Search

Tuesday, June 30, 2009

হোজ্জা এস্টাইল(!)

আচ্ছা বলুন তো, গাধার পিঠে চড়ে কেউ কোথাও রওয়ানা হলে আগে কে পৌঁছবে? আহা, সিম্পল উত্তর, গাধা। গাধার মাথাটাই তো সামনে থাকবে, নাকি আমার মাথা?

হোজ্জা সাহেবের গাধাও আগে পৌঁছত, অন্য কারণে। তিনি নিজস্ব স্টাইলে চলতেন, নিজের বুদ্ধিতে। গাধার পিঠে বসতেন সিংহাসনে বসার ভঙ্গিতে, জাঁক করে! ফল যা হওয়ার তাই হতো। কোথাও রওয়ানা হলে গাধা আগে পৌঁছত, সিংহাসনচ্যুত হয়ে কুঁইকুই করে হোজ্জা সাহেব অনেক, অনেক পরে।
এই তথ্য লিপিবদ্ধাকারে কোথাও পাওয়া যাবে না। কারণ যে ভদ্রলোক প্রত্যক্ষদর্শী তিনি হোজ্জার গাধার নিচে পড়ে অক্কা যান। লিখে জানিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি। আহা বেচারা, মরে আর বাঁচেননি!

আমাদের সরকার বাহাদুর সম্ভবত হোজ্জা সাহেবের 'এস্টাইল' অনুসরণ করেন। 'ডে লাই সেভিং' নামের যে জিনিস এরা চালু করেছেন এর যথার্থতা নিয়ে কুতর্ক করার অবকাশ এখন আর নাই। চালু হয়ে গেলে এটা থামাবার যো কার? যে দেশের অধিকাংশ মানুষ ছাতার আড়ালে টাট্টি করেন, তাঁদের এই জিনিস হজম করতে সময় লাগবে বৈকি!
অবশ্য আমজনতার যেটা লাভ হয়েছে তা হচ্ছে লোডসেডিং আরও তীব্র হয়েছে!

বিচিত্রসব ঘটনা ঘটেছে। সিলেটের একজন ১৯ জুন রাত ১১টা থেকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সমস্ত রাত ঠায় বসেছিলেন কখন ঘড়ির কাঁটা নিজে নিজে সরবে।
আরেকজন জনে জনে জিজ্ঞেস করছিলেন, এক ঘন্টা পূর্বে সূর্যকে উঠতে বাধ্য করা হবে কেমন করে?

অনেক শিক্ষিত মানুষ ট্রেন মিস করেছেন। কেউ ইসকুলে গিয়ে দেখেছেন, তালা ঝুলছে। ইত্যাদি, ইত্যাদি।

সরকার বাহাদুর ২২ জুন তথ্য বিবরণীর মাধ্যমে জানিয়েছেন, "দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আগের পাঠদান সময়সূচি বর্তমান ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী অপরিবর্তিত থাকবে।"

এটা ১৯ জুনের পূর্ব থেকে প্রচার করলে, যে ঘড়ির কাঁটা ১ ঘন্টা এগিয়ে দেয়ার পর, ট্রেনের সময়সূচি, অফিস, স্কুল-কলেজ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সময়সূচি পূর্বের সময়েই থাকবে। তাহলে লোকজন 'এপ্রিলফুল'-এর ন্যায় 'জুনফুল' হতো না। কিন্ডার গার্টেন পড়ুয়া ছোট-ছোট শিশুদেরকে তাদের বাবা-মার হতভম্ব মুখ সকাল-সকাল দেখতে হতো না।
সরকার বাহাদুর যাও জানালেন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে ২২ জুন। ২২ জুন না জানালেও ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না। যারা হোজ্জা সাহেবের 'এস্টাইল' মেনে চলেন তাদের এতো কিছু জানাবার দায় কী!

Sunday, June 28, 2009

বিস্মিত হতেও ভুলে যাই!

প্রকৃতি প্রায়শ তার সন্তানকে হতবাক করে দিয়ে অলক্ষ্যে হাসি গোপন করে। ভাগ্যিস, হাসিটা আমরা দেখতে পাই না। প্রকৃতি এবং হায়েনা, এদের অদৃশ্য হাসি নিয়ে বিতর্কটা চলেই আসছে।

গত বছর মে ফ্লাওয়ার গাছটা কোথায় ছুঁড়ে মেরেছিলাম মনেও ছিল না।
ঠিক-ঠিক ৩১ মে। এ বছরের (২০০৯) মে মাসের শেষ দিন। আগুন-লাল মে ফ্লাওয়ারটা দেখে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। অরি আল্লা, গত বছরের ছুঁড়ে ফেলা গাছটা আমার অজান্তেই দীর্ঘ এক বছর দিব্যি বেঁচে ছিল! কেবল বেঁচেই ছিল না, তার সমস্ত সৌন্দর্য-রূপ নিয়ে আমাকে অন্য জগতের এক চাবুক মেরে আচ্ছা করে চাবকাল! কী আর করা- কিছু চাবুক খেয়েও সুখ!
'বার্ডস অভ প্যারাডাইস', এটাও আমায় কম হতভম্ব করেনি!
..............

প্রকৃতি কখনও কখনও তার কুৎসিত রূপ দিয়েও তার সন্তানকে চমকে দেয়!

Friday, June 26, 2009

উইপেন অলওয়েজ উইপেন!

 
আজকাল জঙ্গি ভাইদের নিয়ে বড়ো যন্ত্রণা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক ঘটনা। এক জঙ্গিকে আদালতে জবানবন্দী দিতে বলা হলে, তার স্পষ্ট বক্তব্য, আমি কোন মহিলার (জজ) কাছে জবানবন্দী দেব না। কারণ মহিলাদের জজ হিসাবে মানি না। ধর্মীয়মতে, মহিলাদের বাইরে কাজ করার অনুমতি নাই এবং পর্দা করা হয় নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি। 
জটিলতা এড়াবার জন্য একজন পুরুষ জজের সামনে তাকে হাজির করা হলে সে তার জবানবন্দী প্রদান করে।

তো, এক জঙ্গি ভাইকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তার স্পষ্ট বক্তব্য: আমি মানবসৃষ্ট আইন মানি না, আদালত মানি না।
পুরূষ জজ সাহেব: কোন অসুবিধা নাই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আপনি ফাঁসি মেনে নিলেই হবে।
জঙ্গি ভাই (তাচ্ছিল্য করে): ফাঁসি তো আর বোমার খোসা না, বললেন আর ফাঁসি হয়ে গেল! আর ফাঁসির ভয় দেখাইয়েন না, ইয়া শায়খ বলে ঝুলে পড়ব, কিসসু হবে না। ফাঁসির দড়ি ফুলের মালা হয়ে যাবে।
পুরুষ জজ সাহেব: বোমার খোসা না, বলুন বাদামের খোসা!
জঙ্গি ভাই: চীনা বাদাম এসেছে চীন থেকে, মুরতাদ দেশের মুরতাদ বাদাম। এটা উচ্চারণ করলে এস্তেঞ্জার পরে হারপিক দিয়ে কুলি করতে হয়।

পুরুষ জজ সাহেব: আপনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা।
জঙ্গি ভাই ( চোখে শিশুর সারল্য, দাড়িতে হাত বুলিয়ে অমায়িক হাসি): কোন প্রমাণ আছে?
পুরূষ জজ সাহেব: অবশ্যই প্রমাণ আছে, আপনার রেকটামে লুকিয়ে রাখা চার্জার থেকে বোমা উদ্ধার হয়েছে।
জঙ্গি ভাই(চোখ বড়বড় করে): মারহাবা মারহাবা, চার্জারে বোমা থাকলে, এই-ই প্রমাণ যে আমি বোমা ফাটিয়ে মানুষ খুন করেছি?
পুরুষ জজ সাহেব: আপনাকে খুনি প্রমাণের জন্য এইটুকুই যথেষ্ঠ।
জঙ্গি ভাই এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন দেখে জজ সাহেব বললেন: লাভ নাই, কোন উকিল আপনাকে ডিফেন্ড করবে না।
জঙ্গি ভাই (ভয়ে-ভয়ে): আরে না, আমার চার্জারে এখনো একটা বোমা রয়ে গেছে কিনা, খালাশ করা প্রয়োজন! ইয়ে, আপনাদের টাট্টিখানা কই?
জজ সাহেব(আতঙ্কিত চোখে): সর্বনাশ, এইসব কি বলছেন!

জঙ্গি ভাই: হে হে হে, ভয় পাইছেন! শোনেন, আমার নামে নারী নির্যাতনের শাস্তিটাও দিয়ে দেন।
পুরুষ জজ সাহেব( অবাক হয়ে): নারী নির্যাতনের মামলা তো এটা না।
জঙ্গি ভাই: না তো কি হয়েছে? বোমা বহন করলেই যদি মানুষ খুন করা প্রমাণ হয়। তাহলে তো আমি নারী নির্যাতনেরও একটা ভয়ংকর অস্ত্র...(সেন্সর) বহন করছি। যদিও র‌্যাব ধরার সময় থেতলে বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে- বাট, উইপেন অলওয়েজ উইপেন!

Wednesday, June 24, 2009

গাছটার কেবলই কান্না পায়।

এই গাছটা কেটে ফেলেছিল কেউ চাল করে। জজ-কোর্টের চত্বরে চা-র এই দোকানটা চলবে জব্বর, গাছটা না-থাকলে সুবিধে হয় যে বড়! বুদ্ধির তারিফ না করে উপায় কী!
দেখো দিকি কান্ড- পাতাশূন্য হয়েও গাছটা দিব্যি বেঁচে ছিল! এখন কী মায়ায়ই না সদ্য গজানো কচি-কচি পাতা।
 
পাতাগুলোয় আগুনগরম চা ছুঁড়ে মারে কেউ-কেউ। গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাছটা কিচ্ছু বলে না।
কেউ ডালে ময়লা একটা দড়ি ঝুলিয়ে দেয়। তুলতুলে-নরোম ডাল-পাতা চাপা পড়ে থাকে। গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাছটা কিচ্ছু বলে না।
কেউবা পান খেয়ে চুন মোছার জন্য পাতা ছিঁড়ে ফেলে অবলীলায়। গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাছটা কিচ্ছু বলে না।
চা-র চামচ খুঁজে না পেয়ে চা-দোকানদার একট শুকনো ডাল ভেঙ্গে বেদম নাড়ায়। গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। গাছটা কিচ্ছু বলে না।

কালো কোটের উকিল আসে। নাক ঝেড়ে সময় নিয়ে গাছে মোছে। ফুড়ুৎ-ফুড়ুৎ শব্দে চা খায়। অন্যমনস্ক হয়ে পাতা ছেঁড়ে, অযথাই। মনে মনে ভাবে, মক্কেলটাকে আজ চটকাতে হবে। ওর ফৌজদারী মামলায় জামিন হবে না, এটা বললেই হাত উপুড় করে 'টংকা' না-দিয়ে বাছাধন যাবেটা কই? হারামজাদাটা আজ আসলেই হয়...।
গাছটার যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, শত অত্যাচারেও গাছটা কিচ্ছু বলে না। নিদেনপক্ষে একটা ডাল ফেলে কারও-না-কারও মাথা ফাটিয়ে ফেললেও হয়। সে তাও করে না!

একদিন। বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে মামলার তদ্বিরে আসে একজন মানুষ। মানুষটাকে দেখে ঠিক মামলাবাজ মনে হয় না। ভারী চশমার পেছনে এর চোখগুলো যেন কেমন! মানুষটা সিগারেট ধরিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। চুকচুক করে চা খায়। লোকজনের চোখ বাঁচিয়ে হাত বাড়িয়ে আলতো করে গাছটার চকচকে পাতা ছোঁয়। কী যে নরোম মানুষটার হাতের স্পর্শ! অজান্তেই গাছটার গা কাঁপে! পাতাগুলোর উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই যেন- কাঁপে, চোখে দেখা যায় না এমন। গাছটার দমবন্ধ ভাবটা আর নেই!
মানুষটাও অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে অদ্ভুত সবুজ চকচকে পাতাগুলোর পানে। মানুষটার চোখগুলো যেন কেমন- অবিকল মাছের মত, পলকই পড়ে না! পাগলাটে টাইপের এই মানুষটার খুব ইচ্ছা করে গাছটাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। এ এক অসম্ভব পাগলামী ভাবনা আর কী!

