Search

Monday, March 30, 2009

শিশু-পশুটার মুখোমুখি

মুহম্মদ জাফর ইকবাল 'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস'-এ যুদ্ধের গ্লানি পর্বে উল্লেখ করেছেন, "...মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে বসবাসকারী বিহারীরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে থেকে এক ধরনের অমানুষিক নৃশংসতায় বাঙালীদের নির্যাতন নিপীড়ন আর হত্যাকান্ডে অংশ নিয়েছিল। তাদের নৃশংসতার জবাবে মুক্তিযুদ্ধের আগে, পরে এবং চলাকালে অনেক বিহারীকে হত্যা করা হয়, যার ভেতরে অনেকেই ছিল নারী, শিশু কিংবা নিরপরাধ..."।

জাফর ইকবালকে আমি আবারও কুর্নিশ করি, আমাদের এই অন্ধকার দিকটা তুলে ধরার জন্য। আমরা এই বিষয়গুলো ঠান্ডা মাথায়, সযতনে এড়িয়ে চলি। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে আলোচনা, জানাটা অপরাধ না। এটা জ্ঞান। অন্ধকারকে বিস্মৃত হওয়া মানে হচ্ছে ক্রমশ আপাদমস্তক অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গেলে একাধারে হওয়া প্রয়োজন নির্মোহ। ভাবনাটা নির্মেদ। একজন নিরাসক্ত দৃষ্টিতে ইতিহাস লিখবেন, আবেগে ছাপাছাপি হলেই সেটা আর যাই হোক ইতিহাস থাকে না, এক ধরনের ফিকশন হয়ে উঠে। সত্যর গর্ভে ফিকশনের জন্ম! এতে কেবল প্রজন্মকে দিকভ্রষ্টই করা হয়।
এ অন্যায়, ঘোর অন্যায়!




ইতিহাস লিখলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে আমাদের দ্বারা যেসব অন্যায় হয়েছে সেসবও আসতে হবে বৈকি, নইলে তা হবে বিকলাঙ্গ একটা ইতিহাস! ইতিহাসে আবেগ মেশালে সেটা আর যাই হোক ইতিহাস থাকে না।
কোন পরিস্থিতিতে এই অন্যায়গুলো হয়েছিল সেই তর্ক এখন না-হয় নাই করলাম। কিন্তু এই অন্যায়গুলোকে প্রশ্রয় দেয়ার মানে হচ্ছে নিজে একজন অন্যায়ের প্রশিষ্য হওয়া। নইলে পাকসেনার নৃশংসতাকে আমরা ছাড়িয়ে যাব।
বা লেন্দু উপজাতি আর আমাদের মধ্যে খুব একটা তফাৎ থাকবে না। লে
ন্দুদের নিয়ে বিস্তারিত বলি না, বীর জাতি কিন্তু...। কেবল ২টা ছবি দেখে সহজেই অনুমেয়। লেন্দু উপজাতিদের যুদ্ধের নমুনা: যে ২টা ছবি দিচ্ছি এগুলো দুর্বলচিত্ত কারও না দেখাই ভাল। বারণ করি। সতর্কতার জন্য ছবিগুলো পোস্টের একেবারে নীচে দিচ্ছি।

একটা ওয়েব-সাইটে লেখালেখি করার সময়ে বিহারীদের নিয়ে একটা পোস্ট দিয়ে তোপের মুখে পড়েছিলাম। প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র, অতিরিক্ত তীব্র। কেউ কেউ ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আমি একটা রাজাকার। এই হয়েছে এক বিপদ, দুম করে কাউকে রাজাকার বলে দেয়া- বয়সটা রাজাকার হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ কিনা এসব নিয়ে মাথা ঘামাবার আবশ্যকতাও নাই! এবং এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ- তাঁদের বিনীত ভঙ্গিতে বলি, ইচ্ছা হলেই কাউকে রাজাকার বলা যায় না।

বিহারীদের মধ্যে অনেকে এই দেশের পক্ষে ছিলেন, যুদ্ধ করেছেন এমন উদাহরণের অভাব নাই। এখানে উল্লেখ করা যায়, বিহারী, বীর প্রতীক সৈয়দ খানের কথা। তার ভাষায়, 'এই দেশকে হামি কবুল করিয়ে লিয়েছি'। এই মানুষটার কথা এই দেশ মনে রাখেনি। তাঁকে ন্যূনতম অধিকারের ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ এই মানুষটিকে তাঁর পরিবারের সবাই ফেলে চলে গেছে কিন্তু তিনি এই দেশের মায়া কাটাতে পারেনি! কচ্ছপের মতো এখনও এই দেশের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন!

আবেগ থাকা ভাল কিন্তু এতটা না যেটা মানুষকে অন্ধ বানিয়ে দেয়! এই রকম অন্ধ হলেই সম্ভবত এমনটা বলা যায়! অনেককে বলতে শুনি, একজন মুক্তিযোদ্ধা কখনও অন্যায় করতে পারেন না। তার মানে কী, মুক্তিযোদ্ধাদের কী আসমানি মানুষ বানিয়ে দেয়া হচ্ছে? মুক্তিযুদ্ধকে আর যাই হোক আসমানি কিতাব বানাবেন না,
মুক্তিযোদ্ধাদের আসমানি মানুষ। দয়া করে আমাদের এই প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়তে দিন, বুঝতে দিন, বুকে আগলে রাখতে দিন, আবেগে থরথর করে কাঁপতে দিন।

*ভিডিও ক্লিপিং, কৃতজ্ঞতা: nbc news




*ছবিঋণ: কঙ্গো, নরখাদক ও পিগমিদের দেশে। মেজর মো: হাবিবুল করিম

Sunday, March 29, 2009

ক্ষমা প্রার্থনা, কিন্তুটা কিন্তু রয়েই যায়।

এই পোস্টটা পড়ে আমার এক সুহৃদ ফোন করে, আমার যে অল্প ঘিলু আছে তা বের করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। আমার ধারণা, ফোন রেখে দিলেও আমি তাঁর কথা স্পষ্ট শুনতে পেতাম! তাঁর আপত্তিটা হচ্ছে, কেন আমি গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী লিখলাম? তিনি গড়গড় করে বকে গেলেন ওই অনুষ্ঠানে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন।
এর প্রয়োজন ছিল না আদৌ, ফটাফট ফটো তোলার কল্যাণে আমাদের না জেনে উপায় আছে? আমি নিজেও অনেকখানি বিব্রত ছিলাম কারণ এখানে আমার অসম্ভব পছন্দের ২জন মানুষ ছিলেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বেশ! কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো এঁরা কেউ কেন বইটার দাম নিয়ে আপত্তি তুললেন না।

আমি মনে করি, এই অনুষ্ঠানটা শেরাটনে না করে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন টাইপের কোথাও করলে আকাশ ভেঙ্গে বজ্র নেমে আসত না। বরঞ্চ এই প্রজন্মের সাধারণরা স্বস্তি বোধ করত। বইটার দাম ১০০ টাকা রাখা কোন বিষয়ই ছিল না। আরও আকর্ষনীয় করা যেত, যারা যারা অনুষ্ঠান থেকে বইটা কিনবে তাদের জন্য বিশেষ ছাড়, এরা ৫০ টাকায় কিনতে পারবে। এমন কত অভিনবত্বই না আনা যেত এই প্রজন্মের হাতে হাত রাখার সদিচ্ছায়।

অবশ্য এইসব প্রকাশনা যদি বৈদেশি মহোদয়দের তালুতে চুমু খাওয়ার জন্য হয়, তাহলে ঠিক আছে। বা নব্য ধনিদের শো-কেসে শোভা বাড়াবার জন্য? অথবা আসমানি কিতাবের মত মখমলের কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে তাকে রেখে দেয়া। কালেভদ্রে নামিয়ে সশ্রদ্ধ চুম্বন করা। তাহলে ঠিকই আছে।

জয়তু, আসমানি মুক্তিযুদ্ধ!

Saturday, March 28, 2009

সাপ এবং বেনিয়া, এদের আচরণ কখনও বদলায় না!

এই দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি মায়া কার, বলুন তো? বেনিয়াদের মধ্যে অন্যতম সেল কোম্পানিগুলোর। এদের চোখের জলে কপাল, কপোল দুই-ই ভিজে যায়! সেল কোম্পানিগুলো আক্ষরিক অর্থে এই দেশকে শুষে ছিবড়ে বানিয়ে দিচ্ছে।
 

আহা, এদের একেকটা বিজ্ঞাপন দেখে স্থির থাকি কেমন করে? কীসব টাচি বিজ্ঞাপন! 'কাছাকাছি থাকুন' কাছা খুলে। এতে কাছা খুলে কেউ নগ্ন হলে কী আসে যায! চিকন-চিকন পায়ের মাঝে ঝুলে আছে বিষয়টা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন না, এই যা।
ডিজুস, ফান-ডোজ টাইপের অফারগুলো আমাদের কতটা অসভ্য করে তুলছে এর খোঁজ রাখার কী দায় আমাদের! যেখানে কাছা খুলে নগ্ন পশ্চাদদেশ দৃশ্যমান সেখানে এইসব নিয়ে ভাবার অবকাশই বা কই! উদ্ভটসব অফার, এই প্রজন্ম এখন রাত জেগে বিজবিজ করে কথায় কথায় রাত ভোর করে দেয়। মধ্যরাতে অনুমান করে নাম্বার টিপে টিপে অজ্ঞাত কাউকে অনবরত ফোন করা, 'বাই, এইডা কুন জাগা'? দিনে রোগা মুরগির মত ঝিমানো। এইসব নাকি বন্ধুত্ব বাড়াবার চেষ্টা।

