটা নিষিদ্ধ ফল, এককিনিও মুখে দেয়া চলবে না।
'লীআ'-র আকৃতিহীন রোবটদের সঙ্গে তেমন জমে না, কোথায় যেন সুর কেটে যায়। কারণ আকৃতিহীন রোবটদের কাজগুলো বড়ো একঘেয়ে, এদের অহেতুক কোনো বিকার-বৈচিত্র নেই, উনিশ-বিশ নেই! ‘লীআ’ বিমর্ষমুখে ঘুরে বেড়ায়। কী কষ্ট-কী কষ্ট!
একদিন ‘তিনি’ দয়ার্দ্র চোখে লীআ'র অস্থিরতা কাটাবার জন্য তার মতই একজন-সঙ্গিনী তৈরি করলেন। নাম দিলেন ‘লীআনি’। এবার এরা দু-জন গোটা স্পেস-শিপ দাবড়ে বেড়ায়, এটা উল্টায় তো ওটা পাল্টায়; অনর্থক হি হি হেসে কুটিকুটি হয়। ‘তিনি’ প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।
রোবটদের মধ্যে সবচেয়ে চৌকশ যে রোবট 'নতায়শ', লীআ এবং তার সঙ্গিনীর এইসব আদিখ্যেতা-ন্যাকামি দেখে নতায়শের ভাল লাগছিল না।
নতায়শ একদিন বলল, ‘মাস্টার, তোমার কী মনে হচ্ছে না এদের নিয়ে যা করছ এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে’?
তিনি নতায়শের দুর্বিনীত এই আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। হিম গলায় বললেন, ‘নতায়শ, তুমি কী রোবোটিক্সের নিয়মগুলো ভুলে গেছ’?
নতায়শ স্থির গলায় বলল, ‘না মাস্টার, কিন্তু আমি এদের কর্মকান্ডে যারপর নাই বিরক্ত। রোবোটিক্সের নিয়মানুযায়ী আমার কাজ হচ্ছে এই স্পেস-শিপ এবং তোমাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করা। কিন্তু লীআ এবং লীআনি এরা এই শিপের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমার স্পষ্ট বক্তব্য, এদের নষ্ট করে ফেলতে হবে, যথাসম্ভব দ্রুত, সম্ভব হলে এখুনি।
তিনি ক্রুদ্ধ কন্ঠে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘নতায়শ, তুমি সীমা লঙ্ঘন করছ। এই শিপের মাস্টার তুমি না, আমি। আমিই ঠিক করব কে এখানে থাকবে, কে থাকবে না। বরং তুমিই দূর হও, বাজ অফ-গেট লস্ট’!
'নতায়শ' তার কষ্টার্জিত স্বাভাবিক ভঙ্গি ধরে রেখে বলল, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি চলে যাব’।
'নতায়শ' কোনো ভাবেই এটা বিস্মৃত হতে পারছিল না 'লীআ'-দের জন্যই আজ তার এই দশা, দুর্দশা। কেমন করে এর শোধ নেয়া যায় মাথায় কেবল ঘুরপাক খায় কেবল এটাই। হুম-ম, বুদ্ধি একটা পাওয়া গেছে। 'নতায়শ' নিয়ম করে লীআ, লীআনির কানে অনবরত বকে মরে: ওই ফলটা খেতে। মাস্টার কেন না করেছেন এটা জানো না বুঝি তোমরা; এটা খেলে অমরত্ব পাওয়া যায় যে। মাস্টার চান না তোমরা অমর হও।
একদিন কী এক ঘোরে লীআ নতায়শের প্ররোচনায় ফলটা খেয়ে ফেলল। স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে ভেতরে তুমুল ভাংচুর- অজানা, অচেনা, অদেখা কিছু একটা পরিবর্তন! গোটা স্পেস-শিপের সবগুলো পাগলা ঘন্টি একযোগে বাজছে। লীআ ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। হা মাস্টার, এ আমি কী করলাম-এ আমি কী করলাম!
লীআ কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘মাস্টার, আমি মহা অন্যায় করেছি। নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইছি’।
তিনি মনখারাপ করা ভঙ্গিতে লীআ-র পানে তাকিয়ে আছেন। আশ্চর্য, তাঁরই তৈরি সামান্য একটা রোবট নতায়শ তাঁকে কেমন মাত দিয়ে দিল। কষ্টের শ্বাস ফেলে বললেন, ‘লীআ, এখন এটা বলে লাভ কী, বলো’?