গাছটার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, আবারও। গাছটা কিচ্ছু বলে না। অনড় দাঁড়িয়ে থাকে। এখন গাছটার কান্না পায়। কেবলই কান্না পায়, পাগলাটে এই মানুষটার সঙ্গে যেতে না পেরে।

Complaint for your sudden leaving

To leave like this, is not fun, you understand? My whisper on father's day:
"Will I ever come back to this earth
Once my being leave this mortal body?
If I ever come back,
May I comeback in some solitary winter night
Beside the death bed of a beloved
Carrying gifts of love in my hand." -(Jibonanando Das)
See, everyone, people of literature wishes to come back! Its you, only you, who never wish to come back.
Is it fair? He is slow poisoning himself in the excuse of becoming a trash writer. Your child is spoiling his life in smoking day and night. Shouldn't you come and drag me by my ear lobe. Where are you? Aren't you a man!
Today I am reminded of a giant bodhi tree. Today I realize the absence of a elder who even if bed ridded wouldn't feel the lack of home here. When I wish to leave everything like a surrendered soldier, at that very how point in my life, how much I miss you. You will never understand that. You don’t have that capacity.
I learned to walk holding your fingers. But before long you let go off my finger. What kind of judgment of yours is this? But believe me, I loved your way of teaching. I remember you as my teacher than as father. Your showed me the life as a friend. How beautiful were your actions!
You asked me sit and study with the cobbler’s son. Trust me, at first I hated it. Why me! But you had a noble purpose behind it. See today I can boast in saying that my childhood friend was the son of a cobbler. A lot of my sweet childhood memories I owe to him. How can I repay those loans. Actually I don’t have the capacity to payback.
These days I constantly have to fight with the bad and good within, the animal and the innocent child inside me. See, the way I can sometime defeat the animal, that credit goes to you! But until today I haven't become a robot, perhaps it was necessary. Isn't that a huge loss? Anyways.
You left, fine! But I never liked how you bade goodbye. That was such an injustice. I was only 16 or 17 when you admitted into Hospital (Midford). I was beside your bed that day as you felt a little better. Around 2 in the night you couldn't breathe! Ah, the world is full of oxygen, yet your grasped your son's hand out of the pain to breath a drop. You whispered, "Son, such pain! Please get some oxygen!"
I ran from this end to other end of the hospital. This rotten country. Nowhere to be found anyone in need. This small town kid had no authority. At one point I felt like if I could jump from the 4th level. Even these days I think, why I didn't. Ah! useless attachments.
Some says during our life and death- doctors touch us. At one point the doctor touched you and announced that you are nothing but a corpse from then on. After that the rituals.
I am alone. Holding the cold hand of my father's dead body, sitting, awaiting for the morning to arrive. From every direction of Dhaka, from every mosque the call for prayer was arriving. The feeling of a totally another world. How bloodless white your face looked. Your eyes that could touch infinity were frozen. How stupid I was. Weren't you laughing seeing my stupidity? I tried to warm up your hand, if I could transfer some heat to your body...
What an endless night. The night of waiting with the corpse of a beloved one. As if the morning was never to come. Actually morning comes, nobody can stop it. Yet some start their return journey without waiting for the morning. (মূল লেখা, বাংলায়)

Translated by Sadiq Alam (http://mysticsaint.blogspot.com)
... ... ...
"On the floor beneath the window of a small, dusky room lay my father, remarkably long and all dressed in white; the toes of his bare feet were strangely widespread, and the fingers of his gentle hands, now quietly crossed on his breast, were likewise distorted. the dark discs of copper coins closed his laughing eyes, his kind face had become livid, and I was terrified by the glint of his set teeth."
-M. Gorky, Childhood

Translated by Margaret Wettlin

Sunday, June 21, 2009

বাবা দিবসে তোমায় চুপিচুপি বলি...

ভাবছ, বিরাট একটা কাজ করে ফেলেছ, তাই না! কিন্তু এভাবে দুম করে চলে যাওয়া কোন কাজের কাজ না, বুঝলে!
"একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসব না পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করূণ মাংস নিয়ে
কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।"
(জীবনানন্দ দাশ)
দেখলে-দেখলে, সবারই, গল্প-কবিতার লোকজনেরও কী ইচ্ছাই না করে ফিরে আসতে! কেবল করে না তোমার! কী, ঠিক বলিনি? কালেভদ্রেও ফিরে আসতে ইচ্ছা করে না বুঝি তোমার, এই কাজটা করতে বড্ড বাঁধে তোমার, না?
আচ্ছা ফাদার, কাজটা কী ঠিক হচ্ছে, বলো! সিগারেট ফুঁকে ফুঁকে তোমার সন্তানের বুকটা ঝাঁজরা হয়ে যাচ্ছে, তোমার কী উচিৎ না ফিরে এসে আচ্ছা করে কানটা মলে দিতে? এই এলাকার সবাই জানে লেখালেখির নাম করে তোমার সন্তান উচ্ছন্নে গেল, অথচ বাপ হয়ে তুমি জানো না? আশ্চর্য, তুমি একটা কেমন মানুষ! আসলে তুমি, তুমি একটা, তুমি একটা পাগলু...!

জানো, আজ আমার কেবল মনে হয় তোমার মত একটা বটবৃক্ষের কথা। আজ এবেলায় এসে তোমার এই অভাবটা বুঝতে পারি হাড়ে-হাড়ে। কেবল মনে হয়, হোক না একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ, বিছানায় পড়ে থাকলেও আমার একটা নিরাশ্রয়ের ছাদের অভাব বোধ হতো না। পাপা জানো, জীবন যুদ্ধে পরাজিত একজন সৈনিকের মতো হাল ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে যখন, তখন আমার কাছে তোমার খানিকটা স্পর্শ কতটা যে জরুরী এটা তুমি কখনই বুঝবে না, কক্ষনই না। আসলে এটা বোঝার মত ক্ষমতাই নাই তোমার!

তোমার আঙ্গুল ধরে-ধরে কেবলই শিখছিলাম। এরিমধ্যে আঙ্গুল ছেড়ে দেয়াটা কোন ধরনের বিচার হলো, বলো দিকি? তোমার কী মনে হয়? ইশ, বিরাট একটা কাজ হয়েছে! আপনি বাবা বিরাট একটা কাজের লোক হয়েছেন!
তবে বিশ্বাস করো, তোমার শেখাবার পদ্ধতি আমায় বড্ডো টানত। তোমাকে যতটা না বাবারূপে মনে রাখব তারচে’ অনেক বেশি মনে রাখব শিক্ষকরূপে। জীবনটাকে চেনাতে, বন্ধুর মতো! আহা, কী অপরূপ সব কর্মকান্ড তোমার!
মুচির ছেলের সঙ্গে আমায় একসঙ্গে পড়তে হবে। বিশ্বাস করো, ওইসময়, প্রথমদিকে, এটা আমার একেবারেই ভালো লাগত না। বাবা, তোমার কানে-কানে বলি, কাউকে বলবে না কিন্তু, ওসময় ক্ষেপে গিয়ে তোমায় পচা কথাও বলতাম। কেন রে বাপু, এই অনাচার আমার উপর চাপিয়ে দেয়া! তোমার ভাল লাগলে ওর বাবা মুচির সঙ্গে 'ল্যাকাপড়া' করো না তোমায় আটকাচ্ছে কে- আমাকে নিয়ে বাপু কেন টানাটানি! কিন্তু তখন তোমার সাত্বিক ইচ্ছাই ছিল প্রধান।
অথচ দেখো দিকি কান্ড, আজ আমি কেমন সগর্বে বলতে পারি, অহংকার নিয়ে লিখতে পারি আমার শৈশবের বন্ধু একজন মুচির সন্তান ছিল। এতে যে আমার কোন লাজ নেই। থাকবে কেন! আমার শৈশবের অনেকখানি আমার সেই বন্ধুর কাছে ঋণী। কেমন করে আমি তাঁর ঋণ শোধ করি? আসলে এইসব ঋণ শোধ করার ক্ষমতাই-বা কই আমার!

আজ আমায় অবিরাম যুঝতে হয় আমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা কু এবং সু নামের পশু এবং শিশুটির সঙ্গে। এই দেখ না, আমি যে কালেভদ্রে পশুটাকে অনায়াসে পরাজিত করতে পারি, এটাও কিন্তু তোমারই অবদান!
তবে, কালে-কালে যন্ত্রমানব হওয়াটা বদলে যাওয়াটা যে অপরিহার্য ছিল- আজও আমি যে পুরাপুরি যন্ত্রমানব হতে পারিনি, এই একটা বিপুল ক্ষতি কিন্তু তুমি আমার করে দিয়েছ; যা হোক।
চলে গেলে, তা বেশ। কিন্তু তোমার বিদায় নেয়ার ভঙ্গিটা আমার পছন্দ হয়নি। এভাবে দুম করে কেউ চলে যায় বুঝি? দূর-দূর, ফালতু, স্রেফ ফালতু।

তুমি যখন মিডফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হলে তখন আমার বয়স কতো হবে আর, ষোল-সতেরো। ওই দিন তোমার শরীর খানিকটা ভালো থাকায় তোমার শয্যাপাশে কেবল আমিই ছিলাম। রাত দুইটা দিকে তোমার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো।
আহা, পৃথিবীতে এতো বাতাস অথচ তুমি একফোঁটা বাতাসের জন্যে কেমন নির্লজ্জের মত তোমার কিশোর সন্তানের হাত খামচে ধরে আছো। কী হাহাকার করা ভঙ্গিতেই না বলছিলে, 'খোকা, বড় কষ্ট! একটু অক্সিজেনের ব্যবস্থা কর'। এ্যাহ, বললেই হলো আর কী, কিশোরটি যেন অক্সিজেন বুকপকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়!

আমি পাগলের মতো হাসপাতালের এমাথা-ওমাথা ডাক্তার-নার্সের জন্যে ছুটাছুটি করছি। এ অভাগা দেশে যা হয়, কাউকে কী খুঁজে পাওয়া যায় শালার! মফস্বল থেকে আসা এই কিশোরটি কতটুকুই বা ক্ষমতা, চেনার শক্তি। এক সময় মনে হলো লাফ দেই চার তলা থেকে! আজও ভাবি ওদিন কেন লাফ দিলাম না? হায়রে মানুষ, প্রাণের কী মায়া!

জন্ম এবং মৃত্যুর সময় নাকি ডাক্তার আমাদের স্পর্শ করেন! ডাক্তার একসময় তোমাকে বড়ো অবহেলাভরে ছুঁয়ে জানালেন, আজ থেকে এটা একটা লাশ! এরপর লাশ উঠাও, লাশ নামাও। এই-এই, এই লাশের সঙ্গে গার্জেন কে?
আমি একা। বরফঠান্ডা বাবা নামের লাশটার হাত ধরে বসে আছি, ভোরের অপেক্ষায়। ঢাকার সমস্ত মসজিদ থেকে একযোগে আজান ভেসে আসছে। অপার্থিব, অন্য ভুবনের এক অনুভূতি! কী রক্তশূণ্য-পান্ডুর তোমার মুখ। তোমার অতলস্পর্শী চোখটা কেমন স্থির!
জানো বাবা, কী বোকাই না ছিলাম আমি, আমার বোকামী দেখে তুমি খুব হাসছিলে তখন, না? তোমার ঠান্ডা, আড়ষ্ট হাতটা অহেতুক ঘষছিলাম, অলৌকিক-বিচিত্র কোন উপায়ে যদি আমার শরীরের খানিকটা উত্তাপ তোমার শরীরে ছড়িয়ে দেয়া যায়। যদি যায়, আহা, যদি যায়...!

এক কিশোরের জন্য কী দীর্ঘ একটা রাত! প্রিয়মানুষের শব নিয়ে ভোরের অপেক্ষা। দেখা অদেখা হয়- ভোর তো আর হয় না! আসলে ভোর হয়, ভোরকে কেউ আটকাতে পারে না। কিন্তু তোমার মত কেউ-কেউ ভোরের অপেক্ষায় হাল ছেড়ে অন্য ভুবনে যাত্রা করে...।

Saturday, June 20, 2009

ছফা-বৃক্ষ: ২

এই মরিচ গাছটা কেমন করে এখানে হলো এ নিয়ে আমার বিস্ময়ের শেষ নাই। শ্যাওলাপড়া ইটের ফাঁকে কেমন করে গাছও হয়, তরতাজা হয়ে বেঁচেও উঠে! দেখো দিকি কান্ড, আবার ঢাউস-ঢাউস মরিচও ধরেছে।

ছফার স্পর্শ পেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা থ্যাতলানো বেগুন গাছ দিব্যি বেঁচে উঠে।
তাই আমি এর নাম দিয়েছি ছফা-বৃক্ষ। ইতিপূর্বে একটা কমলা গাছের নাম দিয়েছিলাম, ছফা-বৃক্ষতাই এটার নাম ছফা-বৃক্ষ: ২।

খাবার আগে হেলতে দুলতে যাই, একটা মরিচ পেড়ে নিয়ে আসি। সালুনসহ ধোঁয়াওঠা সাদা-সাদা ভাতের এককোনে চকচকে মরিচটা দেখেই মনটা ভালো হয়ে যায়। কচ করে কামড়, এরপর কচকচ-কচকচ। কী ঝাল রে বাবা- ছফার মতই ঝাল!

Thursday, June 18, 2009

প্রথম আলো এবং পাকস্থলী- সমার্থক!

পাকস্থলী ওরফে 'উদরের পাকাশয়' সব হজম করে ফেলে (কারও কারও পাকস্থলী লোহা, কাঁচও)। কিন্তু পাকস্থলীর বেচারার বড় কষ্ট, নিজেকে হজম করার কোন কায়দা তার জানা নাই। কেন নাই, এর ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন। বিজ্ঞানীদের এই ব্যাখ্যার বিশদে গিয়ে এখানে কপচাবার খুব একটা আবশ্যকতা নাই।

শিরোনামে যেটা বলেছিলাম, পাকস্থলী এবং প্রথম আলো, এই দুইয়ে মুলত কোন পার্থক্য নাই। এরা জমজ ভাই- একই মায়ের গর্ভে ঘন্টা-মিনিট-সেকেন্ড ধরে এদের জন্ম। প্রথম আলোর 'বদলে যাও বদলে দাও' এর শিৎকারে (টাইপে ভুল হয়েছে, দয়া করে পড়বেন চিৎকারে) বাংলাদেশ মায় গোটা বিশ্ব অস্থির। ঝাড়ুসহ ঢাউস বিজ্ঞাপনও দেখলাম, এরা ঝেটিয়ে সমস্ত আবর্জনা সাফ করে ফেলবেন।

কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে এরা নাকি ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। সবই সু-উদ্যোগ। কিন্তু ওই যে বললাম, এরা পাকস্থলী- সব হজম করবেন, নিজেদের হজম করবেন না। সবাইকে বদলে ফেলবেন, কিন্তু নিজেদের বদলাবেন না।

ভাষাসৈনিক গাজীউল হক (তাঁর প্রতি সালাম। এই অগ্নিপুরুষ সেখানে অন্তত সম্মানের সঙ্গে সমাসীন হোন এই প্রার্থনা) মারা গেছেন। আমি অবশ্য এঁদের মৃত্যুকে মৃত্যু বলে স্বীকার করি না। আমি বলি, এঁরা কেবল খোলস বদলান। তাঁর তিরোধানের এই খবরটা প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে পেছনের পৃষ্ঠায়। এটা কেন প্রথম পাতায় আসার যোগ্যতা রাখল না এটা আমার বোধগম্য হলো না। অথচ প্রথম পাতায় হাবিজাবি খবরের অভাব নাই! অন্তত দুমড়ানো গাড়ির যে পৃথুল ছবি ছাপা হয়েছে এটাকে খানিকটা ছোট করে দিলেও হত।