এদের সঙ্গে যোগ দেয় আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মিডিয়া- এরা ভাল পয়সা পেলে নিজ মাকেও বিক্রি করে দেবে, আই বেট। গ্রামীন ফোনের শাহেদের করা ললিপপ চোষার বিজ্ঞাপন, ডানোর ছাতা নিয়ে লাফিয়ে পড়ার বিজ্ঞাপন দেখে এ নিয়ে সন্দেহের আর অবকাশ থাকে না।

সম্প্রতি গ্রামীন ফোন এবং প্রথম আলোর উদ্যেগে 'একাত্তরের চিঠি' সংকলন করে বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ মোড়ক উম্মোচনের দিন। সাধু, উদ্যোগটা নি:সন্দেহে, অসাধারণ এতে কোন দ্বিমত নাই। মল খসার মত গ্রামীনের টাকা খসছে এও মন্দের ভাল।
কিন্তু ওই যে শিরোনামে বললাম সাপ আর বেনিয়া...।

এদের উদ্দেশ্যটা আসলে মুক্তিযুদ্ধের আবেগের মোড়কে ধান্দাবাজি। বইটার দাম ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা। অনুষ্ঠানটা হচ্ছে শেরাটন হোটেলের বলরুমে। এই দেশের তাবড়-তাবড় লোকজনরা আসবেন, নানাপ্রকার চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় দ্বারা আপ্যায়িত হবেন, ফটাফট ছবির পর ছবি তোলা হবে,
বেনিয়াদের গৃহপালিত বুদ্ধিজীবীরা আগুনের বাণী বর্ষন করবেন (কিন্তু বইয়ের দাম কম রাখা বিষয়ে টুঁ-শব্দও করবেন না! লাগবেন বাজী?)।
ব্যস, কেল্লাফতে! এই প্রজন্মের আমরা ছলছল চোখে মনিটর ভিজিয়ে ফেলব, আহা, এদের মনে কী মায়া গো!

কিন্তু এই প্রজন্মের, যারা এই বইটা পড়বেন এদের জন্য কী? কচু-ঘেঁচু! আমাকে বলুন, এই দেশে ক-জনের সামর্থ্য আছে ২৫০ টাকা দিয়ে একটা বই কেনার?
এই বইয়ের দাম যেকোন ভাবেই ১০০ টাকার বেশি হওয়াটা অনুচিত। এরা বলবে আমরা রয়েল সাইজ করেছি। রয়েল সাইজ করেন আর মখমল দিয়ে বাঁধান সেটা অন্য কথা।
জাফর ইকবালের মত মানুষ ২২ পৃষ্ঠার বই ১০ টাকায় বিক্রি করতে পারলে প্রথম আলো ওরফে প্রথমা ১২৭ পৃষ্ঠার বই ২৫০ টাকায় বিক্রি করবে কেন? যেখানে এদের পেছনে আছে গ্রামীন ফোনের বেসুমার টাকা। এদের পক্ষেই সম্ভব ছিল বইটার দাম ৫০ টাকা রেখে একটা সু-উদাহরণ সৃষ্টি করা।

শেরাটনে না করে জাদুঘর মিলনায়তন টাইপের কোথাও করলে কেউ এদের প্রতি রে রে করে তেড়ে আসত বলে মনে হয় না। এই প্রজন্মের জন্য উম্মুক্ত রাখা যেত এই অনুষ্ঠান এবং সঙ্গে একটা ঘোষণা, যারা অনুষ্ঠানে আসবেন তারা ৫০ টাকার বিনিময়ে এই বইটা ক্রয় করতে পারবেন।

জাস্ট একটু খোঁজ নিলেই জানা যাবে এই বইটা বের করার পেছনে কী বিপুল টাকাই না খরচ হয়েছে। আমার ধারণা, সঠিক অংকটা জানা গেলে অনেকে ভিমরি খেয়ে জ্ঞান হারাবেন। অথচ বইটা দাম সাধারণের নাগালে রাখার কোন ভাবনা-দায় এদের নাই।
ওই যে বললাম,
বেনিয়ার ধান্দাবাজি-চালবাজি। খাসলত কোথায় যাবে? সাপ এবং বেনিয়া, এদের বড় কষ্ট- এরা ইচ্ছা করলেই নিজেদের বদলাতে পারে না।

পরিশেষে এও জানতে খুব ইচ্ছা করে, এই চিঠিগুলোর মালিকদের জন্য কি করা হবে? এই চিঠিগুলোর মালিক এখন কে? আর এইসব ব্যাক্তিগত চিঠি জনসমক্ষে প্রকাশ করাটাই বা কতটুকু সমীচীন? এইসব ফাজলামি না করলে ব্যবসাটা খুব একটা ভালো জমছিল না, না?

Friday, March 27, 2009

কুর্নিশ করি, হে স্বপ্নবাজ!

লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাঁর কিছু বিষয়ে আমার মতের মিল নাই, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। তদুপরি মানুষটা আমার অসম্ভব পছন্দের। আগেও লিখেছিলাম, এই পোড়া দেশে আমার অসম্ভব পছন্দের অল্প যে ক-জন মানুষ, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

মানুষটা একজন স্বপ্নবাজ! এমন স্বপ্নবাজ মানুষের এ দেশে বড় আকাল! এমন স্বপ্নবাজরাই পারেন নিজে এমন একটা স্বপ্ন দেখতে, আমাদেরকে দেখাতে।

একি চাট্টিখানি কথা, একটা বইয়ের ৮ কোটি সংখ্যা ছাপাবার কল্পনা করা! অন্য কেউ হলে আমার অট্টহাসিতে মনিটরের পর্দা কেঁপে উঠত। কিন্তু এই মানুষটা কেবল কল্পনাই করেননি বাস্তবায়িত করার বাস্তবতাও ভেবেছেন। হয়তো ৮ কোটি অতিশয়োক্তি কিন্তু এমন স্বপ্ন না দেখলে স্বপ্নের কাছাকাছি যাওয়া যাবে কেমন করে? ইতিমধ্যে বইটার ২ লক্ষ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। বাজারে এখনও বিপুল চাহিদা! তিনি আরেকটা অসাধারণ কাজ করেছেন ইংরাজিতে অনুবাদ করে। আমার জানামতে, বিদেশিদেরও দুর্নিবার আগ্রহ আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে জানার।

তিনি 'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' বইটা ১ ফর্মায় নিয়ে এসেছেন, দামটা একেবারেই হাতের নাগালে। ১০ টাকা! একটা শিশু-কিশোরও তার টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে অনায়াসে কিনতে পারবে। যে কখনও বই কেনেনি সেও কৌতুহলের বশে চট করে কিনে ফেলবে।
আমার অভিজ্ঞতা বলে লোকজন বই পড়ে না কিন্তু পড়ে। লিফলেট, চটি-ক্ষীণবপু টাইপের জিনিসগুলো আগ্রহের সঙ্গে পড়ে।

'ফিডম' বইয়ে (২০০৬)লিখেছিলাম:
"...তোমরা লেখকরাও কম জ্ঞানপাপি না। তুমি দেখবে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বইপত্রের অসম্ভব দাম। সাধারণ পাঠক যে পড়বে তার যো নেই।
প্রকাশক হয়তো বলতে পারেন, আমরা তো আর আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে পারব না। এরা ব্যবসায়ি, এদের দোষ দেই না। কিন্তু কারও কোন চেষ্টা নাই!
একজন অসম্ভব জনপ্রিয় লেখকের (
হুমায়ূন আহমেদ) মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা বই আছে। তাঁর কথামতে, আমাদের জানামতে, এই বই প্রকাশের বহু বছর পূর্ব থেকেই তিনি বিস্তর কান্নাকাটি করে আসছিলেন। এমনকি, মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের ওটিতে যাওয়ার পূর্বে ট্রলিতে উপুড় হয়েও চিঁ চিঁ করছিলেন, তাঁর ইচ্ছানুযায়ী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইটা না-লিখে মরে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। কিছুতেই শেষ শ্বাস ত্যাগ করবেন না।
মোড়ক উম্মোচনের দিনও তিনি খুব করে কাঁদলেন, আবেগাক্রান্ত কথা বললেন। অথচ বইটার দাম ৪০০ টাকা।
তুমিই বলো, এই দেশে ক-জন ৪০০ টাকা দিয়ে একাটা বই কিনতে পারে? অথচ এই দেশেই এই লেখক লেখালেখি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। তাঁর কী কোন দায় নেই? ইচ্ছা করলে তিনি কী পারতেন না, অন্তত সাবসিডি দিয়ে বইটার দাম ১৫০/২০০ টাকা রাখতে?
পত্রিকায় আমি পড়েছি, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া অনেকে বইটা কিনতে পারেনি। এক মেয়ে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে ছলছল চোখে চলে গেছে...।"


বিপুল আগ্রহ থাকার পরও বইটা আমি নিজেই কিনতে পারিনি। ঢাকা আসা-যাওয়াতেই একগাদা টাকা খরচ, তারপর ৪০০ টাকা আলাদা করে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে বৈকি। এমনিতেও ৪০০ টাকার বইটা কেউ কিনলেও তা পড়ার জন্য ধার দিতে চাইবে না। আমিই কী দিতাম?