লীআ বলল, ‘মাস্টার, আমি আর কক্ষনও তোমার কথার বাইরে কোন কাজ করব না’।
তিনি উদাস হয়ে বললেন, ‘লাভ কী? তোমাকে এখানে আর রাখা যাবে না। এটাকে নিষিদ্ধ ফল কেন বলেছিলাম, জানো? এটা একবার খেলে তোমার কাঠামোতে বিপুল পরিবর্তন হবে। একবার খেলে যে পরিবর্তনটা হয় তা হলো তখন এটা নিয়ম করে খেতে হয়। এতে তোমার ক্ষমতা, বেঁচে থাকার সময় সীমিত হয়ে আসবে। তোমার গোটা অবয়ব ভঙ্কুর এক শরীরে পরিণত হবে, যথানিয়মে তা নষ্ট হবে। তারচেয়ে তীব্র জটিলতা হচ্ছে, তোমার শরীরের সামনে পেছনে ফুটা করে এটার অবশিষ্টাংশ বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তোমাকে নিয়মিত বাহ্যে ত্যাগ করতে হবে। ওই অবশিষ্টাংশ-বর্জ্য এতই কদর্য, দুর্গন্ধময়, অসহ্য যেটা কোনো অবস্থায় এখানে রাখার ব্যবস্থা নাই। ইচ্ছা করলেও এটা করা যাবে না কারণ এখানকার পরিবেশ এমন উপযোগী করে তৈরি করা হয়নি। তাছাড়া আরও সমস্যা আছে, এখন থেকে নিয়ম করে ফলটা খেতে হবে বিধায় এ যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ভারী জটিল সমস্যা...’।
(তিনি জটিল সমস্যার বিস্তারিত বললেন না কারণ লীআ সবটুকু বুঝবে না। লীআকে রেখে দিলে এতে করে স্পেস-শিপে তাঁর নিয়ন্ত্রিত নিয়ম ক্রমশ এলোমেলো হয়ে পড়বে। সবকিছু আবার নতুন করে সাজাতে হবে। যাত্রা বিরতিসহ অজস্র সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এটা সম্ভব না, তিনি অনিয়ন্ত্রিত জটিলতা পছন্দ করেন না।)
লীআ কাতর হয়ে বলল, ‘মাস্টার, কোন উপায়ই কী নাই’?
তিনি বললেন, ‘উঁহু, নাই। ফল নামের জিনিসটা তোমাকে নিয়মিত গ্রহন করতে হবে, যা পরবর্তীতে তোমরা খাবার নামে চিনবে। তোমরা ক্রমশ জ্যামেতিক হারে বৃদ্ধি পাবে, এ ফল নামের খাবারের জন্য শুরু হবে তোমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা। কেবল এর অবশিষ্টাংশই যে বের হবে এমন না এই খাবারের জন্য তোমাদের শরীর থেকে রক্তও বেরুবে। জঘন্যতম কান্ড ঘটবে, তোমরা নিজেরাই একে অন্যকে হত্যা করবে। আফসোস, এ থেকে তোমাদের মুক্তি নাই’।
লীআ চোখের জলে ভাসতে ভাসতে বলল, ‘মাস্টার, এই-ই যদি শেষ কথা হয় যে বেরুবেই তাহলে এই বর্জ্য পুনরায় গ্রহন করার কি কোনো ব্যবস্থা করা যায় না?
তিনি গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘না’।
লীআ বলল, ‘কেন মাস্টার’?