গাজীউল হকদের মত মানুষ তো আর গন্ডায়-গন্ডায় এই দেশে নাই। কে জানে, গাজীউল হকদের মত মানুষ না থাকলে হয়তোবা প্রথম আলোর নাম হত, 'পাহেলি রোশনি' বা 'পাহেলি উজালা'।
কে জানে, মতিউর রহমান এই 'পাহলি রোশনি'-র সম্পাদক হতে পারতেন কি না? হলেও, কোন একটা লেখা লেখার পূর্বে দরখাস্ত লিখতেন:
"মেরে মায়-বাপ (হে আমার প্রভু),
তাসলিম (সালাম)। মেরে ভেজামে (মস্তিষ্কে), নাহি-নাহি, মেরে দিমাগ (মাথা) কা আন্দার এক সোচ (ভাবনা) আয়া, আগার ইজাজাত (অনুমতি) হো তো ইয়ে ম্যায় লিখ ডালু।
ইয়ে মেরে গুজারিশ (প্রার্থনা) হ্যায়...।"
ইত্যাদি ইত্যাদি।

Wednesday, June 17, 2009

মানুষকাটা আলী

"২০১২ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ কর দিয়ে, কালো টাকা সাদা করলে দেশের কোন আইনেও এ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না"।
আজকের খবরের কাগজে ঝরঝরে হিসাবটা দেখছি, ৫০ লাখ টাকা বৈধ আয় দেখালে কর দিতে হবে ১২ লাখ আর ৫০ লাখ টাকা অবৈধ আয় দেখিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে দিতে হবে মাত্র ৮০ হাজার টাকা।

সরকার বাহাদুরের এই সিদ্ধান্তকে অবশ্যই আমি স্বাগত জানাই। কেন? বুঝিয়ে বললে আপনারা একমত হলেও হতে পারেন।
কী যে ভালো লাগছে- থ্রি চিয়ার্স না, মাথার চুলের সমান চিয়ার্স! আলী নামের অখদ্যে-অবদ্যে, অপদার্থ মানুষটা এমন একটা দিনের অপেক্ষাতেই তো ছিল।

মাংস ব্যবসায়ীরা (আমি এঁদের কসাই বলতে চাই না। এটা বললে চোখের সামনে একজন অমানবিক একটা মানুষের ছবি ভেসে উঠে। এঁরা অন্য ব্যবসায়ীদের মতই সৎ ব্যবসায় জড়িত। এই দেশে এঁদের চেয়ে অনেক অমানবিক লোক চোখের সামনে ঘুরে বেড়ান।) যদি গরু-ছাগল-মহিষের সিনার মাংস, রানের মাংস, কলিজা, মগজ, চর্বি, হাড়; চাই-কি লেজও বিক্রি করতে পারেন, এতে কী কোন দোষ হয়?
তাহলে মানুষকাটা আলী ১০শতাংশ কর দিয়ে, জ্যান্ত মানুষ ধরে ধরে মানুষের কিডনি, লিভার, অন্ডকোষ (এটার রিপ্লেসমেন্ট শুরু হয়েছে কিনা এখনও শুনিনি, ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই হবে) বিক্রি করলে কেন দোষ হবে? কেন-কেন-কেন হবে, হোয়াই! যুক্তি কী?
হ্যাঁ, আলী যদি মানুষের লেজ বিক্রি করার চেষ্টা করে সেটা অবশ্যই দোষের। কারণ আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, মানুষের লেজ হয় না। এটা করলে সে ধারা ৪২০-এর আওতায় পড়বে! পাগল, আলী আইন ভাঙ্গবে নাকি?

এফবিসিসিআই কালো টাকা সাদা করাকে ইতিবাচক বলেছে। তাদের এটা বলায় কেউ কেউ তাদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন। যারা এফবিসিসিআই-এর সঙ্গে একমত না, তারা হয়তো গ্রাম অঞ্চলের এই চালু কথাটার সঙ্গে পরিচিত না, "ব্যবসায়ীরা গু থিক্যাও ট্যাকা কামুড় দিয়া লইয়া আসে"। যেসব সূক্ষরূচির পাঠকের গু শব্দটায় আপত্তি আছে তাঁরা দয়া করে গু-র স্থলে সু পড়ুন। তো, ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই কালো টাকার পক্ষে অবস্থান নিলে আমি খুব একটা দোষ দেই না।

এফবিসিসিআই আরও বলেছে, "তিন বছরে দেশ খেকে কালো টাকা উঠে যাবে"। তারা আশা করছেন, তিন বছরে সমস্ত কালো টাকা সাদা হয়ে যাবে তাই আর এর প্রয়োজন দেখা দেবে না।

বটে! পেটকাটা রমজান, গালকাটা রব্বান তিন বছরে কালো টাকা সাদা করে না-হয় পেটকাটা রমজান থেকে রমজান সাহেব হলেন। ভালো। কিন্তু এই তিন বছরের মধ্যে বা পরবর্তিতে পাছাকাটা আনিস, বিচিকাটা দানিসের কালো টাকার কী গতি হবে?

ব্যবসায়িদের চিরকাল বুদ্ধিমান জেনে এসেছি, এরা যে এতোটা অপোগন্ড এটা আজ জানলাম।

Tuesday, June 16, 2009

ডে-লাইট সেভিং নামের কফিনের পেরেকটা!

অমরবাণী, "সুখে থাকলে ভূতে কিলায়"।
আমার তুচ্ছবাণী, "কিম্ভূতকিমাকার ভূত, তার সঙ্গে খেলি কুৎ কুৎ"। কেন রে বাওয়া, ভূতের সঙ্গে খেলতে যাওয়া! খেলায় হেরে গেলে ভূত যে মানবসৃষ্ট আইন মেনে চলবে এর নিশ্চয়তা কোথায়? পিঠে দুমদুম করে কিল মারার বদলে সে যদি কচকচ করে চিবিয়ে ফেলে এর দায় কে নেবে?

সরকার বাহাদুর ১৯ জুন মধ্যরাত থেকে ঘড়ির কাঁটা ১ ঘন্টা এগিয়ে আনবেন। এতে নাকি দেশে ৫ ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে এটা ভাবলেই বুকটা আনন্দে ভরে উঠে।

আমাদের দেশের অঘটন-ঘটন-পটিয়সী আমলা নামের মহোদয়গণের অঙ্গুলিনির্দেশে এটা চালু হচ্ছে। এঁরা এটাও ঘটা করে জানাচ্ছেন, কোন কোন দেশে এটা চালু আছে। আমেরিকা, মঙ্গলগ্রহ, অতলস্পর্শ নিতল ইত্যাদি ইত্যাদি।
যে দেশের অধিকাংশ লোকজনকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তার জন্ম কত সালে? তখন একটা উত্তর কমন পড়ে, 'বড় তুফানডার সময় হইছিলাম' বা 'বড় ঢলডার (বন্যা) সময় হইছিলাম'। ওইসব দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা মন্দ না!
এই হয়েছে এক মুশকিল, কেউ কেউ অতুগ্র আগ্রহে হার্ড-কোর পর্ণ দেখে আসন রপ্ত করতে গিয়ে বাস্তবে হতাশ হন। কেন হতাশ হন এটা এদের কে বোঝাবে?

আবার এও বলা হচ্ছে স্কুল-কলেজের সময়সূচী পরিবর্তন হবে না। অদ্ভুতদর্শন এই ইযারকিটা ভাল হয়েছে, এক হাতে দুইটা ঘড়ি পরার চল চালু হবে। অদ্যাবধি পাগল ব্যতীত কেউ তো আর পরেনি!

আচ্ছা, পত্রিকায় দেখলাম, নামাজের সময় নির্ধারনের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল লোকজন বায়তুল মোকাররমের খতিব এবং ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বেশ। কিন্তু এতো সোজা- এই দেশের মসজিদ মাদ্রাসাগুলো কী এঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন! কওমি মাদ্রাসা নামের একটা প্রতিষ্ঠান আছে যারা এই দেশের কোন আইনের ধার ধারেন না। আমাদের সরকার বাহাদুর কী জানেন, কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত দূরঅস্ত, কোন প্রকার খেলা দূরের কথা, মাঠে যাওয়াই নিষেধ। সাইকেল চালালে, পত্রিকা পড়লে কঠিন শাস্তি পেতে হয়- কড়িকাঠে গামছা দিয়ে বেঁধে হুজুররা দল বেঁধে পেটান। তো, এমন একটা প্রতিষ্ঠান, কওমি মাদ্রাসা কী তাদের নামাজের সময়সূচি পরিবর্তন করবে? আমার আকর্ণবিস্তৃত হাসি- লেট সী!

গোটা দেশে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হবে এটা চোখ বুজে বলে দেয়া যায়। সাধারণ মানুষ তিতিবিরক্ত হবে, মুখনিঃসৃত যে বাণীগুলো বেরিয়ে আসবে, হারপিক দিয়ে কুলি করেও কূল পাওয়া যাবে না।
সাধারণ লোকজনদের ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে মাথাব্যথা নাই। নাকি দেশ কোন সুপার হাইওয়ের সঙ্গে দেশ যুক্ত হলো, কী হলো না। সাবমেরিন ক্যাবল কোন মাথামোটার কারণে অনেক বছর পর যুক্ত হলো, এইসবে তাঁদের কিছুই যায় আসে না। মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের মানুষ অতি জটিলতা পছন্দ করে না।
এর কিছু নমুনা আমরা দেখেছি, তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সাধারণ জনগণের দৃষ্টিতে তত্বাবধায়ক সরকারের অনেক ভাল কাজগুলো কমোডে ফ্লাশ হয়ে গেছে। কেবল দ্রব্যমূল্যের অগ্নিমূল্য এবং হাট-বাজার ভাংচুর, এই দুইটাই যথেষ্ঠ।
সেই যে এদের কফিনে পেরেকটা আটকালো আর খোলা গেল না।

আমার ধারণা, চৌকশ একজন মানুষ খানিকটা চেষ্টা করলেই সিস্টেম লস কমিয়ে, সততার সঙ্গে খানিকটা সমন্বয় করেই ৫ ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারতেন। হুলস্থুল করে কফিনে পেরেক ঠোকার জন্য উদগ্রীব হওয়ার প্রয়োজন ছিল না।

Monday, June 15, 2009

অপাপবিদ্ধ শিশু যেথায় পাপবিদ্ধ!

দুগ্ধপোষ্য শিশু কি অপাপবিদ্ধ? সব শিশু নিশ্চয়ই না? বিশেষ করে যাদের বাবা-মা হতদরিদ্র। এমনই এক শিশু এক টুকরো সাদা কাপড় মুড়ে শুয়ে আছে বিশাল আকাশের নিচে, জানাজার অপেক্ষায়। বেঁচে থাকতে সে দৃষ্টিনন্দন ছিল না মোটেও- উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কুচকুচে কালো গায়ের রঙ, হাড় জিরজিরে, সরু পাটকাঠি পা। বেঁচে ছিল ১৪ দিন!

শিশুটির বাবা কাজের সন্ধানে গেছেন বহুদুর। জানেনও না, চমৎকার না হোক একটি সন্তানের জনক তিনি। তাদের ভালবাসা-বাসির প্রথম সন্তান। জননী মৃত সন্তানকে হাতছাড়া করতে চাচ্ছিলেন না। তার এক কথা, এর বাবা এক পলকের জন্যে হলেও একে দেখবে। অবুঝ জননী যুক্তি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছিলেন না, এ অসম্ভব! সন্তানের বাবাকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসতে যে সময় গড়িয়ে যাবে ততক্ষণ লাশ ফেলে রাখা যাবে না। আর কার এতো দায় পড়েছে, হন্যে হয়ে খুঁজবে!

দয়ালু এক প্রতিবেশী অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে লাশ নিয়ে এসে গভীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছে, নামাজ শেষ হলে জানাজা হবে। এক সময় নামাজ শেষ হলে কাতর গলায় বলল, ‘হুজুর, এর এট্টু জানাজা কইর‌্যা দেন।’
মুখ অসম্ভব অন্ধকার করে ফেললেন ইমাম সাহেব, লোকটাকে দেখে ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠল। এ ত্যাদড় টাইপের- বেনামাজী, ধর্মকর্মে বিশেষ মন নেই। মানী লোকের মান দিতে জানে না। একদিন ডেকে এনে ধমক দিয়ে বলেছিলেন: কি জলিল মিয়া, মসজিদে দেহি না, নামাজ পড়ো না- বিষয়ডা কি?
বেয়াদবটা ঘাড় শক্ত করে বলেছিল: মুনির কাম করি, টেম(টাইম) পাই না।
চড় দিয়ে উল্টে ফেললে আরাম পেতেন। সামলে নিয়ে বলেছিলেন: দোজখে গেলে সময় পাবি?
হেইডা আফনে কেমনে কন, আমি দুজখে যামু! এই মসজিদের সেক্রেটারি মতিন সাব কি বেহেস্তে যাইব, হে তো এক নম্বর সুদখোর।

মসজিদের সেক্রেটারি মতিন সাহেব লোক হিসেবে এতটা খারাপ না। কুস্তিগিরের শরীর, একেবারে ঘাড়গর্দানে। বিশাল বেঢপ ভুঁড়ি চোখে না পড়ে উপায় নেই। মসজিদে নিয়মিত সামনের কাতারে দাঁড়ান। সুদ খান, এটা এখন কে না খায়? অবশ্য দরিদ্র মহিলারা এঁর সংসপর্শে এসে বিচিত্র অসুখ বাধিয়ে বসে। মতিন সাহেবের মত ভুঁড়ি গজায়- সুখের বিষয় অসুখটা এক সময় সেরে যায়।
ইমাম সাহেব এবার বললেন, ‘কার জানাজা?’
জলিল মিয়া বলল, ‘জ্বে, এই দুধের বাচ্চাডার।’
মতিন সাহেব এবার এগিয়ে এসে বললেন, ‘অই, তোর বাচ্চা নিহি।’
‘জ্বে-না, আমাগো পরতিবেশীর। এই ধরেন গিয়া দুই ঘর পর, ’বলল জলিল মিয়া, হড়বড় করে।
আগ বাড়িয়ে মসজিদের সেক্রেটারি মতিন সাহেব রাগ-রাগ গলায় বললেন, ‘তা হের বাপ কই? ফাজিলের দল সব, বাপ না আইস্যা লতায়-পাতার সমপর্ক আসছে।’
‘জ্বে, হের বাপরে পামু কই! হে তো তিন মাস বাড়ি ছাড়া। মজুর খাটতে গেছে। আহারে, জানেও না, পুলা হইয়া মইরাও গেছে।
‘মরবই তো, এমুন কাণ্ড জ্ঞান যে বাপের হের পুলা কি লাফাইবো!’
জলিল মিয়া হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে গিয়ে সামলে নিল, সময়টা ভাল না। ভাঙা গলায় বলল, ‘আল্লারওয়াস্তে দুধের বাচ্চাডার জানাজা দেন।’
মতিন সাহেব ঘৃণায় একগাদা থুথু ফেলে বললেন, ‘তুই কইলেই হইব? হুকুম দেস! খোঁজখবর নিতে হইব না, বাচ্চার বাপ নামাজ পড়ে? আহাম্মুক, বাপ বেনামাজী হইলে জানাজা হইবো কেমনে!’
জলিল মিয়া সব গুলিয়ে ফেলল। জড়িয়ে জড়িয়ে বলল, ‘ইডা আফনে কি কন! বাচ্চা তো ফেরেশতা, বাপের নামাজের লগে হের কি 'সমপর্ক'!’
মতিন সাহেব অসহ্য রাগে লাফিয়ে ওঠলেন, ‘ধর্ম শিখতে হইব তোর কাছে, তোর মত কাফেরের কাছে!’