'ফ্রিডম' বইটা এই প্রজন্মের চোখে মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা। বইটা প্রকাশের পূর্বে প্রকাশকের সঙ্গে আমার মৃদু বাদানুবাদ হয়েছিল। অখ্যাত লেখকদের জন্য এটা খুবই ঝুকিপূর্ণ কাজ! অখ্যাত লেখকদের কাছে প্রকাশক হচ্ছেন দ্বিতীয় ঈশ্বর- ঈশ্বরগোছের কারও সঙ্গে অনুবাদ নিয়ে কথা চলে, বাদানুবাদ চলে না।
তিনি চাচ্ছিলেন, ৪ ফর্মার এই বইটার দাম নিদেনপক্ষে ১০০ টাকা রাখতে। ১০০ টাকার নিচে মুক্তিযুদ্ধের কোন বইয়ের দাম নাকি রাখা হয় না! মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের দাম কম হলে গুরুত্বও নাকি কমে যায়। তাছাড়া তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, মুক্তিযুদ্ধের বই চলে কম, এটা তো প্রেমের উপন্যাস না। কঠিন যুক্তি। না-মেনে উপায় কী তবুও অনেক কস্তাকস্তি করে ৪ ফর্মার এই বইটার দাম ৬০ টাকায় রাখতে প্রকাশককে সম্মত করালাম এই শর্তে, তাঁর আর্থিক ক্ষতি হলে এর দায় আমি নেব। ভাগ্যিস, পাঠকের অযাচিত ভালবাসায় এই দায় আমাকে নিতে হয়নি।

একজন বুদ্ধিজীবীর কথা আজও বিস্মৃত হইনি। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত বই-পত্রের উচ্চমূল্য কেন, সাধারণ পাঠক কেমন করে পড়বে?
তিনি মুখ লম্বা করে আলাদা গাম্ভির্য এনে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বইপত্র তো খেলার বিষয় না, গবেষণার বিষয়।
বেশ যাহোক, তাহলে এটাকে কী আমরা ক্রমশ আসমানি কিতাবের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। কাপড় মুড়িয়ে উঁচুতে তুলে রাখব। পড়ার প্রয়োজন নাই,কালেভদ্রে নামিয়ে ধুলো মুছে চুমু খাব?

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমি অসংখ্য পোস্ট দিয়েছি, অবশ্য অনেক লেখা প্রকাশ হওয়ার কারণে অনেক পোস্ট মুছে ফেলা হয়েছিল তদুপরি এখনও পোস্টের সংখ্যা নেহায়েত কম না। তো, ছাপোষা আমি, লিখতে গিয়ে বড়ো অসহায় বোধ করতাম কারণ প্রয়োজনীয় বইগুলোর এমন আগুন-দাম হাতই দেয়া যেত না। তখন ওয়েবে তথ্যের এমন ছড়াছড়ি ছিল না। পত্রিকা অফিসেও চাকুরি করি না যে হাতের নাগালে প্রয়োজনীয় বই চলে আসবে। থাকি এমন একটা জায়গায় যেখানে একটা পাবলিক লাইব্রেরি পর্যন্ত নাই। বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বইপত্রের হাজার-হাজার পৃষ্ঠা ফটোকপি করেছি, ১৫ হাজার পৃষ্ঠা! এটাকে কী চৌর্যবৃত্তি বলা চলে, তাহলে আমি একটা আস্ত চোর!

যাগ গে, মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত বইয়ের দাম নিয়ে আমার যে তীব্র ক্ষোভ ছিল, জাফর ইকবালের কল্যাণে তা অনেকখানি প্রশমিত হল।

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের একটা চমত্কার কবিতা আছে:
"পৃথিবীর সব মানুষ স্বাধীন না।
সব স্বাধীন মানুষ আবার সমান স্বাধীন না।"
তাঁর কবিতার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলি,
"পৃথিবীর সব মানুষ স্বপ্নবাজ না।
সব স্বপ্নবাজ আবার জাফর ইকবালের সমান স্বপ্নবাজ না।"
এই প্রজন্ম চট করে কাউকে কুর্নিশ করে না। কিন্তু এমন স্বপ্নবাজকে কুর্নিশ না করে উপায় কী! কুর্নিশ করি হে স্বপ্নবাজ।

*ছবিসূত্র: অজ্ঞাত (গুগল থেকে নেয়া)।
**'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' ডাউনলোড করা যাবে এখান থেকে: http://www.liberationwarbd.org/

Saturday, March 21, 2009

বিজ্ঞাপনতরঙ্গ-লেখকরঙ্গ!


 

এই বঙ্গাল দেশে বই ছাপা হয়নি এমন অ-লেখকদের লেখালেখির তেমন গুরুত্ব নাই। বই প্রকাশ না হলে লেখক হওয়ারও যো নাই।
বই প্রকাশের কর্মকান্ডটা আবার ফ্রেবুয়ারির একুশের বইমেলাকে ঘিরে।

লেখক লিখেই খালাস। বই ছাপা-নাড়াচাড়া করেন প্রকাশক মহেদয়গণ। প্রকাশক, এঁরা নাড়েন বলেই একজন নড়ে, এঁরা নাড়ানাড়ি করেন বলেই একজন ক্রমশ লেখক হয়ে উঠে।


রনজিৎ দাসের কবিতার ভাষায় বলতে হয়,
"...শুঁয়োপোকাটির সঙ্গে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি, ঠিক তারই মত
স্থূল ও মন্থর, ও পাখিদের খাদ্য হয়ে, আত্মবিষসহ
যদি তার মতো কোনো অবিশ্বাস্য রূপান্তর পেয়ে যাই শুধু এই লোভে..."। 


একজন অ-লেখক, অ-লেখক থেকে লেখক হওয়ার অবিশ্বাস্য রূপান্তর পাওয়ার লোভে এগিয়ে যান অমর্যাদাসহ, নির্বোধের কাছে।

বইয়ের বিজ্ঞাপন, এটা এক জটিল বিষয়। কখনও কখনও আমি ধন্ধে পড়ে যাই। এক বইমেলায়, এই দেশের ১নং জনপ্রিয় এক লেখকের একটা বইয়ের বিজ্ঞাপন গেল পত্রিকায়, "প্রথম মুদ্রণ শেষ, দ্বিতীয় মুদ্রণের কাজ চলছে"। অসম্ভব জনপ্রিয় এই লেখকের জন্য এটা বিচিত্র কিছু না কিন্তু ওই পত্রিকা পড়েই আমরা জানলাম ওই বই সেদিন পর্যন্ত মেলায় আসেনি। সাংবাদিক বেচারার চাকুরি যায় যায় অবস্থা কারণ ওই লেখকের দবদবার শেষ নাই, তিনি পত্রিকা অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।
এই নিয়ে কেউ কেউ হাসি গোপন করেছিলেন। হাসাহাসির কিছু ছিল না। এমনটি কী হতে পারে না ছাপাখানা থেকে মেলা পর্যন্ত আসতে আসতে বইয়ের সমস্ত কপি নিঃশেষিত। কেন রে বাপু, রাস্তায় ফুল বিক্রি হতে পারলে বই বিক্রি হতে দোষ কী?

যেসব লেখক মর্যাদাবান, জনপ্রিয় এঁরা তাঁদের বইয়ের বিজ্ঞাপন নিজে দেয়ার কথা ভাবনায়ও আনেন না। কিন্তু বিজ্ঞাপন তো যেতে হবে। বিজ্ঞাপন না দেয়া আর অন্ধকারে কোন রূপসী-খুবসুরাত নারির প্রতি মোহনীয় ভঙ্গিতে হাসার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।

জনপ্রিয় লেখকদের বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রকাশক মহোদয়ই দেন। উত্কট সমস্যা দেখা দেয়, যখন একই লেখকের কয়েকটি বই প্রকাশিত হয় বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে, তখন। তখন প্রকাশকেরা তাদের খরচ বাঁচাবার জন্য যৌথ চেষ্টায় একই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। বিষয়টা বলা যত সহজ কাজটা
কিন্তু খুবই কঠিন।
ওই লেখকের বিজ্ঞাপন ছাপা নিয়ে প্রকাশকদের মধ্যে বিস্তর ফোন, মেইল, চিঠি চালাচালি হয়। তারপর তারা বিজ্ঞাপন প্রকাশের জন্য উম্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেন। বিভিন্ন পত্রিকা ওই দরপত্রে অংশগ্রহন করে। এখানে আবার প্রকাশকরা সূক্ষ কারচুপির আশ্রয় নেন। যে পত্রিকার দর সর্বনিম্ন সে কিন্তু কাজ পায় না। বেছে বেছে ওই পত্রিকাকে কাজ দেয়া হয় যাদের অফিস সেন্ট্রাল এসি, নিদেনপক্ষে কনফারেন্স রুমটা এসি।
কেন? বলছি।

কনফারেন্স রুমে গোলটেবিল আলোচনায় বসেন প্রকাশকবৃন্দ। ওই পত্রিকার সরবরাহকৃত নানাপ্রকার চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় দ্বারা আপ্যায়িত হয়ে আলোচনা শুরু করেন। ধরা যাক, প্রকাশকদের মধ্যে আছেন, ৭ জন। স্থির হলো, এরা ১ কলাম ৮ ইঞ্চি বিজ্ঞাপন দেবেন ওই পত্রিকায়। বিজ্ঞাপন খরচ আসবে কমিশন-টমিশন বাদ দিয়ে ৭ হাজার টাকা। মাথাপিছু ১ হাজার করে। এদের কত্তো টাকা বেঁচে গেল!