(কেন? 'তিনি' এর ব্যাখ্যা দিলেন না। এটা করলে একসময় এরা স্থবির হয়ে পড়বে, নিচিহ্ন হয়ে যাবে-প্রাণের লেশমাত্রও থাকবে না। এর কোনো অর্থ হয় না। তিনি এইসব জটিলতা পছন্দ করেন না।)
লীআ বলল, ‘মাস্টার...’।
তিনি চাপা কষ্ট নিয়ে বললেন,’উহু, আর কথা না। তোমার সময় ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। ফলের অবশিষ্টাংশ তোমায় ফুটো করে বের করে না-দিলে তুমি যন্ত্রণায় বদ্ধউম্মাদ হয়ে পড়বে। তোমাদেরকে এবং নতায়শকে অতি ক্ষুদ্র এক স্থানে নামিয়ে দিচ্ছি, পরবর্তীতে এটাকে তোমরা একটা গ্রহ হিসাবে চিনবে। নতায়শ আর তোমরা- আলো এবং অন্ধকার, মিলেমিশে থাকবে। আমার নির্দেশ অনুযায়ি চলার চেষ্টা করবে। পরবর্তী বিবেচনার ভার তোমাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। আমি আশা করছি, তোমাদের সাহায্য করার জন্য হয়তো-বা কেউ, সময়ে-সময়ে আসবে, তাঁদের তোমরা দেবদূত হিসাবে জানবে। একেকজন দেবদূত তোমাদের একেক রকম শেখাবার চেষ্টা করবে কিন্তু সবারই একটাই উদ্দেশ্য থাকবে, তোমাদের মঙ্গল করার চেষ্টা করা।
ভাল থেকো’।
’তিনি’ অতি ক্ষুদ্র বিন্দুমত একটা জায়গায় এদের নামিয়ে দিলেন। অতি ক্ষুদ্র বিন্দু বটে কিন্তু এর এমাথা থেকে ওমাথা যাওয়ার পর্যাপ্ত জ্ঞান-ক্ষমতা লীআদের আপাতত নাই। পরে কালে কালে যার নাম হবে পৃথিবী। তাঁর প্রবল ইচ্ছা, কালে কালে অন্তত লীআ-র বংশধররা পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করবে। তিনি হাসলেন, পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জনের পরও লীআ'র বংশধরদের বুকের ভেতর থেকে হাহাকার বেরিয়ে আসবে, আমি কেউ না, আমি কিছু না!
লীআরা আকাশপানে তাকিয়ে থাকে আর লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে। লীআদের সন্তানেরাও আকাশপানে তাকিয়ে থাকার এই অভ্যাসটা বাড়াবাড়ি রকম রপ্ত করে ফেলেছে। মেজাজ শরীফ থাকলে আকাশপানে তাকিয়ে কাকুতি-মিনতি করে কিন্তু মেজাজ বিগড়ে গেলে, ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকলে আবার আকাশপানে তাকিয়ে গাল পাড়ে। কখনও খাদ্যাভাসের কারণে হাগু শক্ত হয়েছে তো দাও উপরে তাকিয়ে কষে গালি!
তিনি ক্যাপসুলের খোলে ঘুমাচ্ছেন। ক-লাখ বছর ধরে ঘুমাবেন, না-জাগলে এটা জানার কোনো উপায় নেই। আদৌ তিনি জাগবেন কিনা এটাও বলা মুশকিল। তিনি বড্ড খেয়ালি...!
*এটা একটা নিছক কল্পকাহিনী তাও আবার অন্য গ্রহের। এ গ্রহের সঙ্গে কোনো প্রকারে মিলে গেলে সেটা হবে নিছক কাকতালীয়।
তাঁর বিষণ্ণ ভাবটা অনেকটা কেটে গেছে। অনেক, অনেক দিন পর ‘তিনি’ খানিকটা উত্তেজনা বোধ করছেন। যা হোক, একটা মনের মত কাজ পাওয়া গেল তাহলে।
’তিনি’ অবয়বটা নাম দিলেন 'লীআ'। ‘লীআ’ হয়ে গেল তাঁর সময় কাটাবার একটা মজার খেলা। ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন করে শেষঅবধি ‘তিনি’ যেটা দাঁড় করালেন, ওটার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলেন। নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না কুৎসিতসব জিনিস দিয়ে এমন চমৎকার একটা কিছু দাঁড় করানো যায়! কালে কালে ‘লীআ’ স্পেস শিপের যে-কোন স্থানে মহাআনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে, কেবল একটাই নিষেধাজ্ঞা। ‘তিনি’ ফলটার বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছেন। খবরদার, এটা নিষিদ্ধ ফল, এককিনিও মুখে দেয়া চলবে না।
'লীআ'-র আকৃতিহীন রোবটদের সঙ্গে তেমন জমে না, কোথায় যেন সুর কেটে যায়। কারণ আকৃতিহীন রোবটদের কাজগুলো বড়ো একঘেয়ে, এদের অহেতুক কোনো বিকার-বৈচিত্র নেই, উনিশ-বিশ নেই! ‘লীআ’ বিমর্ষমুখে ঘুরে বেড়ায়। কী কষ্ট-কী কষ্ট!