এ মসজিদের ইমাম সাহেব মতিন সাহেবের সঙ্গে সায় দিলেন, তার অর্জিত জ্ঞান দিয়ে। মোয়াজ্জেন, চল্লিশ-পঞ্চাশজন মুসুল্লী কেউ টুঁ শব্দ করল না।

অনেক দেরিতে হলেও শিশুটির জানাজা হয়। সৌভাগ্য তার, পচনশীল দেহ বাড়তি এ সুবিধাটুকু নিয়ে জন্মেছিল। শিশুটি পাপ করার সময়ও নিশ্চয়ই পেয়েছিল, বারো লক্ষ ন হাজার ছশো সেকেণ্ড- চৌদ্দ দিন, কম সময় তো না!

*লেখাটি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। ভোরের কাগজে কোন লেখা আটকালো না, এটা আটকে গেল। বিভাগীয় সম্পাদক সঞ্জীব দা অন্য দিকে তাকিয়ে বিব্রত ভঙ্গিতে বললেন, সম্পাদক সাহেব বলেছেন এটা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। আপনি কি একটু সম্পাদক সাহেব, মতি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে দেখবেন।
আমার মাথায় ঢুকছিল না এটা কেমন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে! পত্রিকাটা তো ইনকিলাব টাইপের না যে এরা ধর্ম নামের সমস্ত অস্ত্র বাগিয়ে বসে আছেন! আমি সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ বোধ করলাম না। আমি তো এই পত্রিকার চাকুরে না, ফ্রিল্যান্স কলমচি। লেখাটা ওখানে আর ছাপা হয়নি। পরবর্তিতে ওখানে লেখার আগ্রহ কমে এলো।
তাছাড়া ঘটনাটা আমার নিজের চোখে দেখা। এটা নিয়ে লিখতে পারব না কেন? এটা তো আমার অধিকার।

হায় অধিকার! এই দেশে অধিকার ফলাতে গেলে
হাজার-লাখ পাঠকের বদলে কপালে জুটবে দু-চারজন পাঠক! রত্মেশ্বর হাজরা-র কবিতা ধার করে বলতে হয়:
"মৃত্যু ও মৃতের অধিকার নিয়ে সে
একবার সভাও ডেকেছিল ময়দানে
যদিও সেই সভায় সে নিজে ছাড়া উপস্থিত ছিল
বাতাস
বিকেল বেলার রোদ
মাঠের নির্জনতা
আর বিস্ময়-"

Saturday, June 13, 2009

ইমাম সাহেব- আমাদের বাতিওয়ালা

জ্বিনদের বাদশা সভাসদদের নিয়ে সিংহাসনে বসে আছেন। সিংহাসন মানে আগুনের গোলা আর কী! বাদশার মন বিশেষ ভালো নেই। লোকবল কমে গেছে। কাজ-কাম চলাতে যারপর নাই অসুবিধা হচ্ছে। পৃথিবীর পিরবৃন্দগণ বেশিরভাগ জিন আটকে রেখেছেন। যখন তখন হুকুম করে এদের জীবনটা ভাজা ভাজা করে ফেলছেন। এটা একটা কথা হল, ক্ষমতা থাকলেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে হয় বুঝি! এ কেমন কথা, জিনদের আটকে হুকুম চালানো- এ্যাহ, পর হয়েছেন বলে এঁরা মাথা কিনে নিয়েছেন।

এমনিতে, জিনের বাদশাকে এক কথায় বলা চলে, জেন্টালম্যান। মানুষের জন্য এঁর রয়েছে গভীর মমতা। মানুষেরর সুখ-দুঃখের খোঁজ-খবর রাখেন। যেসব জিন মজা করার জন্য মানুষদের ভয় দেখায় এদের ধরে ধরে চটকনা দেন। দ্বিতীয়বার একই অন্যায় করলে নীল-ডাউন করিয়ে রাখেন। সোজা কথায়, মানুষের সুখে উল্লাসিত হন, দুঃখে কাতর হন।


সাদামাটা জীবনযাপন করেন, উল্লেখযোগ্য কোন রকম বদ-অভ্যাস নেই। আগে সিগারেট টানতেন, বহু কষ্টে ছেড়েছেন। বদ অভ্যাসের মধ্যে আছে শুধু পান, তাও জর্দা ছাড়া। চার-পাঁচটা পান মুখে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বললেন: কি-অ, পৃথিবীর খবর-টবর তো পাচ্ছি না বহুদিন ধরে। আমাদের গুপ্তচররা করছেটা কী!
প্রধানমন্ত্রী একটু নড করে বললেন: 'মি. লর্ড, রাশিয়া পতনের পর গুপ্তচরদের আর কোনো কাজ নাই। গর্দভ নাকি কি যেন নাম গাড়টার... ধ্যাৎ মনে পড়ছে না, কঠিন নাম। যাই হোক, গ্লাসনস্ত, পেরোস্ত্রোইকার ট্যাবলেট খেয়ে এমন কাজটাই করেছে পৃথিবীর ভারসাম্য একদিকে হেলে পড়েছে। সারা পৃথিবীর মাথায় আমেরিকা এখন বনবন করে ছড়ি ঘুরাচ্ছে'। এতোগুলো কথা একসঙ্গে বলে প্রধানমন্ত্রী হাঁপিয়ে গেছেন।
 

'তাহলে মানুষের খোঁজ-খবর পাবো কি করে', নীচের ঠোঁট কামড়ে বললেন বাদশা।
'জ্বী, চিন্তার কিছু নেই, অবশ্য আমাদের জার্নালিস্টারা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে। এবার তাদের একটা আ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে পাঠানো হয়েছে- সেটা হলো, কারা সবচে কষ্টে আছে? এখন পর্যন্ত কেবল বাংলাদেশ থেকে রিপোর্ট এসেছে। ওখানে আমাদের তুখোড় জার্নালিস্টকে পাঠিয়েছিলাম, কারণ লোকগুলো মারাত্মক, এরা নাকি সোজা আঙ্গুলেও ঘি ওঠাতে ওস্তাদ'।
বাদশা ভারী গলায় বললেন, 'আহ, ইনিয়ে-বিনিয়ে এতো কথা না বলে কাজের কথা বলো'।
'ওই দেশে নিরন্তর সমস্যা, ওইসব কথা না বলে ছাতাফাতা মসজিদের ইমাম, মেয়াজ্জিনদের নিয়ে রিপোর্ট করেছে। গাধা আর কী'!
বাদশা কাতর হলেন, 'আহা-আহা, ওরকম করে বলে না। ও আমাদের দুঁদে জার্নালিস্ট। শুনি না কি রিপোর্ট এনেছে'?

প্রধানমন্ত্রী দরবারের এক কোনে রাখা বিশাল ডেকসেটে সাক্ষাৎকারের ক্যাসেটটা চালালেন। নির্দিষ্ট লয়ে স্পুল ঘুরতে লাগল।
খিচাখিচ খিচ খিচ ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দেয়া হলো।

জিন জার্নালিস্ট(হড়বড় করে): যারা এ পৃথিবীতে আছেন বা পৃথিবীর বাইরে আছেন সবাইকে আমার শুভেচ্ছা। আমরা এ মুহূর্তে এখানকার জামে মসজিদের ইমাম সাহেবের সঙ্গে কথা বলবো, আস্লামুআলাইকুম হুজুর।
ইমাম সাহেব: ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু। কে ভাই আপনি, আমার কাছে কি বিষয়?
জিন জার্নালিস্ট (হাসি): মাফ করবেন হুজুর, আমি কে এটা বলতে পারছি না। আমি এসেছি আপনার একটা সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য।
ইমাম সাহেব: সাক্ষাৎকার, এটা কী জিনিস?
জিন জার্নালিস্ট: ইয়ে, মানে কি করে বোঝাই। পত্রিকায় দেখেন না ছাপা হয়...।
ইমাম সাহেব: ইয়ে, আমি তো পত্রিকা পড়ি না। মাদ্রাসায় পড়াকালিন পত্রিকা পড়া নিষেধ ছিল।
জিন জার্নালিস্ট: অ, আচ্ছা। আপনারা পত্রিকা পড়েন না। তাহলে দিনদুনিয়ার খবর জানবেন কেমন করে?
ইমাম সাহেব: ভাইরে, আমার কাজ খবর না কবর নিয়া। নতুন কোন খবর জেনে তো লাভ নাই। সব খবর আগেই লেখা হয়ে গেছে।
জিন জার্নালিস্ট: বেশ-বেশ। তাহলে কোন সমস্যা নাই। তা সাক্ষাৎকার হচ্ছে, ধরেন, মানুষদের সুখ-দুঃখ জানা, এই আর কী।
ইমাম সাহেব (ঠান্ডা শ্বাস): কি হবে এসব জেনে, আমরা তো আর মানুষ না।

জিন জার্নালিস্ট: আচ্ছা আপনি কতো টাকা বেতন পান?
ইমাম সাহেব (কুপিত হয়ে): আস্তাক ফিরুল্লাহ, লাহলঅলা কুআতে ইল্লা বিল্লা... এসব কী বলছেন! আল্লার নামে নামাজ পড়াই, যা পাই এটাকে বেতন বলছেন কেন!
জিন জার্নালিস্ট (লজ্জিত গলা): মাফ করবেন জনাব, ঠিক কি বলতে হবে আমার জানা নাই। আপনি যদি দয়া করে...।
ইমাম সাহেব: উ-উ, মূল্যের বদলে বলা হয় হাদিয়া আর বেতনের বদলে হবে... হবে...।
জিন জার্নালিস্ট: সম্মানী বললে কেমন হয়?
ইমাম সাহেব: তা মন্দ হয় না। যা জানতে চাইছিলেন সম্মানী এখন পাচ্ছি ১৮০০ করে। আগে ১২০০ ছিল। কিছুদিন হলো বেড়েছে, অনেক দেনদরবার করে।


জিন জার্নালিস্ট মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন, 'মাই জিনেরগড, বলেন কী! আমার জানামতে, বাংলাদেশের একজন মেথরও তো এই টাকায় সারা মাস কাজ করবে না! তা আপনার পরিবারের লোকসংখ্যা ক’জন?
ইমাম সাহেব (দীর্ঘ শ্বাস): এই ধরেন আমি, বাচ্চাদের মা, সাত বাচ্চা। আর আমার আম্মা। আব্বা বড়ো ভাইয়ের ভাগে পড়েছেন।
জিন জার্নালিস্ট (উঁচু স্বরে): জিনগড-জিনগড! চলে কি করে আপনার?
ইমাম সাহেব: চলে কই, চলে না। আর আমি তো চালাই না, আল্লাহপাক চালান।
জিন জার্নালিস্ট: তবু দয়া করে বলবেন, ১৮০০ টাকায় কিভাবে একমাস ম্যানেজ করেন?
ইমাম সাহেব (লজ্জিত গলা): আলাদা কিছু টাকা পাই। এই ধরেন কোথাও মিলাদ পড়ালাম, কোথাও পবিত্র কোরআন খতম হল, কেউ মারা গেল। ওদের জন্য দোয়া করি। ৫০/ ১০০ টাকা পাই । ও-হ্যাঁ, দাওয়াত থাকলে কোনোদিন ভালো খাবার-টাবার জোটে। ভাই, বলতে শরম লাগে, দাওয়াতে আমাদের খাওয়া দেখে লোকে হাসাহাসি করে। এরা কী জানে, পেট ভরে খেতে পাই না। আমার পরিবারে যে চাল লাগে এর অর্ধেক চাল কেনারও টাকা পাই না। আর শুধু চাল পানি দিয়ে তো চিবিয়ে খাওয়া যায় না।

জিন জার্নালিস্ট: আপনার সঙ্গে কথা বলে হুজুর আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। কি করব বলেন, দায়িত্ব তো। আচ্ছা, আপনার এতোগুলো সন্তান, জন্মনিয়ন্ত্রণ করেননি কেন?
ইমাম সাহেব: তওবা-তওবা! এদের পাঠিয়েছেন আল্লাহ, খাবার দেবার মালিকও উনিই। এমনিতে 'আযল' করি কিন্তু লাভ হয় না।
জিন জার্নালিস্ট: এবার আপনার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে একটু কথা বলি।
ইমাম সাহেব: এরা কি আর এখানে থাকে নাকি! আমার একার পেটই চলে না। সকালে নিজের পয়সায় নাস্তা করি। দুপুরে এক বাড়ি থেকে ভাত আসে। অর্ধেক খাই, অর্ধেক পানি দিয়ে রাতের জন্যে রেখে দেই। মাস ছ’মাসে একবার বাড়ি যাই, যৎসামান্য যা পারি দেই।