গোল বাঁধবে লেখকের ছবি নিয়ে, কোন ছবিটা যাবে? যেটায় চোখ ঢুলুঢুলু সেটা, নাকি যেটায় চোখ ঝকঝকে, ওইটা? নাকি...? কোন ছবিটা যাবে এটা নিয়ে লটারি হবে। এখানেও সূক্ষ কারচুপি (এটা বঙ্গালদেশে নাহক কিন্তু গা সওয়া একটা বিষয়)। এক প্রকাশকের আবার ঢুলুঢুলু-ঝকঝকে চোখের কোন ছবিটাই পছন্দ না, তার পছন্দ অন্যটা। যেটায় হাসিটা নাগরালি- মোনালিসা টাইপের, সেটা।
তিনি আবার প্রকাশক হিসাবে অন্যদের চেয়ে খানিকটা কম আলোচিত তাই দায়ে পড়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া। নাম লেখার দায়িত্বে তিনি ছিলেন বিধায় সবার অলক্ষ্যে লটারির ৭ জনের জায়গায় প্রত্যেকটাতেই নিজের নাম লিখে রাখলেন।


লটারির কাগজ টানার জন্য সম্পাদক সাহেবকে ডেকে আনা হলো (তিনি তখন আবার জরুরি মিটিং-এ সেনানিবাসে ছিলেন জেনারেলদের সঙ্গে)। তিনি ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে বিমলানন্দে যে কাগজটি উঠালেন সেটায় ওই প্রকাশকেরই নাম লেখা। পত্রিকায় পুরুষ মোনালিসা মার্কা ছবির বিজ্ঞাপনটাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো।
এই বিজ্ঞাপনে কোন প্রকাশকের বই আগে থাকবে কারটা পরে এই নিয়েও ঘন্ট-জট বাঁধল। পত্রিকা অফিস থেকে 'চিন্তাজট' নামের এক ধাঁধার মাধ্যমে এই সমস্যারও সমাধান হলো। ফাঁকতালে পত্রিকাটি পরদিনের চিন্তাজটের আইডিয়াটাও এখান থেকে পেয়ে গেল।

যাইহোক, তখনও পত্রিকা অফিস ছেড়ে কিন্তু প্রকাশকরা যাননি। বিজ্ঞাপনটা যেন প্রথমেই চোখে পড়ে (এর আবার অনেক কায়দা-কানুন আছে। পাঠক পত্রিকাটা হাতে নিলে পত্রিকার ভাঁজ কোন দিকে থাকবে এটাও সরু চোখে লক্ষ রাখা হয়) এমন একটা জায়গায় ছাপাবার জন্য পেস্টিং পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। রাত গড়ায়। গভীর রাতে প্রকাশকরা বাড়ি ফিরে তৃপ্তির নি:শ্বাস ফেলে ঘুমাতে যান, ছিনতাইকারিদের চোখ এড়িয়ে।

জনপ্রিয় লেখকদের বই ছাপাবার অনেক হ্যাপা সহ্য করতে হয় বেচারা প্রকাশকদের...।
 

*ছবি সূত্র: প্রথম আলো
** পোস্টের ছবিটার তেমন গুরুত্ব নাই। উদাহরণের জন্য নেয়া।

Friday, March 20, 2009

মমতায় ছাপাছাপি নিষ্প্রভ চোখ।

 
­আমরা যারা দেশে থাকি, আমাদের অনেকের বদ্ধমূল ধারণা থাকে, যারা প্রবাসে থাকেন তাঁদের চেয়ে সুখি আর কেউ এ গ্রহে নাই! আমরা মুখ ফুটে বলি না কিন্তু মনে গোপন ইচ্ছা লালন করি, এঁরা যেন আজীবন প্রবাসেই থাকেন। রিয়াল-ডলার-পাউন্ড হালের ইউরো স্রোতের মত দেশে পাঠাতে থাকবেন। দেশে ফেরার আবশ্যকতা কী!

খোদা না খাস্তা, কেউ যদি বলে বসেন দেশে ফেরার কথা চিন্তা করছি, নিমিষেই আমাদের মুখ শুকিয়ে আসে। আমরা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলা শুরু করি, 'মাথা খারাপ হইছে তোমার। দেশে আইসা কী করবা? এইটা একটা থাকার জায়গা হইলো! তোমাগো দেশের কুত্তা-বিলাইও এই দেশে মুতব না'।
আহ, তোমাগো দেশ...।

আমরা যারা দেশে থাকি, সাদা-সাদা গরম-গরম ভাত দেখে আমাদের গা গুলায়। প্রবাসি একজনের কেবল ধোঁয়াওঠা ভাতের কল্পনা করেই চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। পাগল!
আহা, পানি চলে আসলেই হলো বুঝি, পুরুষ মানুষদের কী কাঁদতে আছে! তাই বলে কী কান্না থামে শা..., ঠিক সময়ে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারাটাই হলো আসল কথা। মরদ বটে একটা!

দেশে মার শরিরের গন্ধে আমাদের দমবন্ধ ভাব হয়। কখনও কখনও অমানুষের মত অস্ফুটে মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, 'তুমি যে কী মা, শরিরে পেয়াজ-রসুনের গন্ধ। ওয়াক'!
মা অজান্তে শ্বাস চাপেন। তাঁর আর্দ্র চোখে আটকে থাকে গোটা সূর্যটা, পলক ফেললেই উপচে পড়বে। তাই কী তিনি পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকেন?

প্রবাসিরা গায়ে কত কিছু মাখেন, সুগন্ধের মৌতাত হপ্তাহ ছাড়িয়ে যায় কিন্তু কী এক বিচিত্র কারণে মার গায়ের গন্ধের জন্য পাগল হয়ে থাকেন। পাগলসব!

একবার এক ঈদে প্রবাসি এক বন্ধুর অর্থহীন মেইল পেলাম, 'খাওয়াতে পারিস এক চামচ সেমাই? আল্লার কসম তোকে ১০০০ হাজার ইউরো দেব'। এ উম্মাদ, বদ্ধউম্মাদ!
দেখো দিকি কান্ড, এ আবার আল্লার কসম খায়। ওরে ব্যাটা শুয়োরখেকো! তুই যে হরদম পর্ক-চপ খাস, গলায় শুয়োর আটকে গেলে গলা ভেজাবার ছলে ভদকা গিলিস এটা বুঝি জানতে বাকি আছে আমাদের?
তবে এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না, আমার চোখ কী খানিকটা চকচক করেনি? ইশরে, ১০০০ ইউরো! এক চামুচ সেমাইয়ের জন্য ১০০০ ইউরো?


মুদ্রার অন্য পিঠ নেই যে এমন না। আমার এক স্বজনকে তার মা একটা কিছু (বলার মত কিছু না, নারকেলের নাড়ু) দেয়ার কথা বলতেই সু-পুত্র হড়বড় করে বলে উঠেন, 'আরে না, দরকার নাই-দরকার নাই'।
তবুও তার মা চিঁ চিঁ করে বলেন, 'না মানে...তোর লাইগা...'।
'আরে, জ্যাকসন হাইটসে সব পাওয়া যায়। সব-সব'।
 

আমি গোপনে শ্বাস ফেলি। মুখে বলি, বিলক্ষণ। আজকাল বাইরের শপিং-মলগুলোয় এইসবও বিক্রি হওয়া শুরু হয়েছে। বেশ-বেশ! কী জানি, হবে হয়তো বা! সব পাওয়া যায়? বাহ, বেশ তো!
এইসব তাহলে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে? বর্ষায় কাগজের নৌকা ভাসানো, হচ্ছে? নিজের হাতে লাগানো সেই গাছটা, পাওয়া যাচ্ছে? পুকুরপাড়ে বসার সেই নোংরা জায়গাটা, অবশেষে এটাও? বাতিল হয়ে যাওয়া সেইসব মুখ, সত্যি?
আহারে, সেই যে মুখটা কেবল অনর্থক বকেই মরত, খোকা এইটা খাস নে, ওইটা খাস নে। রোদে ঘুরতাছিস ক্যান রে, বান্দর! চামড়াডা পুইড়া কেমুন ছালি-ছালি হইছে। তোর শইলের রঙ দেইখা কাউয়াও হাসব। পাগলা, না-খায়া যাস নে কইলাম, গেলে তুই কিন্তুক আমার মাথা খাবি। তুই এমন হইলি ক্যান রে? তুই না, তুই না, তুই একটা পাগলু।


অনেক আগে লেখাটা একটা কম্যুনিটি ব্লগিংসাইটে দিয়েছিলাম [১]। ওখানে তখন শুভ নামে লেখালেখি করতাম, ওখানকার ভাষায় ব্লগিং করতাম। মার কাছে লেখাটায় কারও কারও মন্তব্য পড়ে মনটা বিষণ্ন হয়ে গিয়েছিল। একজন সহ-ব্লগার লিখেছিলেন, "...শুভ, দাঁড়ান, চোখটা মুছে নেই..."।
এটা আসলে লেখার গুণে না। দেশের বাইরে থাকলে মনটা থাকে অসম্ভব তরল। কিন্তু একজন, আলাদা করে মেইল করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, "ওপেন ফোরামে এটা লিখতে চাইনি। বলতে পারেন আমি কার কাছে ফিরব, কেন ফিরব"?
একেকজনের একেক রকম জীবন-গল্প। আমার বলার কিছু ছিল না। এই পোস্টের কিছু ভাবনা তাঁর কাছ থেকে ধার করা। ওই দু:খী মানুষটাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।


*ছবিস্বত্ব: আলী মাহমেদ

সহায়ক সূত্র:
১. মার কাছে ফেরা...: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_9329.html

Wednesday, March 18, 2009

পানি আর জল, কী পার্থক্য!