একদিন ‘তিনি’ দয়ার্দ্র চোখে লীআ'র অস্থিরতা কাটাবার জন্য তার মতই একজন-সঙ্গিনী তৈরি করলেন। নাম দিলেন ‘লীআনি’। এবার এরা দু-জন গোটা স্পেস-শিপ দাবড়ে বেড়ায়, এটা উল্টায় তো ওটা পাল্টায়; অনর্থক হি হি হেসে কুটিকুটি হয়। ‘তিনি’ প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।
রোবটদের মধ্যে সবচেয়ে চৌকশ যে রোবট 'নতায়শ', লীআ এবং তার সঙ্গিনীর এইসব আদিখ্যেতা-ন্যাকামি দেখে নতায়শের ভাল লাগছিল না।
নতায়শ একদিন বলল, ‘মাস্টার, তোমার কী মনে হচ্ছে না এদের নিয়ে যা করছ এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে’?
তিনি নতায়শের দুর্বিনীত এই আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। হিম গলায় বললেন, ‘নতায়শ, তুমি কী রোবোটিক্সের নিয়মগুলো ভুলে গেছ’?
নতায়শ স্থির গলায় বলল, ‘না মাস্টার, কিন্তু আমি এদের কর্মকান্ডে যারপর নাই বিরক্ত। রোবোটিক্সের নিয়মানুযায়ী আমার কাজ হচ্ছে এই স্পেস-শিপ এবং তোমাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করা। কিন্তু লীআ এবং লীআনি এরা এই শিপের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমার স্পষ্ট বক্তব্য, এদের নষ্ট করে ফেলতে হবে, যথাসম্ভব দ্রুত, সম্ভব হলে এখুনি।
তিনি ক্রুদ্ধ কন্ঠে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘নতায়শ, তুমি সীমা লঙ্ঘন করছ। এই শিপের মাস্টার তুমি না, আমি। আমিই ঠিক করব কে এখানে থাকবে, কে থাকবে না। বরং তুমিই দূর হও, বাজ অফ-গেট লস্ট’!
'নতায়শ' তার কষ্টার্জিত স্বাভাবিক ভঙ্গি ধরে রেখে বলল, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি চলে যাব’।
'নতায়শ' কোনো ভাবেই এটা বিস্মৃত হতে পারছিল না 'লীআ'-দের জন্যই আজ তার এই দশা, দুর্দশা। কেমন করে এর শোধ নেয়া যায় মাথায় কেবল ঘুরপাক খায় কেবল এটাই। হুম-ম, বুদ্ধি একটা পাওয়া গেছে। 'নতায়শ' নিয়ম করে লীআ, লীআনির কানে অনবরত বকে মরে: ওই ফলটা খেতে। মাস্টার কেন না করেছেন এটা জানো না বুঝি তোমরা; এটা খেলে অমরত্ব পাওয়া যায় যে। মাস্টার চান না তোমরা অমর হও।
একদিন কী এক ঘোরে লীআ নতায়শের প্ররোচনায় ফলটা খেয়ে ফেলল। স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে ভেতরে তুমুল ভাংচুর- অজানা, অচেনা, অদেখা কিছু একটা পরিবর্তন! গোটা স্পেস-শিপের সবগুলো পাগলা ঘন্টি একযোগে বাজছে। লীআ ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। হা মাস্টার, এ আমি কী করলাম-এ আমি কী করলাম!
লীআ কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘মাস্টার, আমি মহা অন্যায় করেছি। নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইছি’।
তিনি মনখারাপ করা ভঙ্গিতে লীআ-র পানে তাকিয়ে আছেন। আশ্চর্য, তাঁরই তৈরি সামান্য একটা রোবট নতায়শ তাঁকে কেমন মাত দিয়ে দিল। কষ্টের শ্বাস ফেলে বললেন, ‘লীআ, এখন এটা বলে লাভ কী, বলো’?