জিন জার্নালিস্ট: আপনি এই কন্টকিফলের বিচি চিবাচ্ছেন কেন?
ইমাম সাহেব: কন্টকিফল কি?
জিন জার্নালিস্ট: ওহ, সরি। কন্টকিফল হচ্ছে কাঁঠাল।
ইমাম সাহেব: রাতের খাবারে গন্ধ হয়ে গেছিল। খেতে পারিনি। ক্ষিধা লেগেছে। কিছু কাঁঠালের বিচি পোড়ানো ছিল, ওইটাই খাইতেছি।
জিন জার্নালিস্ট: আচ্ছা শেষ একটা প্রশ্ন, এ জীবন আপনার কেমন লাগে?
ইমাম সাহেব (অন্যরকম গলা): বড়ো কষ্ট জনাব, বড়ো কষ্ট। সারা পৃথিবীর লোক যা খুশি তা করতে পারবে, আমাদের পান থেকে চুন খসার উপায় নেই। আমাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আচ্ছা, পেট বাঁধেননি কোন আপনারা? একদিন রমজানে রাস্তায় মুড়ি বিক্রি করছিলাম। সবাই হাঁ হাঁ করে উঠল, হুজুর এ কাজ করে কি করে? সর্বনাশ! একটা ছেলেকে বাংলা পড়ালে আপনারা দিবেন কমসে কম পাঁচশ, হাজার আর আরবী পড়ালে ৫০ টাকা। একদিন তালি দেয়া পাঞ্জাবী পরে এলাম, লোকজন বলল ব্যাটা ভড়ং দেখায়। খেতে পাই না আর কাপড়। আপনাদের যেখানে দুই গজে সার্ট হয়ে যায় আমাদের পাঞ্জাবীতে লাগে চার গজ। তবু শোকর আল্লার কাছে। অন্যদের দেখে সবর করি, এ মসজিদে মোয়াজ্জিন পায় ১২০০ টাকা। তাকে দেখে সবর করি। শোকর-এ আলহামদুলিল্লাহ।

*আজ এই লেখাটি উৎসর্গ করি, মৌলভী আব্দুস সামাদকে- তিনি আমার আরবি শিক্ষক ছিলেন। মুলত লেখাটা তাঁর জীবনের ছায়া অবলম্বনে লেখা হয়েছিল। অসম্ভব সৎ একজন মানুষ ছিলেন। দেওবন্দ থেকে উঁচু ডিগ্রি নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর চেয়ে অনেক অনেক কম শিক্ষিত, অশিক্ষিত মৌলভীদের ওয়াজ মাহফিলে ডাক পড়ত, পড়ত না কেবল এই মানুষটার। কারণ ওয়াজ মাহফিলে ইনিয়ে-বিনিয়ে যেসব গরমাগরম ফুলকি বিচ্ছুরণ ঘটাতে হয় তা তিনি করতে চাইতেন না। মানুষটার ছিল জাতিধর্মনির্বিশেষে অসম্ভব মায়া। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে থাকার, খাওয়ার বড়ো কষ্ট- তিনি মারা গিয়েছিলেন বিনা চিকিৎসায়।
 

**এটা পুরনো লেখা। লেখাটা অনেক আগে একটা ওয়েবসাইটে দিয়েছিলাম। কিছু পাঠকের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র! একজন বললেন, 'ইমাম সাহেবরা আপনাকে পেলে কেঁদে দিত, বুক মিলাইত, কুলাকুলি করত'। তিনি এ-ও-তা বলে মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়েছিলেন।

আমি যদি ভদ্র ভাষায় বলি তাহলে বলব, আমার লেখার মূল বক্তব্যটা বোঝাতে পারিনি। আর অভদ্র ভাষায় বললে, তারা আমার লেখার ধাঁচ-মূল সুরটা ধরতে পারেননি। আমাদের জন্মের সময় এই মানুষগুলো কাছে থাকেন, মৃত্যুর পরও কাছাকাছি।
সচরাচর ঔর্ধ্বদেহিক-অন্ত্যর্ষ্টি সম্বন্ধীয় কর্মকান্ডে এঁদের ব্যতীত উপায় কী! অথচ এঁদের আমরা কোন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। যে বেতনে একজন মেথরও কাজ করবে না সেই বেতন একজন ইমাম-ধর্মীয় নেতাকে দেয়ার ফলশ্রুতি অবশেষে কী দাঁড়াচ্ছে? কেন একজন মানুষকে অন্যায় করতে বাধ্য করা? আবার আবালের মতো আশা করে থাকি এঁরা আমাদের ধর্ম গুলে খাওয়াবেন। আমাদের এটা শেখানো হয়নি এদেরকে শিক্ষক বলার জন্য, ধর্মীয় শিক্ষক!

এরা মাদ্রাসা নামের যে কারখানা থেকে বের হন, ওইসব মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয়-কী শেখানো হয়? সাইকেল চালানো যাবে না, কোনো ধরনের খেলাধুলা করা যাবে না, পত্রিকা পড়া যাবে না।
ভুল শিক্ষা, ধর্মীয় উস্কানি এবং অধিকাংশ হুজুর টাইপের মানুষরা থাকেন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। ফল যা হওয়ার তাই হয়। কোমলমতি শিশুদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। সাদা-শুভ্র হয়ে মানুষটা হয়ে যায় গ্রে- ক্রমশ 'গে'। একজন 'গে-মানুষ'। আর শিশুটির জগৎ এলোমেলো হয়ে যায়- রোপণ করা হয় একেকটা বিষবৃক্ষ। ঝাড়েবংশে কালে কালে বটবৃক্ষ হয়। চক্রাকারে এটা চলতেই থাকে। এ নিয়ে আমাদের দেশে কারও গা করার অবকাশ নাই।

মাদ্রাসায় ক-জন মেধাবি ছেলে ভর্তি হচ্ছে? একটা পরিবারের সবচে মেধাবি ছেলেটাকে সামর্থ্য থাকলে বৈদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয, নিদেনপক্ষে ঢাকায়। আর হাবাগোবা, ল্যাংড়া-লুলা সন্তানকে আল্লারওয়াস্তে মাদ্রাসায়। এ তো নিজেকেই সামলাতে পারে না, অন্যকে কী সামলাবে?

আমার প্রিয়মানুষ মারা গেলে চোখের পানি শুকিয়ে যায় কিন্তু হুজুরদের চোখের পানি দেখে মনে হয় ডিপ-টিউবওয়েল বসানো হয়েছে!
রাগের মাথায় কেউ তার বউকে তালাক বলে দিল- ব্যস, হুজুরদের এই তালাকের উসিলায় 'লাক' খুলে যায়। টাকার বিনিময়ে কোরান খতমের নামে একশ্বাসে এঁরা যা পড়েন তা কোন ভাষা, কটা অক্ষর সহীহ হয়? ধর্মের সর্বময়কর্তা, এরা নিজেরা তৈরি করে নেন নিজস্ব একরাশ ভুল ব্যাখ্যা। একটু আগে পেচ্ছাব করে মাটি ভিজিয়ে গেছেন একজন, ওখান থেকে মাটির ঢেলা উঠিয়ে কুলুপ করতে কোন সমস্যা নাই। একদা ফতোয়া আসবে যে যত বড় ঢেলা নিয়ে কুলুপ করবে সে তত বড় কাজের মানুষ। ভবিষ্যতে এটা দেখা বিচিত্র না ছোটখাটো টিবি নিয়ে লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছে!
অবশ্য এখনকার হুজুরদের সেলফোন ব্যবহারে কোনো অনীহা নাই। যতটুকু জানি এটা মুরতাদরাই আবিষ্কার করেছে, কোন মুসলমান না।

ভাবলে গা কাঁপে, এইসব মানুষদের হাতে ধর্ম নামের ভয়ংকর অস্ত্র। ধর্মীয়-বক্তার যেমন যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না তেমনি ধর্ম নামের এই ভয়ংকর অস্ত্র চালাবার জন্য কোন ট্রেনিং-এর প্রযোজন হয় না। একেকজন চলমান কাশ্যপ- চলমান বিষের ভান্ডার! দিনের পর দিন, মাস, বছর আমরা এই বিষ সানন্দে পান করেই যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ, আমাদের সন্তানরাও পান করবে।

Tuesday, June 9, 2009

কাঠগড়ায় ১৫ কোটি মানুষ!

একটা কাঠগড়ায় ক-জন দাঁড়াবার ব্যবস্থা থাকে? ১০, ১৫ জন? কিন্তু একটা কাঠগড়ায় যখন ১৫ কোটি মানুষকে দাঁড়াতে হয় তখন সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে! ভেঙ্গে পড়ে সভ্যতা, আদালত সবকিছু।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায়, ধর্ষককে সম্পূর্ণ ছাড় দিয়ে ধর্ষণের শিকার মেয়েকে প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত করা হয়েছে। (প্রথম আলো, ০৮.০৬.০৯)

অথচ এই ধর্ষক ধর্ষণকালে গ্রামবাসীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। তারপরও সমাজপতি নামের এ গ্রহের সবচেয়ে কুৎসিত বেশ্যার ঘরে জন্ম নেয়া মানুষগুলো প্রকাশ্যে এই মেয়েটিকে বেত্রাঘাত করতে তাঁর ভাইকে বাধ্য করে।

সোয়াতে একটি কিশোরীকে বেত মারার খবর পৃথিবীময় আলোড়ন হয়। এই খবরটা প্রথম আলো প্রথম পাতায় কেন ছাপালো না এই নিয়ে কালি খরচ করতে ইচ্ছা করছে না (মতান্তরে কীবোর্ড চাপাচাপি)। এমন একটা খবরে রিপোর্টারের নামও দেয়নি। লেখা হয়েছে, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি। কয়লা কখনও সাদা হয় না- প্রথম আলো সবাইকে বদলাবে, নিজেকে ব্যতীত!

আইনের লোকজনের কথা বলিহারি! সলঙ্গা থানার ওসি সাহেব বলেছেন, "এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করা হলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে"।
বাহ, বেশ! অনেকটা এমন- ধর্ষণ করার যন্ত্রপাতি নিয়ে সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাই বলে তো সবাইকে আটকাতে পারি না।

আচ্ছা, এটার মানে কী! প্রকাশ্যে রাস্তায় একজনকে কুপিয়ে ১৪৯ (বাংলাদেশে ১৪৮ টুকরা করার রেকর্ড আছে) টুকরা করে ফেললেও পুলিশ কিছুই বলবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করবে না। ভাল-ভাল, জানা থাকল।

সুপ্রীমকোর্ট
স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অসংখ্য সুয়োমটো রুল জারী করেছেন। এমন একটা ঘটনা তাঁরা পারেন না স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটা রুল জারি করতে। তাহলে আমরা ১৫ কোটি মানুষ কাঠগড়ায় দাড়াবার লজ্জা থেকে বেঁচে যেতাম।

Sunday, June 7, 2009

মৃত্যুদন্ড- কোথাও কেউ নেই- কঠিন অভিযোগ

আমার কেবলই মনে হয়, মৃত্যুদন্ড না থাকলে আজ হয়তো বা কর্নেল তাহের নামের অগ্নিপুরুষ বেঁচে থাকতেন!
"To save just one innocent life from execution, if the lives of hundreds of criminals need to be spared, it's worth saving that one innocent life".

­
১ জুন, ২০০৯। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ৪-এর বিচারক শুক্কুর মিয়া নামের একজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে এজলাস ত্যাগ করার পরই শুক্কুর মিয়া চিৎকার করে বলতে থাকেন, "স্যার, আমি নির্দোষ, আমি কোন হত্যা করিনি"। বলেই তিনি গলায় ব্লেড চালিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।
আমি বিশ্বাস করি, তাঁর কথায় সত্যতা প্রবল। তাঁর স্থলে আমি হলে আমিও তাই করতাম।

আমি এতো তত্ত্বজ্ঞান বুঝি না। আমার অল্প জ্ঞানে বুঝি, অদ্যাপি মানুষ প্রাণ সৃষ্টি করতে পারেনি। যদ্যপি মানুষ প্রাণ সৃষ্টি না-করতে পারবে, কোন প্রাণ সংহার করার অধিকার তার নাই।

খানিকটা আরবি কপচাই: কোরানের শুরুতে বে,শ্যাষ শীন। বে-শীন, ব্যস।

১৩ ডিসেম্বর, ২০০৬। ক্যালিফোর্নিয়ার San Quentin শহরের প্রাদেশিক কারাগারে ষ্ট্যানলি টুকি উইলিয়ামসের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
তার বিরুদ্ধে ৪ জনকে হত্যার অভিযোগ ছিল। তিনি একটা সন্ত্রাসী দল গঠন করেছিলেন এটা সত্য কিন্তু বারবার বলে এসেছেন, এই নরহত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। সন্ত্রসী দল গঠন করার জন্য প্রকাশ্যে কোর্টে ভুল স্বীকার করেছেন এবং তিনি যে অনুতপ্ত তা বারংবার বলেছেন।
কারাগারে বসে তিনি বাচ্চাদের জন্য বেশ কটি বই লিখেছিলেন এবং সন্ত্রাসবিরোধী প্রচুর আর্টিকেলও লিখেন।
একজন মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামীর জন্য, তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করার জন্য এত বেশি সংখ্যক মানুষ বিক্ষোভ করেছে এর নজির তেমন নাই! তবুও ষ্ট্যানলি টুকি উইলিয়ামস নামের মানুষটাকে মেরে ফেলা হয়।
তাঁকে বিচারক বলেছিলেন খুনের অভিযোগ স্বীকার করলে তার মৃত্যুদন্ডাদেশ বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এই মানুষটার দৃপ্ত উত্তর ছিল, "Why should I apologize for a crime that I haven't committed".

অনেকদিন পর আবারও 'কোথাও কেউ নেই' নাটকটা দেখলাম। সেই ভালো লাগা, সেই পাক খেয়ে উঠা কষ্ট! কারাগারে বাকেরের লাশ নিতে আসা মুনার সেই পান্ডুর মুখ! চারদিকে আজান হচ্ছে, কী হাহাকার করা দৃশ্য! বুকের উপর পাথর চেপে বসে। ইচ্ছা করে বাথরুমে গিয়ে খানিকটা কেঁদে আসি!