প্রথম ছবিটা হচ্ছে প্রথম আলোর। ২০০৯ সাল, মার্চের।
দ্বিতীয় ছবিটা হচ্ছে, ভোরের কাগজের। ১৯৯২ সাল, মার্চের।

ইতিমধ্যে ১৭ বছর চলে গেছে। কাগজ হয়েছে চকচকে! পত্রিকার সার্কুলেশনের পাশাপাশি বেড়েছে জেল্লা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খবরের দৈন্যতা!
তত্কালিন ভোরের কাগজ এবং আজকের প্রথম আলোর সম্পাদক মহোদয় একই ব্যক্তি। জনাব মতিউর রহমান। তাই কী ভাবনাটাও একই!
তাই তো, এইসব খবর ছাপিয়ে
পত্রিকায় স্পেস কোথায়!

এই দুইটা ছবিই প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। প্রথম পাতায় ছাপাবার মত খবরই বটে! অবশ্য দুইটার মূল খবর দুই রকম, একটা হচ্ছে অন্যকে অপদস্ত করার জন্য, অন্যটা বৃষ্টির জন্য।
কিন্তু শিরোনাম এবং ঘটনা একই। বিয়েটা ব্যাঙের! ব্যাঙ বিবাহ করেছে। অবশ্য বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। এই যেমন, মোহরানা কত ছিল? ব্যাঙ ভাইয়া কী পরে বিবাহ করেছিলেন, শেরোয়ানি নাকি লুঙ্গি? বাসর রাতে কোন কোম্পানির জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রি ব্যবহার করেছিলেন? বা ব্যাঙ ভাইয়া ব্যাঙানি ভাবিকে বাসররাতে কী বলে সম্বোধন করেছিলেন? ইত্যাদি ইত্যাদি...।
আচ্ছা, বর্ষাকালে যেন বৃষ্টি না হয় এ জন্য আমি সাপের বিবাহ দেব। এই নিউজটা কী মতিউর রহমান ছাপাবেন? শিরোনামটা হবে 'সাপের বিবাহ, যৌতুকবিহীন'...। সম্মতি থাকলে বলেন, সাপ ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলি। যন্ত্রণার কী শেষ আছে, এরপর কথা বলতে হবে মহিলা সাপের সঙ্গে...।

ব্রিটেনের পত্রিকা 'দি সান'। ৯২ সালেই এর প্রচারসংখ্যা ছিল ৩৫ লক্ষ। এই পত্রিকাটি এক অভিনব সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এক মেধাবি গ্রাজুয়েটকে ১ দিনের জন্য ওই পত্রিকার সম্পাদক বানানো হয়েছিল। ওইদিন ১ দিনের সম্পাদকের নির্দেশনায় পত্রিকাটি বের হয়। 'দি সান' পত্রিকার স্বত্বাধিকারি প্রতিষ্ঠান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের একজন নির্বাহি গাস ফিশার বলেছিলেন, 'দি সানের বার্তাকক্ষে নতুন সম্পাদকের ভাবনা, দক্ষতা থেকে আমরা শিখতে চাইছি'।

দি সানের মত আমাদের মতিউর রহমান সাহেবও এমন একটা পদ্ধতি প্রয়োগ করে শিখতে চাইতে পারেন। তবে তিনি যদি পণ করে থাকেন, তাঁর শেখার আর কিছু নাই তাহলে আমাদেরও বলার কিছু নাই।
এরা এখন সব বদলে দেয়ার পণ করেছেন। জনে-জনে ক্ষণে-ক্ষণে শপথ করাচ্ছেন। কিন্তু নিজেদের শপথের কথা ভুলেও উচ্চারণ করছেন না। এদের ধারণা এদের সম্ভবত বদলাবার কিছু নাই- সরাসরি আকাশ থেকে নেবে এসেছেন! বদলে দেয়ার কথা বলে যত কস্তাকস্তি করা হোক কেউ কেউ কখনও বদলায় না। বদলাতে পারে না! আসলে কারও কারও বদলাবার সদিচ্ছাটাই থাকে না!

Sunday, March 15, 2009

ছাগলের সঙ্গে রশি ফ্রি- আগুনের সঙ্গে শো ফ্রি!

৩০০ যাত্রি নিয়ে লঞ্চ ডুবে গেছে। সরকার বাহাদুরের পক্ষে তখনকার নৌ পরিবহন মন্ত্রী বাহাদুর ঘোষণা করেছিলেন, উদ্ধার কাজ পরিত্যাক্ত। স্বজনরা তাদের লাশটিও পাননি।
মন্ত্রী বাহাদুর এসি অফিসে বসেও দরদর করে ঘামছিলেন বলেই সম্ভবত চেয়ারের পেছনে তোয়ালে রেখেছিলেন, টিভিতে তোয়ালেসহ-ই ওনাকে দেখা যাচ্ছিল। (চেয়ারের পেছনে তোয়ালে থাকার নিয়ম আছে)

সবেক সামরিক অফিসার এই মন্ত্রী বাহাদুরের আবার জোশ বেশি তিনি মিডিয়ার কাছে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, 'আমি ১২ বছর পর্যন্ত মার দুধ খেয়েছি, আমার ছেলেও ৬ বছর বয়স পর্যন্ত মার দুধ খেয়েছে'।
এমন জোশবান মানুষের কাছ থেকে আমরা 'জোশিলা' সিদ্ধান্ত আশা করতেই পারি। তিনি তরল থেকে তরলায়িত হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, লঞ্চ ডুবিতে যারা মারা গেছে তারা না, তাদের পরিবার একটা করে ছাগল পাবে। এটা মিডিয়ায় এসেছিল কিন্তু যেটা আসেনি সেটা হচ্ছে ছাগলের সঙ্গে রশিও দেয়া হবে এই গোপনাঙ্গসম তথ্য!

সেসব পুরনো কাহিনী। আমাদের নতুন কাহিনী প্রয়োজন। আবারও বৈশাখ-বর্ষা আসছে। আবারও লঞ্চ ডুববে। স্বজনরা আবারও লাশের জন্য নদীর দিকে, আকাশপানে তাকিয়ে থাকবেন। না থাকার কোন কারণ নাই।
শুনলে ভয়ে গা কাঁপে আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে উদ্ধারকারি কোন জাহাজ নাই। 'রুস্তম' এবং 'হামজা' নামের যে ২টা উদ্ধারকারি জাহাজ আছে এই বুড়া হাবড়াদের দিন শেষ। একটাকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। অন্যটাকে ঠেলে।
আরও কথা আছে, এদের ক্ষমতা ১২০ মেট্রিক টন অথচ এখন যেসব জাহাজ চলাচল করে অধিকাংশই ১২০ মে. টনের উপরে।
এবার সবচাইতে ভয়ংকর তথ্য এই রুস্তম এবং হামজার উদ্ধার কাজে আসা যাওয়াসহ তেলের খরচ দিতে হয়, ডুবন্ত জাহাজের মালিককে। ফল যা হওয়ার তাই হয়, কার দায় পড়েছে শস্তা লাশের জন্য জাহাজ পানি থেকে উঠাবার।

আজও উদ্ধারকারি জাহাজ কেনা হয়নি!
এখন শুনতে পাই আরও ফ্রিগেট-ট্রিগেট টাইপের জিনিসপত্র, মিগ কেনা হবে। আগামিতেও জাহাজ ডুববে, লাশ মিসিং হবে, ছাগলের বদলে কী পাওয়া যাবে সেটাই দেখার বিষয়। এবার সম্ভব ছাগলের সঙ্গে রশি ফ্রি এটা আগেভাগেই প্রকাশ্যে ঘোষণায় আসবে। কারণ এই তথ্য আমরা ওয়েবেই পেয়ে যাব- ডিজিটাল তথ্য!

কাল বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগল। নিমিষেই পিপড়ার মত লাখ-লাখ মানুষ চলে এসেছে। বসুন্ধরার ২৫০০ দোকানের গড়ে ৫ জন করে ধরলে ১২,৫০০ উদ্বিগ্ন মানুষ বাদ দিলে, অধিকাংশই এসেছে তামাশা দেখতে। এমন তামাশা তো আর হররোজ হয় না। আগুনের লেলিহান শিখার লাল রঙটার অন্য ভুবনের এক আকর্ষন আছে। অনেকের ভেতরের পশুটা হা-হুতাশ করেছে, কেবল ৭ তলা পুড়েই হাল ছেড়ে দিল! লাশ মাত্র ৭!
ওয়াও, গ্রেট শো!

আমার মত হতভাগা যারা ঢাকায় থাকে না এদের ভরসা ইলেকট্রনিক মিডিয়া- আমার ভেতরের পশুটাই বা বাদ যাবে কেন? কোন মিডিয়া কতটা আকর্ষনীয় করে কাভার করতে পারে, চ্যানেলের পর চ্যানেল বদলাও। চ্যানেলগুলো পারলে এটাও জেনে আমাদেরকে জানিয়ে দেয়, আচ্ছা, শেষ নি:শ্বাসটা যখন ত্যাগ করলেন তখন আপনার কেমন লাগছিল?
মিডিয়ার জন্য বেশ জাঁকালো একটা খবর হলে, মিডিয়ার রগরগে খবর না থাকলে চলবে কেন বলুন? আমরা প্রায়শ বিস্মৃত হওয়ার চেষ্টা করি, তথ্যও একটা পণ্য। ভয়াবহ লাভজনক পণ্য! স্বীকার করতে অহেতুক লজ্জার কিছু নেই!