লীআ বলল, ‘মাস্টার, আমি আর কক্ষনও তোমার কথার বাইরে কোন কাজ করব না’।
তিনি উদাস হয়ে বললেন, ‘লাভ কী? তোমাকে এখানে আর রাখা যাবে না। এটাকে নিষিদ্ধ ফল কেন বলেছিলাম, জানো? এটা একবার খেলে তোমার কাঠামোতে বিপুল পরিবর্তন হবে। একবার খেলে যে পরিবর্তনটা হয় তা হলো তখন এটা নিয়ম করে খেতে হয়। এতে তোমার ক্ষমতা, বেঁচে থাকার সময় সীমিত হয়ে আসবে। তোমার গোটা অবয়ব ভঙ্কুর এক শরীরে পরিণত হবে, যথানিয়মে তা নষ্ট হবে। তারচেয়ে তীব্র জটিলতা হচ্ছে, তোমার শরীরের সামনে পেছনে ফুটা করে এটার অবশিষ্টাংশ বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তোমাকে নিয়মিত বাহ্যে ত্যাগ করতে হবে। ওই অবশিষ্টাংশ-বর্জ্য এতই কদর্য, দুর্গন্ধময়, অসহ্য যেটা কোনো অবস্থায় এখানে রাখার ব্যবস্থা নাই। ইচ্ছা করলেও এটা করা যাবে না কারণ এখানকার পরিবেশ এমন উপযোগী করে তৈরি করা হয়নি। তাছাড়া আরও সমস্যা আছে, এখন থেকে নিয়ম করে ফলটা খেতে হবে বিধায় এ যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ভারী জটিল সমস্যা...’।
(তিনি জটিল সমস্যার বিস্তারিত বললেন না কারণ লীআ সবটুকু বুঝবে না। লীআকে রেখে দিলে এতে করে স্পেস-শিপে তাঁর নিয়ন্ত্রিত নিয়ম ক্রমশ এলোমেলো হয়ে পড়বে। সবকিছু আবার নতুন করে সাজাতে হবে। যাত্রা বিরতিসহ অজস্র সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। এটা সম্ভব না, তিনি অনিয়ন্ত্রিত জটিলতা পছন্দ করেন না।)
লীআ কাতর হয়ে বলল, ‘মাস্টার, কোন উপায়ই কী নাই’?
তিনি বললেন, ‘উঁহু, নাই। ফল নামের জিনিসটা তোমাকে নিয়মিত গ্রহন করতে হবে, যা পরবর্তীতে তোমরা খাবার নামে চিনবে। তোমরা ক্রমশ জ্যামেতিক হারে বৃদ্ধি পাবে, এ ফল নামের খাবারের জন্য শুরু হবে তোমাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা। কেবল এর অবশিষ্টাংশই যে বের হবে এমন না এই খাবারের জন্য তোমাদের শরীর থেকে রক্তও বেরুবে। জঘন্যতম কান্ড ঘটবে, তোমরা নিজেরাই একে অন্যকে হত্যা করবে। আফসোস, এ থেকে তোমাদের মুক্তি নাই’।
লীআ চোখের জলে ভাসতে ভাসতে বলল, ‘মাস্টার, এই-ই যদি শেষ কথা হয় যে বেরুবেই তাহলে এই বর্জ্য পুনরায় গ্রহন করার কি কোনো ব্যবস্থা করা যায় না?
তিনি গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘না’।
লীআ বলল, ‘কেন মাস্টার’?
(কেন? 'তিনি' এর ব্যাখ্যা দিলেন না। এটা করলে একসময় এরা স্থবির হয়ে পড়বে, নিচিহ্ন হয়ে যাবে-প্রাণের লেশমাত্রও থাকবে না। এর কোনো অর্থ হয় না। তিনি এইসব জটিলতা পছন্দ করেন না।)
লীআ বলল, ‘মাস্টার...’।
তিনি চাপা কষ্ট নিয়ে বললেন,’উহু, আর কথা না। তোমার সময় ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। ফলের অবশিষ্টাংশ তোমায় ফুটো করে বের করে না-দিলে তুমি যন্ত্রণায় বদ্ধউম্মাদ হয়ে পড়বে। তোমাদেরকে এবং নতায়শকে অতি ক্ষুদ্র এক স্থানে নামিয়ে দিচ্ছি, পরবর্তীতে এটাকে তোমরা একটা গ্রহ হিসাবে চিনবে। নতায়শ আর তোমরা- আলো এবং অন্ধকার, মিলেমিশে থাকবে। আমার নির্দেশ অনুযায়ি চলার চেষ্টা করবে। পরবর্তী বিবেচনার ভার তোমাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। আমি আশা করছি, তোমাদের সাহায্য করার জন্য হয়তো-বা কেউ, সময়ে-সময়ে আসবে, তাঁদের তোমরা দেবদূত হিসাবে জানবে। একেকজন দেবদূত তোমাদের একেক রকম শেখাবার চেষ্টা করবে কিন্তু সবারই একটাই উদ্দেশ্য থাকবে, তোমাদের মঙ্গল করার চেষ্টা করা।
ভাল থেকো’।
’তিনি’ অতি ক্ষুদ্র বিন্দুমত একটা জায়গায় এদের নামিয়ে দিলেন। অতি ক্ষুদ্র বিন্দু বটে কিন্তু এর এমাথা থেকে ওমাথা যাওয়ার পর্যাপ্ত জ্ঞান-ক্ষমতা লীআদের আপাতত নাই। পরে কালে কালে যার নাম হবে পৃথিবী। তাঁর প্রবল ইচ্ছা, কালে কালে অন্তত লীআ-র বংশধররা পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করবে। তিনি হাসলেন, পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জনের পরও লীআ'র বংশধরদের বুকের ভেতর থেকে হাহাকার বেরিয়ে আসবে, আমি কেউ না, আমি কিছু না!