আহা, এখন কত অখাদ্য-কুখাদ্য নাটক প্রচারিত হয়, যা দেখে গা রি-রি করে। হায়, আওলজমিতে কেবল দুর্বাঘাস! এক তৃতীয়াংশ নাটক পাতে দেয়ার মত হলেও আমার আফসোস থাকত না। কারা এগুলো বানায়, কারা দেখে আল্লামালুম। আফসানা মিমির মত লোকজনের এখন তো আবার একটা ঢং হয়েছে, দেশে নাকি পান্ডুলিপির আকাল। তো, চলো দাদাদের দেশ থেকে আমদানি করি। দাদারা কফের সিরাপ ফেন্সিডিল খাইয়ে খাইয়ে আমাদের ভাবনাগুলোও কফ-মার্কা করে ফেলেছেন। আমরা বড় অতিথিপরায়ন, কাউকে না করতে পারি না। দাদাদের কত আবদার-বায়নাক্কা, না করি কেমনে!

কালেভদ্রেও, কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়া 'কোথাও কেউ নেই' প্রচার করে না, করেনি। আমি এই নাটকের কপি যোগাড় করেছিলাম অনেক যন্ত্রণা করে। সম্ভবত ভিসিআর ক্যাসেটের ফরম্যাটে ছিল, ওখান থেকে সিডিতে কপি করা হয়েছে। যাচ্ছেতাই রেকডিং, তবুও আমার আনন্দের শেষ নাই। দুম করে অনেক কটা বছর বয়স কমে গেল।

আমি জানি না এইসব ক্লাসিক নাটকগুলোর কোন ব্যাকআপ আমাদের আপৎকালীন আর্কাইভে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে কিনা? অলুক্ষণে কথাটা বলতে চাচ্ছিলাম না- ধারণা করি, নাই। অন্ততপক্ষে চেষ্টাটাও নাই, অদ্যাবদি এমন কোন নমুনা চোখে পড়েছে বলে তো মনে পড়ে না! আমাদের কিছু অদ্ভুতদর্শন ভাবনা আছে, সবই অদৃষ্টলিপির উপর চাপিয়ে দেই, এই অদূরদর্শীতা আমাদের রক্তে খেলা করে।

'কোথাও কেউ নেই' নাটকটা ঠিক কত সালে প্রচারিত হয়েছিল আমার মনে নাই। এখন আবার দেখতে গিয়ে প্রসঙ্গটা মনে পড়ল।
সালটা ৯২। তখন আমি 'ভোরের কাগজে 'একালের রূপকথা' নামে ফি-হপ্তাহে একটা করে লেখা লিখি। পাতাটা দেখতেন সঞ্জীব চৌধুরী। একদিন সঞ্জীবদা বললেন, 'একজন পাঠক আপনার "শাসক" লেখাটা নিয়ে কঠিন একটা চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি আপনার বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উত্থাপন করেছেন'।
চোর-চোট্টায় দেশটা ভরে গেছে, আমিও এই দেশেই বসবাস করি। আমি 'বেহেস্তের বড়ি পাতা' এমন জোর দাবিও করি না কিন্তু কি চুরি করে বমাল ধরা পড়লাম এটা জানা প্রয়োজন।


এমনিতে আমার রাগের পাশাপাশি খানিকটা আনন্দও হলো। আমার ধারণা ছিল, এ দেশে 'একালের রূপকথা'-র একজনই পাঠক, আমি নিজে। দেয়ালে ঠ্যাং তুলে নিজের লেখা নিজেই পড়ি। ওয়াল্লা, এখন দেখছি আরেকজন পাঠেও আছেন। 'একালের রূপকথা'' নামের আবর্জনায় তিনি কেবল চোখ বুলিয়েই দায় সারেন না, খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে ভুলও বের করেন। বাহ, বেশ তো!
আমি
সঞ্জীবদাকে বললাম, 'অভিযোগটা কী রকম'?
সঞ্জীবদা টেবিলে তাল ঠুকে বললেন, 'আপনি "শাসক"-এ সোডিয়াম লাইটের যে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন তা নাকি "কোথাও কেউ নেই"-এ আছে'।
আমি চেপে রাখা শ্বাস ছাড়লাম। আচ্ছা, এই তাহলে কাহিনি!


ঘটনাটা হচ্ছে এইরকম। "কোথাও কেউ নেই"-এ কোর্টের একটা দৃশ্য থাকে এরকম। একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন, খুন করার সময় বাকেরের গায়ে তিনি লালচে টাইপের চাদর দেখেছেন। উকিল হুমায়ূন ফরিদি এই মিথ্যা সাক্ষ্য তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন। রাস্তায় সোডিয়াম লাইট ছিল বিধায় লালচে বা মেরুন কালারের চাদর কুচকুচে কালো দেখা যাওয়ার কথা। 
কিন্তু "শাসক" লেখাটায় এই প্রসঙ্গটা আছে কিন্তু অন্য রকম। নতুন রাজা একদিন গভীর রাতে ছদ্মবেশে শহর দেখতে বেরুলেন। প্রথমেই বিরক্তিতে মন ছেয়ে গেল। রাজা বিড়বিড় করছেন: "এরা শহরে কী জঘন্য রঙের বাতি লাগিয়েছে (সোডিয়াম লাইট)। টকটকে লাল রঙের আলখেল্লা গায়ে দিয়ে বেরিয়েছেন অথচ কুচকুচে কালো দেখাচ্ছে। এই ফাজলামীর মানে কী"!

আমি হিসাব করে বের করেছিলাম, "শাসক" লেখাটা ছাপা হয়েছিল নাটকের ওই অংশটুকু প্রচারের পূর্বে। এবং "কোথাও কেউ নেই" মূল পান্ডুলিপিতে (বইয়ে) কোথাও এই প্রসঙ্গের উল্লেখ ছিল না। নাট্যকার (হুমায়ূন আহমেদ) পরে এই অংশটুকু কাহিনির প্রয়োজনে যোগ করেছিলেন। একটার সঙ্গে অন্যটা মিলে যাওয়া স্রেফ কাকতালীয়!

"শাসক"-এ যে প্রসঙ্গটা ব্যবহার করেছিলাম- বিষয়টা আসলে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। রাতের ঢাকায় এক বন্ধুর সঙ্গে রিকশায় ঘুরতে বেরিয়েছি। বন্ধুটি শস্তা রসিকতার অংশ হিসাবে বললেন, কালো শার্টে তোমায় মানিয়েছে ভাল। তোমার চামড়ার সঙ্গে ভালই মিশ খেয়েছে।
আমি খানিকটা ধন্ধে পড়ে গেলাম। বিষয় কী? এই মহতরমার কথায় বুকে কষ্ট পাক খেয়ে ওঠে, মহিলা মানুষ এমন নিষ্ঠুর হয় কেমন করে! লাল শার্টকে কালো বলছেন কেন? কষ্ট চেপে ভাল করে লক্ষ করে দেখি, লাল শার্ট আর লাল নাই; কুচকুচে কালো দেখাচ্ছে।


সহায়ক সূত্র:
১. শাসক: http://www.ali-mahmed.com/2009/06/blog-post_03.html
২. ছবি সূত্র: http://activistchat.com/phpBB2/viewtopic.php?p=31512 

Friday, June 5, 2009

রিপোর্টিং এবং ফিকশন!

'মা-মা, অ মা, দেখো তোমায় কেমন ছুঁয়ে দিচ্ছি'।
হাসিখুশি মা-টার
মনটা আজ কী কারণে যেন ভারী বিষণ্ন। অন্য সময় খোকার এই চক্রাকারে ঘুরপাক খাওয়া এবং ছুঁয়ে দেয়ার খেলাটা কী উপভোগ্যই না মনে হত। কিন্তু আজ মোটেও ভাল লাগছে না, বিরক্ত লাগছে।

মা-র বুকটা কেমন ভার হয়ে আছে। আহ, খোকাটা এমন অবুঝ হয়েছে কেন! খোকারই বা কি দোষ, কীই বা বয়স ওর, ক-দিনইবা হলো এই পৃথিবীর মুখ দেখেছে! মা কঠিন কিছু কথা বলতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলেন। প্রাণপণ চেষ্টায় গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বললেন, 'বাবু, যাও, অন্যদের সাথে গিয়ে খেলা করো'। 
খোকা চক্রাকারে ঘুরপাক থামিয়ে ঝলমলে মুখে বলল, 'উহুঁ, আমার যে তোমার সাথে খেলতেই ভাল লাগে, তুমি যে আমার লক্ষী মামইন্যা'। খোকা এবার তার স্বরচিত ছড়া ক্রমাগত সুর করে বলতে থাকল, 'মামইন্না-মামইন্না, পিঁড়ি থেকে নামইন্না'।
 
খোকা আজকাল বড়ো ছড়াকার হয়েছে। তার এইসব স্বরচিত ছড়ার কোন আগামাথা নাই। অন্য সময় হলে মা হাঁ করে খোকার এইসব ছড়া শোনেন। আজ মোটেও এসব টানছে না। মা রাগ-রাগ গলায় বললেন, 'বাবু, তোমাকে একবার একটা কথা বললে কানে যায় না, বললাম না অন্যদের সঙ্গে গিয়ে খেলা করো। আর শোনো, ঘসাঘসি করবে না, বিরক্ত লাগছে'।
খোকার এতক্ষণে হুঁশ হলো। মার বিবর্ণ মুখটা ভাল করে লক্ষ করল। আহা-আহা, মার কীসের কষ্ট! ইশ, কি করলে মার কষ্ট কমে এটা জানলে বেশ হতো কিন্তু খোকা তো এটা জানেই না ছাই! কথা ঘুরাবার জন্য বলল, 'মা, দৈত্যরা তো আমাদের ধরতে পারলে মেরে খেয়ে ফেলবে, না'?
মা অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বললেন, 'হুঁ'।
খোকা শিউরে উঠে বলল, 'ইশ, দৈত্যরা কী নিষ্ঠুর, না মা?
মা বললেন, 'হুঁ-ম'।
'মা, আমাকে ধরলে পারলেও খেয়ে ফেলবে'?
 
মা হাহাকার করে উঠলেন, 'বালাই ষাট, তোকে খাওয়ার আগে যেন আমাকে খায়। খোকা, আর কক্ষণও এমন কথা মুখেও আনবি না। এইটুকুন ছেলে, কীসব কথা! খোকা, বুকে থুতু দে'। 
'আচ্ছা মা, আমাদের তো দৈত্যরা ধরবে না, না? আমাদের এই জায়গাটা তো পবিত্র, তাই না? আমরা এখানে থাকলে দৈত্যরা নাকি আমাদেরকে খেতেই পারবে না'?
মা খোকার চোখে চোখ রেখে বললেন, 'হুঁ'।
 
'আমাদেরকে খেলে নাকি দৈত্যরা নিজেরাই মরে যাবে? সত্যি নাকি, মা'?
'হা, সত্যি'।

খোকা এবার লাফিয়ে উঠল, 'কী মজা-কী মজা। দৈত্যরা আমাদের খেতে পারবে না-পারবে না'। খোকা এবার কথা ঘুরাবার জন্য বলল, 'মা, তোমার কি মন খারাপ'?
মা বললেন, হুঁ-উ।
'বেশি খারাপ'?
'হুঁ',
'তোমায় একটা ছড়া বলি'?
'না। যাও গিয়ে খেলা করো গিয়ে'।

খোকা চলে যাচ্ছে। দেখো দেখি ছেলেটার কান্ড, পাগলুটা কেমন বারবার ফিরে তাকাচ্ছে, এই বুঝি মা পিছু ডাকল। খোকাটা একদম একটা পাগলু হয়েছে! খোকা একসময় চোখের আড়াল হয়ে গেল। মা খোকাকে এটা বলতে পারেননি, তাদের মাথার উপর বিপদ, ভয়াবহ বিপদ। ইশ, খোকা যদি বুঝত বড়দের কত সমস্যা, সমস্যার কূলকিনারা নাই রে!
এখানে থাকলে দৈত্য নামের মানুষরা তাদের খেতে পারবে না এটা সত্য কিন্তু খেতে পারবে না বলেই তাদের সবাইকে মেরে ফেলার জন্য বুদ্ধি করা হচ্ছে। কালই শুনছিলেন, দৈত্যরা বিচিত্র ভাষায় কথা বলছিল, শলা করছিল: সবাইকে মেরে ফেল, সব্বাইকে। ওষুধ ছড়িয়ে দাও। সবাইকে মেরে ফেল, একজনও যেন না বাঁচতে পারে।
 
এক্ষণ মার বুকে কেমন চাপ চাপ ব্যথা। দৃষ্টি কেমন অস্বচ্ছ হয়ে আসছে। এটা কী চোখের ভুল, পানির রঙ কী বদলে গেছে খানিকটা? এমন হচ্ছে কেন, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে কেন? শ্বাস নিতে পারছে না। মনে হচ্ছে কলজেটা মুখে চলে এসেছে! মা নিমিষেই বুঝে ফেললেন, বোঝার আর বাকি রইল না। তাদেরকে মেরে ফেলা হচ্ছে। চারদিক থেকে অন্যরা ভুসভুস করে ভেসে উঠছে, পেট উল্টে যাচ্ছে। কেউ কেউ মুখ হাঁ করে আটকে রাখা দম ফেলার চেষ্টা করছে, আপ্রাণ চেষ্টায় নীচে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে, লাভ হচ্ছে না।
 
অভিজ্ঞ মা-টা এটা বিলক্ষণ জানেন বিষ পানিতে সমান ভাবে মিশতে প্রচুর সময় লাগে আর কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে যেখানে যেতে পারলে বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যায় কিন্তু মা-টা এসব নিয়ে ভাবছেন না। কেবল পাগলের মতো তার সন্তানকে খোঁজার চেষ্টা করছেন। কোথায় পাবেন তার সন্তানকে? চারদিকে আর্তনাদ, হাহাকার। মা বুঝতে পারছেন ক্রমশ তার সময় ফুরিয়ে আসছে।
তার মাথা খারাপের মতো হয়ে গেল, একই শব্দ বারবার আউড়ে যাচ্ছেন: খোকা-খোকা, অ খোকা, অ আমার পাগলু, ফিরে আয়-ফিরে আয় সোনা, তোর মাথার দিব্যি আর কক্ষণও তোকে যেতে বলব না, কক্ষণও না। একবার আয়- কেবল একবার আয়- আয় বাপ, একটি বারের জন্য আয়...!
 