দমকল বাহিনীর ব্রন্টো স্কাই লিফট ১৪ তলার পর যাওয়ার সাধ্য নাই অথচ ভবনটি ২১ তলার। আমার জানামতে ২১ তলার চেয়েও উঁচু ভবন ঢাকায় অনেকগুলো। ২ বছর আগে এনটিভিতে আগুন লাগার সময় যে হাইড্রলিক ল্যাডার ছিল তা ১১ তলা পর্যন্ত যেতে পারত। এই ২ বছরে এই একটি ল্যাডারই যোগ হয়েছে। ২ বছরে আমরা ৩ তলা পর্যন্ত এগুতে পেরেছি!
আমি এ সম্বন্ধে বিশেষ জানি না। কেবল ল্যাডারই কেন? হেলিকপ্টার থেকে অগ্নি নির্বাপক পাউডার বা ফোম ছিটিয়ে দেয়ার কোন না কোন পদ্ধতি নিশ্চয়ই আছে। বা ফাঁক-ফোকর দিয়ে মিসাইল, হারপুন টাইপের কিছু দিয়ে অগ্নি নির্বাপক সামগ্রী ছুড়ে দেয়া? চীন ৯২ সাল থেকেই বজ্রবৃষ্টিকে লক্ষভ্রষ্ট করতে রকেট ছুড়ছে।

সরকারের সদিচ্ছার কথা বাদ দিলেও ব্যক্তি মালিকানায়ও তো এইসব হাইটেক সামগ্রী এনে বানিজ্যিক ভাবে হাই-রাইজ বিল্ডিং বা এই ধরনের শপিং মলের অগ্নি নির্বাপন করা যেতে পারে। যমুনা ফিউচার পার্কের মত অথর্ব একটা কাঠামো বানানো হবে- কারখানা করা হবে কিন্তু কাঁচামালের কথা মাথায় না থাকলে মাথা থেকে লাভ কী?
আমরা এমন আরেকটা শোর জন্য অপেক্ষা করব।
গ্রেটেস্ট শো!

তো, তদন্ত কমিটি হবে, কোন এক মন্ত্রী সাহেব চেয়ারের পেছনে তোয়ালে ঝুলিয়ে বলবেন, আগামিতে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে...।

ছবিঋণ:
উদ্ধারকাজ পরিত্যক্ত: মো: ইব্রাহিম (পত্রিকার নাম পাওয়া যায়নি)

বসুন্ধরা সিটি: পল্লব মোহাইমেন, প্রথম আলো


Monday, March 9, 2009

মুবারকবাদ-নিন্দাবাদ

 
ক্ষমতায় থাককালিন কবি এরশাদ সাহেবের কবিতা নামের 'বিষয়গুলো' রাষ্ট্রীয় খরচে অনুবাদ ও মুদ্রিত করে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। ইংরাজি, ডয়েস, জাপান, আরবি, ইতালি, ফ্রান্স প্রভৃতি ভাষায় সেগুলো অনূদিত হয়েছিল।
প্রকাশক ছিলেন, রওশন এরশাদ, স্কাইভিউ, নিউসেন পাড়া, রংপুর।

ড. হুমায়ুন আজাদের (ঈর্ষা-ঈর্ষা) মতে, 'রবীন্দ্রনাথের পর সম্ভবত এরশাদের লেখাই বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
তার কবিতা নামের এইসব আবর্জনার প্রশংসা শুরু করলেন কতিপয় দালাল- কবি আল মাহমুদ, সৈয়দ আলী আহসান, ফজল শাহাবুদ্দিন প্রমুখ। পরবর্তীতে এদেরকে নিয়ে এরশাদ কবিতা কেন্দ্র গঠন করে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দু-বার বিদেশ থেকে কবি ভাড়া করে এনে এশীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন করেন।
আরও কতিপয় দালালদের তোষামদে তিনি গীতিকার বনে যান। তথ্য অধিদপ্তর থেকে এইসব গান ও কবিতা নিয়ে, 'O My Mother Land' নামে দ্বিভাষিক একটি প্রমাণ্যচিত্রও নির্মাণ করা হয়েছিল।

এই বিখ্যাত কবির কবিতা সাপ্তাহিক বিচিত্রা নিয়ম করে এই কবির কবিতা ফি-হপ্তায় ছাপাতই। '৯০ সালের বিচিত্রায় এই কবির একটা কবিতার কয়েক লাইন তুলে দিচ্ছি:
"অনেক আক্ষেপ করে তুমি লিখেছো
তুমি কি পার না আমাকে নিয়ে লিখতে?
কাছে পেতে হবে এমন তো কোন কথা নেই।"

এই কবি কেবল কবিতা লিখেই ক্ষান্ত দেননি, এইবার তিন তিনটে আসন থেকে নির্বাচন করে তিনটাতেই বিজয়ী হয়েছেন, তাও একটা ঢাকা থেকে (ঢাকার ভোটারদের সালাম)।
এই মানুষগুলো আবার নিজেদেরকে শিক্ষিত বলে দাবী করেন! এই দেশ গণতন্ত্রের জন্য আদর্শই বটে! 

এই কবিকে, "কনক প্রদীপ জ্বালো"-এর এই কনকপুরুষকে অভিনন্দন, লাল সালাম। মুবারকবাদ।

..................................

এই কবিরা কেউ এইবার নির্বাচন করেননি (সত্যি সত্যি গুণ দাদা নির্বাচন করেছিলেন একদা, কুমির মার্কায়। কুমিরটার ছবি দেখতে অবশ্য টিকটিকি-টিকটিকি লাগছিল)। এঁরা কেবল দুর্বোধ্যসব কবিতা লিখে গেছেন, আগামাথা বোঝা ভার!

"...
সব শালা কবি হবে; পিপড়ে গোঁ ধরেছে, উড়বেই;
বন থেকে দাঁতাল শুয়োর রাজাসনে বসবেই;"
(মোহাম্মদ রফিক/ খোলা কবিতা)

'...
তোর হাতে রক্ত, পায়ে কুষ্ট, কন্ঠে নালী ঘা-
আল্লার দোহাই লাগে, তুই নেমে যা, নেমে যা।"
নির্মলেন্দু গুণ/ দূর হ দু:শাসন)

"...
গুলিবিদ্ধ শহর করছে অশ্রুপাত অবিরত,
কেননা মিলন নেই। দিন দুপুরেই নরকের
শিকারী কুকুর তার বুকে বসিয়েছে দাঁত...।"
(শামসুর রাহমান/ মিলনের মুখ)

"...
তোমাকে চায় না এই মানচিত্র, জাতীয় পতাকা
তুমি চলে যাও, দেশ ছেড়ে চলে যাও।"
(মহাদেব সাহা/ বাংলাদেশ চায় না তোমাকে)

"...
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,"
(রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ/ বাতাসের লাশের গন্ধ)

এইসব অখ্যাত(!) কবিদের নিন্দাবাদ।

*বিখ্যাত মহা কবির স্কেচ: আলী মাহমেদ
**অখ্যাত কবিদের স্কেচ করার সময় পাওয়া যায়নি বলে দু:খ প্রকাশ।

Friday, March 6, 2009

সামছু ফকির, কার কাছে যাব? আপনার কাছে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন একাধিকবার সামছু ফকিরের সঙ্গে দেখা করেছেন। মাননীয় মন্ত্রী মনে করেন, সামছু ফকিরের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। তিনি গত মঙ্গলবার সাড়ে নয়টায় ওখানে যান। (প্রথম আলো, ০৫.০৩.০৯)

বাবা সামছু ফকির, আপনার আধ্যাত্মিক ক্ষমতাকে সালাম জানাই। আচ্ছা, আপনি পিলখানার রক্তাক্ত অধ্যায়টাকে ঘুরিয়ে দিতে পারেন না, না? পারলে বেশ হত, মৃত ৭৩ জনকে ফিরে পেতাম আমরা! বাবা গো, আপনার ফকিরির কসম, তাইলে আজীবন আপনার ঠ্যাং ছাড়তাম না।

তাও ভাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জীবিত একজনের কাছে গেছেন, অলৌকিক কিছু দেখার প্রবল আশায়। খালেদা-হাসিনা-এরশাদ এঁরা তাদের নির্বচনী প্রচারনা শুরু করেছিলেন সিলেট থেকে, মাজার জিয়ারত করে।

এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় থাকাকালিন আটরশির পীরের দরবারে ক-বার গেছেন? হেলিকপ্টারের
১৬ লাখ টাকার তেল পুড়িয়েছেন। এ নিয়ে মামলা হয়েছিল। এখন এ নিয়ে গবেষনা হতে পারে!

আমার জানামতে, ইসলাম ধর্মমতে, কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন মাজার জিয়ারত করা যাবে না, এটা কঠিন অপরাধ। কারণ একজন মৃত মানুষ নিজেই থাকেন দৌড়ে- তাঁর কাছে চাওয়ার কিছু নাই! অবশ্য কারও চলার পথে কোন কবর পড়লে সেটায় দোয়া করতে কোন সমস্যা নাই।

এই কদভ্যাস আমাদের কথিত আলোকিত(!) মানুষ হুমায়ূন আহমেদেরও আছে। নিয়ম করে মাজারে যান। তাঁর ভাষায় জিয়ারত না, শৈশবের হালুয়ার স্মৃতির জন্য যান। 'প্রার্থনা দিবস' নামের কলামে তিনি লিখেছিলেন, "...কয়েক দিন আগে আবার মাজারে গেলাম। আমার সঙ্গে ১৯ জনের বিশাল দল। আমার আগ্রহের মুল কারণ হালুয়া..."।
ওনার কথামতে, হালুয়া খেতে। ভদ্রলোককে নাকি শৈশবের হালুয়ার স্মৃতি চাবকাকে চাবকাকে রক্তাক্ত করে ফেলে। মোল্লাদের বাড়াবাড়িতে ইনিই আবার ঘটা করে কলাম লেখেন, "এখন কোথায় যাব, কার কাছে যাব"?