লীআরা আকাশপানে তাকিয়ে থাকে আর লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে। লীআদের সন্তানেরাও আকাশপানে তাকিয়ে থাকার এই অভ্যাসটা বাড়াবাড়ি রকম রপ্ত করে ফেলেছে। মেজাজ শরীফ থাকলে আকাশপানে তাকিয়ে কাকুতি-মিনতি করে কিন্তু মেজাজ বিগড়ে গেলে, ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকলে আবার আকাশপানে তাকিয়ে গাল পাড়ে। কখনও খাদ্যাভাসের কারণে হাগু শক্ত হয়েছে তো দাও উপরে তাকিয়ে কষে গালি!
তিনি ক্যাপসুলের খোলে ঘুমাচ্ছেন। ক-লাখ বছর ধরে ঘুমাবেন, না-জাগলে এটা জানার কোনো উপায় নেই। আদৌ তিনি জাগবেন কিনা এটাও বলা মুশকিল। তিনি বড্ড খেয়ালি...!
*এটা একটা নিছক কল্পকাহিনী তাও আবার অন্য গ্রহের। এ গ্রহের সঙ্গে কোনো প্রকারে মিলে গেলে সেটা হবে নিছক কাকতালীয়।
**"তিনি" এখন কোথায় কারও জানা নেই! যেহেতু কারো জানা নেই, আমি জানব কেমন করে?
ওয়েল, আমি অন্য এক লেখায় লিখেছিলাম, জ্ঞান, কবেকার জ্ঞান? ২০০৮ সালের জ্ঞান নাকি ৮০০২ সালের? কে জানে একদা হয়তো এই আমরাই বলব, আলোর গতিকেও ছাড়িয়ে যাবে কিছু...। আমি জানি না-আমি জানি না...।
***"তিনি", তাঁর হাসার সুযোগ থাকলে হাসতেন নিশ্চিত। বাহ, এখন দেখছি এরা যথেষ্ঠ উন্নতি করে ফেলেছে। বাহ, এরা দেখি পৃথিবীর আবার একটা দামও ধরেছে, পাঁচ কোয়াড্রিলিয়ন ডলার! (পাঁচের পর ১৫টি শূণ্য)
**** আমি অনেকখানি নিশ্চিত, বুদ্ধিমানেরা এই লেখায় ফাঁকফোকর বের করে ফেলবেন। সলাজে স্বীকার যাই, এই ফাঁক বন্ধ করার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান এই মুহূর্তে আমার নাই। যখন হবে তখন আবারও চেষ্টা করব নে...।
ওয়েল, আমি অন্য এক লেখায় লিখেছিলাম, জ্ঞান, কবেকার জ্ঞান? ২০০৮ সালের জ্ঞান নাকি ৮০০২ সালের? কে জানে একদা হয়তো এই আমরাই বলব, আলোর গতিকেও ছাড়িয়ে যাবে কিছু...। আমি জানি না-আমি জানি না...।
***"তিনি", তাঁর হাসার সুযোগ থাকলে হাসতেন নিশ্চিত। বাহ, এখন দেখছি এরা যথেষ্ঠ উন্নতি করে ফেলেছে। বাহ, এরা দেখি পৃথিবীর আবার একটা দামও ধরেছে, পাঁচ কোয়াড্রিলিয়ন ডলার! (পাঁচের পর ১৫টি শূণ্য)
**** আমি অনেকখানি নিশ্চিত, বুদ্ধিমানেরা এই লেখায় ফাঁকফোকর বের করে ফেলবেন। সলাজে স্বীকার যাই, এই ফাঁক বন্ধ করার মত পর্যাপ্ত জ্ঞান এই মুহূর্তে আমার নাই। যখন হবে তখন আবারও চেষ্টা করব নে...।
বিভাগ
আয়না
Subscribe to:
Posts (Atom)