*এটা একটা পুরনো লেখা কিন্তু আমার অসম্ভব পছন্দের। এই ফিকশন-লেখার উৎস যে রিপোর্ট বা খবরটা সেটা হচ্ছে, 'ঢাকা ওয়াসার পয়োপরিশোধন কেন্দ্রের লেগুনের সব মাছ বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলা হয়। ভেসে ওঠে কয়েক টন মৃত মাছ'।

এই খবরটা যখন আমি পড়ি তখন আমার চশমার কাঁচ ঝাপসা, বুক ভেঙ্গে আসছিল। গলায় কী যেন দলা পাকাচ্ছিল। কেন? এর উত্তর আমার কাছে নাই। আমরা কী মাছ খাই না? খাই। আমি কী মাছ খাই না? খাই। তাহলে? আমি জানি না-আমি জানি না!
বুঝলাম উপায় ছিল না কিন্তু এভাবে মেরে ফেলাটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমার কেবল মনে হচ্ছিল জ্ঞানে-বুদ্ধিতে উন্নত জাতি প্রায় একই ভঙ্গিতে আমাদের মত অনুন্নত জাতিকে নির্বিকার ভঙ্গিতে মেরে ফেলে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোই যদি ঠিক করে এই গ্রহ থেকে বাংলাদেশের নামটা মুছে ফেলবে, সম্ভব। এই মাছের মতই এরা মেরেছে ইরাকিদের, ফিলিস্তানিদের...।

**অন্যত্র এই লেখাটাই পড়ে আমার এক সুহৃদ চটে লাল, কী চটাচটি! তিনি মুখে আলাদা কাঠিন্য এনে বলেছিলেন, হুম, মাছ। শোকগাথা, হুম। মাছের জন্য এলিজি, হুম। তোমার মধ্যে সমস্যা আছে, ভয়াবহ সমস্যা।
এ আমি বিলক্ষণ জানি আমি সমস্যার 
চলমান ট্রাক কিন্তু আমার এই কষ্টটার মধ্যে কোন খাদ নেই। আমি দুঃখ লুকিয়ে বলেছিলাম, কেমন?

তখন তিনি বিস্তর উদাহরণ দিলেন, আমি কখন কার সঙ্গে পোকার ন্যায় আচরণ করেছি। কার মৃত্যুসংবাদ শুনে বলেছি, অ- আচ্ছা! তিনি সদুপদেশও দিলেন, ভাল মানসিক রোগের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। সোজা বাংলায় পাগল...!
 
আসলে জানি না, জানি না আমি। এই তীব্র কষ্ট-খারাপলাগার উৎস কোন নিতল থেকে উঠে আসে? এটা আমার জানা নাই- জানা থাকলে ভাল হত। আমি নিজেকেই নিজে চিনি না। মস্তিষ্ক আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমি না! এ তো আমি আর আমার মস্তিষ্কের মধ্যেকার বাতচিত। আহা, এখানে মস্তিষ্কের ডাক্তারের কী কাজ, ছাই!
তবুও এই বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছিলাম। কী কারণে জানি না তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। একদা তিনি আমাকে এই বলে খারিজ করে দিলেন খুব বেশিদিন আপনার চিকিৎসা করলে আমি নিজেই আপনার মত হয়ে যাব। আমার 'ফ্রিডম' বইয়ে এর অনেকটাই চলে এসেছিল। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ, এখানে এই আলোচনার খুব একটা গুরুত্ব নেই।
... ... ...
২৮.০৭২০২০
আমার মত সাধারণ মানুষ মাছের জন্য এলিজি লেখে কলম দিয়ে কিন্তু এঁরা লেখেন হৃদয় দিয়ে:
 

হ্যাকারের হাতে আপেল

গতকাল আমার সাইটটা হ্যাক করা হয়েছিল। কাল থেকে আমি আমার সাইটে কোন পোস্ট দিতে পারিনি। আজ সকালে গুগলের বদান্যতায় আমার সন্তানসম সাইটাকে ফেরত পেয়েছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

নিজের অনেক জাগতিক কষ্টের মধ্যে এই সাইটে লেখালেখি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। হ্যাকার নামের দানব এটাও কেড়ে নিতে চাইল!


ও হ্যাকার নামের দানব, কেউ আপেলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়, কেউ আপেল কেটে খেয়ে আরাম বোধ করে। কেউ কেউ আপেলে আলগোছে সুই ঢুকিয়ে দেয়। ওই আপেল খেতে গিয়ে কারও মুখ ক্ষত-বিক্ষত হলে এতেই তার আনন্দ। আফসোস!

Wednesday, June 3, 2009

শাসক

গভীর রাতে দৈত্য বাদশা জরুরী সভা তলব করলেন। দৈত্যরা কপালে একটাই-মাত্র চোখ কচলাতে কচলাতে জড়ো হলো। বাদশা মেঘগর্জনে ঘোষণা দিলেন: আমি একটা বর দিয়েছি।

দৈত্যরা কেউ অবাক হল না। তাদের বাদশার এটা এক বদ অভ্যাস, যাকে তাকে বর দেন। অনেক সময় জোর করে বর দেন, কেউ নিতে না চাইলে জোর করে ধরে নিয়ে আসেন। দৈত্যদের গলা শুকিয়ে এলো, এ লোকের দেয়া প্রত্যেকটা বর-এ কোন না কোন গন্ডগোল থাকে, জীবন ভাজা ভাজা হয়ে যায়।
কোতোয়াল মুখ অন্ধকার করে বলল: বলেন কে সে হতভাগা, ধরে আনি।
বাদশা হড়বড় করে বললেন, আরে না-না, তোমরা যা ভাবছো তা না। এবারের ব্যাপারটা অন্য ধরনের। অনেক মাথা কুটে আমার কাছ থেকে বর নেয়া হয়েছে। এ রাজ্যের কেউ না। বহুদূর একদেশের মানুষ নামের প্রাণী।

দৈত্যদের চোখ চকচক করতে লাগল। আহ, কতো দিন মানুষের মাংসের শিককাবাব খাওয়া হয় না। এদের লালা ঝরে বাদশার পা ভিজে গেল।
বাদশা চটে লাল হয়ে বললেন: ইতর, মাথামোটা গর্দভ সব, শুধু আছে মানুষের মাংস খাওয়ার চিন্তা, এইসব কী! তোমাদের চে’ শক্তিশালী কেউ যদি থাকত এই পৃথিবীতে, ওরাও তো তোমাদের ধরে ধরে খেতো, নাকি? ভুল বললাম।
একজন সাহস করে বলল, মানুষরাও তো গরু, ছাগল, মুরগী ধরে ধরে খায়, ওদের বেলায় দোষ হয় না। যত দোষ আমাদের- দৈত্য হয়ে মাথা বিক্রি করে দিয়েছি নাকি!
বাদশা গর্জে উঠলেন: খামোশ, ভুজংভাজাং কথা বাদ। তো, যেটা বলছিলাম, বঙ্গোপসাগরের তীরে ছোট্ট একটা দেশ আছে। দেশটার নাম সবার জানা প্রয়োজন নাই। তবু ধরো নামের আদ্যাক্ষর ‘ব’, মজার ব্যাপার হলো এদের রাজপ্রাসাদের আদ্যাক্ষরও ‘ব’। ওই দেশের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছি, সমগ্র দেশে হাহাকার: ভাত দে, কাপড় দে, রাজা দে। আমার খুব কৌতুহল হলো, ভাত কাপড় তো বুঝলাম কিন্তু রাজা দে এর মানে কি!

জিজ্ঞেস করতেই সবাই এমন কাকুতি মিনতি শুরু করল মনটা অন্য রকম হয়ে গেল। আমি কেঁদে ফেললাম। অবশ্য কাঁদা উচিৎ হয়নি, ছোটখাটো বন্যা বাধিয়ে দিয়ে এসেছি। ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। লাশের পর লাশ পড়বে। একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে, বন্যার ছুতায় এরা বাড়তি কিছু টাকা পাবে। এমনিতে দেশটায় জমহুরিয়াত-গণতান্ত্রিক শাসন চালু আছে। এর ফলে বিরাট বড় চোরেরও ক্ষমতায় আসতে বেগ পেতে হয় না। শিক্ষিত মানুষরা হাসিমুখে এটা মেনে নেয়।
এতোগুলো কথা বলে বাদশার মুখে ফেনা জমে গেছে।

দৈত্যদের মধ্যে একজন (যার সাহসের কোনো কুলকিনারা নাই। জনান্তিকে বলে রাখা যেতে, পারে বাদশা নিজেও একে প্রচন্ড ভয় পান) থমথমে গলায় বলল: আপনার কথা শেষ হইছে, ঘুম পাইছে। কথা শর্ট করেন। কাল ভোরে কুহতুর পর্বতে যাইতে হইবে।
বাদশার চোয়াল শক্ত হল, ঠান্ডা গলায় বললেন: না কথা শেষ হয় নাই। আমি ঠিক করেছি তোমাদের মধ্যে থেকে একজনকে ওদেশের রাজা করে পাঠাব। কে কে যাবে হাত তোল। এরপর লটারী হবে, যার নাম উঠবে সেই যাবে।

হঠাৎ করে সবার গলায় অদৃশ্য কি যেন আটকে গেল, গলা খাঁকারির শব্দ ক্রমশ উঁচু হলো। বাদশার ভ্রু কুচকে জোড়া লেগে গেল, সেই যে জোড়া লাগল আর আলাদা হলে না (দৈত্য বাদশারও চোখ একটা। ভ্রু জোড়া লাগল কেমন করে এটা একটা রহস্য), এর মানে কি- কেউ যেতে রাজি না, নাকি!
ছিঃ, তোমাদের মতো কাপুরুষ প্রজাদের বাদশা আমি! ছিঃ, ছি-ছি-ছি, বাদশার চোখে নগ্ন ঘৃণা।
সেই সাহসী দৈত্যটা আফ্রিকার জঙ্গলের মতো ঝাকড়া চুলে আঙুল চালাতে চালাতে বলল: আপনি যান না সেই দেশের রাজা হয়ে। খাককু, খাককু খাক খা, খ্যাকু খ্যাকু (এর হাসিটাও বড় বিচিত্র)।
খবিশ, বাদশা আকাশের বজ্রপাত মাটিতে নামিয়ে বললেন: আমি গেলে এদেশ চালাবে কে, তুই, তোর মতো গাধা?
জ্বে, দেশ চালান কঠিন কিছু না, সাহসী দৈত্যটা হেলাফেলা ভাবে বলল।
ঠিক আছে তুই আগে ওই দেশ চালিয়ে আয়। এরপর না হয় এই দেশ চালাবি, দেখি তোর কেমন সাহস?

সাহসী দৈত্যটা ফাঁদে আটকে গেল, এখন আর ফেরার উপায় নেই। সে মুখ অসম্ভব লম্বা করে, বাদশা সোলেয়মানের তিন চৌদ্দ বেয়াল্লিশ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে ‘ব’ আদ্যাক্ষরের দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। অবশ্য তার উল্লাসিত হওয়ার কারণ নেই, যে ওখানে গিয়ে মহাসুখে মানুষ ধরে ধরে খাবে। নিয়ম অনুযায়ী মানুষের রূপ ধারণ করতে হয়েছে এবং পাশবিক শক্তি কেড়ে নেয়া হয়েছে।

নতুন রাজার মনে শান্তি নাই, খাওয়া নাই। মানুষ এইসব কী খায়, ছ্যা! অচা-পচা কুখাদ্য। শুটকিভর্তা একটা খাওয়ার জিনিস হইল? যখন পচন ধরে তখন ওইটায় সাদা-সাদা পোকা কিলবিল করে। ওয়াক!
নিতান্ত বাধ্য হয়ে এইসব খেয়ে রাজার ভয়াবহ রকমের পেট নেমে গেল। তিনি বদনা নিয়ে ছুটাছুটি শুরু করলেন। রাজার মেজাজ খুব খারাপ হয়, এরা টাট্টিখানা নামের খুপরির মত এইটা কী বানিয়েছে! আরে, জঙ্গলে
বাহ্যেত্যাগ না করলে বাহ্যেত্যাগের সুখ কোথায়?

আর একি যন্ত্রণা! এই দেশের প্রজাদের মুখে শুধু নাই নাই। বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা শুধু নাই নাই করো, এটা নাই সেটা নাই, তোমাদের আছেটা কি, বলো তো?
প্রধানমন্ত্রী চিন্তায় পড়ে গেলেন, আসছি বলে সেই যে গেলেন কয়েকদিন পর এলেন। মুখ আলো করে বললেন, ভাই, অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম, আমাদের আসলে বলার মতো কিছুই নাই? শুধু আমরা আছি ?
রাগে রাজার গা কাঁপতে লাগল, সামলে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, উত্তম অতি উত্তম! আর শোন, আমাকে ভাই বলবে না, কল মি রাজা । ভুলে গেছ, কেমন করে ভুলে গেলে, তোমাদের দেশের এক শাসককে আপা বললে তিনি রাগে লাফাতে লাফাতে শুধরে দিতেন, কল মি ম্যাডাম।
জ্বী ভাই, ইয়ে থুক্কু রাজা ।

নতুন রাজা প্রথম দিকে রাজ্য পরিচালনায় অভিনবত্ব আনতে চেয়েছিলেন, বিভিন্ন রাজা বাদশার কাহিনী মনোযোগ সহকারে পাঠ করলেন। দু-জন রাজাকে খুব মনে ধরল। একজন বহু বছর পুর্বে এই দেশেরই রাজা ছিলেন, দীনহীন জীবনযাপন করতেন। তার মৃত্যুর পর হাতলভাঙ্গা তোবড়ানো স্যুটকেস থেকে ছেঁড়া শার্ট, লুঙ্গি পাওয়া গেছিল। আরেকজন বাদশা হারুনুর রশীদ, ছদ্মবেশে প্রজাদের সুখ-দুঃখের খোঁজ খবর করতেন।

নতুন রাজা একদিন গভীর রাতে ছদ্মবেশে শহর দেখতে বেরুলেন। প্রথমেই বিরক্তিতে মন ছেয়ে গেল। এরা শহরে কি জঘন্য রঙের বাতি লাগিয়েছে (সোডিয়াম লাইট)। টকটকে লাল আলখেল্লা গায়ে দিয়ে বেরিয়েছেন অথচ কুচকুচে কালো দেখাচ্ছে। এই ফাজলামীর মানে কি!