বেশ-বেশ। তা স্যার, আপনার সফরসঙ্গিরা গিয়েছিলেন কেন, এটা তো আর বললেন না। তাঁরাও কী হালুয়া পসন্দ(!) করেন?


হুমাযূন সাহেব কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন এটা তিনি বিলক্ষন জানেন। কিন্তু আফসোস, আমরা কোথায় যাব, কার কাছে যাব এটা আমাদের জানা নাই?
রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন পদের শেকল থাকে কিন্তু আমাদের আলোকিত এই মানুষটার পায়ে কিসের শেকল কে জানে! ভানের শেকল? ভদ্রলোকের দেখি ভান এবং হালুয়া দুই-ই ভারী পছন্দের!

Tuesday, March 3, 2009

শেকলগুলো ভেঙ্গে পড়ছে একেক করে

'মা হাতি'-তে লিখেছিলাম, 'মানুষদের বড় মজা, এরা ইচ্ছা করলেই মানুষ থেকে চট করে অমানুষ হয়ে যায়। পশুদের বড় কষ্ট, এরা না হতে পারে মানুষ, না হতে পারে পুরোপুরি পশু'।

ঠিক কোথায় লিখেছিলাম মনে পড়ছে না। কথাটা ছিল এমন,
'আমাদের প্রত্যেকের ভেতর বাস করে একটা শিশু এবং একটা পশু। হরদম এদের মধ্যে মারামারি লেগেই আছে। পৃথিবীর সব মহামানবদের একটাই চেষ্টা থাকে এই পশুটাকে বের হতে না দেয়ার যথাসম্ভব চেষ্টা, জিততে না দেয়া'।
বিভিন্ন পদের শেকল এই পশুটাকে আটকাবার জন্য- একেকজনের জন্য একেক পদের শেকল। কারও জন্য শিক্ষা-ধর্ম-প্রিয়মানুষ-সামাজিক মর্যাদা; যার জন্য যে শেকল খাপ খায়।

সামরিক নামের মানুষগুলোকে কেবল খুনই করা হয়নি। বীভত্স করা হয়েছে, স্যুয়েরেজ লাইনে ফেলে দেয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাদেঁর পরিবারের সঙ্গে এমন কোন অন্যায় নাই যা করা হয়নি। কেন? এর উত্তর খুঁজছি। কেন এমনটা হল? আমরা কী দিনে দিনে আরও পশু হচ্ছি। ক্যু, অন্য মৃত্যুর নামে আমরা অনেক মেধাবি টগবগে যুবককে দেখেছি লাশ হয়ে যেতে। সব ঘটনা আমরা জানি না। সেগুলোও কম রোমহর্ষক ছিল না কিন্তু এমনটা হয়নি। মৃতদেহকে এমন অসম্মান করা হয়নি। জানি না, মনোবিদরা এর উত্তর ভাল বলতে পারবেন।

আমার অল্প জ্ঞানে খানিকটা বুঝি। আফসোস, এই দেশে যখন একজন মানুষকে ১৪৯ টুকরা করা হয় তখন আমরা অপরাধিকে সময়মত ধরতে পারি না। আমাদের চৌকশ মনোবিদদের দিয়ে ওই মানুষটার মস্তিষ্ক খুঁটে খুঁটে দেখা হয় না কেন এই মানুষটা এমনটা করল- তার শৈশব, শিক্ষায় কী গলদ ছিল? আহারে দরিদ্র দেশ- আমাদের ভাবনাগুলোও দরিদ্র হবে এ আর বিচিত্র কী!

যে পশুমানবরা একটি শিশুকে (খোদেজা) পৃথিবীর চরম নির্যাতন করে মেরে ফেলে এবং তার জানাজায় অংশগ্রহনও করে; প্রচলিত আইনের বিচারে ওই পশুমানবের ফাঁসি হয়। কিন্তু এই মানুষগুলো কেন এমন করল এটা জানার অবকাশ আমাদের কই! আহারে, দরিদ্র দেশ- সময় কই আমাদের?

ফাঁসির আসামি প্রেসিডেন্টের ক্ষমা পেয়ে যান, নির্বাচন করেন। আমরা গিয়ে ঘটা করে আবার তাকে ভোট দেই!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্র অন্য ছাত্রকে গুলি করে মেরে ফেলে, কাটা কব্জি নিয়ে উল্লাস করে। আমরা বিভিন্ন রং গায়ে মেখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ বছরে ৭৪টি হত্যাকান্ড হয়েছে। মাত্র একটির সাজা হয়েছে, জরিমানা ১০ টাকা। ওই আগের কথাটাই বলি, লাগাবেন ধুতুরা গাছ, ধুতুরা ধরবে না কেন?

অন্য প্রসঙ্গ। জাস্ট রুপকার্থে বলছি, আমাদের শিক্ষায় আসলে গলদ আছে। আজকের শিক্ষাই আগামিতে যা হওয়ার তাই-ই হয়, ধুতুরা গাছে ধুতুরাই ধরে!
'চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ৪/৫ তারিখের ফাইনাল পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে কারণ একজন প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি থাকবেন বলে। আরেক মহোদয় উপাচার্য অধ্যাপক সাহেব আবার ঘটা করে জানিয়েছেন, 'মন্ত্রী মহোদয় ব্যস্ত থাকায় পরীক্ষা পেছানো হল'। (প্রথম আলো, ০২.০৩.০৯)
তো, এই উপাচার্য মহোদয় যা শেখাবেন হাজার-হাজার ছাত্র তাই শিখবে! এই ছাত্ররাই পরবর্তিতে বিভিন্ন মহোদয় হবেন। আমাদের মাথার উপর বনবন করে ছড়ি নাচাবেন এবং আরও বিচিত্রসব ঘটনার জন্ম দেবেন। তখন এ নিয়ে অবাক হয়ে নির্বোধের মত কেন প্রশ্ন করা হবে?
আজব দেশ, শিক্ষকদেরও দল আছে লাল দল নীল দল, সাদা দল! মুসুল্লিরা যখন জুতাজুতি করেন আমরা আবাক হই কেন, এদের দল থাকতে নেই বুঝি? কমলা দল, কালো দল...!

তবলার ঠুকঠাক থাকুক। আমার চোখে এখনও ভাসে সেই ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক গুলজার উদ্দিন আহমেদ নামের মানুষটার দুর্ধর্ষতা, বিচক্ষনতা- যিনি ছিলেন একাই একশ। শায়েখ আ. রহমান, সানিসহ অজস্র দানবকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আইনের হাত কত লম্বা। সাধারণ সৈনিকের পাশে দাঁড়িয়ে সিংহাবলোকনন্যায় লড়েছেন। মাত্র এক সপ্তাহও হয়নি বিডিআরে জয়েন করেছেন। এই মানুষটা কী অপরাধ ছিল?
এমন একটা মানুষ কোটি টাকা খরচ করেও তৈরি করা যায় না! এই মানুষটা যখন ভেতর থেকে সাহায্যের জন্য হাহাকার করছিলেন তখন বুঝতে হবে প্রলয় চলে এসেছে। বারবার বলা হচ্ছিল সাহায্য আসছে।
এটা আমরা বেসামরিক মানুষদের বুঝতে বেগ পেতে হয় বৈকি। ধারেকাছেও হবে না তবুও বেসামরিক একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করি, একজন অসম্ভব মর্যাদাবান মানুষ যখন পেটের ক্ষিদায় হাত পাতে তখন কেমন লাগে?

টক-শোতে ধোঁয়া উঠা কাপে চুমুক দিতে দিতে অনেকের অনেক কপচানি শুনেছি, লম্বা লম্বা বাতচিত। কিন্তু ২৫ তারিখে কেউ বলছেন না ভেতরের এত আর্মি অফিসারদের কী অবস্থা! এতসব বিবেক-জাগানিয়া মানুষরা কেমন করে এটা বিস্মৃত হলেন! আহা, শোককে যে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। শোককে শক্তিতে পরিণত শুনতে বেশ লাগে!

একজন বললেন, আর্মির নাকি ২ ঘন্টা সময় লাগত পৌঁছতে।
আমি সামরিক বিশেষজ্ঞ নই কিন্তু অল্প জ্ঞানে যা বুঝি, এত সময় লাগলে সশস্ত্রবাহিনী থাকার আবশ্যকতা কী! বিমানবাহিনির ব্যাক-আপ ছিল না?