একা একা একটু ভয় লাগছে অবশ্য, আশেপাশে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, চিন্তার কিছু নেই, প্রচুর পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় প্রচুর মেয়ে দেখলেন। ভাবলেন, ভালো, এরা নিশ্চয়ই দেরিতে রান্নাবান্না শেষে করেছে, এতোক্ষণে হাওয়া খেতে বেরিয়েছে। এরা উনাকে দেখে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করছে যার অর্থ বুঝতে পারছেন না। আর এদের সম্ভাষণও যেন কেমন: একা নাকি? এটা কি ধরণের সম্ভাষণ, এর কী উত্তর হয়! একা দেখেও জিজ্ঞেস করছে একা নাকি। আজব তো! ব্রেন ডিফেক্ট নাকি?

কাঁধ ঝাঁকিয়ে সামনে এগুলেন। এক জায়গায় কয়েকজন তাকে ঘিরে ফেলে বিভিন্ন অস্ত্রের মহড়া দেখাতে লাগল,
মহড়ার কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, বাহ্‌ দারুণ তো! এরা নিশ্চয়ই আগামীদিনের দেশ রক্ষক, সৈন্যবাহিনীতে ভর্তি হবে। গভীর রাতেও অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। মহড়া দেখাচ্ছে।
চু...ভাই, মাল পানি কি আছে বাইর কর, নইলে দেলাম চাক্কু হান্দাইয়্যা, কুৎসিৎ গালি সহযোগে একজনের সাফ কথা।

রাজার কাছে টাকা পয়সা বলতে কিছু ছিল না। সেটা ব্যাপার না। রাজভান্ডারে প্রচুর আছে। কিন্তু এসব কী! ভুলে গেলেন তিনি ছদ্মবেশে আছেন, চেঁচিয়ে উঠলেন: তোমরা কারা? আর তোমরা জানো কার সাথে কথা বলছ, আমি এ দেশের রাজা।
আমরা হলাম ডাইল মানে ফেনসিডিল, হেরোইন পাট্টি, একজন আরেকজনের গায়ে রাম খোঁচা মেরে বলল: আবে চান্দু, এর মনে হয় বল্টু কয়েকটা ছুইট্যা গেছে, পাগল ছাগলের কাপড়ে কি কাম, ল, এর কাপড় বেইচ্চা ডাইল খাই।

এরা জোর করে রাজার গা থেকে কাপড় সব খুলে নিল। রাজার গায়ে একটা সুতাও নাই। ভুল হলো, কোমরে কালো সুতাটা আছে, তাগাটা এ দেশে আসার পূর্বে তার মাতাশ্রী বাড়কা রাক্ষসী
বেঁধে দিয়েছিল

তিনি স্তম্ভিত-হতভম্ব। নিরুপায় হয়ে রাস্তার ভিক্ষুকের বোঁচকা-বুঁচকি থেকে একটা চট চুরি করে কোনো মতে লজ্জা ঢাকলেন। রাজপ্রাসাদের প্রহরীদের বোঝাতে বিশেষ বেগ পেতে হলো, আসলে তিনি কে? অবশ্য গোটাকয়েক ঘা খেয়ে।
এ পর্বের এখানেই সমাপ্তি।

একদিন ঘুমাতে যাবেন। কানে এলো রাজপ্রাসাদের বাইরে খুব হৈচৈ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে তলব করলেন: কি হচ্ছে এসব, বাইরে হইচই কিসের?
প্রধানমন্ত্রী কাঁধ কয়েকবার উঁচু নিচু করে বললেন: তেমন কিছু না রাজা বাহাদুর, এরা আপনার বিরোধী দল।
বিরোধীদল তো বুঝলাম, হইচই করছে কেন! কি চাচ্ছে?
বিরোধীদল হইচই করবে এটাই নিয়ম, করতে হয়। এরা বলছে, দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে যাচ্ছে। ঘুষ, কালোবাজারী, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, পরীক্ষায় অবাধ নকল, এইসব।

গভীর চিন্তায় রাজার কাঁধ ঝুলে কপালে অসংখ্য ভাঁজ পড়ল, চোখ হয়ে গেল মরা মাছের মত। হঠাৎ লাফিয়ে উঠলেন: ইউরেকা-ইউরেকা, পেয়েছি! আমি এই দেশের প্রজাদের অদ্ভুত মানসিকতা লক্ষ্য করেছি, এদের যা করতে বলা হয় তার উল্টোটা করে। খাল কাটতে বলা হলো তো খাল ভরাট করে ফেলল। যাও, ঘোষণা করে দাও, আজ থেকে সব অবৈধ কাজ বৈধ করা হলো, শুধু বৈধই না বাধ্যতামূলক। বাইরে যারা হইচই করছে তাদেরকে এক্ষুণি জানিয়ে দাও। ওয়ান, টুতে সমস্যার সমাধান। সব ঠান্ডা। হা হা হা।
প্রধানমন্ত্রী বাইরে থেকে ঘুরে এলেন। হইচই কমল তো নাই আরও এক ধাপ বেড়ে গেল।
আবার কি হলো, রাজার রাগী গলা।
ওই যে বললাম, নিয়ম। বিরোধীদল হইচই করবেই, এটাই এই দেশের দস্তুর, প্রধানমন্ত্রী মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন।
এক কাজ করো, এদের সব্বাইকে মন্ত্রী বানিয়ে দাও।

প্রশান্তচিত্তে রাজা ঘুমাতে গেলেন। রাত বারোটা। বিকট চেঁচামেচিতে রাজার কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেল। অসহ্য রাগে লাফাতে লাগলেন, একটুর জন্য মাথা ছাদে ঠুকল না। হচ্ছে কি, হচ্ছে কি এসব, প্রধানমন্ত্রী।
রাজাবাহাদুর এরা আপনার বিরোধীদল।
ওদের না সবাইকে মন্ত্রী করা হয়েছে!
জ্বী, তা হয়েছে। কিন্তু এরা নতুন দল।
যাও, এদেরকেও মন্ত্রী করে দাও।

প্রধনমন্ত্রী ফাঁপড়ে পড়লেন। মিনমিন করে বললেন, মন্ত্রীর কোটা তো শেষ, এদের কি মন্ত্রী করবো?
রাজার দুচোখ ঘুমে ভেঙ্গে আসছে, আহ, ভ্যানর ভ্যানর করো না তো, কোটা শেষ তো কি হয়েছে, নতুন বিভাগ তৈরি করো। গরু মন্ত্রী, গাধা মন্ত্রী যে কোনো মন্ত্রী বানিয়ে দাও। বাট ডোন্ট ডিষ্টার্ব মি।

রাত একটা। রাজার চোখ লেগেছে মাত্র, বাইরে প্রচন্ড শোরগোলে রাজপ্রাসাদ কেঁপে উঠছে। রাজার মেজাজ এখন ফোর্টি নাইনের জায়গা নাইন্টি ফোর। গলার রগ ফুলিয়ে চেচাঁলেন: প্রধানমন্ত্রী!
প্রধানমন্ত্রী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। বিরক্তি চেপে বললেন: এখন আর দল-টল নাই, দেশের সব লোক পিলপিল করে রাজপ্রাসাদে আসছে।
রাজা রক্তচক্ষু মেলে প্রধানমন্ত্রীকে ভষ্ম করে দিতে চাইলেন, ব্যর্থ হয়ে বললেন, প্রয়োজন হলে দেশের সবাইকে মন্ত্রী বানিয়ে দাও। যাও, এবার দূর হও আমার সামনে থেকে।

শেষ প্রহরে রাজাকে ডেকে তোলা হলো। দেশের সবাইকে মন্ত্রী করা হয়েছে। এখন আর কেউ প্রজা নেই। দুঃখের বিষয় রাজবিরোধী কার্যক্রম আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

সকালে কথা হবে, এ কথা বলে রাজা সবাইকে বিদায় করে দিলেন। সকালে নতুন রাজাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না।
*কার্টুনঋণ: শিশির (তাঁর আইডিয়ার ছাপ আছে)।

Tuesday, June 2, 2009

বাতাস বিক্রি।

এইবার ভাবছি, নতুন একটা ব্যবসা ধরব। বেঁচে-থাকার কিছু একটা না-করলে চলছে না আর, বুঝলেন। মুশকিল হচ্ছে, সবারই যখন একটা করে ক্যারিয়ার আছে তখন আমার হাতে কেবল টিফিন-ক্যারিয়ার! খানিকটা লেখার চেষ্টা ব্যতীত আর কিছুই যে আমি পারি না গো! শালার একটা দেশ, এ দেশে লেখালেখি করে বী..পাত করা চলে, দিনপাত না।

ব্যবসার জন্য কিছু একটা তো বিক্রি করতে হবে। আগেরবার মাটি বিক্রি [১] করতে গিয়ে ব্যবসা ফ্লপ করেছিল। আরে বাবা, দেশের মাটি কোথায় যে মাটি বিক্রি করব! একবার হাসিনা বলেন খালেদা বিক্রি করে দিয়েছেন আরেকবার খালেদা বলেন হাসিনা। কার কথা সত্য এটা আপনাদের বলতে পারছি না কারণ দুজনই সত্য বলেন।

এবার বাতাস বিক্রি করব। আহা, না শুনেই চোখ কপালে তুলে উড়িয়ে দেবেন না। ধরুন, আপনার আসল বাড়ি ছিল তিতাসের পাড়ে। আপনি এখন শেকড়-টেকড় কেটে ঢাকায় ঝাঁ চকচকে কংক্রিটের বস্তিতে থাকেন। আহা, রাগ করছেন কেন! আমি আবার কখন বললাম, আপনি বস্তিবাসী। বলেছি কংক্রিটের বস্তির কথা...।
তো, আপনার প্রাণপাখি কিচিরমিচির করে সেই তিতাসের পাড়ে। হুহু করে বয়ে যাওয়া তিতাসের একটু বাতাসের জন্য আপনার বুক কেমন কেমন করে। এখানেই হচ্ছে আমার ব্যবসার মূল রহস্য। আমি বোতলে করে আপনার কাছে পৌঁছে দেব আপনার, কেবল আপনারই তিতাসের বাতাস।

আমি মানসচক্ষে দেখতে পাচ্ছি, আপনার অট্টহাসিতে আমার মনিটরের পর্দা কেঁপে উঠল। আপনার মনের কথাটাও অবলীলায় পড়তে পারি, ব্যাটা চালবাজ, এসেছে বোকা বানাতে। তিতাস-ফিতাস কিসসু না, ব্যাটা ঢাকায় বসেই ঢাকার দুষিত বাতাস ধরিয়ে দেবে! চাল্লু একটা! আপনি গোঁফে তা দিচ্ছেন কেমন করে আমাকে হাতেনাতে ধরবেন এটা ভেবে।

আরে না-না, ব্যবসায় সততা বলে একটা কথা আছে না? বলেছি যখন বলেছি, তিতাসের বাতাস মানে তিতাসের বাতাস। নট নড়নচড়ন! ব্যবসার সিক্রেট বলে জনে জনে বলতে পারছি না। কাছে আসেন। কেবল আপনাকেই বলি। তিতাসের পাড়ে যাওয়ার পূর্বে বোতলভর্তি পানি নিয়ে যাব। ওখানে গিয়ে বোতলের পানিসব ফেলে দেব। পানি বেরুবে আর বাতাস ঢুকবে।
ছাড়াছাড়ি নাই- সুড়সুড় করে ওখানকার বাতাস বাবাজি বোতলে প্রবেশ করিতে বাধ্য হইবে। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে বোতলের ছিপি শক্ত করে এঁটে দেব। কংক্রিটের বস্তিতে, আপনার যখন দমবন্ধ লাগবে তখন জাস্ট ছিপিটা খুলে জোরে বুক ভরে শ্বাস নিলেন। রিচার্জ- ওম, ওম শান্তি।

কী, এবার বিশ্বাস হল তো, আমার ব্যবসায় কোন ছলচাতুরি নাই। বিশুদ্ধ তিতাসের বাতাসের মতই বিশুদ্ধ ব্যবসা। কোনো ফাঁকিবাজি নাই। টলটলে পানির মত ব্যবসা। আহা, যদি দাউদ হায়দারের কাছে তাঁর জন্মস্থান আরিফপুর-দোহারপাড়া গ্রামের [২] বাতাস বিক্রি করতে পারতাম।

যেমন ধরা যাক, আমার জন্মস্হান Akhaura নামের একটা জায়গায়। এখানকার কতশত স্মৃতি। কে জানে, প্রবাসে কোথাও আটকা পড়ব, শেষ শ্বাস আটকে থাকবে Akhaura নামের জায়গাটার জন্য। কী কষ্ট-কী কষ্ট! তখন তিতাসের বাতাসভর্তি Akhaura- র ক্যানটা থাকলে, ব্যস। কেউ একজন ছিপিটা খুলে আমার নাকের কাছে ধরবে। দুচোখে নেমে আসবে না-ভাঙ্গা ঘুম। কে জানে, মৃত্যুযন্ত্রণা নামের অসহ্য কষ্ট বোধটা হারিয়ে যাবে। পারিজাত এক প্রশান্তি নিয়ে অন্য ভুবনে যাত্রা। তখন চারপাশের লোকজনেরা কে কাঁদল, কে কাঁদল না তাতে আমার কী আসে যায়! আমার যে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে, ঘু-ম-ম...।


সহায়ক সূত্র:
১. মাটি বিক্রি...: http://www.ali-mahmed.com/2009/02/blog-post_15.html 
২. দাউদ হায়দার: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_20.html