এইসব বাদ দিলেও কিছু প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা হবে না কখনও।
১. সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা বা এভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেতরের আসল তথ্য জানা ছিল কী বা জানানো হয়েছিল কী?
২. ক্ষমা ঘোষণার সময় বা পরে জানতে চাওয়া হয়েছিল কী অফিসাররা কোথায়?
৩. অস্ত্র জমা হওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হল না কেন?
৪. অস্ত্রগুলো কে জমা নেবে, হিসাব মেলাবে? এটা ঠিক করা হয়েছিল কী?
৫. পাওয়ার ছিল না কেন? প্রয়োজনে সমস্ত দেশ অন্ধকার রেখেও আলোর ব্যবস্থা করা হল না কেন? বা বিকল্প চিন্তা মাথায় আসেনি কেন?
৬. এতগুলো মানুষ পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল কেন? সমস্ত এলাকা কর্ডন করে রাখা হল না কেন? আমি শপথ করে বলতে পারি, যেসব অস্ত্র খোয়া গেছে তার সবগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। প্রকারন্তরে আমরা অরক্ষিত হয়ে গেলাম।
অনেক প্রশ্ন কিন্তু উত্তর নাই।

যাই হোক, আজ মানুষ হিসাবে নিজেকে আমার বড় পোকা-পোকা মনে হচ্ছে।
সেনাবাহিনির এতসব চৌকশ মানুষ, তাদের প্রিয়মানুষরা আজ চরম দুর্দশায় এতে অনেকে উল্লসিত হয় কেমন করে! অনেককে দেখছি তিনি সদম্ভে ঘোষনা দিচ্ছেন, আমি শোকাহত না। পিএইচডি করা একজন বলছেন, এরা টাকা লোপাট করেছে।
বাহ, বেশ তো! লোপাট করে থাকলে তার বিচার চান কিন্তু এখনকার এই নৃশংস খুনের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?


আসলে সামরিক মানুষদের প্রতি বেসামরিক মানুষদের ক্ষোভের উত্স কোথায় এটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে আজ। কারণ আমি তাঁদের এমন চরম বিপর্যয়ে তাদেঁর নিয়ে যেসব মন্তব্য শুনেছি, পড়েছি আমাকে ভাবাচ্ছে- মানুষ হিসাবে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।

আমি অতশত বুঝি না। যেসব বেসামরিক মানুষ, বিডিআরের নিদোর্ষ সৈনিক, সামরিক অফিসার সবার জন্যই কাঁদব (মৃত বুড়া রিকশাওয়ালাটার জন্যও)- সবার জন্যই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব, এর ব্যতয় হবে কেন! এই কান্নাটা কী সামরিক না বেসামরিক এটা বিচার করতে যাব কেন?


এমনিতে আমরা বেসামরিক মানুষদের বেশ মজা। নিজেদের কোন বিপদ দেখলেই আর্মি ডাকি। নির্বাচন হবে, ত্রাণ দিতে হবে, ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে হবে, বন্যায় ভেসে যাওয়া মানুষ উদ্ধার করতে হবে, কাউকে টাইট দিতে হবে; বোলাও আর্মি। অপ্রতুল ত্রাণ, কেউ ত্রাণ পেল না তো কষে গালি দাও আর্মিকে। আমারা ভুল-ভাল গাড়ি চালাচ্ছি, আর্মি আটকে দিল; ব্যস। আচ্ছা করে গোটা আর্মিকে উদ্ধার কর। নির্বাচনে ব্যালট বক্স লুট হবে আর আর্মি তো আর বসে বসে চুইংগাম চিবুবে না।

পাশাপাশি এদের কী বাড়াবাড়ি নাই। যে আর্মি নামের মানুষটা কেবল হেলমেট না-থাকার কারণে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে যে স্বামীটিকে কান ধরে উঠবস করিয়েছেলেন তিনি যে কী অপুরণীয় ক্ষতি করেছিলেন এটা বোঝার মত ক্ষমতা যদি এদের থাকত। আমার স্পষ্ট মনে আছে, অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় ফুল হাতা শার্ট গুটিয়ে রাখা যেত না
- কেউ তার নিজের দোকানে পা তুলে বসতে পারত না। তো, এইসব অতিশয়োক্তি করে দুরত্বটা বাড়েই কেবল। এও ক্ষোভ আছে, আদিবাসিসহ অনেকের মৃত্যু নিয়ে অস্পষ্টতা, যা অনেকের মনে আঁচড় কেটে আছে।

কিন্তু এঁদের কাছ থেকে আমাদের কী কিছুই শেখার নাই? শিখতে চাইলে অনেক কিছু থেকেই শেখা যায়। ছবিটা একটু ভাল করে লক্ষ করুন, প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের পেছনে বসার অতি সাধারণ চেয়ারগুলো দেখুন!
অথচ সাধারণ আমলাদেরও দেখেছি রাজকিয় চেয়ার না হলে পশ্চাদদেশ আরাম পায় না।

কাল সামরিক বাহিনির জানাজায় শুনলাম, মাওলানা সাহেবকে বলা হচ্ছে, ধর্মিয় শিক্ষক। মেসেজটা পরিষ্কার; ধর্মিয় বিষয়ে তিনি টিচার, অতি সম্মানিত এবং এই বিষয়ে চিফ।

আমার জানামতে, সামরিক বাহিনিই একমাত্র বাহিনি যাদের শপথ নিতে হয় কোরান ছুঁয়ে। আকাশ-পানি-পাতাল যেকোন জায়গায় প্রয়োজনে যেতে হবে তাকে, ভাবাভাবি একপাশে সরিয়ে রেখে।

সেনানিবাসে মেন্যু সবার জন্য এক।
এখান থেকে কী আমাদের শেখার কিছু নেই? সিপাহি যা খাবে সেনাপ্রধানও তাই। যেদিন খিচুরি রান্না হবে সেদিন সবার জন্যই খিচুরি- কারও গেস্ট থাকলে তাকেও তাই দেয়া হবে। আপনি যদি মনে করেন, আপনার গেস্টকে তা খেতে দেবেন না তাহলে বাইরে থেকে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।

আমার ধারণা, এই উদ্ধারকাজ আরেকটু সহনীয়ভাবে করা প্রয়োজন ছিল এবং তামাশা দেখার জন্য লোকজনদের সরিয়ে দেয়া জরুরি ছিল, ছবি তোলার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করাও দরকার ছিল। যেসব ছবি ছাপা হয়েছে, ওয়েবে এসেছে এগুলো দেখার আগে মরে যেতে ইচ্ছা করে। মনে মনে বলি, হে প্রভু, কেন এমন গরিব দেশে গরিব রুচি নিয়ে জন্ম নিলাম। হটেনড জাতি হলেই বা কী দোষ ছিল- পরাজিত শত্রুর মাংস খেতে খেতে আলোচনা করতাম, মাংসটা ভালভাবে রান্না হয়নি।

শিক্ষাটা খুব জরুরি। সেটা বাংলা-ফার্সি-আরবি সেই কুতর্কে যাই না। এই ছবিটা দেখুন।
এখানে আমাদের দেশের চিকিত্সা বিভাগের তাবড় তাবড় সব পরফেসর(!) সাহেবরা রয়েছেন। এদের চকচকে জুতা আর এই বিবর্ন হাড়গুলোর মধ্যে কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখি- চকচকে জুতাই 'দৃষ্টিনরম'-'চোখআরাম'! এই হাড়গুলো কিন্তু কুকুর বেড়ালের না, একজন মানুষের। বিস্তারিত বলে সময় নষ্ট করি না। বিস্তারিত এখানে:
লিংক:

মৃতদেহের প্রতি সম্মান করা আমরা শিখব কেমন করে? যে হিংস্রতার সঙ্গে মানুষগুলোর ছবি দেখানো হয়েছে। আজ অমর্যাদার সঙ্গে যে সামরিক মানুষটার বুটসহ পা অনাবশ্যক জোরে টানতে গিয়ে মাংসসহ বুটটা খুলে এসেছে, মানুষটা মাইলের পর মাইল হেটেছে এই বুট দিয়ে। ট্রেনিং-এর সময় একজন সৈনিকের চেয়ে অফিসারকে হাঁটতে-দৌড়াতে হয় বেশি। সহজ যুক্তি, অফিসার নিজে ফিট না থাকলে সৈনিককে ফিট রাখবেন কেমন করে।
আমার বুকের ভেতর থেকে অজানা কষ্ট পাক খেয়ে উঠে, কত কষ্টসাধ্য ট্রেনিং। অসহনিয় তীব্র শীতে এই অফিসার ক্লান্তিতে শুয়ে পড়েছেন কোন এক খড়ের গাদায়। ভোরে কৃষক দেখে কী অবাকই না হয়, অরি আল্লা, আমরি (আর্মি) দেখি; আহারে, কার না কার ছেইলা (ছেলে)। কৃষকের মনটা অন্য রকম হয়- কৃষক হলে বাবার অনুভূতি থাকতে নেই বুঝি।
কৃষকটা এক খাবলা সরষের তেল নিয়ে আসে; মায়া মায়া গলায় বলেন, বুকে মালিশ করেন, ঠান্ডা লাগব।


ফ্রিডমে Martin Niemoller-এর ধার করা কথাটা শেয়ার করেছিলাম, আবারও করি:
"...First they came for the jews. I was silent. I was not a jew. Then they came for the communists. I was silent. I was not a communist. Then they came for the trade unionists.
I was silent. I was not a trade unionist. then they came for me. There was no one left to speak for me".

আমার শেকলগুলো ভাঙ্গছে একেক করে- আমিও তো এই কালচারেই বড় হয়ে উঠা মানুষ।
আসল পশুটা তো থেকে যায় সব আইনের বাইরে, তার কেশাগ্র স্পর্শ করার ক্ষমতাও কারও নাই। সেই পশুটা ঘাপটি মেরে বসে থাকে পরবর্তি শিকারের অপেক্ষায়। তার পরবর্তি শিকার যে আমি নিজেই না তার কী নিশ্চয়তা আছে? সত্রাসে থেকেও আশায় বুক বাঁধি পশুটি আমার নাগাল পাবে না।


অনেক কথার পুনরাবৃত্তি হবে যেগুলো আগের পোস্টে বলার চেষ্টা করেছি: দানবের হাতে ক্ষুর